<p style="text-align:left"><span style="font-size:10pt"><span style="font-family:Kantho"><span style="color:black"><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi">তীব্র গণ-আন্দোলন এবং গণবিক্ষোভে আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর মানুষের ভেতরে জমে থাকা ক্ষোভ, অসন্তোষ এবং বঞ্চনার প্রকাশ বিভিন্নভাবে প্রকাশ পায় এবং এখনো পাচ্ছে। এটি সত্য সব কিছু স্বাভাবিক হতে একটু সময় লাগে। আমাদের সবাইকে ধৈর্য সহকারে সব কিছু মোকাবেলা করতে হবে এবং কোনোক্রমেই আইনকে নিজের হাতে তুলে নেওয়া যাবে না। যে প্রত্যয় নিয়ে শিক্ষার্থী ও জনসাধারণ আন্দোলন করেছে সেই বৈষম্যহীন সমাজ যদি আমরা সত্যিকারভাবে তৈরি করতে চাই, তাহলে সময় দিতেই হবে। এক মাস কিংবা এক বছরেই এমন সমাজ তৈরি করার কর্মকৌশল প্রস্তুত করা সম্ভব নয়। এখন আমাদের প্রাথমিক কাজ আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতি স্বাভাবিক করা। কার্যত পুলিশের মনোবল ভেঙে পড়েছিল। আস্তে আস্তে পুলিশ বাহিনী স্বাভাবিকের দিকে এগিয়ে চলছে। অনেক থানায় এখনো আলাদা জায়গায় কাজ করতে হচ্ছে। আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতি আরো স্বাভাবিক হলে অনেক কিছুই স্বাভাবিক হবে। যেসব পরিবারের সদস্যরা নিহত হয়েছে তাদের ক্ষতিপূরণ করার সাধ্য কারো নেই। পরিবারগুলো সারা জীবন মানসিক কষ্ট ভোগ করবে। </span></span></span></span></span></p> <p style="text-align:left"><span style="font-size:10pt"><span style="font-family:Kantho"><span style="color:black"><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi">মানুষের ক্ষোভের প্রকাশ প্রতিহিংসায় এবং বঞ্চনার প্রকাশ দাবি আদায়ের মাধ্যমে প্রকাশ পেয়েছে। তাত্ক্ষণিকভাবে ক্ষোভের প্রকাশ  ভাঙচুর, লুটপাট এবং অগ্নিসংযোগের মধ্য দিয়ে হয়েছে। এমনটি হয়েছে তীব্র ক্ষোভের কারণে। বিভিন্ন স্কুল ও কলেজের প্রধান শিক্ষক এবং অধ্যক্ষের জোরপূবর্ক পদত্যাগের মাধ্যমে ক্ষোভের প্রকাশ পায়। অনেকের বিরুদ্ধে আর্থিক অনিয়ম, শিক্ষার্থী ও অভিভাবকদের সঙ্গে খারাপ ব্যবহার ইত্যাদি অনেক অভিযোগ রয়েছে। তবে তাদের বিরুদ্ধে উত্থাপিত অভিযোগগুলোর সত্যাসত্য যাচাই করা উচিত ছিল। যথাযথ কর্তৃপক্ষের কাছে আবেদন, স্মারকলিপি পেশ, বিক্ষোভ এবং আলটিমেটাম দিয়ে তাদের মোকাবেলা করা যেত। এমনকি আইনের আশ্রয়ও নেওয়া যেত। একটু সময় নিলে তেমন কোনো ক্ষতি হতো না।  কিন্তু শিক্ষার্থী ও সহকর্মীরা যেভাবে তাদের অসম্মান ও অপমান করেছে তা কাম্য ছিল না। অন্যায় করলে পরিবর্তিত পরিস্থিতিতে শাস্তি পেতেই হতো। একজন শিক্ষককে নিয়মতান্ত্রিকভাবে এবং আত্মপক্ষ সমর্থনের সুযোগ দিতে হবে। এমন কাজে আমাদের কোমলমতি শিক্ষার্থীদের ব্যবহার না হলেই ভালো হতো। কেননা তারা আগামী দিনে আমাদের সমাজ ও রাষ্ট্রকে নেতৃত্ব দেবে। স্বীকার করছি অল্প বয়স থেকে প্রতিবাদী হলে নিজেদের মধ্যে সংগ্রামী মনোভাব  তৈরি হয়। ন্যায়-অন্যায় বোধ জন্মে, যা আমাদের তরুণ প্রজন্মের মধ্যে লক্ষ করেছি। কিন্তু সেই বোধ নিয়মতান্ত্রিকভাবে হওয়া উচিত। </span></span></span></span></span></p> <p style="text-align:left"><span style="font-size:10pt"><span style="font-family:Kantho"><span style="color:black"><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi">বিভিন্ন পেশাজীবীর বঞ্চনার প্রকাশ আমরা দেখতে