<p><span style="font-size:11pt"><span style="font-family:"Calibri","sans-serif""><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi">তত্ত্বগতভাবে রাজনীতি এবং আদর্শ পাশাপাশি থাকার কথা থাকলেও বাস্তবে বাংলাদেশের রাজনীতিতে অনেক ক্ষেত্রে উল্টো স্রোত প্রবাহিত হয়। এখন আদর্শের নামে রাজনীতির মাঠে অভিনয় মঞ্চস্থ হয়। অনেক রাজনীতিক বিভিন্ন সময়ে ভিন্ন ভিন্ন চরিত্রে অভিনয় করছে। যখন যেমন অভিনয় করার দরকার ঠিক তেমনটি করে নিজেদের মানিয়ে নিচ্ছে রাজনীতিতে। আর সেই অভিনয়ে অনেক সময় মুগ্ধ হয়ে ভালো-মন্দ বিচার করতে পারছে না দেশের সাধারণ জনগণ। সাধারণত গণতান্ত্রিক ব্যবস্থায় জনগণ যেভাবে চায়, সেভাবেই রাষ্ট্রীয় ক্ষমতা কিংবা রাজনৈতিক ক্ষমতা নির্ধারিত হয়। কাকে ক্ষমতা দিতে হবে আর কাকে দিতে হবে না সেই বিচারটা নিশ্চয়ই জনগণ সূক্ষ্মভাবেই করে থাকে। </span></span></span></span></p> <p><span style="font-size:11pt"><span style="font-family:"Calibri","sans-serif""><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi">আমরা মনে করি, আমাদের দেশের বেশির ভাগ মানুষই রাজনীতিতে ভণ্ড নেতাদের অপছন্দের তালিকাতেই রাখেন। ভণ্ডামি আর ছল-চাতুরী পছন্দ করার সংখ্যা নিশ্চয়ই কম। ভোটারদেরও নিজস্ব একটি আদর্শ আছে। তারা দেখে-শুনে-বুঝে রাজনৈতিক অংশগ্রহণ করতে চায়। এমনকি সচেতন ভোটাররা সব সময়ই একটি সুন্দর গঠনমূলক রাজনীতি ও রাজনৈতিক ব্যবস্থার প্রত্যাশা করে থাকে। যেসব রাজনীতিবিদ জনগণের নিকট নিজের আদর্শ পরিষ্কার করতে পারেন না কিংবা আদর্শ চর্চার নামে অভিনয়ে লিপ্ত থাকেন, তাঁদের কোনোভাবেই জনগণ ইতিবাচক দৃষ্টিভঙ্গিতে দেখেন না। তবে ভোটারদের মধ্যেও এমন কিছু ভোটার রয়েছেন যাঁরা যথাযথ আদর্শিক অবস্থান গ্রহণ করতে পারেন না। এসব কারণে মোটাদাগে বলা যায়, রাজনীতি এখন দেশের বড় ব্যবসা। একজন ব্যবসায়ী যেমন অর্থের বিনিময়ে নির্দিষ্ট সময়ের জন্য হাট কিংবা বাজারের ইজারা নিয়ে সেখান থেকে খাজনা তুলে মুনাফা করার চেষ্টা করেন, তেমনি আমাদের দেশের রাজনীতির ক্ষেত্রটিও এখন ওই হাট কিংবা বাজারের মতো হয়ে দাঁড়িয়েছে। অনেক রাজনীতিবিদই হাট কিংবা বাজারের মতো নির্বাচনী এলাকা ইজারা নিয়ে পাঁচ বছরে মুনাফা করার চেষ্টায় উন্মত্ত থাকেন। আসলে রাজনীতির ভাবাদর্শ হলো, </span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:"Times New Roman","serif"">‘</span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi">রাজনীতিবিদরা নিজের খেয়ে বনের মোষ তাড়াবে।</span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:"Times New Roman","serif"">’</span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi"> কিন্তু বাস্তবে বাংলাদেশে সম্পূর্ণ এর উল্টো।  </span></span></span></span></p> <p><span style="font-size:11pt"><span style="font-family:"Calibri","sans-serif""><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi"><img alt="আদর্শবিচ্যুত রাজনীতিবিদরাই উদার গণতন্ত্রের বাধা" height="275" src="https://cdn.kalerkantho.com/public/news_images/share/photo/shares/1.Print/2024/10.October/30-11-2024/77.jpg" style="float:left" width="321" />নাগরিকরা এখন আদর্শিক রাজনীতিবিদ এবং ভণ্ড রাজনীতিবিদের মধ্যে পার্থক্য করতে পারছে না। বিশেষ করে বিগত সময়ে সংসদ নির্বাচনকেন্দ্রিক বাংলাদেশে মনোনয়নের রাজনীতিতে যে নোংরামি অবলোকন করছি তা থেকে প্রকৃত আদর্শিক রাজনীতিবিদ খুঁজে পাওয়া কঠিন। নির্বাচনী প্রতীকে ভোট করার লক্ষ্যে রাজনীতিকরা দীর্ঘদিন লালন করা আদর্শকে পদদলিত করতেও বিন্দুমাত্র দ্বিধা করেন না। এ ক্ষেত্রে দেশের প্রধান রাজনৈতিক দলগুলোও নিজেদের আদর্শের সঙ্গে দ্বিমুখী নীতি প্রয়োগ করে। বিপরীতমুখী রাজনৈতিক দল থেকে আসা রাজনীতিবিদকে সহজেই আরেকটি ঠাঁই দিচ্ছে এবং তত্ক্ষণাৎ দলে সুযোগ দেয়।