মাদক আর অস্ত্রসহ সারা দেশে ছড়িয়ে পড়েছে আরসা

রেজোয়ান বিশ্বাস
রেজোয়ান বিশ্বাস
শেয়ার
মাদক আর অস্ত্রসহ সারা দেশে ছড়িয়ে পড়েছে আরসা

মায়ানমারের রাখাইন রাজ্যের সশস্ত্র বিদ্রোহী গোষ্ঠী আরাকান রোহিঙ্গা স্যালভেশন আর্মির (আরসা) সদস্যরা দেশের বিভিন্ন এলাকায় ছড়িয়ে পড়ছে। তারা মাদক ব্যবসায় জড়িত বলে র‌্যাব জানিয়েছে। মাদকের টাকায় তারা অস্ত্র কিনে থাকে। তাদের দৌরাত্ম্যে দেশের আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতি আরো খারাপ হতে পারে বলে আশঙ্কা রয়েছে।

এমন পরিস্থিতিতে সারা দেশে র‌্যাবের বিশেষ অভিযান চলছে বলে র‌্যাব সদর দপ্তর সূত্র জানিয়েছে।

র‌্যাবের আইন ও গণমাধ্যম শাখার প্রধান লে. কর্নেল আশিকুর রহমান গতকাল বিকেলে কালের কণ্ঠকে বলেন, আরসার রয়েছে বিপুল অস্ত্রভাণ্ডার। তাদের বিরুদ্ধে মাদকের টাকায় অস্ত্র কেনার তথ্য রয়েছে। তাদের বিরুদ্ধে হত্যাসহ সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ডের অভিযোগ রয়েছে।

এমন পরিস্থিতিতে সারা দেশে আরসার বিরুদ্ধে র‌্যাবের বিশেষ অভিযান চলছে।

সম্প্রতি নারায়ণগঞ্জের সিদ্ধিরগঞ্জ ও ময়মনসিংহে আরসার উপস্থিতি একটি বড় বার্তা দিচ্ছে জানিয়ে তিনি বলেন, এসব এলাকায় পৃথক অভিযান চালিয়ে আরসা নেতা আতাউল্লাহসহ ১০ জনকে গ্রেপ্তার করা হয়। ধরা পড়ার আগে গ্রেপ্তারকৃত ব্যক্তিরা সিদ্ধিরগঞ্জ ও ময়মনসিংহের মানুষের সঙ্গে মিশে চলাফেরা করেছে বলে তথ্য পেয়েছি। শুনেছি, সংশ্লিষ্ট এলাকায় তারা লোকজনের সঙ্গে মিশেছে।

গোপন বৈঠকও করেছে। তারা কিভাবে ওই এলাকায় ঢুকল, তাদের টাকার উৎস, অস্ত্রের উৎস কী, তাদের আরো কত সদস্য রয়েছে, কত নেতা এভাবে দেশে আত্মগোপনে রয়েছেএসবের খোঁজ নেওয়া হচ্ছে। তাদের ধরতে র‌্যাবের সব ব্যাটালিয়ন অভিযান শুরু করেছে।

র‌্যাব ও পুলিশ সূত্র বলছে, সিদ্ধিরগঞ্জে ভূমিপল্লী টাওয়ারের অষ্টম তলার ফ্ল্যাট থেকে আরসার কমান্ডার আতাউল্লাহ ওরফে আবু আম্মার জুনুনী (৪৮), আরসার সেকেন্ড কমান্ডার মোস্তাক আহমদসহ (৬৬) ১০ জনকে গ্রেপ্তার করা হয়। তাঁদের মধ্যে আরসা কমান্ডারের পরিবারের সদস্যসহ আরো পাঁচজন রয়েছেন।

গত ১৬ ও ১৭ মার্চ রাতে দুই টিমে বিভক্ত হয়ে তাঁদের গ্রেপ্তার করা হয়। এ সময় তাঁদের কাছ থেকে নগদ অর্থসহ বেশ কিছু জিনিস উদ্ধার করা হয়।

