<p><span style="font-size:11pt"><span style="font-family:"Calibri","sans-serif""><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi">আমি বিশ্বাস করি, ঢাকা ও দিল্লির সম্পর্ক ওয়াশিংটন ও লন্ডনের সম্পর্কের মতোই শক্তিশালী হতে পারত। ওয়াশিংটন-লন্ডনের মধ্যে রয়েছে এক বিশেষ সম্পর্ক, যা পারস্পরিক সম্মান ও বিশ্বাসের ভিত্তিতে গঠিত। কিন্তু ব্রিটেনের অভ্যন্তরীণ বিষয়ে যুক্তরাষ্ট্রের হস্তক্ষেপ করা অকল্পনীয়, একই কথা ফ্রান্স বা জার্মানির ক্ষেত্রেও প্রযোজ্য। </span></span></span></span></p> <p><span style="font-size:11pt"><span style="font-family:"Calibri","sans-serif""><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi">ভারত ও বাংলাদেশের মধ্যে একই ধরনের সম্পর্ক কেন নেই? সংক্ষিপ্ত উত্তর হলো, ভারত বাংলাদেশের ওপর আধিপত্য বিস্তার করতে চায় এবং শোষণ করে; প্রতিরক্ষা, কৌশলগত ও অর্থনৈতিক দৃষ্টিকোণ থেকে অযাচিত সুবিধা গ্রহণ করে। ভারত প্রায়ই বাংলাদেশের বৈধ প্রয়োজনের চেয়ে তার নিজের স্বার্থকে অগ্রাধিকার দেয়। এই মানসিকতা ১৯৪৭ সালে ভারতের স্বাধীনতার আগ থেকেই বিদ্যমান ছিল। </span></span></span></span></p> <p><span style="font-size:11pt"><span style="font-family:"Calibri","sans-serif""><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi">১৯৪৬ সালের মার্চ মাসে ব্রিটেনের তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী ক্লিমেন্ট অ্যাটলির অধীনে লেবার সরকার ভারতের সাংবিধানিক জটিলতা নিরসনের লক্ষ্যে একটি প্রতিনিধিদল পাঠায়, যা ক্যাবিনেট মিশন নামে পরিচিত। ক্যাবিনেট মিশন পাকিস্তান ধারণাকে প্রত্যাখ্যান করে, এর পরিবর্তে পুরো ভারতকে তিনটি অঞ্চলে বিভক্ত করে একটি ফেডারেল ভারতের প্রস্তাব দেয়</span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:"Times New Roman","serif"">—</span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi">ক. বর্তমান ভারত, খ. বর্তমান পাকিস্তান এবং গ. অখণ্ড বাংলা ও আসাম। মুসলিম লীগ এই পরিকল্পনা গ্রহণ করে, কিন্তু জওয়াহেরলাল নেহরুর নেতৃত্বে কংগ্রেস এই প্রস্তাব প্রত্যাখ্যান করে এবং একটি ঐক্যবদ্ধ ভারত চায় হিন্দু সংখ্যাগরিষ্ঠের ভিত্তিতে। ইতিহাসবিদরা একমত যে ক্যাবিনেট মিশনের ওই পরিকল্পনাটি সর্বোত্তম সমাধান হতে পারত। এতে ভারত-পাকিস্তানের মধ্যকার সম্ভাব্য বিভাজন ও তৎপরবর্তী যুদ্ধগুলো এড়ানো যেত এবং পশ্চিম ইউরোপের মতো একটি উপমহাদেশ তৈরি হতে পারত। উপরন্তু বর্তমান ভারতই হতো আঞ্চলিক নেতা। কংগ্রেসের সংকীর্ণ মানসিকতার কারণে এটি সম্ভব হয়নি। </span></span></span></span></p> <p><span style="font-size:11pt"><span style="font-family:"Calibri","sans-serif""><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi">দুঃখজনকভাবে একই ভারতীয় মনোভাব আজও বিরাজমান। গত ১৫ বছরে ভারত বাংলাদেশের জনগণের ইচ্ছা ও আকাঙ্ক্ষাকে উপেক্ষা করে একটি নির্মম স্বৈরাচারকে সমর্থন করেছে, যার ফলে ভারতবিরোধী অনুভূতি ব্যাপকভাবে ছড়িয়ে পড়েছে। আফগানিস্তান, পাকিস্তান, নেপাল, মালদ্বীপসহ অন্যান্য প্রতিবেশীর সঙ্গেও ভারতের সম্পর্ক খারাপ। </span></span></span></span></p> <p><span style="font-size:11pt"><span style="font-family:"Calibri","sans-serif""><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi"><img alt="বাংলাদেশ-ভারত সম্পর্ক হোক সমতা ও সম্মানের" height="219" src="https://cdn.kalerkantho.com/public/news_images/share/photo/shares/1.Print/2024/09.September/28-09-2024/3.jpg" style="float:left" width="321" />ভারতের সঙ্গে আমাদের সম্পর্ক নির্ভর করে