<p>দেশে ২০২৪ সালে সড়ক দুর্ঘটনায় যে পরিমাণ মানবসম্পদের ক্ষতি হয়েছে, তার আর্থিক মূল্য ২১ হাজার ৮৮৬ কোটি ৩২ লাখ ৬৪ হাজার টাকা বলে জানিয়েছে রোড সেফটি ফাউন্ডেশন। গতকাল বুধবার ২০২৪ সালের সড়ক দুর্ঘটনার বার্ষিক প্রতিবেদনে এ তথ্য প্রকাশ করেছে সংস্থাটি।</p> <p>প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, গত বছর সারা দেশে ছয় হাজার ৯২৭টি সড়ক দুর্ঘটনায় সাত হাজার ২৯৪ জন নিহত এবং ১২ হাজার ১৯ জন আহত হয়েছে। এর মধ্যে দুই হাজার ৭৬১টি মোটরসাইকেল দুর্ঘটনায় নিহত দুই হাজার ৬০৯ জন, যা মোট নিহতের ৩৫.৭৬ শতাংশ। মোটরসাইকেল দুর্ঘটনার হার ৩৯.৮৫ শতাংশ। দুর্ঘটনা পর্যালোচনায় বলা হয়েছে, দেশে জাতীয় ও আঞ্চলিক সড়কের দৈর্ঘ্য ২২ হাজার ৪৭৬.২৮ কিলোমিটার।</p> <p>গ্রামীণ সড়ক প্রায় দুই লাখ ৭০ হাজার কিলোমিটার। এসব সড়কে বিভিন্ন যানবাহন যেমন বেড়েছে, তেমনি বেড়েছে যানবাহনের গতি। ৮৫ শতাংশ দুর্ঘটনার প্রধান কারণ যানবাহনের অতিরিক্ত গতি। কিন্তু গতি নিয়ন্ত্রণের জন্য জনবল ও প্রযুক্তিগত সক্ষমতা নেই। যানবাহনের গতি ঘণ্টায় ৬০ কিলোমিটারের ওপরে প্রতি পাঁচ কিলোমিটার বৃদ্ধিতে দুর্ঘটনার ঝুঁকি দুই থেকে চার গুণ বাড়ে। বেপরোয়া গতির কারণে ঢাকা-মাওয়া-ভাঙ্গা এক্সপ্রেসওয়ে অতি দুর্ঘটনাপ্রবণ হয়ে উঠেছে।  </p> <p>ইদানীং মহাসড়কে বিকল হওয়া পণ্যবাহী যানবাহন দাঁড়িয়ে থাকছে। এ অবস্থায় বেপরোয়া গতির অন্য যানবাহন দাঁড়ানো যানবাহনের পেছনে ধাক্কা দিয়ে ভয়াবহ দুর্ঘটনায় পড়ছে। গত বছর এ ধরনের ৮২টি দুর্ঘটনা ঘটেছে। সড়কে অবৈজ্ঞানিক পদ্ধতিতে নির্মিত উঁচু স্পিড ব্রেকারের কারণে মোটরসাইকেল দুর্ঘটনা বাড়ছে। </p> <p>সারা দেশের গ্রামীণ জনপদে সড়ক নির্মিত হলেও আধুনিক নিরাপদ যানবাহনব্যবস্থা গড়ে ওঠেনি। তাই প্রয়োজনের তাগিদেই ইজি বাইক, অটোরিকশা, নসিমন, ভটভটি, আলমসাধুর মতো অনিরাপদ যানবাহনের প্রচলন ঘটেছে। এসব যানবাহনের নিরাপত্তামূলক যান্ত্রিক উন্নতি ঘটিয়ে নিবন্ধনের আওতায় এনে চালকদের স্বল্পমেয়াদি প্রশিক্ষণ দিতে হবে।  সব মহাসড়কে ডিভাইডার ও সার্ভিস রোড না থাকা এবং আঞ্চলিক ও গ্রামীণ সড়কগুলো সরাসরি মহাসড়কে যুক্ত করার কারণে ছোট যানবাহনগুলো স্বল্প দূরত্বে চলাচলের ক্ষেত্রেও মহাসড়ক ব্যবহার করতে বাধ্য হচ্ছে। ফলে দ্রুতগতির যানবাহনের সঙ্গে সংঘর্ষে ব্যাপক হতাহতের ঘটনা ঘটছে। এসব দুর্ঘটনায় একই পরিবারের একাধিক সদস্য, এমনকি পুরো পরিবার নিহতের ঘটনা বাড়ছে। গত বছর ভারী যানবাহনের সঙ্গে ইজি বাইক-অটোরিকশার সংঘর্ষে কমপক্ষে ৪৯টি পরিবারের সব সদস্য নিহত হয়েছে। তাই ছোট ও স্বল্পগতির যানবাহনের জন্য নিরাপদ সড়ক নকশা (রোড ডিজাইন) করতে হবে।</p> <p> </p> <p> </p>