গ্রেপ্তার অন্যরা হলেন মনিরুজ্জামান ওরফে মনির, সলিমুল্লাহ, মোসা. আসমাউল হুসনা, মো. হাসান, আসমত উল্লাহ, মো. হাসান, মোসা. শাহিনা ও মোসা. সেনোয়ারা। এ সময় তাঁদের সঙ্গে শিশুও ছিল।

এ ঘটনায় তাঁদের বিরুদ্ধে দুটি মামলা হয়েছে। এসব মামলায় গ্রেপ্তারকৃত ব্যক্তিদের পাঁচ দিন করে ১০ দিনের রিমান্ড মঞ্জুর হলে তাঁদের হেফাজতে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করছে পুলিশ। 

সিদ্ধিরগঞ্জ থানার ওসি শাহিনুর আলম কালের কণ্ঠকে বলেন, পাহাড় থেকে পড়ে আরসার প্রধান ঘাড়ে ও কাঁধে ব্যথা পেয়েছিলেন। এরপর পরিচয় গোপন করে চিকিৎসার জন্য এখানে এসেছিলেন বলে আরসাপ্রধান দাবি করেন।

পুলিশ ও স্থানীয় সূত্র বলছে, ময়মনসিংহ নগরীর ব্যস্ত এলাকা নতুনবাজার মোড়। এই মোড়ে ১৫ তলা গার্ডেন সিটি ভবনের ১০ তলার ফ্ল্যাট ভাড়া নিয়েছিলেন আরসার চার সদস্য। ভবনটির মালিক নরসিংদীর পলাশ এলাকার মাজহারুল ইসলাম। বাসাটি ভাড়া দিয়েছিলেন ভবনের দারোয়ান নিজাম উদ্দিন।

পুলিশ জানতে পেরেছে, চার মাস আগে নিজেদের ঈশ্বরগঞ্জের বাসিন্দা বলে পরিচয় দিয়ে দুই ব্যক্তি বাসাটি ভাড়া নিতে চান। এ সময় তাঁদের কাছে জাতীয় পরিচয়পত্র চাওয়া হয়। কিন্তু তাঁরা নানা কৌশলে এড়িয়ে যান। পরে মনিরুজ্জামান নামের এক ব্যক্তি একটি জাতীয় পরিচয়পত্রের ফটোকপি দেন। এটিতে বাড়ি উচাখিলা ইউনিয়নের চর আলগী লেখা, বাবার নাম মো. আতিকুল ইসলাম। ভবনটির ১১ তলার বাসিন্দা আনিসুর রাজ্জাক ভূঁইয়া বলেন, ওই ফ্ল্যাটে যাঁরা থাকতেন, তাঁরা ভবনের অন্য ফ্ল্যাটের বাসিন্দাদের সঙ্গে যোগাযোগ রাখতেন না।

 

নতুন চাকরির কথা বলে বাড়ি ছাড়েন মনির : গ্রেপ্তার ১০ জনের মধ্যে একমাত্র বাংলাদেশি মনির। তাঁর বাড়ি ঈশ্বরগঞ্জের প্রত্যন্ত চরাঞ্চল উচাখিলা ইউনিয়নের চর আলগী গ্রামে।

এ ঘটনা জেনে গতকাল দুপুরে সরেজমিনে ওই গ্রামে গেলে দেখা যায়, মনিরের বাড়িতে সুনসান নীরবতা। তবে বাড়িতে আছেন মা-বাবা ও কয়েকজন ভাই-বোন। পরিবারের লোকজন জানায়, চার ভাই ও দুই বোনের মধ্যে সবার বড় মনির। বাবা আতিকুল ইসলাম একই উপজেলার কোনাপাড়া গ্রামে একটি কওমি মাদরাসায় শিক্ষকতা করেন। কওমি মাদরাসা থেকে ২০১৬ সালে হেফজ শেষ করে মাওলানা হতে মনির নরসিংদীর একটি মাদরাসায় ভর্তি হন। পরে ঢাকায় একটি মাদরাসায় শিক্ষক হিসেবে কাজ শুরু করেন। গাজীপুরের টঙ্গীতেও মাদরাসায় চাকরি করতেন।

