ঢাকা, শুক্রবার ২৫ এপ্রিল ২০২৫
১২ বৈশাখ ১৪৩২, ২৫ শাওয়াল ১৪৪৬

ঢাকা, শুক্রবার ২৫ এপ্রিল ২০২৫
১২ বৈশাখ ১৪৩২, ২৫ শাওয়াল ১৪৪৬

বৈশাখ এলো রে

  • শুভ নববর্ষ। আজ পহেলা বৈশাখ। নতুন বছরের আগমনে দেশজুড়েই শুরু হয় আনন্দ উদযাপন। ফ্যাশন, খাবার, ঘর গোছানো, সাজসজ্জা থেকে শুরু করে ঘোরাঘুরিতে মেতে ওঠেন বাঙালিরা। বৈশাখের নানা আয়োজন নিয়ে সাজানো হয়েছে এবারের এটুজেড
অলকানন্দা রায়
অলকানন্দা রায়
শেয়ার
বৈশাখ এলো রে
মডেল : অর্থী সাজ : অরা বিউটি লাউঞ্জ ছবি : মেহেদি জামান শান্ত

উদিত রবির প্রথম আলোয় সূচনা হলো বাংলা নতুন বছর ১৪৩২। পুরনো সব গ্লানি ভুলে মেতে উঠুক সবার মনপ্রাণ। নতুন বছরের আনন্দধারায় সবাইকে জানাই শুভেচ্ছা। ‘শুভ নববর্ষ’।

নববর্ষ মানেই বাঙালির প্রাণ ফোয়ারায় সুর ছুটে বেড়ায়। ফেলে আসা নববর্ষের দিনগুলোর দিকে তাকালে চোখের সামনে ভেসে উঠবে লাল-সাদার ছটা, হাসিমুখের মানুষ আর চারপাশে এক উত্সবমুখর আমেজ। এখনকার মতো জাঁকজমক বা হাই ফ্যাশন তখন ছিল না। ছিল আন্তরিকতা আর সহজাত শোভা।

বৈশাখ এলো রে
মেকআপে রাখুন লাল টোনের লিপস্টিক, হালকা কাজল, আর ন্যাচারাল বেস

আগের দিনে বৈশাখ মানেই মেয়েদের সাজে থাকত সাদা শাড়ি আর লাল পাড়। সেটা হতে পারে মায়ের আলমারির সযত্নে রাখা শাড়ি, যেটা বিশেষ দিনেই বের হতো। চোখে হালকা মেঘলা কাজল, কপালে লাল টিপ, আর খোঁপায় এক গোছা গাঁদা ফুল। সাজটা যত না বাহারি, তার চেয়ে বেশি আপন ছিল দিনটির তাত্পর্য।

ছেলেরা? সাজসজ্জার বাহারে ছেলেরাও সাজত রংবেরঙের পোশাকে। তারা বেশির ভাগ সময় পরত সাদামাটা পাঞ্জাবি, আর কেউ কেউ আবার ধুতি-পাঞ্জাবির পক্ষে ছিলেন। কাঁধে রঙিন গামছা বা একটা হালকা চাদর ঝুলিয়ে যেতেন মেলা দেখতে। তখনকার সময় এটাই ছিল সবচেয়ে স্টাইলিশ। শিশুদের সাজের মধ্যে থাকত একরকম উচ্ছ্বাস।

ছোট্ট মেয়েরা খেলার ছলে শাড়ি জড়াত, ছেলেরা বাবার পাঞ্জাবি পরে আয়নায় নিজেকে হিরো ভাবত। সত্যি বলতে কি, তখনকার সাজে ছিল না বাহুল্য, কিন্তু ছিল একধরনের আত্মিক টান, যেটা এখনকার চাকচিক্যে হয়তো একটু হারিয়ে গেছে। কিন্তু স্মৃতিতে? ঠিকই আছে, সেই সাজ, সেই দিন, সেই বৈশাখ। স্মৃতির পাতা ওল্টাতে ওল্টাতে বলছিলেন সরকারি বাঙলা কলেজের রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগের সাবেক চেয়ারম্যান ইসরাত জাহান। তিনি বলেন, পহেলা বৈশাখ উদযাপনে বাঙালির সাজসজ্জার প্রভাব বেশ প্রাচীন, যা সময়ের সঙ্গে সঙ্গে বিবর্তিত হয়েছে। প্রথাগতভাবে নারীরা লাল পাড়ের সাদা শাড়ি পরিধান করতেন, যা বৈশাখের প্রতীকী রং হিসেবে বিবেচিত হয়ে আসছে। এই রঙের প্রচলনের পেছনে কয়েকটি ঐতিহাসিক কারণ রয়েছে। একটি মতানুসারে, মোগল আমলে খাজনা প্রদানের সময় লাল সালু কাপড় ব্যবহার করা হতো, যা থেকে লালের প্রচলন শুরু হয়। অন্যদিকে সাদা রং শুভ্রতার প্রতীক। এ ছাড়া হিন্দু নারীরা পূজা-পার্বণে সাদা-লাল শাড়ি পরতেন। যা বৈশাখের সাজে প্রভাব ফেলেছে বলেও গবেষকরা মনে করেন।

