<p>রংপুরসহ উত্তরাঞ্চলজুড়ে শীতের প্রকোপ অনেকটাই বেড়েই চলছে। কয়েক দিন ধরে ঘন কুয়াশার সঙ্গে জেঁকে বসেছে শীত। এর ফলে ঠাণ্ডা বাড়ছে। আর হিমেল হাওয়ার কারণে শীতের দাপট বেড়েই চলছে। শীত থেকে রক্ষা পেতে খড়কুটো জ্বালিয়ে আগুন পোহাতে গিয়ে দগ্ধ হচ্ছে বেশি নারী ও শিশুরা। এই সময়ে অতিরিক্ত শীতে আগুনে দগ্ধ রোগীর সংখ্যা বাড়তে শুরু করেছে রংপুর মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের বার্ন ইউনিটে। গত পাঁচ বছরে আগুনে দগ্ধ হয়ে ১০৯ রোগীর মৃত্যু হয়েছে।</p> <p>গত ছয় দিনে আগুন পোহাতে গিয়ে ছয় নারী আগুনে দগ্ধ হয়ে হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন। এর মধ্যে একজনের অবস্থা আশঙ্কাজনক হওয়ায় তাঁকে উন্নত চিকিৎসার জন্য ঢাকায় স্থানান্তর করা হয়েছে এবং আরো দুজন আশঙ্কাজনক অবস্থায় রংপুর মেডিক্যাল কলেজের বার্ন ইউনিটে চিকিৎসাধীন। এর মধ্যে এক নারী মারা যান।</p> <p>পীরগঞ্জ উপজেলার ওসমানপুর গ্রামের জফুনা বেগম (৮৫) এবং দিনাজপুরের বিরল উপজেলার আলুবাড়ি গ্রামের গৃহবধূ পপি আক্তার আশঙ্কাজনক অবস্থায় রংপুর মেডিক্যালের বার্ন ইউনিটে চিকিৎসা নিচ্ছেন।</p> <p>বার্ন ইউনিটের প্রধান চিকিৎসক হামিদ পলাশ জানান, দুজন রোগীর শরীরের ৭০ শতাংশ দগ্ধ হয়েছে। তাঁদের শ্বাসনালি পুড়ে গেছে। সে কারণে ঢাকায় নেওয়ার পরামর্শ দেওয়া হয়েছে।</p> <p>অন্যদিকে ২০২০ ও চলতি ২০২৪ সালের ১৪ ডিসেম্বর পর্যন্ত রংপুর মেডিক্যাল কলেজের বার্ন ইউনিটে দুই হাজার ৭২৩ জন আগুনে পোড়া রোগী ভর্তি হয়েছে। এর মধ্যে মারা গেছে ১০৮ জন। তবে পোড়া রোগীদের মধ্যে নারী ও শিশুর সংখ্যাই বেশি। সচেতনতার অভাবে এসব দুর্ঘটনা ঘটছে বলে চিকিৎসকরা জানান।</p> <p>হাসপাতাল সূত্রে জনা যায়, বার্ন ইউনিটে ভর্তি রোগীর বেশির ভাগ আগুন, গরম পানি, গরম ছাই, বৈদ্যুতিক আগুন ও কেমিক্যালে পোড়া। আগুনে পোড়া রোগীদের বেশির ভাগের বাড়ি বিভাগের পঞ্চগড়, ঠাকুরগাঁও, দিনাজপুর ও নীলফামারী জেলায়। এ ছাড়া লালমনিহাট, কুড়িগ্রাম, গাইবান্ধা ও রংপুরের কিছু পোড়া রোগী রয়েছে।</p> <p>হাসপাতালের তথ্য অনুযায়ী ২০২০ সালে রংপুর মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের বার্ন ইউনিটে ৫৮৪ জন পোড়া রোগী ভর্তি হয়েছিল। এর মধ্যে শিশুর সংখ্যা ২০৯। ভর্তি রোগীদের মধ্যে আগুনে পোড়া ২৭০ জন, গরম পানিতে পোড়া ১৩৩ জন, গরম ছাইয়ে পোড়া ১৮ জন ও বৈদ্যুতিক আগুনে দগ্ধ ৫৪ জন। চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা গেছে ১৮ জন।</p> <p>২০২১ সালে মোট ৫২৮ জন পোড়া রোগী ভর্তি হয়। এর মধ্যে আগুনে পোড়া ১৭৮ জন, গরম পানিতে ২৫৫ জন, ছাইয়ের আগুনে ২৫ জন ও বৈদ্যুতিক আগুনে দগ্ধ ৭০ জন। পোড়া রোগীদের মধ্যে শিশু রয়েছে ১৭২ জন। এ সময় চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা গেছে ২২ জন।</p> <p>২০২২ সালে ভর্তি হয় মোট ৫৮৪ জন পোড়া রোগী। এর মধ্যে আগুনে পোড়া ২৮৮ জন, গরম পানিতে ২১২ জন, ছাইয়ের আগুনে আটজন ও বৈদ্যুতিক আগুনে দগ্ধ ৭৬ জন। পোড়া রোগীদের মধ্যে শিশু রয়েছে ১০৪ জন। এ সময় চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা গেছে ৩০ জন।</p> <p>২০২৩ সালে ভর্তি হয় মোট ৫২৩ জন পোড়া রোগী। এর মধ্যে আগুনে পোড়া ২৯০ জন, গরম পানিতে ২৫৫ জন, ছাইয়ের আগুনে ১০ জন ও বৈদ্যুতিক আগুনে দগ্ধ ৬৮ জন। তাদের মধ্যে শিশু ১১৫ জন। এ সময় চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা গেছে ৩৫ জন।</p> <p>২০২৪ সালের ১৪ ডিসেম্বর পর্যন্ত রংপুর মেডিক্যাল কলেজের বার্ন ইউনিটে ভর্তি হয় মোট ৫০৪ জন পোড়া রোগী। এদের মধ্যে আগুনে পোড়া ১৭৬ জন, গরম পানিতে ২৩৬ জন, ছাইয়ের আগুনে ২৮ জন ও বৈদ্যুতিক আগুনে দগ্ধ ৬৪ জন। পোড়া রোগীদের মধ্যে শিশু রয়েছে ১৭০ জন। এ সময় চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা গেছে তিনজন।</p> <p>রমেক হাসপাতালের বার্ন ও প্লাস্টিক সার্জারি বিভাগের চিকিৎসক শাহিন শাহ জানান, এবারের শীতে ছয়জন নারী দগ্ধ হয়ে ভর্তি হয়েছেন। এর মধ্যে দুজনের অবস্থা আশঙ্কাজনক। প্রতিবছর আগুন পোহাতে গিয়ে দগ্ধ এবং নিহতের সংখ্যা বাড়ছে।</p> <p>রমেক হাসপাতালের পরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল আশিকুর রহমান জানান, চিকিৎসাসেবা থেকে সাধারণ মানুষ যেন বঞ্চিত না হয় সেই ব্যবস্থা করে হয়েছে।</p> <p> </p>