মা চম্পা আক্তার বলেন, আমার ছেলে মনির সরল প্রকৃতির। না বুঝে হয়তো এ কাজ করেছে সে। হয়তো সে সঙ্গীদের ফাঁদে পড়ে এমন কাজে জড়িয়েছে। এখন কী করব, বুঝতে পারছি না।

তিনি জানান, প্রায় চার মাস আগে বাড়িতে এসে মনির বলেন মাদরাসায় আর চাকরি করবেন না। এটা ভালো লাগে না। এখন ১৩ হাজার টাকা বেতনে নতুন একটি চাকরি পেয়েছেন। তবে কী চাকরি, তা বলেননি। ওই সময় সালাম করে দোয়া নেন মনির।

এ বিষয়ে ময়মনসিংহ কোতোয়ালি থানার ওসি মো. শফিকুল ইসলাম কালের কণ্ঠকে বলেন, তাঁর সম্পর্কে তদন্ত চলছে।

গোয়েন্দা সূত্র বলছে, দীর্ঘদিন ধরে আরসা সদস্যরা মায়ানমারের জান্তা সরকারের হয়ে লড়াই করছে। যদিও আরাকান আর্মির কাছে পরাস্ত হয়ে আরসা অনেকটা কোণঠাসা হয়ে গাঢাকা দিতে শুরু করেছে। এর পর থেকে তারা মূলত নতুন আশ্রয় খুঁজছে। তাদের অনেকে রোহিঙ্গা ক্যাম্পে আত্মগোপনে থাকার চেষ্টা করছে। তাদের নিয়ে সাধারণ রোহিঙ্গারাও আতঙ্কিত।

র‌্যাব জানায়, এর আগে গত এক বছরে রোহিঙ্গা আশ্রয়কেন্দ্রে অভিযান চালিয়ে আরসার শীর্ষ সন্ত্রাসী, সামরিক কমান্ডারসহ ১২৫ জনকে গ্রেপ্তার করা হয়।

যেভাবে আরসার নাম ছড়ায় : ২০২১ সালের ২৯ সেপ্টেম্বর রাতে রোহিঙ্গা নেতা মহিবুল্লাহকে উখিয়ার কুতুপালংয়ে গুলি করে হত্যার তথ্য পাওয়া যায়। এরপর আরসার নাম ব্যাপকভাবে ছড়িয়ে পড়ে। ২০২২ সালের ১৪ নভেম্বর সন্ধ্যায় বান্দরবানের নাইক্ষ্যংছড়ির তুমব্রু সীমান্তের শূন্যরেখার রোহিঙ্গা আশ্রয়কেন্দ্রের কাছে মাদকবিরোধী যৌথ অভিযানের সময় সন্ত্রাসীদের গুলিতে নিহত হন এক শীর্ষ গোয়েন্দা কর্মকর্তা। ওই হত্যা মামলার অভিযোগপত্রভুক্ত আসামি আতাউল্লাহ। এ ছাড়া আরসা কমান্ডার আতাউল্লাহর বিরুদ্ধে রোহিঙ্গা ক্যাম্পকেন্দ্রিক খুন ও নানা অপরাধে বেশ কয়েকটি মামলা রয়েছে।

র‌্যাব বলছে, রোহিঙ্গা ক্যাম্পে যত খুন হয়েছে, তার সঙ্গে আরসার সন্ত্রাসীদের যোগসূত্র পাওয়া গেছে। তারা মাদকের টাকায় রোহিঙ্গা ক্যাম্পে অস্ত্রের কারবার করত বলেও তথ্য পাওয়া গেছে।

র‌্যাব-১৫-এর আইন ও গণমাধ্যম শাখার কর্মকর্তা (এএসপি) এ এম ফারুক কালের কণ্ঠকে বলেন, আরসার সন্ত্রাসীরা মাদকের টাকায় অস্ত্র কিনছে। এর আগে র‌্যাবের অভিযানে গ্রেপ্তার রোহিঙ্গা সদস্যরা র‌্যাবের জিজ্ঞাসাবাদে এমন তথ্য দেয়। তারা মাদকের টাকায় অস্ত্র সংগ্রহ করছে। এসব অস্ত্রে তারা রোহিঙ্গা ক্যাম্পসহ কক্সবাজারে অপহরণ, হত্যাসহ নানা অপরাধমূলক কর্মকাণ্ডে জড়িয়ে পড়ছে।