বৈশাখ এলো রে
কাঠবেলিতে জড়াতে পারেন বেণি। গোলাপে বাঁধুন খোঁপা অথবা হেয়ার ক্লিপে দিন ফ্লাওয়ার টাচ পোশাক : চিত্রাঙ্গদা 

রঙ বাংলাদেশের সৌমিক দাস বলেন,

‘বৈশাখে পুরনো দিনের প্রভাব থেকে বেরিয়ে এসেছে অনেকটাই। বর্তমানে স্টাইল এবং ফ্যাশনে পোশাক-পরিচ্ছদে এসেছে দারুণ পরিবর্তন। পোশাকের গায়ে লেগেছে বৈশ্বিক ছোঁয়া। রংবেরঙের জমিনে ফুটিয়ে তোলা হচ্ছে সময়ের প্রতিচ্ছবি। রিকশা পেইন্ট, বৈশাখী মোটিফ হাতি, ঘোড়া, মুখোশ, প্রকৃতি, নানা রকম ফুলের প্রতিকৃতি। শাড়ির জুড়ি ব্লাউজেও এসেছে লক্ষণীয় পরিবর্তন। লেইসের বাহারে লাল-সাদা ব্লাউজের সঙ্গে তাল মিলিয়ে জায়গা নিয়েছে নতুন নকশা। পুরনো দিনের বৈশাখী সাজে লাল পাড়ের সাদা শাড়ি, ফুলে সজ্জিত খোঁপা, কাচের চুড়ির সঙ্গে আধুনিক ফ্যাশনের ছোঁয়ায় সুতি বা জামদানি ও ফিউশন ব্লাউজে বৈশাখ উদযাপনে চমত্কার মানিয়ে যায়।

বৈশাখ এলো রে
শাড়ি হোক সুতির, জামদানি বা ব্লকপ্রিন্ট; রং হোক লাল, সাদা, হলুদ কিংবা কমলা। শাড়িতে মেটাল জুয়েলারি, হ্যান্ডপেইন্ট ব্যাগ সবই আজকের সাজের অংশ।

পুরুষদের পাঞ্জাবি, ফতুয়া, পাজামার ঝুল ও কাটিংয়েও এসেছে পরিবর্তন। তাদের পাঞ্জাবির কাপড় হোক খাদি, লিনেন বা হ্যান্ডলুম ডিজাইনে থাকতে পারে হালকা ব্লকপ্রিন্ট বা ফুলের মোটিফ। সাদার সঙ্গে রঙিন গামছা বা ওড়না যোগ করবে স্টাইল। জিন্স বা ধুতির সঙ্গে ম্যাচিং স্যান্ডেল বা স্লিপার চমত্কার মানায়। শিশুদের পোশাকে ও পোশাকের রঙে লাল-সাদার পাশাপাশি উজ্জ্বল রঙে দারুণ মানায়। আরামদায়ক সুতি কাপড়ের পোশাক এবং ফুলের অলংকার দিয়ে সেজে বেরিয়ে পড়তে পারে মা-বাবার সঙ্গে। ’

 

বৈশাখ এলো রে
পহেলা বৈশাখের পাঞ্জাবিতে ঐতিহ্যবাহী নকশা ফুটিয়ে তোলেন ডিজাইনাররা।  মডেল : তনয়; পোশাক : রঙ বাংলাদেশ

 

 

 

 

 

 

 

 

 

প্রাসঙ্গিক
মন্তব্য

সম্পর্কিত খবর

স্টাইলের ছোট্ট জাদু কানের দুল

    অনেক সময় সাজ-পোশাকে ছোট জিনিস বড় হয়ে ওঠে; যেমন—কানের দুল, যা নিমেষেই বদলে দিতে পারে পুরো লুক। লিখেছেন অলকানন্দা রায়
শেয়ার
স্টাইলের ছোট্ট জাদু কানের দুল
কানে একাধিক দুল পরেও স্টাইলে বৈচিত্র্য আনছেন তরুণীরা। মডেল : ইরা; ছবি : এটুজেড

