<p><span style="font-size:11pt"><span style="font-family:"Calibri","sans-serif""><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi">আমি আশাহত হই, যখন তরুণ প্রজন্মের রক্তের দামে এক ফ্যাসিস্টের পতন হওয়ার পরও দেখি, সমাজের সব ক্ষেত্রে পরজীবীর মতো আঁকড়ে আছে ছোট ছোট ফ্যাসিস্ট। শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান, রাষ্ট্রকাঠামো, গার্মেন্টস, চা-বাগান, অফিস-আদালত</span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:"Times New Roman","serif"">—</span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi">সবখানে। সর্বগ্রাসী এই ফ্যাসিবাদী কাঠামোর বিলোপ ঘটানো দুরূহ হলেও জুলাই বিপ্লব আমাদের সামনে এনে দিয়েছে এক সুবর্ণ সুযোগ। </span></span></span></span></p> <p><span style="font-size:11pt"><span style="font-family:"Calibri","sans-serif""><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi">রাষ্ট্রকাঠামোর টেকসই কোনো পরিবর্তন আনতে হলে, তার শুরু হতে হবে রাজনৈতিক দলের মধ্য থেকে। পারিবারিক ও বাণিজ্যিক গোষ্ঠীর কুক্ষিগত রাজনৈতিক ব্যবস্থা থেকে জনগণের স্বার্থে কাজ করতে হবে দলগুলোকে। টাকাওয়ালা ব্যাপারীদের হাত থেকে রাজনীতিকে উদ্ধার করতে হবে আমাদের। দ্বিতীয়ত, বাংলাদেশের মানুষের মৌলিক অধিকার যাতে কেউ আর হরণ করতে না পারে, সেই ব্যবস্থা করতে হবে। সাংবিধানিকভাবে দায়বদ্ধ একটি জনকল্যাণমূলক রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠা ছাড়া সব নাগরিকের অধিকার রক্ষা সম্ভব নয়। পাশাপাশি মানবিক মূল্যবোধের বিকাশ ঘটানোও প্রয়োজন। না হলে উগ্রবাদ ও অসহিষ্ণুতা আমাদের জাতীয় আকাঙ্ক্ষা বাস্তবায়নে অন্তরায় হবে। বৃহত্তর সামাজিক ও সাংস্কৃতিক আন্দোলনের মাধ্যমে আমাদের জাতীয় পরিচয়ের ভিত গড়তে হবে। বৈশ্বিক নানা সমীকরণের মাঝে পড়ে আমরা যেন উন্নত বিশ্বের পণ্যসামগ্রীর বাজার হয়ে শুধু না থাকি, সেই লক্ষ্যে মানবসম্পদ তৈরি করা জাতীয় অগ্রাধিকার হওয়া উচিত। দেশীয় শিল্পের বিকাশ, কৃষক-শ্রমিক শ্রেণির ওপর হওয়া বহুমাত্রিক শোষণের অবসান এবং দেশীয় জ্ঞান সৃষ্টির কাঠামো গড়তে না পারলে নতুন বাংলাদেশের স্বপ্ন বাস্তবায়ন স্থবির হয়ে পড়বে। সংস্কার ও পুনর্গঠনের তালিকা অনেক লম্বা, কিন্তু সময় সীমিত।</span></span></span></span></p> <p><span style="font-size:11pt"><span style="font-family:"Calibri","sans-serif""><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi"><img alt="তালিকা অনেক লম্বা, কিন্তু সময় সীমিত" height="246" src="https://asset.kalerkantho.com/public/news_images/share/photo/shares/1.Print/2024/11. january/16-01-2025/6.jpg" style="float:left" width="300" />নতুন এক রাজনৈতিক বন্দোবস্ত বিদ্যমান এই মিনিফ্যাসিস্টদের স্বার্থের সঙ্গে সাংঘর্ষিক। ইতিহাস  শিখিয়েছে, কোনো বন্দোবস্তই স্থায়ী হবে না, যদি না রাজনীতি জনগণমুখী হয়। মহান মুক্তিযুদ্ধে বাঙালির সীমাহীন আত্মত্যাগের বিনিময়ে অর্জিত বিজয়কে কলঙ্কিত করতেও আমাদের বেশি সময় লাগেনি। মুক্তিযুদ্ধের চেতনাকে দলীয় স্বার্থে বিকিয়ে দিতে মুহূর্তও দ্বিধা করেনি আওয়ামী লীগ। জুলাই বিপ্লবের রক্তিম প্রাপ্তিও যেন কারোর দলীয় বা ব্যক্তিস্বার্থে বিকিয়ে না যায়। </span></span></span></span></p> <p><span style="font-size:11pt"><span style="font-family:"Calibri","sans-serif""><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi">তবু আশাবাদী হতে চাই। এক নতুন বাংলাদেশের স্বপ্ন দেখতে চাই। কিন্তু প্রতিবার চোখে ভেসে আসে রাস্তায় পড়ে থাকা আমার বোনের রক্তাক্ত দেহ, সহপাঠীদের কাঁধে কলেজপড়ুয়া ছেলের লাশ, বুক-পিঠ ঝাঁঝরা গুলিতে ভরা যুবকের সাহসী মুখ আর উন্মত্ত জানোয়ারের মতো পুলিশ। ১৮ জুলাই নিজ ক্যাম্পাসের স্মৃতি তাড়িয়ে বেড়ায় আমাকে। জাতি হিসেবে ইতিহাস আমাদের বারবার ঠকিয়েছে। তবু প্রতিবার কিছু পাগলাটে তরুণের রক্তে রঞ্জিত রাজপথ। বায়ান্ন, উনসত্তর, একাত্তর, নব্বই, আঠারো, চব্বিশ আবার আমাদের পরিবর্তনের স্বপ্নে উজ্জীবিত করে। শহীদের রক্তের সঙ্গে এবার যেন বেঈমানি না করি, এইটুকু আশা আমার।</span></span></span></span></p> <p><span style="font-size:11pt"><span style="font-family:"Calibri","sans-serif""><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi">লেখক : শিক্ষার্থী, ব্র্যাক বিশ্ববিদ্যালয়</span></span></span></span></p> <p> </p>