<p>সাম্প্রতিক সময়গুলোতে দীর্ঘদিন ধরে চলা উপাচার্য-শিক্ষক দ্বন্দ্ব, শিক্ষক সমিতির পেনশন স্কিম প্রত্যাহার কর্মসূচি, ঈদের ছুটি, কোটা সংস্কার আন্দোলন এবং সর্বশেষ বন্যা পরিস্থিতি মিলিয়ে প্রায় ১৬০ দিনের একাডেমিক ও প্রশাসনিক স্থবিরতা চলছিল কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়ে (কুবি)। ফলে শিক্ষার্থীরা পিছিয়ে গেছে প্রায় পাঁচ মাসেরও অধিক সময়। তীব্র সেশনজট প্রভাব ফেলেছে চাকরির বাজারেও। শিক্ষার্থীদের দাবি, সুষ্ঠু পরিকল্পনার মাধ্যমে সেশনজট নিরসন করা।</p> <p>খোঁজ নিয়ে জানা যায়, চলতি বছরের ফেব্রুয়ারি মাসের ১৯ তারিখ শিক্ষক সমিতির নির্বাচনের পর নির্বাচিত প্রতিনিধিসহ শিক্ষকরা উপাচার্য অধ্যাপক ড. এ এফ এম আবদুল মইনের সঙ্গে দেখা করতে গেলে উপাচার্য কার্যালয়ে বাগবিতণ্ডার সৃষ্টি হয়। এই বাগবিতণ্ডার মাধ্যমেই উপাচার্য-শিক্ষক সমিতির দ্বন্দ্ব সামনে আসে। এরপর ১২ মার্চ শিক্ষক সমিতি সাত দফা দাবি ঘোষণা করে। সাত দফা দাবি বাস্তবায়নের জন্য ১৩ ও ১৪ মার্চ প্রথমবারের মতো দুই দিনের কর্মবিরতিতে যান শিক্ষকরা। এরপর ১৯ থেকে ২৭ মার্চ আবারও সাত দফা দাবি আদায়ের লক্ষ্যে কর্মবিরতিতে যায় শিক্ষক সমিতি।</p> <p>পরবর্তী সময়ে ২৯ মার্চ থেকে ২০ এপ্রিল পর্যন্ত ঈদুল ফিতর উপলক্ষে ২৩ দিনের জন্য বন্ধ থাকে বিশ্ববিদ্যালয়টি। ঈদ উপলক্ষে ঘোষিত বন্ধ শেষ হওয়ার আগেই ১৭ এপ্রিল শিক্ষক সমিতি ২১ থেকে ২৩ এপ্রিল পর্যন্ত তিন দিনের শ্রেণি কার্যক্রম বর্জনের ঘোষণা দেয়। এরপর সাত দফা দাবি আদায়ে ২৪ ঘণ্টার আলটিমেটাম দেয় শিক্ষক সমিতি। তার পরও দাবি আদায় না হওয়ায় বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য, কোষাধ্যক্ষ ও প্রক্টরকে অবাঞ্ছিত ঘোষণা করে দপ্তরগুলোতে তালা লাগিয়ে দেয়।</p> <p>পরবর্তী সময়ে ২৮ এপ্রিল উপাচার্য দাপ্তরিক কাজে দপ্তরে প্রবেশ করতে চাইলে শিক্ষকদের সঙ্গে শাখা ছাত্রলীগের সাবেক-বর্তমান নেতাকর্মীদের ধাক্কাধাক্কি ও উত্তপ্ত বাক্য বিনিময় হয়। এই ঘটনার প্রতিবাদে ২৯ এপ্রিল উপাচার্য ও কোষাধ্যক্ষের পদত্যাগের এক দফা দাবিতে অনির্দিষ্টকালের জন্য সব ধরনের শ্রেণি ও প্রশাসনিক কার্যক্রমসহ চূড়ান্ত পরীক্ষাও বর্জনের ঘোষণা দেয় শিক্ষক সমিতি। পরবর্তী সময়ে ৩০ এপ্রিল এক জরুরি সিন্ডিকেট সভার সিদ্ধান্ত অনুযায়ী ১ মে থেকে ৫ জুন পর্যন্ত বন্ধ থাকে বিশ্ববিদ্যালয়। ৫ জুন ৯৫তম জরুরি সিন্ডিকেট সভার সিদ্ধান্ত অনুযায়ী ঈদুল আজহার ছুটির পর ২৩ জুন থেকে ফের একাডেমিক কার্যক্রম শুরু হয়। এখানে বিশ্ববিদ্যালয় বন্ধ থাকে ১৬ দিন।