<p>টাঙ্গাইলের মির্জাপুরে শতাধিক ইটভাটায় ইট পোড়ানো শুরু হয়েছে। আইনের তোয়াক্কা না করেই সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের ম্যানেজ করে ভাটা মালিকরা তিন ফসলি আবাদি জমিতে এসব ইটভাটা তৈরি করে ইট পোড়াচ্ছেন বলে অভিযোগ উঠেছে। এই উপজেলার একটি পৌরসভা ও ১৪ ইউনিয়নে গত মৌসুমে ১০৭টি ভাটায় ইট তৈরি ও পোড়ানো হয়। চলতি মৌসুমে আরো সাতটি নতুন ইটভাটায় ইট তৈরি ও পোড়ানো শুরু হয়েছে।</p> <p>ইটভাটা মালিকদের মধ্যে কয়েকজন বলেছেন, ‘পত্রিকায় সংবাদ এলে কর্মকর্তাদের পকেট ভারী হবে। সংবাদের অজুহাতে তারা মোটা অঙ্কের টাকার দাবি জানাবেন। তবে ভাটা বন্ধ হবে না।’</p> <p>অন্যদিকে চলতি মৌসুমে চালু হওয়া নতুন অবৈধ সাত ইটভাটায় বিদ্যুৎ সংযোগ দেওয়া হচ্ছে। তা-ও আবার নতুন খুঁটি ও ১৫ কেবির ট্রান্সফরমার স্থাপন করা হয়েছে। ভাটা মালিকরা কৌশলে ব্যক্তি নামে এবং পুরাতন ভাটার নামে অনুমোদন করিয়ে পল্লী বিদ্যুতের কিছু কর্মকর্তার যোগসাজশে অবৈধ ইটভাটায় এসব সংযোগ নিচ্ছেন বলে খোঁজ নিয়ে জানা গেছে।</p> <p>জানা গেছে, বিদ্যুৎ সংযোগের আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে পল্লী বিদ্যুৎ মির্জাপুর অফিসের জুনিয়র ইঞ্জিনিয়ার রঞ্জিত কুমার সরকার সরজমিন পরিদর্শন শেষে প্রয়োজনীয় সব তথ্য ও কাগজপত্র সঠিক পাওয়ার পর লাইনপ্রাপ্তির সুপারিশ করার কথা। এরপর তিনি ফাইলে এজিএম এবং ডিজিএমর স্বাক্ষর নিয়ে টাঙ্গাইল কারিগরিতে পাঠাবেন। সেখান থেকে অনুমোদন হয়ে ঠিকাদারের মাধ্যমে খুঁটি ও ট্রান্সফরমার স্থাপন করার বিধান রয়েছে। এত নিয়ম-নীতির মধ্যেও অবৈধ ইটভাটায় খুঁটি ও ট্রান্সফরমার স্থাপনসহ বিদ্যুৎ সংযোগ দেওয়া হয়েছে।</p> <p>অবৈধ ইটভাটাগুলো হলো উপজেলার বহুরিয়া ইউনিয়নের বহুরিয়া গ্রামে আরবিসি ব্রিকস, এমএসবি ব্রিকস, বাটা ব্রিকস, চান্দুলিয়া গ্রামে এইচইউবি ব্রিকস, গোড়াই ইউনিয়নের দেওহাটা মল্লিকপাড়া গ্রামে সনি ব্রিকস, দেওহাটা পাথালিয়াপাড়া গ্রামে বিএন্ডবি ব্রিকস, দেওহাটা ও বাইমহাটী গ্রামে রান ব্রিকস। প্রত্যেক ইটভাটায় ১৪-২০ একর তিন ফসলি আবাদি জমি ব্যবহার করা হচ্ছে। এই নতুন ইটভাটা ছাড়াও এসব ভাটা মালিকদের একাধিক ইটভাটা রয়েছে। এক্ষেত্রে মানা হচ্ছে না পরিবেশ অধিদপ্তরের বিধিবিধান। এতে মারাত্মক স্বাস্থ্যঝুঁকিতে পড়েছে এ উপজেলার জনগণ।