[প্রতিবেদনে তথ্য দিয়ে সহযোগিতা করেছেন কালের কণ্ঠের ঈশ্বরগঞ্জ (ময়মনসিংহ) প্রতিনিধি] 

মন্তব্য

সম্পর্কিত খবর

যানজটের সৃষ্টি

শেয়ার
যানজটের সৃষ্টি
ঈদ উপলক্ষে নিউমার্কেটের ফুটপাতগুলোতেও জমে উঠেছে বেচাকেনা। মানুষের উপস্থিতি বাড়ার কারণে ওই পথে দীর্ঘ যানজটের সৃষ্টি হয়। গতকাল তোলা। ছবি : ফোকাস বাংলা
মন্তব্য

ঢাকায় ছিনতাইকারী সন্দেহে গণপিটুনি দুজন নিহত

নিজস্ব প্রতিবেদক ও কেরানীগঞ্জ (ঢাকা) প্রতিনিধি
নিজস্ব প্রতিবেদক ও কেরানীগঞ্জ (ঢাকা) প্রতিনিধি
শেয়ার
ঢাকায় ছিনতাইকারী সন্দেহে গণপিটুনি দুজন নিহত

ঢাকার চকবাজার ও কেরানীগঞ্জে গতকাল শুক্রবার ছিনতাইকারী সন্দেহে গণপিটুনিতে দুই যুবক নিহত হয়েছে। গুরুতর আহত হয়েছে আরো দুজন। তাদের হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে।

গতকাল ভোর সাড়ে ৫টার দিকে চকবাজার চম্পাতলী সোয়ারীঘাট এলাকায় এক ছিনতাইকারী নিহত হয়।

চকবাজার থানার উপপরিদর্শক (এসআই) মো. গোলাম সরোয়ার বলেন, কেরানীগঞ্জ ফেরিঘাট এলাকায় ছিনতাই করার সময় স্থানীয় লোকজন ধাওয়া দেয়। এ সময় ছিনতাইকারী দলের এক সদস্য পালিয়ে যায়। অন্য তিনজন নদীতে ঝাঁপ দেয়। তারা সাঁতার কেটে চকবাজার চম্পাতলী ঘাটে এলে স্থানীয় জনতা তাদের পিটুনি দেয়।

পরে গুরুতর অবস্থায় উদ্ধার করে তাদের স্থানীয় একটি হাসপাতালে নেওয়ার পর সেখান থেকে ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে পাঠানো হয়। সকাল সাড়ে ৭টায় কর্তব্যরত চিকিৎসক একজনকে মৃত ঘোষণা করে। অন্যদিকে নদীর ওপারে গণপিটুনির শিকার হয়ে আরো একজনের মৃতদেহ উদ্ধার করে পুলিশ।

ঘটনার সত্যতা নিশ্চিত করে চকবাজার থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি-তদন্ত) মো. আবুল খায়ের বলেন, সিআইডির সহযোগিতায় জানা গেছে, নদীর এপারে মারা যাওয়া একজনের নাম আসিফ।

সে কামরাঙ্গীর চর এলাকার বাসিন্দা। অন্য একজনের নাম-পরিচয় জানা যায়নি।

ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতাল পুলিশ ক্যাম্পের ইনচার্জ (পরিদর্শক) মো. ফারুক জানান, মরদেহ মর্গে পাঠানো হয়েছে।

কেরানীগঞ্জে পিটুনিতে একজন নিহত : গণপিটুনি দিয়ে বুড়িগঙ্গা পানিতে ফেলে দেওয়ার পর হাসান মাঝি নামের এক যুবকের লাশ উদ্ধার করেছে বরিশুর নৌ পুলিশ। নিহত হাসান বরিশালের মেহেন্দিগঞ্জ উপজেলার সুলতানি গ্রামের মানিক মাঝির ছেলে।

