মহান আল্লাহ যুগে যুগে নবী-রাসুলদের মাধ্যমে অনেক আসমানি কিতাব প্রেরণ করেছেন। সেগুলোর মধ্যে প্রসিদ্ধ কিতাব চারটি। তাওরাত, জাবুর, ইনজিল ও কোরআন। আর সব আসমানি কিতাবের ভাষা একই ছিল না।
মহান আল্লাহ যুগে যুগে নবী-রাসুলদের মাধ্যমে অনেক আসমানি কিতাব প্রেরণ করেছেন। সেগুলোর মধ্যে প্রসিদ্ধ কিতাব চারটি। তাওরাত, জাবুর, ইনজিল ও কোরআন। আর সব আসমানি কিতাবের ভাষা একই ছিল না।
তাওরাত : মহান আল্লাহ মুসা (আ.)-এর ওপর যে কিতাব নাজিল করেছিলেন তার নাম তাওরাত। ‘তাওরাত’ কিতাবের নাম পবিত্র কোরআনেও উল্লেখ রয়েছে। ইরশাদ হয়েছে, ‘আমি তাওরাত অবতীর্ণ করেছি, যাতে আছে পথনির্দেশনা ও আলো। আল্লাহর অনুগত নবীরা তদনুসারে ইহুদিদের পরিচালনা করত এবং খোদাভীরু ও জ্ঞানীরাও।
হিব্রু ভাষায় ‘তাওরাত’ শব্দটি শিক্ষা দেওয়া, দিকনির্দেশনা প্রদান বা নীতি প্রণয়ন করার অর্থে ব্যবহৃত হয়। যেহেতু মুসা (আ.)-এর ভাষা হিব্রু ছিল, তাই তাঁর ওপর নাজিলকৃত কিতাব হিব্রু ভাষায় নাজিল করা হয় এবং তার নাম হিব্রু ভাষায় রাখা হয়।
জাবুর : জাবুর অর্থ লিপিবদ্ধ।
জাবুর কিতাব কোন ভাষায় নাজিল হয়েছিল তা সুনির্দিষ্ট করে বলা যায় না। তবে ‘ইসলাম ওয়েবের’ তথ্যমতে, দাউদ (আ.) ছিলেন বনি ইসরাঈলের নবী।
বনি ইসরাঈলের মাতৃভাষা যেহেতু হিব্রু ছিল, তাই ‘জাবুর’ হিব্রু ভাষায় অবতীর্ণ হওয়ার সম্ভাবনা বেশি।
ইনজিল : পবিত্র কোরআন অনুযায়ী, আল্লাহ তাআলা বনি ইসরাঈলের হিদায়াতের জন্য ঈসা (আ.)-এর ওপর ইনজিল অবতীর্ণ করেন। আল্লাহ তাআলা ইরশাদ করেন, ‘আমি তাদের পর তাওরাতের সত্যায়নকারীরূপে ঈসা বিন মারিয়াম (আ.)-কে প্রেরণ করেছি। মুত্তাকিদের জন্য পথনির্দেশ ও উপদেশরূপে তাঁকে ইনজিল প্রদান করেছি তাঁর পূর্বে অবতীর্ণ তাওরাতের সত্যায়নকারীরূপে, যাতে ছিল উপদেশ ও আলো।’ (সুরা : মায়িদা, আয়াত : ৪৬)
ইবনে কাসির (রহ.)-এর মতে, ঈসা (আ.)-এর ভাষা সুরিয়ানি ছিল। ইবনে তাইমিয়্যাহ (রহ.) ও ইবনে কাইয়িম (রহ.)-এর মতে তাঁর ভাষা ছিল হিব্রু। সে হিসেবে ইনজিল সুরিয়ানি বা হিব্রু ভাষায় নাজিল হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। (মওদু ডটকম)
তবে ইনজিলের প্রাচীন যে কপি একসময় পাওয়া যেত, তা গ্রিক ভাষায় হওয়ায় অনেকের দাবি যে ইনজিল ইউনানি বা গ্রিক ভাষায় ছিল। ইউনানি বা গ্রিক ভাষায় ব্যবহৃত ইনজিল (মড়ংঢ়বষ) শব্দের অর্থ সুসংবাদ বা মুক্তির সুসংবাদ। খ্রিস্টানদের বিশ্বাস অনুযায়ী, ঈসা বা ইয়াসু (আ.)-এর আগমনের সুসংবাদ।
