জাকাত ইসলামের অন্যতম রুকন বা স্তম্ভ। ইসলাম মানব সমাজে অর্থনৈতিক সুব্যবস্থা নিশ্চিত করতে এবং সামাজিক সাম্য প্রতিষ্ঠা করতে বিত্তশালীদের ওপর নির্দিষ্ট হারে জাকাত ফরজ করেছে। আর জাকাতকে বলা হয়েছে গরিবের অধিকার। এটা কোনোক্রমেই গরিবের প্রতি ধনীর দয়া বা অনুগ্রহ নয়।
জাকাতের নিসাব কতটুকু
আহমাদ ইজাজ

ইসলামী বিশ্বকোষের তথ্যমতে, আল-কোরআনে প্রত্যক্ষভাবে জাকাতের কথা এসেছে ৩২ বার। এর মধ্যে নামাজ ও জাকাতের কথা একত্রে এসেছে ২৮ বার।
দ্বিতীয় হিজরিতে রোজা ফরজ হওয়ার পরপরই শাওয়াল মাসে জাকাত ফরজ হয় এবং নবম হিজরিতে এটি পূর্ণাঙ্গরূপে কার্যকর করা হয়।
ইসমাঈল (আ.) সম্পর্কে বলা হয়েছে, ‘সে তার পরিবার-পরিজনকে নামাজ ও জাকাতের নির্দেশ দিত।’ (সুরা : মারইয়াম, আয়াত : ৫৫)
ঈসা (আ.)-এর প্রসঙ্গে এসেছে, তিনি বলেছেন, ‘যেখানেই আমি থাকি না কেন, তিনি আমাকে বরকতময় করেছেন। তিনি আমাকে নির্দেশ দিয়েছেন, যত দিন জীবিত থাকি তত দিন নামাজ ও জাকাত আদায় করতে।’ (সুরা : মারইয়াম, আয়াত : ৩১)
মোটকথা, প্রাচীনকাল থেকেই সব নবী-রাসুলের উম্মতের ওপর নামাজ ও জাকাত ফরজ হিসেবে পালনীয় ছিল।
জাকাত কার ওপর ফরজ?
জাকাত স্বাধীন, পূর্ণবয়স্ক এমন মুসলিম নর-নারী আদায় করবে, যার কাছে নিসাব পরিমাণ সম্পদ আছে। তবে এর জন্য শর্ত হলো—
এক. সম্পদের ওপর পূর্ণাঙ্গ মালিকানা থাকতে হবে।
দুই. সম্পদ উৎপাদনক্ষম ও বর্ধনশীল হতে হবে।
তিন. নিসাব পরিমাণ সম্পদ থাকতে হবে।
চার. সারা বছরের মৌলিক প্রয়োজন মেটানোর পর অতিরিক্ত সম্পদ থাকলেই শুধু জাকাত ফরজ হবে।
পাঁচ. জাকাত ফরজ হওয়ার জন্য ঋণমুক্ত হওয়ার পর নিসাব পরিমাণ সম্পদ থাকা শর্ত।
ছয়. কারো কাছে নিসাব পরিমাণ সম্পদ পূর্ণ এক বছর থাকলেই শুধু ওই সম্পদের ওপর জাকাত দিতে হবে।
জাকাতের নিসাব
ক. সোনা ৭.৫ তোলা=৯৫.৭৪৮ গ্রাম প্রায়। খ. রুপা ৫২.৫ তোলা=৬৭০.২৪ গ্রাম প্রায়। (আহসানুল ফাতাওয়া : ৪/৩৯৪, আল ফিকহুল ইসলামী : ২/৬৬৯)
দেশি-বিদেশি মুদ্রা ও ব্যাবসায়িক পণ্যের নিসাব নির্ধারণে সোনা-রুপা হলো পরিমাপক। এ ক্ষেত্রে ফকির-মিসকিনদের জন্য যেটি বেশি লাভজনক হবে, সেটিকে পরিমাপক হিসেবে গ্রহণ করাই শরিয়তের নির্দেশ। তাই মুদ্রা ও পণ্যের বেলায় বর্তমানে রুপার নিসাবই পরিমাপক হিসেবে গণ্য হবে। তাই যার কাছে ৫২.৫ তোলা সমমূল্যের দেশি-বিদেশি মুদ্রা বা ব্যাবসায়িক পণ্য মজুদ থাকবে, তার ওপর জাকাত ওয়াজিব হবে।
যে সম্পদের ওপর জাকাত ফরজ, তার ৪০ ভাগের এক ভাগ বা ২.৫০ শতাংশ জাকাত দিতে হবে। সম্পদের মূল্য নির্ধারণ করে শতকরা আড়াই টাকা বা হাজারে ২৫ টাকা হারে নগদ অর্থ কিংবা ওই পরিমাণ টাকার কাপড়চোপড় বা অন্য কোনো প্রয়োজনীয় সামগ্রী কিনে দিলেও জাকাত আদায় হবে। (আবু দাউদ, হাদিস : ১৫৭২; সুনানে তিরমিজি, হাদিস : ৬২৩)
সম্পর্কিত খবর