কামরাঙ্গীর চর মুসলিমনগর কুরবান হাজির বাড়িতে বসবাস করত এবং পার্শ্ববর্তী একটি কারখানায় শ্রমিকের কাজ করত সে।

গতকাল সকাল সাড়ে ১০টায় কেরানীগঞ্জ মডেল থানাধীন জিনজিরা নামাবাড়ি এলাকায় নাদু ব্যাপারীর ঘাট থেকে লাশটি উদ্ধার করে সুরতহাল শেষে ময়নাতদন্তের জন্য স্যার সলিমুল্লাহ মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতাল মর্গে পাঠানো হয়েছে।

বরিশুর নৌ পুলিশ ফাঁড়ির এসআই মোক্তার হোসেন জানান, খবর পেয়ে ঘটনাস্থলে গিয়ে আমরা লাশ উদ্ধার করি। সুরতহালের সময় লাশের গায়ে অসংখ্য আঘাতের চিহ্ন পাওয়া গেছে। গণপিটুনির একটা ঘটনার কথা শুনেছি তবে কেউ সাক্ষ্য দিতে রাজি হয়নি। এ ঘটনায় আইনগত ব্যবস্থা প্রক্রিয়াধীন রয়েছে।

 

 

 

মন্তব্য

হিমাগার মালিকদের স্লিপ কারসাজি প্রতারিত লাখো আলু চাষি

সাইদ শাহীন ও তামজিদ হাসান তুরাগ
সাইদ শাহীন ও তামজিদ হাসান তুরাগ
শেয়ার
হিমাগার মালিকদের স্লিপ কারসাজি প্রতারিত লাখো আলু চাষি

সরকার নির্ধারিত ভাড়ায় কৃষকের আলু রাখছেন না হিমাগার মালিকরা। কারসাজির মাধ্যমে নামে-বেনামে, আত্মীয়-স্বজন ও পরিজনদের নামে আগে থেকেই স্লিপ কেটে রেখেছেন মালিকরা। ফলে কৃষক আলু রাখতে গেলে তাঁদের বলা হচ্ছে হিমাগারে জায়গা নেই। হিমাগারে জায়গা না থাকায় গুটিকয়েক ব্যবসায়ী ছাড়া কোনো ক্রেতা আলু কিনতেও পারছেন না।

এভাবেই সারা দেশে হিমাগার মালিকদের স্লিপ সিন্ডিকেটের কাছে জিম্মি হয়ে পড়েছেন লাখো আলু চাষি। অবশ্য দিশাহারা কৃষকদের পাশে কৌশলে দাঁড়াচ্ছেন হিমাগারের কর্মকর্তারা। তাঁরা গোপনে বলে দিচ্ছেন, অমুকের স্লিপ নেওয়া আছে, সেখানে আলু বিক্রি করতে পারবেন। আসলে অমুক ব্যক্তিটাই হলো হিমাগার মালিকের এজেন্ট।

বাধ্য হয়ে কৃষক তার কাছে কম দামে আলু বিক্রি করে দিচ্ছেন। বাজারে কৃষকের আলু কেনার কোনো ক্রেতা না মেলার কারণ এটাই।

কুড়িগ্রাম জেলা শহরের আলু চাষি মকবুল আলমের সঙ্গে আলাপকালে তিনি বলেন, এ মৌসুমে আলু তোলা হয়েছে এক হাজার ২০০ বস্তা। কিন্তু তিনি আলু রাখতে পেরেছেন মাত্র ৬০০ বস্তা।

বাকি আলু তিনি বিক্রি করছেন কম দামে। তাঁর ভাষায়, আলু থুবার পাই নাই। যা দাম পাইছি, তা আর কবার নয়। কোল্ড স্টোরেজের মালিক প্রতিনিধিরা কয় আর বস্তা থোয়ার জাগা নাই। বাকি আলু কম দামে বেছে দিছি।

