<p><span style="font-size:11pt"><span style="font-family:"Calibri","sans-serif""><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi">বড়দিন মানেই অনেকের কাছে খ্রিস্টানদের একটি বড় মহোৎসব। আর সে জন্যই দিনটি সরকারি ছুটির দিন। কোনো ঘটনাকে কেন্দ্র করে এই বড়দিন মহোৎসব এবং আমাদের জন্য এই ঘটনা কী শিক্ষা আনে, সেটিই আমাদের প্রতিপাদ্য বিষয়।</span></span></span></span></p> <p><span style="font-size:11pt"><span style="font-family:"Calibri","sans-serif""><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi">ঈশ্বর-সৃষ্ট সুখী মানুষ যখনই পাপ করে বসল, তখন শাস্তির পাশাপাশি ঈশ্বর মুক্তির প্রতিজ্ঞাও দিলেন। পবিত্র বাইবেলে উল্লেখ আছে যে এক নারীর বংশ শয়তানের মাথা চূর্ণ করবে (আদিপুস্তক ৩:২৫-১৬) অর্থাৎ নারী হওয়ার মধ্য দিয়ে এসেছে পাপ, ঈশ্বর-মনোনীতা আরেক নারীর মধ্য দিয়ে আসবে পরিত্রাণ। সেই নারীর গর্ভে হবে যার জন্ম, তাঁর মধ্য দিয়েই হবে পাপের অবসান, আসবে মানব পরিত্রাণ।</span></span></span></span></p> <p><span style="font-size:11pt"><span style="font-family:"Calibri","sans-serif""><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi">তাঁর আগমনে বাস্তবায়ন হবে শান্তি-সম্প্রীতি। প্রবক্তাদের মুখে শুনতে পাই : </span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:"Times New Roman","serif"">‘</span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi">সেদিন জেসে বংশের মধ্য থেকে বেরিয়ে আসবে একটি নতুন পল্লব, জেসে বংশের সেই শিকড় থেকে জন্ম নেবে একটি নতুন অঙ্কুর।...তখন নেকড়ে বাঘ মেষশাবকের সঙ্গে বাস করবে, চিতাবাঘ শুয়ে থাকবে ছাগলছানার পাশে। বাছুর আর সিংহের বাচ্চা একসঙ্গেই চরে বেড়াবে..গরু আর ভাল্লুক তখন মিলেমিশেই থাকবে, তাদের বাচ্চারাও পাশাপাশি শুয়ে থাকবে</span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:"Times New Roman","serif"">’</span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi"> (ইসাইয়া ১১:১-৮) একটি প্রতীকী ভাষায় প্রবক্তার মুখ থেকে আমরা পাই এই শান্তির প্রতীকী চিত্র : </span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:"Times New Roman","serif"">‘</span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi">...তখন এক জাতি আর অন্য জাতির বিরুদ্ধে তলোয়ার উঁচিয়ে দাঁড়াবে, রণকৌশল আর শিখবে না কখনো। (ইসাইয়া ১-৫)। মোটকথা, যিশুর আগমনে পৃথিবীর মানুষের মধ্যে বাস্তবায়ন হবে শান্তি-সম্প্রীতি, ভ্রাতৃমিলন, প্রেম-প্রীতি-ভালোবাসা। জেসে বংশের সেই অঙ্কুর, সেই পল্লব হলো প্রতিশ্রুত মসিহ যিশু; তাঁর আগমনে মানুষে মানুষে থাকবে শান্তি ও সম্প্রীতি; কেউই কারো ক্ষতি করবে না। যিশুর রাজ্য হবে শান্তির রাজ্য। প্রভুর রাজ্য হবে ধর্মরাজ্য, শান্তি সেখানে থাকবে চিরকাল।</span></span></span></span></p> <p><span style="font-size:11pt"><span style="font-family:"Calibri","sans-serif""><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi"><img alt="https://asset.kalerkantho.com/public/news_images/share/photo/shares/1.Print/2024/12 December/25-12-2024/2/kalerkantho-ed-1a.jpg" height="227" src="https://asset.kalerkantho.com/public/news_images/share/photo/shares/1.Print/2024/12 December/25-12-2024/2/kalerkantho-ed-1a.jpg" style="float:left" width="350" />সেই প্রতিশ্রুত মসিহর প্রতীকী-উপাধিকেন্দ্রিক বিশেষণযুক্ত নাম আমরা পাই প্রবক্তা ইসাইয়ার প্রাবক্তিক বাণীতেই, </span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:"Times New Roman","serif"">‘</span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi">কেননা আমাদের জন্য একটি শিশু জন্ম নিয়েছেন...