<p>মাত্র সাত-আট বছর আগেও যেখানে তিন ফসলি জমি ছিল, ছিল পানের বরজ, বিস্তীর্ণ সবুজ বন। কিন্তু সময়ের ব্যবধানে পাল্টে গেছে সেই দৃশ্য। পানের বরজ, সবজি ক্ষেত আগেই বিলীন হয়েছে। নিভু নিভু সবুজ বনও। এই দৃশ্য খুলনার পাইকগাছা উপজেলার কপিলমুনির রামনাথপুর গ্রাম। কপোতাক্ষের কোলঘেঁষা গ্রামটির জনবসতি এলাকায় এখন নতুন ইট তৈরির প্রস্তুতি চলছে। মৌসুম শুরু হতেই শুরু হয়েছে ভাটা শ্রমিকদের হাঁকডাক। একই সঙ্গে বাড়ছে স্থানীয়দের উদ্বেগ-উৎকণ্ঠা।</p> <p>স্থানীয়দের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, ২০০৫ সালের দিকে কপোতাক্ষ নদীসংলগ্ন এলাকায় ‘যমুনা ব্রিকস’ নামের একটি ইটভাটা শুরু করেন অখিলবন্ধু ঘোষ, মজিদ মোড়ল ও চিত্তরঞ্জন মণ্ডল। ২০১২ সালের ১ জুলাই থেকে আধুনিক জিগজ্যাগ কিলন ভাটা স্থাপনসহ সাতটি শর্তে অখিলবন্ধু ঘোষের নামে ভাটা পরিচালনার লাইসেন্স পান। ২০১৫ সালের ৩০ জুন ওই লাইসেন্সের মেয়াদ শেষ হলে অখিলবন্ধু ঘোষ ওই ভাটা থেকে সরে আসেন। তিনি ওই সময়ে জেলা প্রশাসক ও পরিবেশ অধিদপ্তরে লিখিতভাবে ভাটা পরিচালনা করবেন না বলে অবহিত করেন। ২০১৭ সালে ভাটামালিকরা পাশেই ‘যমুনা ব্রিকস-০২’ নামে আরেকটি ভাটা চালু করলেও প্রশাসনের হস্তক্ষেপে সেটি বন্ধ রযেছে। সর্বশেষ ভাটা থেকে চিত্তরঞ্জন মণ্ডল বিনিয়োগ প্রত্যাহার করায় মজিদ মোড়ল ভাটাটি পরিচালনা করছেন।</p> <p>স্থানীয় বাসিন্দাদের অভিযোগ, রামনাথপুরের ইটভাটার আশপাশে ঘন জনবসতি। এই গ্রামের ৫০-৬০ ঘর মৎস্যজীবীসহ দুই শ পরিবারের পাঁচ সহস্রাধিক মানুষের বসবাস। পাশেই মাহমুদকাটি গ্রাম। শুস্ক মৌসুমে ইট পোড়ানোর কারণে ধোঁয়া ও ছাইয়ে আছন্ন হয়ে পড়ে গোটা এলাকা। এতে মানুষের শ্বাসকষ্ট হয়। ক্ষতি হয় ফসলের। বিভিন্ন স্থানে প্রতিকার চেয়েও তারা সুফল পাননি। তাই এখন অনেকে কথা বলতে ভয় পান। পরিবেশের ওপর বিরূপ প্রভাব পড়ছে।</p> <p>নাম প্রকাশ না করার শর্তে রামনাথপুর ও মাহমুদকাটির বাসিন্দারা সাত থেকে আট বছর ধরে কষ্টের কথা বলেন। কিন্তু কোনো লাভ হয় না, বরং হয়রানির শিকার হন। তারা এ অবস্থা থেকে মুক্তি চান।</p> <p>যমুনা ব্রিকসের মালিক মজিদ মোড়ল ইটভাটার লাইসেন্স না থাকার বিষয়টি স্বীকার করেছেন। তিনি বলেন, ‘পরিবেশ অধিদপ্তরের অনুমতি না পাওয়ায় জেলা প্রশাসন লাইসেন্স নবায়ন করছে না। বিনিয়োগ ও মানুষের কর্মসংস্থানের কথা বিবেচনা করে অন্য মালিকদের মতো ভাটা পরিচালনা করছি। এরই মধ্যে একটি ইউনিট বন্ধ করা হয়েছে। লাইসেন্সের জন্য চেষ্টা অব্যাহত রয়েছে।’</p>