নাম প্রকাশ না করে এক চাষি কালের কণ্ঠকে বলেন, প্রতিটি কোল্ড স্টোরেজের মালিক নামে-বেনামে স্লিপ দিয়ে জায়গা দখল করে রাখেন। পরে হয় তাঁরা নিজেরাই আলু রাখেন, না হয় বস্তাপ্রতি বেশি দাম রাখেন। কারণ আলু রাখতে পারলেই লাভ। আবার এটা অঘোষিত নিয়ম হয়ে গেছে, হিমাগারে আলুর ধারণক্ষমতা যতটুকু তার ১০ শতাংশ বস্তা মালিকরা নিজের নামে রাখে।

কৃষি মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে, সারা দেশে আলুর ফলন ভালো হলেও হতাশ চাষিরা। একদিকে তাঁরা আলুর ভালো দাম পাচ্ছেন না, অন্যদিকে হিমাগারে সিন্ডিকেট করে নেওয়ার কারণে জায়গার সংকট। সব মিলিয়ে প্রান্তিক কৃষকের গলার কাঁটা মাঠের আলু। এবারে চাহিদার চেয়ে উৎপাদন বেশি হওয়ার কারণে বাজারে আলুর দাম কমে গেছে। এ ছাড়া হিমাগারে কৃষকরা আলু রাখতে না পারার কারণে একই সঙ্গে বাজারে আলুর সরবরাহ বেড়ে গেছে। এমন পরিস্থিতিতে প্রতি কেজি আলু ১০ থেকে ১২ টাকায় বিক্রি করতে বাধ্য হচ্ছেন কৃষক। অথচ তাঁদের উৎপাদন খরচ হয়েছে ১৯-২০ টাকা।  কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের তথ্য মতে, চলতি ২০২৪-২৫ অর্থবছরে আলুর উৎপাদন লক্ষামাত্রা এক কোটি ১৩ লাখ ৮৭ হাজার টন, যা গত অর্থবছরে ছিল এক কোটি ৯ লাখ ৬৫ হাজার টন।

আলুর কম দামের সবচেয়ে বড় সুবিধাভোগী হবেন হিমাগার মালিকরা। মার্চ থেকে অক্টোবর পর্যন্ত এক কেজি আলু যেখানে রাখতে হিমাগারে খরচ হয় ৪.৫ থেকে ৬ টাকা, সেই আলু রাখার জন্য সরকার কর্তৃক নির্ধারণ করে দেওয়া হয়েছে ৬.৭৫ টাকা। এর পরও হিমাগারে জায়গা পাচ্ছেন না কৃষক। কারসাজির মাধ্যমে হিমাগার ভরে গেছে দেখিয়ে কম দামে আলু কিনছেন মূলত হিমাগার মালিকরা। এসব আলু ক্রয়মূল্যসহ তিন মাস পরেই অফ সিজনে ন্যূনতম ৪৫ টাকা কেজিতে বিক্রি করতে পারবেন তাঁরা। অথচ হিমাগার মালিকদের সব ধরনের খরচ মিলিয়ে মোট খরচ হবে ২২ থেকে ২৫ টাকা। আর যদি অফ সিজনে আলুর দাম আরো বেশি ওঠে তাহলে হিমাগার মালিকরা লালে লাল হবেন।

সরেজিমনে রংপুর বিভাগের একাধিক আলু হিমাগার ঘুরে দেখা গেছে, হিমাগারগুলোর সামনে সারি সারি আলুভর্তি বস্তা। তবে হতাশা কৃষকের মুখে। তার অন্যতম প্রধান কারণ কৃষকরা তাঁদের প্রয়োজন মতো আলু হিমাগারে রাখতে পারছেন না। ফলে তাঁদের বাধ্য হয়ে কম দামে আলু বিক্রি করতে হচ্ছে।

এ বিষয়ে কুড়িগ্রামের পাইকারি ব্যবসায়ী মারুফ আহমেদ বলেন, হিমাগারগুলোর মধ্যে এখনো কিছু জায়গা খালি আছে। কিন্তু তারা সিন্ডিকেট করে আলুর দাম কমানোর জন্য কূটকৌশল করছেন এবং এই সুবাদে তাঁরা কিছু মাল কিনে কোল্ড স্টোরেজে কম্পানির নামে মাল রাখার ধান্দা করছেন। তিনি আরো বলেন, আমরা এখনো ৬.৭৫ পয়সা ভাড়া মানি না। সামনে বড়সড় আন্দোলনে যাব।