বাংলাদেশে গণতান্ত্রিক, না অগণতান্ত্রিক সরকার আছে তার ওপর। ২০০৭ সালে বাংলাদেশের তত্ত্বাবধায়ক সরকারের প্রকৃত প্রধান মঈন উদ্দিন আহমেদ যখন ভারতীয় নেতা প্রণব মুখোপাধ্যায়কে তাঁর অবস্থান সুরক্ষিত করার জন্য অনুরোধ করেছিলেন, সেটি ছিল খুবই লজ্জাজনক। আরো লজ্জাজনক ছিল যখন শেখ হাসিনার অধীনে একজন পররাষ্ট্রমন্ত্রী প্রকাশ্যে ভারতের কাছে হাসিনাকে ক্ষমতায় রাখতে সাহায্য চেয়ে অনুরোধ করার ব্যাপারটি, যেন বাংলাদেশ ভারতের একটি উপনিবেশ। শেখ হাসিনা নিজেই ঘোষণা করেছেন, </span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:"Times New Roman","serif"">‘</span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi">আমি ভারতকে এত কিছু দিয়েছি যে তারা আর কিছু ভাবতেও পারে না</span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:"Times New Roman","serif"">’</span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi">, যা ইঙ্গিত দেয় প্রধানমন্ত্রী হিসেবে তাঁর দায়িত্ব ছিল ভারতের স্বার্থ রক্ষা করা। এই মানসিকতা আমাদের দেশে এক ধরনের বিশ্বাস তৈরি করেছিল যে ভারতকে খুশি না করে বাংলাদেশ বাঁচতে পারবে না। কিন্তু ৫ আগস্ট দেশের মানুষ ছাত্রদের নেতৃত্বে এটি ভুল প্রমাণিত করেছে। </span></span></span></span></p> <p><span style="font-size:11pt"><span style="font-family:"Calibri","sans-serif""><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi">আমরা ১৭ কোটি মানুষের একটি জাতি। আমাদের শক্তি জাতীয় ঐক্য, গণতন্ত্র, বিচারিক স্বাধীনতা, আইনের শাসন, অর্থনৈতিক উন্নয়ন এবং সাংবিধানিকতায় নিহিত। এই মূল্যবোধগুলো রক্ষা করে আমরা সম্মান ও আত্মমর্যাদার সঙ্গে যেকোনো আঞ্চলিক বা বৈশ্বিক শক্তির সঙ্গে যুক্ত হতে পারি। </span></span></span></span></p> <p><span style="font-size:11pt"><span style="font-family:"Calibri","sans-serif""><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi">বছরের পর বছর ধরে ভারতের সঙ্গে আমাদের সম্পর্ক উল্লেখযোগ্য চ্যালেঞ্জের মুখোমুখি হয়েছে। ১৯৭৫ সালের মে মাসে ভারত সরকার মুজিব সরকারকে বিভ্রান্ত করে </span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:"Times New Roman","serif"">‘</span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi">পরীক্ষামূলকভাবে</span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:"Times New Roman","serif"">’</span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi"> ফারাক্কা বাঁধ প্রকল্প শুরু করেছিল। এই </span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:"Times New Roman","serif"">‘</span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi">পরীক্ষামূলক</span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:"Times New Roman","serif"">’</span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi"> প্রকল্প ৫০ বছর ধরে অব্যাহত রয়েছে মারাত্মক পরিবেশগত ক্ষতি করে, বিশেষ করে বাংলাদেশের উত্তর-পূর্বাঞ্চলের রাজশাহী অঞ্চলে। একসময়ের প্রবল পদ্মা নদী মাইলের পর মাইল শুকিয়ে গেছে, বর্তমান প্রজন্ম হয়তো এর সাবেক মহিমা সম্পর্কে কিছুই জানে না। তা ছাড়া আমরা তিস্তা নদীর ন্যায্য অংশ থেকেও বঞ্চিত হয়েছি, যা এখন চীন ও ভারতের মধ্যে একটি বিতর্কের বিষয়। </span></span></span></span></p> <p><span style="font-size:11pt"><span style="font-family:"Calibri","sans-serif""><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi">আমরা ভারতকে ট্রানজিট ও ট্রানশিপমেন্ট অধিকার দিয়েছি আমাদের সার্বভৌমত্বকে আপস করে। জাতি