কোরআন : মানুষ ও জিন জাতির হিদায়াতের জন্য সর্বশেষ নাজিলকৃত কিতাব আল-কোরআন। সর্বশেষ নবী মুহাম্মদ (সা.)-এর ওপর আরবি ভাষায় তা অবতীর্ণ হয়েছে। নবীজি (সা.) ছিলেন আরবি ভাষী। তাই তাঁর ওপর নাজিলকৃত কোরআনও আরবি ভাষায় নাজিল করা হয়। পবিত্র কোরআনে মহান আল্লাহ বলেন, ‘নিশ্চয়ই আমি একে আরবি কোরআনরূপে নাজিল করেছি, যাতে তোমরা বুঝতে পারো।’ (সুরা ইবরাহিম, আয়াত : ২)
সম্পর্কিত খবর
আল্লাহর নবী মুসা (আ.) একবার ক্রুদ্ধ হয়ে এক ব্যক্তিকে থাপ্পর দেন। এরপর তিনি অনুতপ্ত হয়ে আল্লাহর কাছে ক্ষমা প্রার্থনা করেন। এবং এই দোয়া পাঠ করেন-
رَبِّ إِنِّي ظَلَمْتُ نَفْسِي فَاغْفِرْ لِي
উচ্চারণ : রব্বি ইন্নি জালামতু নাফসি ফাগফির লি।
অর্থ : ‘হে আমার রব, আমি নিজের ওপর জুলুম করেছি।
মুসলিম উম্মাহর সর্বসম্মতিক্রমে মুসাফিরের জন্য রোজা না রাখা জায়েজ। ওই মুসাফির রোজা রাখতে সক্ষম হোক অথবা অক্ষম, রোজা তার জন্য কষ্টদায়ক হোক অথবা না হোক—সর্বাবস্থায় তার জন্য রোজা না রাখা বৈধ। মহান আল্লাহ বলেন, ‘...কিন্তু তোমাদের মধ্যে কেউ অসুস্থ বা মুসাফির হলে সে অন্য কোনো দিন (রোজা) গণনা করবে।’ (সুরা : বাকারাহ, আয়াত : ১৮৪)
সফরে রোজা না রাখা বৈধ হওয়ার শর্ত হলো, সফর পরিমাণ মতো দূরত্বের হতে হবে।
ইবনে আব্বাস (রা.) থেকে বর্ণিত, নবী (সা.) রমজান মাসে মদিনা থেকে (মক্কা অভিযানে) রওনা হন। তাঁর সঙ্গে ছিলেন ১০ হাজার সাহাবি। তখন হিজরত করে চলে আসার সাড়ে আট বছর পার হয়ে গিয়েছিল। তিনি ও তাঁর সঙ্গী মুসলমানরা রোজা অবস্থায় মক্কা অভিমুখে রওনা হন।
স্মরণ রাখতে হবে যে মুসাফিরের জন্য সফর অবস্থায় দিনের শুরু থেকেই রোজা না রাখার অনুমতি আছে। সুতরাং কোনো মুসাফির রোজা না রাখার ইচ্ছা করলে রোজা না রাখা অবস্থায় দিন শুরু করবে। কিন্তু যদি এই ছাড়ের ওপর আমল না করে রোজা শুরু করে দেয়, তাহলে বিনা ওজরে তার জন্য তা ভঙ্গ করা জায়েজ নয়; বরং ওই রোজা পুরো করা তার ওপর জরুরি হয়ে যায়। এতদসত্ত্বেও কেউ যদি এ রোজা ভেঙে ফেলে তাহলে এর কারণে তার ওপর কাফফারা ওয়াজিব হবে না।
মাসআলা : হানাফি মাজহাব মতে, সফর অবস্থায় নিয়ত করে রোজা রাখা শুরু করলে, তা ভাঙা জায়েজ নয়। কেউ ভেঙে ফেললে গুনাহগার হবে। তবে কাফফারা দিতে হবে না। শুধু কাজা করবে। (রদ্দুল মুহতার : ২/৪৩১)
মাসআলা : যে ব্যক্তি মুকিম (স্থায়ী বাসিন্দা) অবস্থায় সাহরি খেয়ে সফর শুরু করেছেন, তাঁর জন্য সফরের অজুহাতে রোজা ভাঙা জায়েজ নয়। ভাঙলে গুনাহগার হবেন, তবে শুধু রোজার কাজা ওয়াজিব হবে। (ফাতাওয়া হিন্দিয়া : ১/২০৬)
মাসআলা : সফর অবস্থায় রোজা রাখা জায়েজ এবং সওয়াবও আছে। তবে যদি না রাখে, তাহলে সেটা বৈধ। (ফাতাওয়ায়ে দারুল উলুম : ৩/৭৩)
এক দিনের ভ্রমণেও কি রোজা রাখা যায়?