</p> <p>এরপর পেনশন স্কিম প্রত্যাহার, সুপার গ্রেডে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকদের অন্তর্ভুক্তি এবং শিক্ষকদের জন্য স্বতন্ত্র বেতন স্কেল প্রবর্তনের দাবিতে বাংলাদেশ শিক্ষক সমিতি ফেডারেশনের নির্দেশনা মোতাবেক সারা দেশের সব পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের মতো ২৫ জুন থেকে ২৭ জুন অর্ধদিবস কর্মবিরতি পালন করে কুবি শিক্ষক সমিতি। দাবি আদায় না হওয়ায় ৩০ জুন পূর্ণ দিবস কর্মবিরতি পালন করে। পরবর্তী সময়ে ১ জুলাই থেকে কুবি শিক্ষক সমিতির সর্বাত্মক কর্মবিরতি ও ৪ জুলাই থেকে ১১ আগস্ট পর্যন্ত কোটা সংস্কার আন্দোলনকে কেন্দ্র করে মোট ৪২ দিন বন্ধ থাকে বিশ্ববিদ্যালয়টি।</p> <p>সিন্ডিকেটে ১২ জুলাই থেকে অনলাইনে শ্রেণি কার্যক্রম শুরু করার সিদ্ধান্ত নেওয়া হলেও সেটি বর্জন করে শিক্ষার্থীরা ১৮ আগস্টের মধ্যে সশরীরে শ্রেণি কার্যক্রম শুরুর আলটিমেটাম দেন। সে অনুযায়ী ১৮ আগস্ট বিশ্ববিদ্যালয় খুললেও দেশের ফেনী-কুমিল্লাসহ বিভিন্ন অঞ্চলে বন্যার ফলে আবারও প্রায় এক সপ্তাহ বিশ্ববিদ্যালয়ে ক্লাস-পরীক্ষা বন্ধ থাকে। সর্বশেষ ২৫ আগস্ট থেকে শুরু হয় ক্লাস-পরীক্ষা। তবে এর মধ্যে বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য, কোষাধ্যক্ষ, প্রক্টর, বিভিন্ন হলের প্রাধ্যক্ষসহ প্রশাসনিক পদসমূহ শূন্য থাকায় স্থবিরতা কাটছে না।</p> <p>শিক্ষার্থীদের সেশনজট নিরসনে প্রশাসন আসলে কোনো উদ্যোগ নিয়েছে কি না জানতে চাইলে উপাচার্যের পরিবর্তে কুবিতে দায়িত্বে থাকা অধ্যাপক ড. মো. জাকির ছায়াদউল্লাহ খান বলেন, ‘আমি দায়িত্ব নেওয়া পরপরই বিভাগীয় প্রধান এবং ডিনদের সঙ্গে একটি মিটিং করেছি। মিটিংয়ে সব বিভাগকে চিঠি দেওয়া হয়েছে প্রায় ছয় মাসের যে সেশনজট তা পুষিয়ে নেওয়ার জন্য পরিকল্পনা করতে। আশা করি শিক্ষার্থীদের যে প্রায় ছয় মাসের সেশনজট রয়েছে তা পূরণ করা সম্ভব হবে।’</p> <p> </p> <p> </p>