আজকের নামাজের সময়সূচি, ২৪ মার্চ ২০২৫
অনলাইন ডেস্ক

আজ সোমবার ২৪ মার্চ ২০২৫, ১০ চৈত্র ১৪৩১, ২৩ রমজান ১৪৪৬
ঢাকা ও এর পার্শ্ববর্তী এলাকার নামাজের সময়সূচি নিম্নরূপ—
জোহরের সময় শুরু ১২টা ৮ মিনিট।
আসরের সময় শুরু - ৪টা ২৮ মিনিট।
মাগরিব- ৬টা ১৪ মিনিট।
এশার সময় শুরু - ৭টা ২৮ মিনিট।
আগামীকাল ফজর শুরু - ৪টা ৪৬ মিনিট।
আজ ঢাকায় সূর্যাস্ত - ৬টা ২ মিনিটে এবং আগামীকাল সূর্যোদয়- ৬টা ১০ মিনিটে।
সূত্র : ইসলামিক রিসার্চ সেন্টার, বসুন্ধরা, ঢাকা।

প্রশ্ন-উত্তর
কয়েকজন পালাক্রমে ইতিকাফ করে ১০ দিন পূরণ করলে হবে?
ইসলামী জীবন ডেস্ক

প্রশ্ন : আমাদের মসজিদে রমজানের শেষ ১০ দিন ইতিকাফ করার লোক খুঁজে পাওয়া যায় না। তাই সবাই মিলে এটা নির্ধারণ করে নেয় যে লোকজন পালাক্রমে ১০ দিন ইতিকাফ করবে। প্রশ্ন হলো, এর দ্বারা এলাকার সবার পক্ষ থেকে ইতিকাফ আদায় হবে?
-মাসরুর, ঝিনাইদহ
উত্তর : ইতিকাফ মাসনুন আদায় হওয়ার জন্য একই ব্যক্তিকে রমজানের শেষের ১০ দিন ইতিকাফ করতে হয়। সুতরাং প্রশ্নে বর্ণিত পদ্ধতিতে ইতিকাফ আদায় হবে না, বরং মহল্লার সবার জিম্মায় সুন্নতে মুয়াক্কাদায়ে কিফায়া থেকে যাবে।
(বুখারি, হাদিস : ২০২৭, ফাতাওয়ায়ে মাহমুদিয়া : ১৩/১৫২-১৫৬, ফাতাওয়ায়ে ফকীহুল মিল্লাত : ৫/৪৯০)
সমাধান : ইসলামিক রিসার্চ সেন্টার বাংলাদেশ, বসুন্ধরা, ঢাকা