প্রশ্ন : এক দিনের ভ্রমণের জন্যও কি রোজা না রাখতে পারবে?
উত্তর : যদি ৪৮ মাইলের ভ্রমণ হয়, তখন রোজা ভাঙা জায়েজ আছে। সেটি এক দিনের ভ্রমণ হলেও। (ফাতাওয়ায়ে দারুল উলুম : ৬/৪৭৩, রাদ্দুল মুহতার : ২/১০৮)
১৫ দিন বা তার চেয়ে বেশি সময়ের জন্য সফরে রোজার বিধান
যদি রাস্তার মধ্যে ১৫ দিন থাকার নিয়তে অবস্থান করে, তাহলে আর রোজা ভাঙা জায়েজ নেই। কেননা শরিয়তের মধ্যে এখন সে মুসাফির নয়। ১৫ দিন বা তার চেয়ে বেশি সময়ের জন্য সফর করলে সফরকারী মুকিম হয়ে যায়। সুতরাং যদি ১৫ দিনের কম অবস্থান করার নিয়ত করে সফর করে থাকে, তাহলে রোজা না রাখা জায়েজ আছে। এই রোজাগুলো পরে কাজা করে নেবে। (বেহেশতি জেওর : ৩/১৯, শামি : ২/১৬৮)
দ্বিপ্রহরের আগে ঘরে পৌঁছে যাওয়া
কারো ভ্রমণে রোজা না রাখার নিয়ত ছিল, কিন্তু দ্বিপ্রহরের এক ঘণ্টা আগেই স্বীয় ঘরে পৌঁছে গেল, তাহলে তখন রোজার নিয়ত করে নেবে। (বেহেশতি জেওর : ৩/১৯, হিদায়া : ১/২০৩)
সফরে তীব্র গরম হওয়ায় রোজা ভেঙে ফেলা
প্রশ্ন : যদি কোনো ব্যক্তি রমজান মাসে এ ধরনের ভ্রমণের সম্মুখীন হয়, যে সফরের দ্বারা শরিয়ত অনুযায়ী মুসাফির হয় না। এ কারণে রোজা অবস্থায় ভ্রমণ করে আর দ্বিপ্রহরে মারাত্মক রোদ ও তীব্র গরম হওয়ায় অসহ্য হয়ে রোজা ভেঙে দিয়েছে, তাহলে তার ওপর কাজা ওয়াজিব হবে, নাকি কাফফারাও আবশ্যক হবে?
উত্তর : এ অবস্থায় এই ব্যক্তির ওপর কাফফারা আবশ্যক হবে না। শুধু কাজা আবশ্যক। (ফাতাওয়ায়ে দারুল উলুম : ৬/৪৪৪, রাদ্দুল মুহতার : ২/১৫৮)
তৃষ্ণার কষ্ট অথবা সফরে রোজা ভেঙে ফেলা
প্রশ্ন: রোজাদার ব্যক্তি মারাত্মক তৃষ্ণার কারণে রোজা ভেঙে ফেলল অথবা ভ্রমণের মধ্যে রোজা ভেঙে ফেলল, তখন তার জন্য কী বিধান?