ফ্যাশনের দুনিয়ায় কানের দুল দারুণ এক অনুষঙ্গ, আকারে ছোট হলেও যা বেশ কার্যকর। মুহূর্তেই বদলে দিতে পারে পুরো লুক। রুচিশীল তো বটেই, কখনো বোহেমিয়ান, কখনো বা একদম মিনিমাল কানের দুলে ফুটে ওঠে নারীর স্টাইল স্টেটমেন্ট। সময়ের সঙ্গে তাল মিলিয়ে এই ছোট্ট গয়নার ধরনেও এসেছে নানা বৈচিত্র্য।

ছোট্ট এক জোড়া কানের গয়না নারীর কাছে কেবল অলংকারই নয়, বরং তাঁর রুচি, সংস্কৃতি ও আত্মপ্রকাশের গুরুত্বপূর্ণ এক মাধ্যম।

যুগের বিবর্তনে কানের দুলও বিবর্তিত হয়েছে। এখনকার নারীরা যে ধরনের দুলই [স্টাড, হুপ, চেইন, ঝুমকা, চাংকি বা অ্যাসিমেট্রিক] কানে তোলেন না কেন, সেটিতেই ফুটিয়ে তুলছেন ব্যক্তিত্ব। স্টেটমেন্ট ইয়াররিংস যেমন সাহসী ও চটকদার লুক এনে দেয়, তেমনি মিনিমাল স্টাডস দেয় পরিমিত ও পরিশীলিত সৌন্দর্য।

আবার ট্রেন্ডের বাইরেও আছে ঐতিহ্যের টান। বিয়েবাড়ি কিংবা উত্সবে এখনো সোনার ঝুমকা, মুনকি বা নোলক পরার চল রয়েছে। এর সঙ্গে যুক্ত হচ্ছে আধুনিকতার ছোঁয়া। একই দুলে থাকে আধুনিক কাটিং ও ঐতিহ্যবাহী মোটিফের মিশেল।

দুইয়ের মেলবন্ধন নারীদের মনে এক ধরনের শিকড়ের টান তৈরি করছে। কানের দুল এখন আর কেবল ফ্যাশনের অনুষঙ্গ নয়, বরং সামাজিক ও সাংস্কৃতিক পরিচয়ও। যেমন—বিভিন্ন উপজাতি বা জনগোষ্ঠীর দুলে থাকে তাদের নিজস্ব ঐতিহ্যের প্রতিফলন। হাল ফ্যাশনে জায়গা করে নিয়েছে বিভিন্ন নৃগোষ্ঠীর নিজস্ব নকশায় তৈরি ট্রাইবাল বা বোহো দুল। এগুলো বেশ জনপ্রিয়ও।

আজকাল মেয়েরা রুপা বা সোনার দুলেই আটকে নেই। হাতে বানানো মাটির দুল তো আছেই, কাঠ, কড়ি, সুতা, রেসিন, এমনকি রিসাইকেল উপকরণ দিয়েও তৈরি হচ্ছে দারুণ সব ডিজাইনের দুল। যাঁরা পরিবেশসচেতন, তাঁদের কাছে এগুলো বিশেষ প্রিয়, যদিও কানের দুল কেবল নারীরাই পরেন, তা নয়। বহু আগেই তাতে ভাগ বসিয়েছেন পুরুষ। প্রাচীন ও মধ্য যুগের রাজা-বাদশাহদের কানেও একসময় শোভা পেত দুল। মাঝখানে পুরুষরা অনেকটাই মুখ ফিরিয়ে নিয়েছিলেন গয়না থেকে। ফ্যাশন বারবার বদলেছে। পুরুষরা ফের কানে তুলে নিয়েছেন দুল—স্টাইল, শিল্পচেতনা কিংবা নিজস্ব অবস্থান জানানোর মাধ্যম হিসেবে। অন্যদিকে নতুন প্রজন্মের মধ্যে অ্যাসিমেট্রিক ইয়াররিংস অর্থাত্ এক কানে এক রকম, আরেক কানে ভিন্ন ডিজাইনের দুল পরার চলও বাড়ছে। এটি যেমন সাহসী ফ্যাশন, তেমনি ব্যক্তিত্ব প্রকাশের এক ব্যতিক্রমী উপায়ও বটে।

কিশোরী মেয়েরা সাধারণত মজার, রংচঙে ও হালকা গয়না পছন্দ করে। ছোট স্টাডস, মজার আকৃতির দুল; যেমন—তারকা, হার্ট, কার্টুন চরিত্র কিংবা ছোট হুপ টাইপ দুল খুব মানিয়ে যায় তাদের। স্কুল-কলেজ পড়ুয়াদের খুব ভারী দুল না পরাই ভালো। তরুণ বয়সে এক্সপেরিমেন্ট করার সুযোগ থাকে বেশি। অ্যাসিমেট্রিক দুল, বড় হুপ, ঝুমকো, ট্রেন্ডি ট্রাইবাল ডিজাইন—সবই পরখ করে নিতে পারে তারা। ক্যাজুয়াল লুকের সঙ্গে ফানকি দুল আবার শাড়ি বা সালোয়ার-কামিজের সঙ্গে একটু ভারী ঝুমকা বেশ মানায়।