মেসিডোনিয়ান মুসলিমদের ইফতার
মো. আবদুল মজিদ মোল্লা

পূর্ব ইউরোপের দেশ মেসিডোনিয়ার জনসংখ্যা তিন কোটি। যার ৪০ ভাগই মুসলিম। ইউরোপের অমুসলিম দেশগুলোর মধ্যে মেসিডোনিয়ায়ই মুসলিম জনসংখ্যার হার সবচেয়ে বেশি। স্পেনে মুসলিম শাসন প্রতিষ্ঠিত হওয়ার পর ইউরোপের নানা দেশে মুসলিম ধর্মপ্রচারক ও জ্ঞানান্বেষীরা ছড়িয়ে পড়েন।
১৩৮২ খ্রিস্টাব্দে উসমানীয় শাসকরা মেসিডোনিয়া বিজয় করেন এবং তাঁদের সহযোগিতায় সেখানে দ্রুত ইসলাম ছড়িয়ে পড়ে। ১৯১২ খ্রিস্টাব্দে সংঘটিত প্রথম বলকান যুদ্ধ পর্যন্ত তুর্কিরাই কার্যত মেসিডোনিয়া শাসন করে।
মুসলিম শাসন অবসানের পর মেসিডোনিয়ার মুসলিম জনসংখ্যা ক্রমেই কমতে থাকে। ১৯২১ থেকে ১৯৬১ সাল পর্যন্ত মুসলিম জনসংখ্যা ৩১ ভাগ থেকে ২৪ ভাগে নেমে আসে।
মেসিডোনিয়া ইউরোপিয়ান দেশ হলেও এখানকার মুসলিম জীবনে তুর্কি সংস্কৃতির প্রভাবই বেশি।
মেসিডোনিয়ার সর্বস্তরের মুসলিম; এমনকি ধর্মীয় ব্যক্তিত্ব ও পণ্ডিতরা সাধারণ মানুষের সঙ্গে মিলে রমজানকে স্বাগত জানায়। সাধারণ মানুষের মাঝে উচ্ছ্বাস ও উদ্দীপনা ছড়িয়ে পড়ে। মসজিদে মসজিদে ধর্মীয় আলোচনাসভা অনুষ্ঠিত হয়। মসজিদে অনুষ্ঠিত আলোচনাসভায় বিশেষ অতিথিদের উপস্থিত করা হয়। কখনো কখনো বলকান অঞ্চলের অন্যান্য মুসলিম দেশ থেকে ইসলামিক স্কলারদের আমন্ত্রণ করা হয়।
বিশ্বের অন্যান্য অঞ্চলের মুসলিমদের মতো রমজানে মেসিডোনিয়ান মুসলিমরাও ইবাদতে মনোযোগী হন। দিনরাতের দীর্ঘ সময় মসজিদে কাটায়। প্রতিটি মসজিদে তারতিলের সঙ্গে কোরআন খতম করা হয়। রমজান মাসে মেসিডোনিয়ার মুসলিমরা পারস্পরিক সম্পর্ক জোরালো করে। তারা পরস্পরের সঙ্গে দেখা করে উপহার দেয়। ধনীরা দরিদ্রদের মাঝে প্রয়োজনীয় খাদ্যসামগ্রী বিতরণ করে। তারা তুর্কিদের মতো তোপধ্বনিতে রমজানকে স্বাগত জানায় এবং মসজিদগুলোয় আলোকসজ্জা করে। বর্ণিল আলোয় সাজিয়ে তোলে মসজিদগুলোকে। শেষ রাতে সাহরির জন্য পরস্পর জাগিয়ে দেওয়াও একটি মেসিডোনিয়ান মুসলিম সংস্কৃতি।
মেসিডোনিয়ার মুসলিমরা সম্মিলিতভাবে ইফতার করতেই পছন্দ করে। তারা শহরের বিভিন্ন এলাকায় ইফতারের আয়োজন করেন। প্রত্যেকে তার সামর্থ্য অনুযায়ী তাতে অংশগ্রহণ করে। প্রতিটি ইফতারস্থলে শতাধিক মানুষ একত্র হয়। এসব ইফতার অনুষ্ঠানেই ধনীরা দরিদ্র ব্যক্তিদের হাতে তাঁদের জাকাত ও ফিতরার অর্থ তুলে দেন। রমজানের শুরু থেকেই তাঁরা জাকাত আদায় শুরু করেন। যেন দরিদ্র মুসলিমরা জাকাতের অর্থ পেয়ে স্বস্তির সঙ্গে রমজান কাটাতে পারে।
ইসলাম ওয়েব ডটনেক অবলম্বনে