</p> <p>পরিবেশ অধিদপ্তর টাঙ্গাইল অফিস সূত্র জানায়, মির্জাপুর উপজেলায় গত মৌসুমে ১০৭টি ভাটায় ইট পোড়ানো হয়েছে। এ বছর আরও সাতটি ভাটা চালু করা হয়েছে। এ উপজেলায় ইটভাটার সংখ্যা দাঁড়ালো ১১৪টি। বনের ভেতর, নদীর পার দখল, বিদ্যালয়ের পাশ এবং তিন ফসলি জমি ওপর এসব ইটভাটা তৈরি করা হয়েছে। এরমধ্যে ৪৫টি ভাটার পরিবেশের ছাড়পত্র রয়েছে। বাকি ৬৯টি ভাটার পরিবেশসহ প্রশাসনিক ছাড়পত্র নেই। এসব ভাটার অধিকাংশ মালিক উচ্চ আদালতে রিট করে ভাটায় ইট তৈরি ও পোড়াচ্ছে বলে জানা গেছে।</p> <p>নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক ইটভাটা মালিকদের মধ্যে কয়েকজন বলেছেন, পত্রিকায় সংবাদ আসলে কর্মকর্তাদের পকেট ভারী হবে। সংবাদের অযুহাতে তারা মোটা অঙ্কের টাকার দাবি জানাবেন। তবে ভাটা বন্ধ হবে না।</p> <p>পল্লী বিদ্যুৎ মির্জাপুর অফিসের জুনিয়র ইঞ্জিনিয়ার রঞ্জিত কুমার সরকারের কাছে অবৈধ ইটভাটার সংযোগের বিষয়ে জানতে চাইলে বলেন, টাঙ্গাইলে আছেন তিনি। পরে কথা বলবেন বলে লাইন কেটে দেন তিনি।</p> <p>মির্জাপুর স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা. ফরিদুল ইসলাম বলেন, ‘জনবসতি কিংবা শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের পাশে ইটভাটা স্থাপনের ফলে অ্যালার্জি, কাশি, শ্বাসকষ্ট, নিউমোনিয়াসহ নানা ধরনের রোগে আক্রান্ত হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে।’</p> <p>পল্লী বিদ্যুৎ মির্জাপুর জোনাল অফিসের উপমহাব্যবস্থাপক মো. জসিম উদ্দিন বলেন, পুরাতন ভাটার নবায়কৃত ছাড়পত্র দিয়ে ভাটা মালিকরা সংযোগের আবেদন করেছেন। ওই সংযোগ নতুন ভাটায় দেওয়া হয়েছে বিষয়টি আমার জানা ছিল না। এ কারণে দুটি ভাটার সংযোগ আটকে দেওয়া হয়েছে। অন্য ভাটার বিষয়টি খোঁজ নিয়ে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে বলে তিনি জানান।</p> <p>পরিবেশ অধিদপ্তর টাঙ্গাইল অফিসের উপপরিচালক মিয়া মাহমুদুল হক জানান, এ উপজেলায় নতুন সাতটিসহ ১১৪টি ইট ভাটা রয়েছে। এরমধ্যে ৪৫টি ভাটার ছাড়পত্র থাকলেও ৬৯টি ইটভাটার ছাড়পত্র নেই। এসব ভাটার অধিকাংশ মালিক উচ্চ আদালতে রিট করেছেন বলে তিনি জানতে পারেন তিনি। নতুন সাত ইটভাটার তথ্য সংগ্রহ করা হয়েছে। এসব ভাটায় অভিযান পরিচালনার জন্য তথ্যসহ সুপারিশ করে প্রধান কার্যালয়ে পাঠানো হয়েছে। </p> <p>রিটের আদেশ কিংবা শুনানি হয়েছে কি না, এমন প্রশ্নে তিনি বলেন, নতুন যোগদান করেছেন তিনি। বিষয়টি খতিয়ে দেখবেন হবে বলে জানান।</p>