উত্তর : তৃষ্ণা যদি এত মারাত্মক হয় যে প্রাণনাশের আশঙ্কা দেখা দেয় অথবা অজ্ঞান হয়ে যাওয়ার আশঙ্কা দেখা দেয়, তাহলে এ অবস্থায় রোজার কাজা আবশ্যক। একইভাবে ভ্রমণের মধ্যে ভ্রমণের দিন রোজা ভাঙা উচিত নয়। কিন্তু যদি ভেঙে ফেলে তাহলে কাজা আবশ্যক হবে। (ফাতাওয়ায়ে দারুল উলুম : ৬/৪৪০, রাদ্দুল মুহতার : ২/১৫৮)
সফরে ছুটে যাওয়া রোজার বিধান
সফর অবস্থায় ছুটে যাওয়া রোজা পরে কাজা করা আবশ্যক। আর যদি মৃত্যুর আগে কাজা না করে থাকে, তাহলে ফিদিয়া দেওয়ার অসিয়ত করা আবশ্যক। শর্ত হলো, সম্পদ রেখে যাওয়া। আর যদি ভ্রমণ অবস্থায় মৃত্যু হয়ে থাকে অথবা মুকিম হয়ে মারা যায়; কিন্তু রোজা কাজা রাখার সময় পায়নি, তাহলে ফিদিয়া দেওয়ার অসিয়ত আবশ্যক নয়। আর যদি কিছু রোজা কাজা রাখার সময় পায় তাহলে সে রোজাগুলোর কাজা আবশ্যক। আর যদি কাজা করতে না পারে, তাহলে সেসব দিনের ফিদিয়া দেওয়ার অসিয়ত করা আবশ্যক। (ফাতাওয়ায়ে রহিমিয়াহ : ২/৩৪, শামি : ২/১৬০)
মাসআলা : যদি মুসাফির ভ্রমণ থেকে ফিরে আসার পর অথবা অসুস্থ ব্যক্তি সুস্থ হওয়ার পর কাজা আদায় করার মতো সময় না পায়, তাহলে তার কাজা আবশ্যক নয়। ভ্রমণ থেকে ফিরে অথবা অসুস্থ থেকে সুস্থ হওয়ার পর, যত দিন পায় তত দিনের কাজা আবশ্যক। (জাওয়াহিরুল ফিকহ : ১/৩৮১)
রোজাদার মুসাফিরের ভ্রমণে মৃত্যু হয়ে যাওয়া
প্রশ্ন : এক ব্যক্তি রমজানে মুসাফির হলো। সে রোজা রাখেনি। সফরে তার মৃত্যু হয়ে গেল, তখন তার রোজার বিধান কী?
উত্তর : তার দায়িত্বে রোজার কাজা আবশ্যক নয় এবং ফিদিয়ার অসিয়তও আবশ্যক হবে না। (ফাতাওয়ায়ে দারুল উলুম : ৬/৪৩২, দুররে মুখতার : ২/১৬০)
ইসলামে মহিমান্বিত রাতগুলোর মধ্যে লাইলাতুল কদর বা শবেকদর অন্যতম। পবিত্র রমজান মাসের শেষ দশকের যেকোনো রাতে তা হতে পারে। এ রাতের ইবাদত হাজার মাসের চেয়েও উত্তম। রাসুল (সা.) এই রাতে একটি দোয়া পড়তে বলেছেন।
হাদিস শরিফে এসেছে,
عَنْ عَائِشَةَ، أَنَّهَا قَالَتْ يَا رَسُولَ اللَّهِ أَرَأَيْتَ إِنْ وَافَقْتُ لَيْلَةَ الْقَدْرِ مَا أَدْعُو قَالَ "تَقُولِينَ اللَّهُمَّ إِنَّكَ عَفُوٌّ تُحِبُّ الْعَفْوَ فَاعْفُ عَنِّي"
আয়েশা (রা.) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেছেন, আমি জিজ্ঞাসা করি, হে আল্লাহর রাসুল, আমি যদি কদরের রাত পেয়ে যাই তাহলে আমি কী দোয়া করব? রাসুল (সা.) বলেন, তুমি বলবে,
উচ্চারণ : আল্লাহুম্মা ইন্নাকা আফুউন, তুহিব্বুল আফওয়া, ফাআফু আন্নি।