তাঁকে ডাকা হবে অনন্য পরিকল্পক, পরাক্রমী ঈশ্বর, শাশ্বত জন্মদাতা, শান্তি-রাজ, এমনি সব নামে</span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:"Times New Roman","serif"">’</span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi"> (ইসাইয়া ৯:৬)। </span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:"Times New Roman","serif"">‘</span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi">শোনো, যুবতি নারীটি এখন সন্তান-সম্ভবা হয়েই আছে। সে এক পুত্রসন্তানের জন্ম দেবে। সে তার নাম রাখবে ইম্মানুয়েল। এই নামটির অর্থ ঈশ্বর আমাদের সঙ্গেই আছেন</span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:"Times New Roman","serif"">’</span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi"> (ইসাইয়া ৭:১৪)। </span></span></span></span></p> <p><span style="font-size:11pt"><span style="font-family:"Calibri","sans-serif""><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi">এখন থেকে ২০২৪ বছর আগে বেথেলহেমের গোশালায় ঈশ্বরের সেই প্রতিশ্রুতির পূর্ণতা নিয়ে জন্মেছিলেন সেই প্রতিশ্রুত মুক্তিদাতা, যিশুখ্রিস্ট। সেই যিশুর জন্ম ছিল একটি ভীষণ আনন্দের বার্তা। এই বার্তা উচ্চারিত হয়েছিল সরল-সহজ এক রাখাল দলের কাছে। বার্তাটি হলো : </span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:"Times New Roman","serif"">‘</span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi">আমি তোমাদের এক আনন্দের সংবাদ জানাতে এসেছি; এই আনন্দ জাতির সব মানুষের জন্যই সঞ্চিত হয়ে আছে। আজ দাউদ-নগরীতে তোমাদের ত্রাণকর্তা জন্মেছেন...তিনি সেই খ্রিস্ট, স্বয়ং প্রভু। এই চিহ্নে তোমরা তাঁকে চিনতে পারবে: দেখতে পাবে কাপড়ে জড়ানো, যাবপাত্রে শোয়ানো এক শিশুকে।</span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:"Times New Roman","serif"">’</span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi"> (লুক ২:১১-১২)।</span></span></span></span></p> <p><span style="font-size:11pt"><span style="font-family:"Calibri","sans-serif""><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi">এই যিশুর জন্মকে ঘিরেই বড়দিন উদযাপন। তাইতো প্রতি গির্জাঘরে, এমনকি পরিবারে, প্রতিষ্ঠানে দেখা যায় হাতের তৈরি গোশালা।</span></span></span></span></p> <p><span style="font-size:11pt"><span style="font-family:"Calibri","sans-serif""><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi">এক আনন্দের সংবাদ বলেই স্বর্গদূতবাহিনী গেয়ে উঠেছিল, </span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:"Times New Roman","serif"">‘</span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi">জয় ঊর্ধ্বলোকে পরমেশ্বরের জয়! ইহলোকে নামুক শান্তি তাঁর অনুগৃহীত মানবের অন্তরে!</span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:"Times New Roman","serif"">’</span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi"> তাই বড়দিন, মানুষের সঙ্গে ঈশ্বরের মিলনের দিন, যেন মানুষ ঈশ্বরময় হয়ে ওঠে। আর মানুষ যেন মানুষের সঙ্গে শান্তি-মিলন ঘটিয়ে শান্তিময়, মিলনময় হয়ে ওঠে। </span></span></span></span></p> <p><span style="font-size:11pt"><span style="font-family:"Calibri","sans-serif""><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi">বাংলাদেশের মানুষ উৎসবপ্রিয়। আমরা ধর্মীয়, সামাজিক, রাষ্ট্রীয় ঘটনাকে কেন্দ্র করে উৎসব করে থাকি। বড়দিন খ্রিস্টবিশ্বাসীদের জন্য একটি প্রধান ধর্মীয় উৎসব। তাই এই বড়দিন ঘিরে উৎসবে মেতে ওঠে বাংলাদেশি খ্রিস্টবিশ্বাসীরা। আনন্দগানে, খাবার, অতিথি আপ্যায়ন. আশীর্বাদ দেওয়া-নেওয়ার মাধমে। বড়দিনে গির্জাঘর সাজানো হয়। তৈরি করা হয় প্রতীকী-গোশালা, যেখানে শায়িত শিশু যিশুর প্রতিকৃতি। মূলত এই গোশালাই হলো কেন্দ্রীয় আকর্ষণ। কারণ এই নবজাত যিশুকে ঘিরেই তো বড়দিন মহোৎসব।