প্রাপ্তবয়স্ক নারীরা তাঁদের ফ্যাশনেও পরিপক্ব। অফিস, পার্টি বা সামাজিক অনুষ্ঠানে ভিন্ন ভিন্ন রকমের দুল দরকার হয় তাঁদের। অফিসে মিনিমাল স্টাডস বা পিয়ার্সিং হুপ, পার্টিতে স্টেটমেন্ট ইয়াররিংস, উত্সবে সোনার ঝুমকা বা ফিউশন ডিজাইন ভালো মানায়।

চল্লিশোর্ধ্ব ও পরিণত বয়সী নারীদের সাধারণত রুচিশীল ও ক্লাসি জিনিসের প্রতি টান থাকে। তাই সোনার নকশিদার দুল, মুক্তার দুল অথবা হালকা ঝুমকো টাইপ দুল, যা স্টাইলিশ কিন্তু চটকদার নয়, তাঁদের জন্য এমন দুলই মানানসই।

 

 

 

 

 

 

মন্তব্য

মেঝে থাক ঠিকঠাক

    ঘরের যত্নআত্তির ক্ষেত্রে সবচেয়ে সতর্ক থাকতে হয় মেঝে নিয়ে। হাঁটাচলাসহ নানামুখী কাজকর্মের সাক্ষী ও ভার বহন করে মেঝে। ধুলাবালি, নানা রকমের ময়লা বাসা বাঁধে মেঝের নানা কোণে। ঠিকঠাক পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন বা যত্ন না করলে রোগজীবাণুর ঠিকানা হয়ে উঠতে পারে মেঝে। মেঝের যত্নআত্তি নিয়ে লিখেছেন তাসনিয়া লস্কর
শেয়ার
মেঝে থাক ঠিকঠাক

কারো পরিচ্ছন্নতাবোধ ও রুচি বোঝা যায় তার বাড়ির মেঝে দেখে। মেঝে কতটা পরিচ্ছন্ন ও ঝকঝকে-তকতকে, তার ওপর নির্ভর করে ওই বাড়ির বাসিন্দাদের সুরক্ষাও। মেঝের ধরনভেদে তার যত্নও হয় ভিন্ন রকমের।

টাইল মেঝের যত্ন

ঘরের মেঝে টাইলের হলে মেঝের যত্ন নেওয়া বেশ সহজ।

তবে টাইলের জোড়াগুলোর ফাঁকে ফাঁকে ময়লা ঢুকে থাকে। নিয়মিত এগুলো পরিষ্কার না করলে ময়লা জমে নোংরা হয়ে যায়। প্রতিদিন তাই ঝাড়ু দিতেই হবে। রোগজীবাণু থেকে বাঁচতে প্রতিদিন একবার করে মুছে ফেলতে পারলে ভালো হয়।
ঘর ঝাড়ু ও মোছার জন্য এখন ইলেকট্রনিক রোবট কিনতে পাওয়া যায়। এগুলো নিজেরাই ঘুরে ঘুরে একটি বাসা পরিষ্কার করে ফেলতে পারে। এ ছাড়া বহুল প্রচলিত মপগুলো তো আছেই। সঙ্গে যোগ হয়েছে নানা ধরন ও ডিজাইনের ঝাড়ু বা ব্রাশ।
এগুলোর সাহায্যে না ঝুঁকে দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়েই কাজ সেরে নেওয়া যায়। ঘরের মেঝেকে পরিষ্কার করার জন্য এখন বিভিন্ন ধরনের ফ্লোর ক্লিনার পাওয়া যায়। এগুলোর ব্যবহারে ঘরের টাইল সহজে পরিষ্কার হয়। সুগন্ধও ছড়ায় বাসাজুড়ে। টাইলের মেঝে মোছার পর একটু পিচ্ছিল হয়ে যায়।
এ জন্য সাবধানে চলাফেরা করতে হয়। এসব ক্ষেত্রে টাইলস ক্লিনার ব্যবহার করাই শ্রেয়।

 