অর্থ : ‘হে আল্লাহ, আপনি ক্ষমাশীল। আপনি ক্ষমা করতে পছন্দ করেন। অতএব আমাকে ক্ষমা করুন।
ইসলামে জুমার দিনটি খুবই গুরুত্বপূর্ণ দিন হিসেবে বিবেচিত। পবিত্র কোরআনে জুমার দিন দ্রুত মসজিদে গমনের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। তা ছাড়া হাদিসে গুরুত্বপূর্ণ আমলের কথা বর্ণিত হয়েছে।
ইরশাদ হয়েছে, ‘হে মুমিনরা! জুমার দিন নামাজের আজান হলে তোমরা আল্লাহর স্মরণে ধাবিত হও এবং বেচাবিক্রি বন্ধ কোরো, তা তোমাদের জন্য উত্তম, যদি তোমরা বুঝো।
জুমার দিনের কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ আমল সম্পর্কে নিম্নে আলোচনা করা হলো—
১. জুমার দিনের বিশেষ মর্যাদা
আবু লুবাবা বিন আবদুল মুনজির (রা.) থেকে বর্ণিত, হাদিসে রাসুলুল্লাহ (সা.) জুমার দিনের পাঁচটি বৈশিষ্ট্য উল্লেখ করেছেন। সেগুলো হলো—এক. আল্লাহ তাআলা এই দিনে আদম (আ.)-কে সৃষ্টি করেছেন। দুই. আল্লাহ তাআলা এই দিনে আদম (আ.)-কে জমিনে অবতরণ করিয়েছেন।
২. জুমার নামাজ আদায়
সালমান ফারসি থেকে বর্ণিত, রাসুল (সা.) বলেন, ‘যে ব্যক্তি জুমার দিন গোসল করল, সাধ্যমতো পবিত্রতা অর্জন করল, তেল ব্যবহার করল, ঘর থেকে সুগন্ধি ব্যবহার করল, অতঃপর মসজিদে এলো, সেখানে দুজন মুসল্লির মধ্যে ফাঁক করে সামনে এগিয়ে না যায়, নির্দিষ্ট পরিমাণ নামাজ পড়ল, অতঃপর ইমাম কথা শুরু করলে চুপ থাকল; তাহলে আল্লাহ তাআলা তাঁর দুই জুমার মধ্যবর্তী সময়ের গুনাহ মাফ করবেন।’ (সহিহ বুখারি, হাদিস : ৮৮৩)
অন্য হাদিসে এসেছে, আবু হুরায়রা (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসুল (সা.) ইরশাদ করেছেন, ‘পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ, এক জুমা থেকে পরবর্তী জুমা, এক রমজান থেকে পরবর্তী রমজান মধ্যবর্তী সময়ের পাপ মোচন করে; যদি সেই ব্যক্তি সব ধরনের কবিরা গুনাহ থেকে বিরত থাকে।’ (মুসলিম, হাদিস : ২৩৩)
৩. জুমার দিন গোসল করা
জুমার দিন গোসল করা ও আগে আগে মসজিদে যাওয়া অত্যন্ত সওয়াবের কাজ। আউস বিন আউস সাকাফি (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসুল (সা.) বলেছেন, ‘যে ব্যক্তি জুমার দিন ভালো করে গোসল করল, দ্রুততর সময়ে মসজিদে গেল ও (ইমামের) কাছাকাছি বসে মনোযোগসহ (খুতবা) শুনল, তাঁর জন্য প্রতি কদমের বদলে এক বছরের রোজা ও নামাজের সওয়াব থাকবে।’ (আবু দাউদ, হাদিস : ৩৪৫)
৪. মসজিদে প্রথমে প্রবেশ করা
জুমার দিন মসজিদে আগে প্রবেশ করা ও মনোযোগ দিয়ে খুতবা শোনার বিশেষ গুরুত্ব আছে।
৫. জুমার দিন দোয়া কবুল হয়