পাই সরকার পতনের পরপরই। অনেকের প্রমোশন দীর্ঘদিন আটকে রাখা হয়েছে। কাউকে কাউকে ওএসডি করা হয়েছিল। সরকার পতনের পর নিয়োগ চূডান্ত হওয়ার পরও নিয়োগ না দেওয়া, চাকরি স্থায়ী না হওয়া, ডিগ্রি নিয়ে জটিলতা ইত্যাদি বিষয় সামনে আসে। এরই মধ্যে সচিবালয়ে আনসার সদস্যদের আন্দোলন নিয়ে এক ভয়াবহ পরিস্থিতির তৈরি হয়। অন্তর্বর্তীকালীন সরকার পরিস্থিতি মোকাবেলা করতে সক্ষম হয়। সব কিছু দ্রুত সমাধান করা সম্ভব নয়। পদোন্নতিসংক্রান্ত বিষয় দ্রুত সমাধান করা গেছে। কেননা এখানে সব কিছু আগেই ঠিক করা ছিল, কিন্তু চাকরি স্থায়ীকরণ দ্রুত করা যায় না। আমরা লক্ষ করেছি সরকার অতিদ্রুত প্রশাসন এবং পুলিশে প্রমোশনের ব্যবস্থা করেছে। এতে সবার বঞ্চনার অবসান হয়েছে। কিন্তু সরকারকে সময় না দিলে অন্য সব কাজ করা সম্ভব নয়। </span></span></span></span></span></p> <p style="text-align:left"><span style="font-size:10pt"><span style="font-family:Kantho"><span style="color:black"><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi">বর্তমান সরকারের মূল কাজ অর্থনীতি সচল করা এবং একটি গণতান্ত্রিক ও জবাবদিহিমূলক সরকার গঠনের ব্যবস্থা করা। এর জন্য রাষ্ট্র সংস্কার করা দরকার। মাননীয় প্রধান উপদেষ্টা রাষ্ট্র সংস্কারের জন্য ছয়টি কমিশন করার ঘোষণা দিয়েছেন। আগামী ১ অক্টোবর থেকে কমিশন কাজ শুরু করবে। আমরা এ উদ্যোগকে সাধুবাদ জানাই।  </span></span></span></span></span></p> <p style="text-align:left"><span style="font-size:10pt"><span style="font-family:Kantho"><span style="color:black"><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi">অতীতের অনেক কিছু পরিহার করে আমাদের সামনে এগোতে হবে। সমাজনীতি, অর্থনীতি ও রাজনীতিতে যদি আমরা ভিন্নতা না আনতে পারি এবং সংস্কারে বিশ্বাসী না হই, তাহলে সব অর্জন ম্লান হয়ে যাবে। আমাাদের এখন প্রথম দরকার একটি স্থিতিশীল সমাজ, যেখানে কোনো অরাজকতা এবং নিরাপত্তাহীনতাবোধ থাকবে না। যে লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য নিয়ে অন্তর্বর্তীকালীন সরকার গঠিত হয়েছে আমরা যেন সেই লক্ষ্যে পৌঁছাতে পারি। কেউ যেন কোনো ধরনের বঞ্চনার শিকার না হয়। সমাজে কোনো ধরনের বৈষম্য যেন মাথাচাড়া দিয়ে উঠতে না পারে। </span></span></span></span></span></p> <p style="text-align:left"> </p> <p style="text-align:left"><span style="font-size:10pt"><span style="font-family:Kantho"><span style="color:black"><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi">লেখক : অধ্যাপক, সমাজকর্ম বিভাগ</span></span></span></span></span></p> <p style="text-align:left"><span style="font-size:10pt"><span style="font-family:Kantho"><span style="color:black"><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi">শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়</span></span></span></span></span></p> <p style="text-align:left"><span style="font-size:10pt"><span style="font-family:Kantho"><span style="color:black"><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:"Times New Roman","serif"">neazahmed_2002@yahoo.com</span></span></span></span></span></p> <p style="text-align:left"> </p> <p style="text-align:left"> </p>