</span></span></span></span></p> <p><span style="font-size:11pt"><span style="font-family:"Calibri","sans-serif""><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi">এ দেশের রাজনীতিতে একবার কোনো জনপ্রতিনিধি নির্বাচিত হলে তাঁকে আর কোনোভাবেই জবাবদিহির মধ্যে আনা যায় না। একবার একজন নির্বাচিত হলে পরে তাঁর নানা অপরাধ থাকা সত্ত্বেও বেশির ভাগ ক্ষেত্রে তাঁকেই মনোনয়ন দেওয়ার প্রবণতা লক্ষ করা গেছে। এটি কোনোভাবেই সুস্থ রাজনীতির লক্ষণ নয়। এতে ওই নেতার অপরাধপ্রবণতা বেড়ে যাওয়াটা অস্বাভাবিক কিছু নয়। আমাদের রাজনীতিকরা নির্বাচনী গণতন্ত্রকেও এমন জায়গায় নিয়ে গেছেন যে সেখানে ব্যক্তি ইমেজের কোনো মূল্য নেই। আর মূল্য নেই বলেই প্রতীক পাওয়ার লক্ষ্যে দলত্যাগের প্রবণতাও অধিক হারে লক্ষ করা যাচ্ছে। যদি তৃণমূলের পোড় খাওয়া সৎ রাজনীতিবিদরা ভোটারের কাছে সঠিক মূল্যায়ন পেতেন, তাহলে কিছুটা হলেও আদর্শবিবর্জিত রাজনীতির সংশোধন আসত। কিন্তু অর্থবিত্ত, পেশিশক্তি আর প্রতীক পরিচিতির রাজনীতির মানদণ্ডে আদর্শবাদীরা হেরে যাচ্ছেন।</span></span></span></span></p> <p><span style="font-size:11pt"><span style="font-family:"Calibri","sans-serif""><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi">এমনকি রাজনীতির সঙ্গে কোনো অতীত যোগাযোগ নেই। সুখে-দুঃখে দলকে এগিয়ে নেওয়ায় কোনো ভূমিকা কখনো রাখেননি তেমন ব্যক্তিরাও রাতারাতি মনোনয়ন পেয়ে যাওয়ার প্রবণতাও রাজনীতিকে কলুষিত করেছে। জাত-পরিচয় খুইয়ে হলেও ক্ষমতার সিঁড়িতে পা রাখতেই বেশ কিছু রাজনীতিবিদ দলত্যাগের নিকৃষ্টতম পর্যায়ে পৌঁছেছে। ক্ষমতার লোভে যেসব রাজনীতিবিদ আদর্শকে লাথি মেরে জাত-কুল-মান বিসর্জন দিতে পারেন, তাদের ব্যালট পেপারেই জবাব দিয়ে রাজনীতিকে শুদ্ধ করতে পারে একমাত্র ভোটাররাই। </span></span></span></span></p> <p><span style="font-size:11pt"><span style="font-family:"Calibri","sans-serif""><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi">এ ক্ষেত্রে তরুণ ভোটাররাই একটি দেশের ভোটের রাজনীতিতে প্রভাব বিস্তার করতে পারে। কিন্তু দলাদলি আর দলীয় মনোনয়নের বাইরে কোনো যোগ্য ব্যক্তি ভোটে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করে না বিধায় তরুণদেরও এ বিষয়ে আগ্রহ কমে গেছে। এমনকি তরুণদের মধ্যেও ইদানীং দলীয় মনোভাব বিরাজ করছে কিছু কিছু ক্ষেত্রে। এ কারণে আদর্শবিচ্যুতদেরও প্রতীক কিংবা দলীয় বিবেচনায় তরুণরা অনেক সময় ভোট দিয়ে থাকে। </span></span></span></span></p> <p><span style="font-size:11pt"><span style="font-family:"Calibri","sans-serif""><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi">তবে সচেতন তরুণসমাজকে প্রার্থী নির্বাচনে যথাযথ এবং ন্যায়সংগত ভূমিকা রাখতে হবে। তরুণ ভোটাররাই প্রার্থীদের ন্যূনতম আদর্শ অনুসন্ধানের দায়িত্বটা নিতে পারে। এ কারণে প্রয়োজনবোধে আইন করে রাজনৈতিক দলের প্রার্থী বাছাইয়ের ক্ষেত্রেও তরুণদের সম্পৃক্ত করার বিধান রাখা যেতে পারে। এর মাধ্যমে সাধারণ ভোটারদেরও বিশেষভাবে আকৃষ্ট করা যায়। কারণ তরুণদের সচেতন ভূমিকাই আদর্শবিচ্যুত রাজনীতিবিদদের মুখে চপেটাঘাত করতে পারে।