তবে এমন অভিযোগ অস্বীকার করে কুড়িগ্রামের কাঁঠালবাড়ি ইউনিয়নের বাবর কোল্ড স্টোরেজ লিমিটেডের ম্যানেজার শামীম আল মাসুদ কালের কণ্ঠকে বলেন, আমাদের কোল্ড স্টোরেজের ধারণক্ষমতা ১১ হাজার মেট্রিক টন, যা পুরোপুরি বুকিং হয়েছে। আমরা সবাইকে স্লিপ দিয়েছি। কে কৃষক কে ব্যবসায়ী আমরা তা দেখিনি।

মোস্তফা হিমাগারের পরিচালক জাহাঙ্গীর আলম বলেন, কুড়িগ্রামের চারটি হিমাগারের মোট আলু সংরক্ষণক্ষমতা ৪৮ হাজার টন। কিন্তু এ বছর উৎপাদন বেশি হওয়ায় আমাদের হিমশিম খেতে হচ্ছে। অনেককে আলু ফেরত নিয়ে যেতে হচ্ছে।

 

 

মন্তব্য

পল্লবীতে শ্রমিককে কুপিয়ে হত্যা

    রায়পুরায় সংঘর্ষ গুলি, নিহত ২
নিজস্ব প্রতিবেদক
নিজস্ব প্রতিবেদক
শেয়ার
পল্লবীতে শ্রমিককে কুপিয়ে হত্যা

রাজধানীর মিরপুরে পল্লবী এলাকায় গতকাল শুক্রবার সন্ধ্যায় সেলিম (৩৫) নামের এক যুবককে কুপিয়ে হত্যা করা হয়েছে। পরিবারের দাবি, স্থানীয় মাদক ব্যবসায়ীরা এই হত্যাকাণ্ডে জড়িত। নিহত সেলিম পোশাকের কারচুপির কারখানায় কাজ করতেন।

ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতাল সূত্র জানায়, গতকাল সন্ধ্যা সাড়ে ৭টার দিকে সেলিমকে রক্তাক্ত অবস্থায় ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে গেলে চিকিৎসক মৃত ঘোষণা করেন।

ঘটনার সত্যতা নিশ্চিত করে ঢাকা মেডিক্যালের পুলিশ ক্যাম্পের ইনচার্জ ইন্সপেক্টর মো. ফারুক বলেন, ময়নাতদন্তের জন্য মরদেহ মর্গে রাখা হয়েছে।

নিহতের আত্মীয় আশিকুর রহমান জানান, গতকাল ইফতারের পর সেলিম বাড়ির পাশে ওয়াপদা বিল্ডিংয়ের পাশের মাঠে যান। সেখানে শত্রুতার জেরে সেলিমকে কুপিয়ে ফেলে রাখা হয়। পরে তাঁকে উদ্ধার করে ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে নেওয়া হলে চিকিৎসক মৃত ঘোষণা করেন।

নিহতের খালা ইয়াসমিনের ভাষ্য, স্থানীয় মাদক ব্যবসায়ী পারভিন, রনি, জনি, সীমা, রানীসহ আরো বেশ কয়েকজন শত্রুতার জেরে সেলিমকে কুপিয়ে হত্যা করেছে।

নিহত সেলিম এক সন্তান ও স্ত্রীকে নিয়ে মিরপুর-১১ পল্লবীর বিহারি ক্যাম্প ওয়াপদা কলোনি বিল্ডিংয়ে থাকতেন। ঘটনার পর ঘটনাস্থলে যান পুলিশ কর্মকর্তারা।