জুমার দিন একটি সময় আছে, যখন মানুষ আল্লাহর কাছে কোনো দোয়া করলে আল্লাহ তা কবুল করেন। জাবের (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসুল (সা.) বলেন, ‘জুমার দিন কোনো মুসলিম আল্লাহর কাছে ভালো কিছুর দোয়া করলে আল্লাহ তাকে তা দেন। তোমরা সময়টি আসরের পর অনুসন্ধান কোরো।’ (আবু দাউদ, হাদিস নম্বর : ১০৪৮)
জাবের ইবনে আবদুল্লাহ (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসুল (সা.) বলেছেন, ‘জুমার দিনের বারো ঘণ্টার মধ্যে এমন একটি মুহূর্ত রয়েছে যদি কোনো মুসলিম এ সময় আল্লাহর কাছে কিছু প্রার্থনা করে, তাহলে মহান ও সর্বশক্তিমান আল্লাহ তাকে দান করেন। এই মুহূর্তটি তোমরা আছরের শেষ সময়ে অনুসন্ধান কোরো। (আবু দাউদ, হাদিস : ১০৪৮)
৬. সুরা কাহাফ পাঠ
জুমার অন্যতম আমল সুরা কাহাফ পাঠ করা। আবু সাইদ খুদরি (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসুল (সা.) বলেছেন, ‘যে ব্যক্তি জুমার দিন সুরা কাহাফ পড়বে তা দুই জুমার মধ্যবর্তী সময়ে তার জন্য আলোকিত হয়ে থাকবে। আর যে ব্যক্তি এই সুরার শেষ ১০ আয়াত পাঠ করবে অতঃপর দাজ্জাল বের হলে তার কোনো ক্ষতি করতে পারবে না।’ (সহিহ তারগিব, হাদিস : ১৪৭৩, আল মুসতাদরাক : ২/৩৯৯)
৭. গুনাহ মাফ হয়
সালমান ফারসি থেকে বর্ণিত, রাসুল (সা.) বলেন, ‘যে ব্যক্তি জুমার দিন গোসল করল, সাধ্যমতো পবিত্র হলো, তেল ব্যবহার করল, ঘর থেকে সুগন্ধি ব্যবহার করল, অতঃপর মসজিদে এলো, সেখানে দুজন মুসল্লির মধ্যে ফাঁক করে সামনে এগিয়ে যায় না, নির্দিষ্ট পরিমাণ নামাজ পড়ল, অতঃপর ইমাম কথা শুরু করলে চুপ থাকল; তাহলে আল্লাহ তাআলা তাঁর দুই জুমার মধ্যবর্তী সময়ের গুনাহ মাফ করেন।’ (সহিহ বুখারি, হাদিস : ৮৮৩)
৮. দরুদ পাঠ
জুমার দিন নবীজি (সা.)-এর ওপর বেশি বেশি দরুদ পাঠ করা কর্তব্য। আউস বিন আবি আউস (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসুল (সা.) বলেছেন, ‘তোমাদের দিনগুলোর মধ্যে জুমার দিন সর্বোত্তম। এই দিনে আদম (আ.)-কে সৃষ্টি করা হয়েছে। এই দিনে তিনি ইন্তেকাল করেছেন। এই দিনে শিঙায় ফুঁ দেওয়া হবে এবং এই দিনে সবাইকে বেহুঁশ করা হবে। অতএব, তোমরা এই দিনে আমার ওপর বেশি পরিমাণ দরুদ পড়ো। কারণ জুমার দিনে তোমাদের দরুদ আমার কাছে পেশ করা হয়।’ সাহাবারা বললেন, আমাদের দরুদ আপনার কাছে কিভাবে পেশ করা হবে, অথচ আপনার দেহ একসময় নিঃশেষ হয়ে যাবে? তিনি বলেন, ‘আল্লাহ জমিনের জন্য আমার দেহের ভক্ষণ নিষিদ্ধ করেছেন।’ (আবু দাউদ, হাদিস : ১০৪৭)