</span></span></span></span></p> <p><span style="font-size:11pt"><span style="font-family:"Calibri","sans-serif""><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi">বাংলাদেশে উদার গণতন্ত্রের উপাদানগুলো সব সময়ই অনুপস্থিত। আর এই দীর্ঘ সময়ের অনুপস্থিত উপাদানগুলোর যথাযথ সংস্কার রাতারাতি সম্ভব নয়। এ ক্ষেত্রে খুব স্বাভাবিকভাবেই রাজনৈতিক সংস্কৃতিকে সম্পূর্ণভাবে ঢেলে সাজানোর বিষয়টি অগ্রাধিকার পায়, যা একটি দীর্ঘমেয়াদি প্রক্রিয়া। গণতন্ত্রের জন্য সবার আগে প্রয়োজন সুষ্ঠু নির্বাচনব্যবস্থা। কিন্তু শুধু এটাই যথেষ্ট নয়। সক্রেটিস বলেছিলেন, </span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:"Times New Roman","serif"">‘</span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi">নির্বাচনে সঠিকভাবে ভোট প্রদান করা একটি দক্ষতা, যা অন্যান্য বিদ্যার মতোই আয়ত্ত করতে হয়। একজন অন্ধ ব্যক্তিকে যদি ঝড়ে কবলিত সাগরে জাহাজ পরিচালনার দায়িত্ব দেওয়া হয়, তাহলে যে অবস্থার উদ্ভব হবে, জনগণের উপযুক্ত শিক্ষা ছাড়া ভোট প্রদানের ক্ষমতায় দেশের অবস্থা হয় ঠিক তেমনই।</span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:"Times New Roman","serif"">’</span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi"> ভবিষ্যতের চলার পথ মসৃণ করতে হলে অতীতের ভুল চিহ্নিত করে শিক্ষা নিতে হবে। মনে রাখতে হবে, ইতিপূর্বে সামাজিক, রাজনৈতিক, অর্থনৈতিক এবং ধর্মীয় বিধি-বিধানের অসমাঞ্জস্যতায় দেশের রাজনৈতিক উন্নয়নের পথ মসৃণ হয়নি। নানা প্রেক্ষাপটে গণতন্ত্রকে প্রাতিষ্ঠানিক রূপ দিতে আমরা ব্যর্থ হয়েছি। আমরা যে গণতান্ত্রিক ব্যবস্থা নির্মাণ করতে চাই, তার জন্য দরকার আইনের শাসন, স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিমূলক ব্যবস্থা। </span></span></span></span></p> <p><span style="font-size:11pt"><span style="font-family:"Calibri","sans-serif""><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi">আমরা জানি শুধু তথাকথিত তৃতীয় বিশ্ব নয়, উন্নত বিশ্বেও এখন গণতন্ত্রের ঘাটতি দেখা যাচ্ছে। উদাহরণ হিসেবে যুক্তরাষ্ট্রের কথাই বলা যায়। সেখানে নির্বাচন নিয়ে বিতর্ক হয়। কী সত্যি, কী মিথ্যা তা নিয়ে ধোঁয়াশা সৃষ্টি হয়। এমনকি তাদের রাজনৈতিক সংস্কারও ন্যায্যভাবে প্রতিষ্ঠার চ্যালেঞ্জ দেখা দেয়। সেখানকার গণতন্ত্রকেও এখন অনেকেই ডলারোক্র্যাসি আখ্যা দেয়। সেখানেও উগ্র গোষ্ঠীর তৎপরতা রয়েছে। বিভিন্ন দেশে রাজনৈতিক দলগুলোর পাল্টাপাল্টি টানাপড়েনে কিছু উগ্র গোষ্ঠীর অপতৎপরতা এবং সুযোগ নেওয়ার ঘটনা অনেক। পাশাপাশি কোনো বিশেষ আদর্শ বা দর্শনও সৃষ্টি হতে দেখা গেছে। </span></span></span></span></p> <p><span style="font-size:11pt"><span style="font-family:"Calibri","sans-serif""><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi">লেখক : অধ্যাপক, রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগ </span></span></span></span></p> <p><span style="font-size:11pt"><span style="font-family:"Calibri","sans-serif""><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi">রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়</span></span></span></span></p> <p><span style="font-size:11pt"><span style="font-family:"Calibri","sans-serif""><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:"Times New Roman","serif""><a href="mailto:sultanmahmud.rana@gmail.com" style="color:blue; text-decoration:underline">sultanmahmud.rana@gmail.com</a></span></span></span></span></p>