কার্পেটিং করা মেঝে

আজকাল অনেকেই বিদেশি আদলে ঘর সাজানোর জন্য পুরো ঘর কার্পেটিং করেন। সে ক্ষেত্রে কার্পেটিং মেঝে প্রতিদিন ক্লিন করা আরো বেশি জরুরি। না হলে খুব সহজেই দাগ, ময়লা বসে কার্পেট নষ্ট হয়ে যায়। এ ক্ষেত্রে পরিষ্কার করার একমাত্র উপায় হলো ভ্যাকুয়াম ক্লিনার।  ভ্যাকুয়াম ক্লিনার দিয়ে রেগুলার কার্পেট পরিষ্কার করতে হবে। কোনো প্রকার দাগ বসে গেলে কার্পেট ক্লিনার সলিউশন দিয়ে পরিষ্কার করে ফেলতে হবে।

 

মোজাইক মেঝে

একসময় বিত্তবানদের আভিজাত্যের প্রতীক ছিল মোজাইক করা মেঝে, যা এখন প্রায় হারিয়ে যাওয়ার পথে। এখনো যাদের বাড়িতে এই মেঝে আছে, তাদের যত্ন নিতে হবে একটু বিশেষভাবেই। প্রতিদিন ঝাড়ু দেওয়ার পাশাপাশি নিয়মিত ডিপ ক্লিন করতে হবে। এ ছাড়া অনেকের বাসায় থাকতে পারে সিমেন্টের মেঝে। এই মেঝের যত্নও টাইলের মেঝের মতো করে নিলেই হবে।

 

দারদাম, কোথায় পাবেন

রোবটিকস ক্লিনার কিনতে পাওয়া যায় বড় বড় ইলেকট্রনিক শপে। দাম কোয়ালিটিভেদে পাঁচ থেকে ১০ হাজার পর্যন্ত হতে পারে। এ ছাড়া ভ্যাকুয়াম ক্লিনারও কিনতে পারবেন ইলেকট্রনিক পণ্যসামগ্রীর দোকানে। তুলনামূলকভাবে দামি এই পণ্যটি ১০ থেকে ৪০ হাজার টাকার মধ্যে কিনতে পাওয়া যায়। বাকি সব মেঝে পরিষ্কার করার সাধারণ সরঞ্জাম; যেমন—ঝাড়ু, মপ, ব্রাশ স্থানীয় বাজারেই কিনতে পাবেন। সুপারশপ, এমনকি কিছু মুদি দোকানেও পাবেন। সাধ্যের মধ্যেই দরদাম করে কিনতে পারেন এসব সরঞ্জাম।

প্রাসঙ্গিক
মন্তব্য

সমুদ্র পেরিয়ে চর বিজয়ে

    গভীর সমুদ্রের বুকে জেগে ওঠা এক চরের নাম চর বিজয়। অতিথি পাখির কলকাকলি ও লাল কাঁকড়ার বিচরণে চমত্কার নৈসর্গিক দৃশ্যের অবতারণা হয়। দ্বীপটি ঘুরে এসে লিখেছেন সৈয়দ রেজওয়ানুল হাসান
শেয়ার
সমুদ্র পেরিয়ে চর বিজয়ে
চর বিজয় দ্বীপটি হয়ে উঠেছে অতিথি পাখির অভয়ারণ্য। ছবি : সংগৃহীত

বছর পাঁচেক আগের কথা। তখন ডিসেম্বরের শেষ সপ্তাহ। তীব্র শীত আমার খুবই পছন্দ। প্রতিবছর এই মৌসুমে দেশের কোথাও না কোথাও ভ্রমণ করাটা যেন আমার জন্য বাধ্যতামূলক।

এরই ধারাবাহিকতায় দুই দিন ধরে ঘুরে বেড়াচ্ছি পটুয়াখালীর এখানে-সেখানে।

এর মধ্যে কুয়াকাটা সৈকতের একটি বোট কাউন্টার থেকে জানতে পারলাম এক অদ্ভুত দ্বীপের কথা। নাম ‘চর বিজয়’। ইংরেজিতে ‘ভিক্টোরি আইল্যান্ড’।

এটি অধিভুক্ত বঙ্গোপসাগরের তট থেকে বিচ্ছিন্ন ছোট্ট একটি দ্বীপ, যা স্থানীয় জেলেদের কাছে ‘হাইরের চর’ (মাছ ধরার নির্ধারিত সীমানা)। সেখানে নেই কোনো জনবসতি। আছে শুধু ঝাঁকে ঝাঁকে লাল কাঁকড়ার দল আর বিভিন্ন প্রজাতির সহস্র অতিথি পাখি। এর আশপাশের স্বচ্ছ পানিও হয়ে উঠেছে অসংখ্য সামুদ্রিক মাছের আবাসস্থল, যেখানে প্রতিদিন সমুদ্রের বুক চিরে হয় নয়নাভিরাম সূর্যোদয় আর মায়াবী সূর্যাস্ত।
গভীর সমুদ্রপথে সেই আজব দ্বীপে পৌঁছতে সময় লাগে প্রায় আড়াই ঘণ্টা। এসব শুনে ভ্রমণের নেশা উঠল তুঙ্গে।