</span></span></span></span></p> <p><span style="font-size:11pt"><span style="font-family:"Calibri","sans-serif""><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi">ধর্মীয় অনুষ্ঠান ও কীর্তন শুরু হয় ২৪ ডিসেম্বর রাতে বড়দিনের উপাসনা বা খ্রিস্টযাগ (নামাজ)। ২৫ ডিসেম্বর দিনের বেলা আড়ম্বরপূর্ণ মহাখ্রিস্টযাগ (নামাজ)। রাতে ও দিনে উপাসনার পরই শুরু হয় উল্লাসভরা আনন্দ-কীর্তন, যা বড়দিনের একটি বিশেষ আকর্ষণ। কীর্তনের কথাগুলো যিশুর জন্ম-ঘটনাকে কেন্দ্র করে। </span></span></span></span></p> <p><span style="font-size:11pt"><span style="font-family:"Calibri","sans-serif""><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi">বড়দিনের খাওয়াদাওয়া হলো চিতই, বিক্কে, পাটিসাপটা, পুলি পিঠা, ভাপা পিঠা এবং আরো হরেক রকমের পিঠা। পিঠার আসরে যোগ দেন অন্য ধর্মাবলম্বী ভাইবোনেরাও। এক আন্তর্ধর্মীয় পরিবেশ! </span></span></span></span></p> <p><span style="font-size:11pt"><span style="font-family:"Calibri","sans-serif""><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi">বড়দিনে এবং বড়দিনের পর আট দিন ধরে চলে আত্মীয়দের বাড়ি যাওয়া এবং বড়দিনের সাক্ষাৎ, আহার, শুভেচ্ছা বিনিময় ইত্যাদি। </span></span></span></span></p> <p><span style="font-size:11pt"><span style="font-family:"Calibri","sans-serif""><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi">বড়দিনের শিক্ষা যা সর্বজনীন। যিশুর জন্মকে ঘিরে আমাদের জন্য শিক্ষা : ১. যিশু কোনো কিছুতেই আসক্ত ছিলেন না; তিনি ঊর্ধ্ব থেকে নেমে এলেন মর্ত্যলোকে; মানবসেবায়, মানব-পরিত্রাণ কাজে ব্যাপৃত থাকতে। </span></span></span></span></p> <p><span style="font-size:11pt"><span style="font-family:"Calibri","sans-serif""><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi">আমরা যেন উদার হই, অন্যের প্রয়োজনের প্রতি মনোযোগী হই। ২. তাঁর জন্মের জন্য জায়গা জোটেনি। কত শত মানুষ গৃহহারা। তাদের প্রতি যেন মনোযোগী হই. বাস্তব পদক্ষেপ গ্রহণ করি। ৩. জীর্ণ গোশালায় জন্ম। দারিদ্র্যকে আলিঙ্গন করলেন। ৪. দূত রাখালদের কাছে শুভ সংবাদ নিয়ে এসেছিল। আমরা হলাম সুসংবাদ বাহক। আমাদের জীবনটা যেন কথা বলে। ৫. রাখালদল সরল সহজ, স্বচ্ছ মানুষ যিশুকে দেখতে পায়। আমরা কি সহজ সরল সানুষ? ৬. ইহলোকে নামুক শান্তি। বড়দিন শান্তি-সম্প্রীতির দিন। বাংলাদেশে, পৃথিবীতে শান্তি-সম্প্রীতি ভীষণ প্রয়োজন। </span></span></span></span></p> <p><span style="font-size:11pt"><span style="font-family:"Calibri","sans-serif""><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi">আসুন, এই বড়দিনে বিশেষভাবে শান্তির জন্য প্রার্থনা করি। সম্প্রীতি নিয়ে পরিবারে, সংস্থায় আন্তর্ধর্মীয় পরিসরে শান্তি-সম্প্রীতি গড়ে তুলি। মুসলিম হিন্দু বৌদ্ধ খ্রিস্টান সবার প্রতি শুভ বড়দিনের শুভেচ্ছা। শুভ বড়দিন! </span></span></span></span></p> <p> </p> <p><span style="font-size:11pt"><span style="font-family:"Calibri","sans-serif""><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi">লেখক : ক্যাথলিক ধর্মযাজক ও নির্বাহী সচিব জাতীয় আন্তর্ধর্মীয় সংলাপ কমিশন</span></span></span></span></p>