পল্লবী থানার ওসি নজরুল ইসলাম জানান, খবর পেয়ে তাঁরা ঘটনাস্থলে গেছেন।

কারা তাঁকে হত্যা করেছে, এ ব্যাপারে তদন্ত চলছে।

রায়পুরায় আধিপত্য নিয়ে সংঘর্ষে গুলি, নিহত ২ : রায়পুরা (নরসিংদী) প্রতিনিধি জানান, নরসিংদীর রায়পুরা উপজেলার চরাঞ্চলে আধিপত্য বিস্তার নিয়ে সংঘর্ষে গুলিবিদ্ধ হয়ে দুই প্রবাসফেরত ব্যক্তি নিহত হয়েছেন। এ ঘটনায় এক নারীসহ চারজন আহত হয়েছে। গতকাল ভোরে উপজেলার চানপুর ইউনিয়নের মোহিনীপুর এলাকায় এ ঘটনা ঘটে।

নিহতরা হলেন মোহিনীপুর এলাকার খোরশেদ মিয়ার ছেলে আমিন মিয়া ও আব্দুল বারিকের ছেলে বাশার মিয়া।

এর মধ্যে আমিন ছুটি কাটাতে তিন মাস আগে সৌদি আরব থেকে দেশে আসেন বলে জানায় স্বজনরা।

স্থানীয় সূত্র জানায়, মোহিনীপুর এলাকায় দীর্ঘদিন ধরে বীর মুক্তিযোদ্ধা আব্দুস সালাম ও চানপুর ইউনিয়ন পরিষদের ৯ নম্বর ওয়ার্ড সদস্য সামসু মিয়ার অনুসারীদের মধ্যে দ্বন্দ্ব চলছিল। ছয় মাস আগে সংঘর্ষের পর সালামের অনুসারীরা এলাকা ছেড়ে পাশের একটি গ্রামে আশ্রয় নিয়েছিল। আসন্ন ঈদ উপলক্ষে তারা বাড়ি ফেরার প্রস্তুতি নিলে সামসু মেম্বারের অনুসারীরা দেশীয় অস্ত্র ও আগ্নেয়াস্ত্র নিয়ে হামলা চালায়। এ সময় গুলিবিদ্ধ হয়ে সালামের অনুসারী আমিন ও বাশার মারা যান।

নিহত আমিনের বাবা খোরশেদ মিয়ার অভিযোগ, সামসু মেম্বারের হামলা ও নির্যাতনের ভয়ে আমরা গ্রাম ছেড়েছিলাম। ঈদের আগে বাড়ি ফিরতে গেলে তারা হামলা চালায়। আমার ছেলের বাঁ পায়ে গুলি করে এবং শ্বাসরোধে তাকে হত্যা করা হয়। এ সময় আমার স্ত্রী আহত হয়।

বাশারের স্বজনরা জানায়, ঘটনার আগে রাতে সামসু মেম্বারের অনুসারীদের মধ্যে দুজন হামলা করতে এসে অস্ত্রসহ আটক হয়। পরে তাদের ছাড়িয়ে নেওয়া হয়। এর কিছুক্ষণ পরই ভোরে সালামের অনুসারীদের ওপর হামলা হয়। এতে গুলিবিদ্ধ হয়ে বাশার মারা যান।

রায়পুরা উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের জরুরি বিভাগের চিকিৎসক ডা. রাবেয়া সুলতানা জানান, মৃত অবস্থায় দুজনকে হাসপাতালে আনা হয়। আমিনের বাঁ পায়ে এবং বাশারের বুক, পাসহ শরীরে গুলির আঘাত ছিল।

এ বিষয়ে চানপুর ইউনিয়ন পরিষদের সদস্য সামসু মিয়া বলেন, সংঘর্ষের সময় আমার পক্ষের তিনজন গুলিবিদ্ধ হয়েছে। প্রতিপক্ষের দুজন নিহত হয়েছে বলে শুনেছি।

রায়পুরা থানার ওসি আদিল মাহমুদ জানান, পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছে। লাশ দুটি ময়নাতদন্তের জন্য মর্গে পাঠানো হয়েছে। এখনো নিহতদের পরিবারের পক্ষ থেকে থানায় লিখিত অভিযোগ দেওয়া হয়নি।

 

মন্তব্য

সর্বশেষ সংবাদ