পরদিন সকাল ৯টায় সৈকতের একটি কাউন্টার থেকে ট্যুরিস্ট বোটের টিকিট নিলাম। মূল্য জনপ্রতি ৪০০ টাকা (তখনকার ভাড়া)। যাত্রী সব মিলিয়ে ১০ জন।

ইঞ্জিনচালিত ট্যুরিস্ট বোটটি তীরে ভিড়তে পারে না। একটি ছোট্ট ডিঙিতে চেপে একটু দূরে নোঙর করা বোট পর্যন্ত যেতে হয়। সেখান থেকেই শুরু হয় আসল যাত্রা।

উত্তেজনা দ্রুত বাড়ছে। যাচ্ছি সাগরকন্যা কুয়াকাটার পূর্বে, গঙ্গামতীর জঙ্গলের দক্ষিণ-পূর্ব কোণে, প্রায় ৪০ কিলোমিটার দূরে, যেখানে বঙ্গোপসাগরের বুকে নিজের অস্তিত্বের জানান দিয়েছে এক চোখ জুড়ানো দ্বীপ। ট্যুরিস্ট বোট রওনা হলো গন্তব্যের পানে।

সমুদ্র পেরিয়ে চর বিজয়ে

বোট চলছে। আমরা কুয়াকাটার স্থলভাগ থেকে পুরোপুরি বিচ্ছিন্ন হয়ে ঢুকে পড়েছি এক অন্য জগতে। পরিচিত শহুরে পরিবেশ থেকে সম্পূর্ণ আলাদা এক নীল জলের জগত্। নগরের কোলাহল থেকে বহুদূরের নিবিড়, শান্ত আর স্থির সেই স্বর্গরাজ্য। রীতিমতো যেন সূত্র ধরে, অঙ্ক কষে, একটির পর একটি ঢেউ এসে মুগ্ধতা ছড়িয়ে ভেঙে দিয়ে যাচ্ছে সব নীরবতা। অবিরত সেই ঢেউগুলো অতিক্রম করে এগিয়ে যাচ্ছি আমরা। মনে হচ্ছিল, যেন এক মায়াবী মগ্নতায় হারিয়ে যাচ্ছি। এর মধ্যেই ধীরে ধীরে বোটচালক ও তাঁর সহকারী খুব অস্থির ও চিন্তিত হয়ে উঠছিলেন। কিছুক্ষণের মধ্যে বুঝতে পারলাম আক্ষরিক অর্থেই হারিয়ে গিয়েছি আমরা। মানে, পথ ভুল করে ফেলেছি। বোট থামিয়ে দিক নির্ধারণের চেষ্টা চলছে। চারদিকে কোনো কূল-কিনারা নেই। সব দিক দেখতে একই রকম। কাউকে জিজ্ঞেস করারও উপায় নেই। এখন উপায়? সিদ্ধান্ত হলো, মাছ ধরার কোনো নৌকার দেখা পেলে সেই মাঝিদের সাহায্য নেওয়া হবে। 

এই ভেবে বোটের ইঞ্জিন আবার স্টার্ট দেওয়া হলো। কিন্তু সেটি ঠিকভাবে এগোতে পারছে না। মনে হচ্ছে, গভীর সমুদ্রের কোনো অতিপ্রাকৃত শক্তি আমাদের বোটটি টেনে ধরছে। সবার মধ্যে অচেনা আতঙ্ক ভর করেছে! এসব কী হচ্ছে? এখন কী হবে? তখনই আমার নজর গেল বোটের বাঁ পাশে বেঁধে রাখা ডিঙি নৌকার ওপর। সেটি সমুদ্রে ডুবে গেছে। রশি দিয়ে বাঁধা ছিল বলে তলিয়ে যায়নি, যার কারণে ট্যুরিস্ট বোটটির ইঞ্জিন হিমশিম খাচ্ছিল। অবস্থা কিছুটা বেগতিক দেখে আমাদের ১০ জনকে দেওয়া হলো মাত্র চারটি লাইফ জ্যাকেট, যা আমাদের ভয়কে আরেক দফা উসকে দিল। যা হোক, অনেক চেষ্টা করে ডিঙিটিকে পানি থেকে তোলা হলো। জমে থাকা পানি সেচতে খানিকটা সময় লাগল।