রোজার মাধ্যমে মুমিনের প্রশান্তি অর্জন
আলেমা হাবিবা আক্তার

যেকোনো ইবাদত মুমিনের হৃদয়ে প্রশান্তি বয়ে আনে। তবে রোজা রেখে মুমিন অন্য সব ইবাদতের তুলনায় অধিক প্রশান্তি খুঁজে পায়। কেননা রোজাদারের জন্য আল্লাহ যে পুরস্কার ঘোষণা করেছেন তা যেমন প্রেমময়, তেমনি অতি সম্মানের। যেমন রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, ‘আল্লাহ তাআলা বলেন, মানুষের প্রতিটি কাজ তার নিজের জন্যই—রোজা ছাড়া।
রোজাকে আল্লাহ নিজের দিকে সম্বোধন করে বলেছেন, ‘রোজা আমার জন্য’। যা একজন আল্লাহপ্রেমী মুমিনের জন্য অত্যন্ত তাৎপর্যপূর্ণ।
ইমাম কুরতুবি (রহ.) বলেন, ‘অন্যান্য ইবাদতে ‘রিয়া’ (অন্যকে দেখানোর আগ্রহ) থাকলেও রোজার ক্ষেত্রে তা নেই। রোজা সম্পর্কে শুধু আল্লাহই জানেন। এ জন্য আল্লাহ রোজাকে নিজের সঙ্গে সম্পৃক্ত করেছেন।
আর ইবনুল জাওঝি (রহ.) বলেন, ‘প্রায় সব আমলই কাজের মাধ্যমে প্রকাশ পায় এবং কাজগুলোর খুব কমই অন্যকে দেখানোর মোহ থেকে মুক্ত থাকে। কিন্তু রোজা এর বিপরীত।’
আল্লামা ইবনু আবদিল বার (রহ.) বলেন, অন্য সব ইবাদতের ওপর রোজার মর্যাদা প্রমাণের জন্য আল্লাহ বলেছেন, রোজা আমার জন্য। আবু উমামা (রা.)-কে রাসুলুল্লাহ (সা.) যেমনটি বলেছিলেন, ‘তুমি রোজাকে আঁকড়ে ধরো, যেহেতু এর কোনো বিকল্প নেই।’ (সুনানে নাসায়ি, হাদিস : ২২২০)
পৃথিবীর ভালো কাজের প্রতিদান ও মন্দ কাজের শাস্তি আল্লাহ নিজে দেন।
ইমাম কুরতুবি (রহ.) বলেন, আমলের সাধারণ হিসাব আল্লাহ মানুষের সামনে প্রকাশ করে দিয়েছেন। আল্লাহ নিজ ইচ্ছা অনুযায়ী আমলের প্রতিদান ১০ থেকে সাত শ গুণ পর্যন্ত বৃদ্ধি করেন। রোজা এর ব্যতিক্রম। আল্লাহ রোজাদারের জন্য সীমাহীন প্রতিদান রেখেছেন।
এক বর্ণনা অনুসারে আল্লাহ বলেছেন, আমিই রোজার প্রতিদান হয়ে যাই। একজন মুমিনের জন্য এর থেকে প্রশান্তি ও পরিতৃপ্তির কথা কী হতে পারে যে আল্লাহ তার জন্য হয়ে যাবেন!
শায়খ ইবনে উসাইমিন (রহ.) বলেন, হাদিসটি নানাভাবে রোজার মর্যাদা প্রমাণ করে। নিশ্চয়ই আল্লাহ সব আমলের মধ্যে রোজাকে নিজের জন্য বিশেষায়িত করেছেন। কেননা রোজার মাধ্যমে আল্লাহর জন্য বান্দার নিষ্ঠা প্রকাশ পায়। এ আমলের রহস্য আল্লাহ ও তাঁর বান্দা ছাড়া অন্যরা জানে না। সুতরাং আল্লাহর ভয়ে ও তাঁর প্রতিদান লাভের জন্য সে তা পরিহার করে। বান্দার এই নিষ্ঠার পুরস্কার হিসেবে আল্লাহ সব ইবাদতের মধ্যে নিজের বলে ঘোষণা দিয়েছেন।
আল্লাহ সবাইকে রোজার প্রশান্তি অর্জনের তাওফিক দিন।