রংপুর মেডিক্যাল কলেজ (রমেক) হাসপাতালে ওষুধ ও স্যালাইনের তীব্র সংকট দেখা দিয়েছে। বেশির ভাগ ওষুধই রোগীকে বাইরে থেকে কিনতে হচ্ছে। এসেন্সিয়াল ড্রাগস কম্পানি লিমিটেডের মাধ্যমে কিছু সরকারি ওষুধ সরবরাহ করা হলেও তা পর্যাপ্ত নয়।
হাসপাতাল সূত্র জানিয়েছে, রংপুর বিভাগের সবচেয়ে বড় সরকারি হাসপাতাল এটি।
হাসপাতালটিতে এক হাজার শয্যা রয়েছে। ওষুধের বরাদ্দও মিলছে এক হাজার রোগীর। কিন্তু রোগী ভর্তি থাকছে আড়াই থেকে তিন হাজার। ফলে তিন দিনের ওষুধ এক দিনেই শেষ হয়ে যাচ্ছে। আবার কখনো কখনো ইডিসিএল থেকেও সময়মতো ওষুধ সরবরাহ করা হয় না।
সূত্র জানায়, বর্তমানে ইডিসিএল সরবরাহ করা ওষুধের মধ্যে প্রায় শূন্য অবস্থায় অ্যান্টিবায়োটিক মেরোপেনাম ও সেফট্রিয়াক্সোন। কিছুদিন আগে মেরোপেনাম ১০ হাজার চেয়ে চিঠি দেওয়া হলেও সরবরাহ করা হয় পাঁচ হাজার, সেফট্রিয়াক্সোন ১ গ্রাম ইনজেকশনের ৫০ হাজার চাহিদা দেওয়া হলেও সরবরাহ করা হয় মাত্র ২০ হাজার। হার্টসল স্যালাইন ৫০ হাজার চাওয়া হলেও দেওয়া হয়েছে এক হাজার।
এভাবে যেখানে ১০ হাজার প্রয়োজন, সেখানে এক হাজার বা দেড় হাজার সরবরাহ করা হয়। বর্তমানে সরবরাহ বন্ধ রয়েছে। এ ছাড়া টেন্ডারের মাধ্যমে কেনা সেফিক্সাইম, ফ্লুক্লোক্সাসিলিন, হাইব্রেকটিসন, জেপামিন, অক্সিটোক্সিন, ইনোক্সিপাইরন, ইনোক্সিপাইরিন-৮০, ফেনোবারবিটন ২ এমএস, বুপিভাকেইন, ক্যাটামিন, সাক্সামেথোনিয়াম, ইফিডিন, ন্যালবুফেন, হ্যালোজেরিডল, প্রোসাইক্লিডিনসহ ৪৫ পদের ওষুধের চরম সংকট রয়েছে।
গতকাল বুধবার হাসপাতালে গিয়ে দেখা গেছে, বহির্বিভাগ এবং ভর্তি রোগীর বেশির ভাগই প্রয়োজন অনুযায়ী ওষুধ পাচ্ছে না। কয়েক মাস ধরেই এ অবস্থা বিরাজ করছে।
স্যালাইন সেট, নরমাল স্যালাইনসহ বিভিন্ন রকমের ওষুধের সরবরাহ নেই হাসপাতালে। পাঁচ টাকা দামের একটি ৫ সিসি ইনজেকশন সিরিঞ্জও রোগীদের বাইরে থেকে কিনতে হয়।
হাসপাতাল সূত্রে জানা গেছে, হৃদরোগ, মেডিসিন, ডায়ালিসিস, গাইনি বিভাগ, এমনকি নবজাতকের আইসিইউ বিভাগে পর্যন্ত স্যালাইনের সঙ্গে সিরিঞ্জেরও সংকট। নবজাতকের আইসিইউতে আগে সেপটাজিম নামের একটি ইনজেকশন হাসপাতাল থেকে সরবরাহ করা হলেও এখন সেটি রোগীকে কিনতে হয় বাইরে থেকে। রংপুরের পীরগাছা উপজেলা থেকে আসা মোহাম্মদ আলী নামের এক রোগী বলেন, ‘আমি গত বৃহস্পতিবার হাসাপাতালে ডায়াবেটিস নিয়ে ভর্তি হয়েছি। কিন্তু দামি ওষুধ নেই। প্রায় সব বাইরে থেকে নিতে হচ্ছে।’
মেডিসিন ওয়ার্ডে ভর্তি নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক রোগী বলেন, ‘হাসপাতালের ফার্মেসি থেকে প্রয়োজনীয় ওষুধ পেতে নানা অসুবিধার মুখে পড়তে হয়। বেশির ভাগ প্রয়োজনীয় ওষুধই এখানে পাওয়া যায় না। বাইরে থেকে বেশি দামে এগুলো কেনা ছাড়া আমাদের উপায় থাকে না। ডাক্তার রাউন্ডে এসেই ওষুধ লিখে দেয়। পরে সেগুলো বাইরে থেকে কিনতে হচ্ছে।’
বহির্বিভাগে ওষুধ নিতে আসা আসাদুল বলেন, ‘চিকিৎসক তিন ধরনের ওষুধ লিখেছেন। কিন্তু এখানে কোনোটাই পাইনি। এখন বাইরে থেকে কিনতে হবে। ভর্তি রোগীদের স্যালাইন থেকে শুরু করে বেশির ভাগ ওষুধই বাইরে থেকে কিনতে হচ্ছে।’
হাসপাতালের বিভিন্ন ওয়ার্ডে দায়িত্বে থাকা একাধিক চিকিৎসক ও নার্স কালের কণ্ঠকে বলেন, যেসব ওষুধের সরবরাহ নেই, সেগুলো বাইরে থেকে আনতে বলা হয় রোগী ও স্বজনদের। যেগুলো পাওয়া যায় সেগুলো তাঁরা রোগীদের দেন। জানা গেছে, ওষুধ সংকট মেটাতে সম্প্রতি ৪০ কোটি টাকার দরপত্র আহবান করা হয়েছে। চলতি মাসের ২৭ তারিখে সেই দরপত্র খোলা হবে। যাচাই-বাছাই, অনুমোদনসহ প্রক্রিয়া শেষ হতে প্রায় দেড় মাস সময় লাগবে।
জানতে চাইলে রংপুর মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের পরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল আশিকুর রহমান কালের কণ্ঠকে বলেন, ‘কিছু ওষুধের সংকট রয়েছে। আমরা টেন্ডার দিয়েছি। মাসখানেকের মধ্যে সমস্যার সমাধান হবে।’