এর পরই ঘটল আরেক বিপত্তি। ইঞ্জিন স্টার্ট নিচ্ছে না। গভীর সমুদ্রের বিশাল এলাকাজুড়ে ছড়িয়ে রাখা মাছের জালে ফেঁসে গেল প্রপেলার। একজন ঝাঁপিয়ে পড়লেন সমুদ্রে। ডুব দিয়ে প্রপেলার থেকে জালের জট খোলার চেষ্টা শুরু করলেন। একটু পর পর পানির ওপরে এসে নিঃশ্বাস নিয়ে আবারও ডুব দিয়ে তাঁর চেষ্টা অব্যাহত রাখলেন। অবশেষে শ্বাসরুদ্ধকর সেই অপারেশনে সফলতা ধরা দিল।

এবার সঠিক দিক খুঁজে পাওয়ার পালা। বেশ কয়েক কিলোমিটার পর দু-একটি নৌকা পাওয়া গেল। তাদের দেওয়া ভুল নির্দেশনায় আমরা আরো ঘণ্টা দুয়েক সমুদ্রের এদিক-সেদিক ছোটাছুটি করলাম। শেষমেশ এক মাঝির হাতের ইশারায় সঠিক পথের সন্ধান পাওয়া গেল। আড়াই ঘণ্টার পথ সাড়ে চার ঘণ্টায় পাড়ি দিয়ে দৃষ্টিসীমায় একটু একটু করে ধরা দিল চর বিজয়। আহ্ শান্তি।

চর বিজয় আদতে একটি দ্বীপ। দুই চোখ যত দূরে যায়, তার চেয়েও দূর পর্যন্ত বিস্তৃত এই দ্বীপ। মানুষের উপদ্রব না থাকায় পূর্ণ স্বাধীনতায় প্রাকৃতিক সৌন্দর্যে সেজে আছে এখানকার সব কিছু। এই চরে দখলবাজের ভূমিকায় রয়েছে অসংখ্য অতিথি পাখি আর লাল কাঁকড়ার দল। এক প্রান্তে বাহারি সব পাখি, আরেক প্রান্তে ঝাঁকে ঝাঁকে লাল কাঁকড়ার ছোটাছুটি দ্বীপটিকে পরিণত করেছে অপার সৌন্দর্যের লীলাভূমিতে।

একেবারে বাঁ প্রান্তে সম্পূর্ণ প্রাকৃতিকভাবে সৃষ্ট এক ত্রিকোনায় দুই পাশ থেকে আসা অনবরত ঢেউ একে অপরের সঙ্গে মিলিয়ে যাওয়ার বিস্ময়কর দৃশ্যের সাক্ষী হতে পারবেন এখানে। এ যেন ঢেউ আর শব্দের এক সম্মোহনী খেলা।

সে সময় দ্বীপটিতে কোনো গাছপালা না থাকলেও এখন সেই দ্বীপজুড়ে যেন লাল-সবুজের ছড়াছড়ি। মাছ ধরার জন্য প্রান্তিক জেলেদের কাছে অস্থায়ী ডেরা হিসেবেও জনপ্রিয় এই জায়গাটি। রোমাঞ্চপ্রিয় অভিযাত্রীরা চাইলে তাঁদের সঙ্গে গিয়ে ক্যাম্প করে রাতেও অবস্থান করতে পারেন সেখানে। সমুদ্রের প্রতিকূলতায় ব্যতিক্রমী অভিজ্ঞতা অর্জনের পাশাপাশি উপভোগ করতে পারেন মনোহর সূর্যোদয় ও সূর্যাস্ত। সারা জীবন মনে থাকবে সেই স্মৃতি।

 

একনজরে চর বিজয়

২০১৭ সালে প্রথমবারের মতো একদল পর্যটকের দৃষ্টিগোচর হয় দ্বীপটি। মাসটি ডিসেম্বর ছিল বলে এটির নামকরণ হয় ‘চর বিজয়’ বা ‘ভিক্টোরি আইল্যান্ড’। একই বছরে বাংলাদেশ সরকারের পক্ষে দ্বীপটির মালিকানা ঘোষণা করেন স্থানীয় জেলা প্রশাসক। ২০২৪ সালে জেলা প্রশাসকের নির্দেশে স্থানীয় বন বিভাগ সেখানে প্রাথমিকভাবে ম্যানগ্রোভ প্রজাতির প্রায় দুই হাজার গোল, ছইলা, সুন্দরী ও কেওড়া গাছের চারা রোপণ করে। সমতল বালিয়াড়ির চর বিজয় আয়তনে প্রায় পাঁচ হাজার একর, যা দৈর্ঘ্যে প্রায় ১০ কিলোমিটার এবং প্রস্থে তিন কিলোমিটার। ঋতুভেদে এখানকার প্রকৃতিতে দেখা যায় বৈচিত্র্যময় পরিবর্তন। বর্ষায় দ্বীপটি সাগরের জলরাশিতে তলিয়ে যায় প্রায় তিন-চার ফুট গভীরে। শীতকালে চার মাসের জন্য দেখা দেয় একখণ্ড ধু ধু বালুচর। তবে ২০২১ সালের পর এটি আর ডোবেনি।