জানে না যে এর বিনিময়ে কী সুবিধা পাওয়া গেছে, যদিও পূর্ববর্তী সরকার বলেছিল যে এটি নাকি বাংলাদেশকে নতুন সিঙ্গাপুরে রূপান্তর করবে। তা ছাড়া ভারতের সঙ্গে আমাদের করা অনেক চুক্তির শর্ত ও শর্তাবলি সম্পর্কে জনগণ খুব কমই জানে, যদিও আমাদের সংবিধানের ১৪৫এ অনুচ্ছেদ অনুসারে সব চুক্তি সংসদের সামনে উপস্থাপন করার দায় আছে। আমরা ভারতের সঙ্গে সীমান্ত ও আন্তর্জাতিক বাণিজ্যে ব্যাপক ক্ষতির শিকার হই। ভারতীয় সীমান্তরক্ষী বাহিনী (বিএসএফ) প্রায়ই আমাদের নাগরিকদের সীমান্তে অবাধে হত্যা করে। জনশ্রুতি আছে যে বাংলাদেশের প্রশ্নে ভারতের পররাষ্ট্রনীতি প্রধানত দেশটির গোয়েন্দা সংস্থা </span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:"Times New Roman","serif"">‘</span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi">র</span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:"Times New Roman","serif"">’</span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi">-এর দ্বারা প্রভাবিত হয়, যা সমস্যাযুক্ত। </span></span></span></span></p> <p><span style="font-size:11pt"><span style="font-family:"Calibri","sans-serif""><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi">দুটি স্বাধীন ও সার্বভৌম দেশের মধ্যে সমতা ও পারস্পরিক সম্মানের ভিত্তিতে আমরা ভারতের সঙ্গে প্রতিবেশীসুলভ ভালো সম্পর্ক চাই। আমরা আগের সরকারের ভারতের প্রতি নতজানু পররাষ্ট্রনীতির পুনরাবৃত্তি হোক, চাই না। আমাদের রাজনীতিবিদদের উপলব্ধি করা উচিত যে ভারত এককেন্দ্রিক কিছু নয়, বরং বৈচিত্র্যময়, বাংলাদেশের স্বার্থে এর বৈচিত্র্যময় সমাজের সঙ্গে আমাদের বোঝাপড়ায় যাওয়া উচিত। এটি করার জন্য আত্মবিশ্বাস তৈরি করতে হবে।</span></span></span></span></p> <p><span style="font-size:11pt"><span style="font-family:"Calibri","sans-serif""><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi">একবার আমরা আমাদের অভ্যন্তরীণ বিষয়গুলো মিটিয়ে ফেললে, আমাদের সঙ্গে করা সব চুক্তি ও চুক্তির অন্যায্য ধারাগুলো পুঙ্খানুপুঙ্খ পর্যালোচনা ও পুনঃসংযোজন করা উচিত হবে আমাদের সার্বভৌমত্ব, সম্মান ও আত্মমর্যাদাকে প্রতিষ্ঠিত করতে। </span></span></span></span></p> <p><span style="font-size:11pt"><span style="font-family:"Calibri","sans-serif""><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi">ঐতিহাসিকভাবে ভারতীয় রাজনৈতিক নেতৃত্ব প্রতিবেশী দেশগুলোতে আধিপত্য এবং শোষণ করার চেষ্টা করেছে, যার ফলে সম্পর্ক খারাপ ও বিরূপ হয়েছে। এটি ভারতের পররাষ্ট্রনীতির একটি অন্ধকার অধ্যায়। শেষ পর্যন্ত ভারতই এতে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। ভারত যত তাড়াতাড়ি এটি উপলব্ধি করবে, এটি ভারত ও তার জনগণ এবং হিমালয় পাদদেশস্থ উপমহাদেশের প্রতিবেশী দেশের জন্য কল্যাণকর হবে।</span></span></span></span></p> <p><span style="font-size:11pt"><span style="font-family:"Calibri","sans-serif""><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi">লেখক : বাংলাদেশের সুপ্রিম কোর্টের</span></span></span></span></p> <p><span style="font-size:11pt"><span style="font-family:"Calibri","sans-serif""><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi">সিনিয়র অ্যাডভোকেট। বর্তমানে ইংল্যান্ডে</span></span></span></span></p> <p><span style="font-size:11pt"><span style="font-family:"Calibri","sans-serif""><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi">ব্যারিস্টার হিসেবে কাজ করছেন</span></span></span></span></p>