যেভাবে যাবেন

নদীপথে বা সড়কপথে ঢাকা থেকে কুয়াকাটা। এসি, নন-এসি বাসভাড়া ৭৫০ থেকে এক হাজার ৬০০ টাকা। লঞ্চে ডেক ও ভিআইপি  কেবিন ভাড়া ৪০০ থেকে সাত হাজার টাকা। এরপর কুয়াকাটা থেকে ট্যুরিস্ট বোটে করে চর বিজয়।

মন্তব্য

রোদে ছবি তোলার টিপস

শেয়ার
রোদে ছবি তোলার টিপস
মডেল : রুমানা ও সৌমিক ছবি : এটুজেড

কোথাও বেড়াতে গেলে প্রিয়জনদের সঙ্গে ছবি তুলতেই হয়। উন্মুক্ত স্থান বা উদ্যানেই বেশির ভাগ মানুষ বেড়াতে পছন্দ করে। বৈশাখের দুপুরের প্রখর রোদে ছায়া খুঁজে বের করা কিছুটা কঠিন, তবু চেষ্টা করতে হবে সরাসরি রোদে ছবি না তোলার। বিশেষ করে সাদা পোশাক পরে রোদে ছবি তোলা একেবারেই অনুচিত।

এতে চেহারা ঠিকমতো বোঝা যাবে না। যদি রোদে ছবি তুলতেই হয়, সে ক্ষেত্রে ফোনের ক্যামেরায় প্রো মোড থাকলে তা ব্যবহার করতে হবে। সেটিংস থেকে এক্সপোজার কমিয়ে বা মিটারিং মোড বদল করে সামঞ্জস্যতা আনা যাবে। অনেক ফোনেই এখন ‘র’ মোডে ছবি তোলা যায়, সে ক্ষেত্রে পরে ছবি এডিট করার বাড়তি সুবিধা পাওয়া যায়।
উন্মুক্ত স্থানে ছবি তোলার সময় খেয়াল রাখতে হবে, যাতে পেছনে অনাকাঙ্ক্ষিত বস্তু বা ব্যক্তি না থাকে। প্রয়োজনে এআই কাজে লাগিয়ে সহজেই তা ছবি থেকে মুছে দেওয়া সম্ভব।

ছবির তুলনায় এখন অনেকে ভিডিও করে থাকেন। খেয়াল রাখতে হবে, টানা ভিডিও করার সময় যাতে ফোন অতিরিক্ত গরম না হয়।

এতে ফোনের দীর্ঘমেয়াদি ক্ষতি হতে পারে। ভিডিও করার সময়ও খেয়াল করতে হবে, অতিরিক্ত আলোতে দৃশ্য ঝলসে যাচ্ছে কি না। তবে সরাসরি রোদে ভিডিও না করাই ভালো। এতে ফোনও থাকবে সুরক্ষিত।

রোদে ছবি তোলার ক্ষেত্রে সূর্যকে বিষয়বস্তুর পেছনে এক কোনা বরাবর রাখা উচিত, সরাসরি পেছনে বা মুখের ওপর নয়।

এতে ছবির বাকি অংশ ঝলসে গেলেও চেহারা ও পোশাক ঠিকঠাক রাখা যাবে। ছবির বিষয়বস্তুই আসল, বাকি অংশ নষ্ট হলেও সমস্যা নেই। গ্রুপ ছবির ক্ষেত্রে একজনকে আরেকজনের ছায়া হিসেবেও ব্যবহার করা যেতে পারে। আরো একটি জিনিস মাথায় রাখা দরকার। প্রখর রোদে ছবি তুললে সরাসরি ক্যামেরার দিকে তাকানো যাবে না। এতে চোখের নিচে অযাচিত ছায়া পড়বে। চেষ্টা করতে হবে এক পাশ থেকে ছবি তোলার।

ক্যামেরা ব্যবহারের ক্ষেত্রে এই দিনে চাই রোদ বাঁচানোর ফিল্টার। অনেকেরই মনে হতে পারে, তীব্র আলোতে ছবি কম অ্যাপার্চারে তোলা উচিত। বিষয়টি আসলে উল্টো। রোদের মধ্যে সাদা পোশাক পরে উন্মুক্ত স্থানে ছবি তোলার ওপর অনলাইনে বেশ কিছু টিউটরিয়াল আছে। সেগুলোও দেখে নিতে পারেন। কিছু নিয়ম মানলে রোদেও তুলতে পারবেন ঝকঝকে সুন্দর ছবি।

 

 

 

মন্তব্য

সর্বশেষ সংবাদ