‘স্কুল ফিডিং’সহ একনেকে ১৫ প্রকল্প অনুমোদন

অনলাইন ডেস্ক
অনলাইন ডেস্ক
শেয়ার
‘স্কুল ফিডিং’সহ একনেকে ১৫ প্রকল্প অনুমোদন

জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটি (একনেক) ২১ হাজার ১৩৯ কোটি ৪৫ লাখ টাকা ব্যয়ে সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে খাদ্য কর্মসূচি শীর্ষক স্কুল ফিডিং প্রকল্পসহ ১৫টি প্রকল্পের অনুমোদন করেছে। এর মধ্যে সরকারি অর্থায়ন ১৪ হাজার ১৯৩ কোটি ৫৭ লাখ টাকা, প্রকল্প ঋণ ৬ হাজার ৫৩৯ কোটি ২৯ লাখ টাকা এবং সংস্থার নিজস্ব অর্থায়ন ৪০৬ কোটি ৫৯ লাখ টাকা।

রবিবার (২৩ মার্চ)  প্রধান উপদেষ্টা এবং একনেক চেয়ারপারসন ড. মুহাম্মদ ইউনূসের সভাপতিত্বে পরিকল্পনা কমিশন চত্বরে এই সভা অনুষ্ঠিত হয়। সভা শেষে এ তথ্য জানান পরিকল্পনা উপদেষ্টা ওয়াহিদউদ্দিন মাহমুদ।

একনেক সভার কার্যক্রমে অংশগ্রহণ করেন অর্থ এবং বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি উপদেষ্টা সালেহউদ্দিন আহমেদ, পরিকল্পনা উপদেষ্টা ওয়াহিদউদ্দিন মাহমুদ, পররাষ্ট্র উপদেষ্টা মো. তৌহিদ হোসেন, স্বরাষ্ট্র এবং কৃষি উপদেষ্টা লেফটেন্যান্ট জেনারেল মো. জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরী (অব.), শিল্প এবং গৃহায়ণ ও গণপূর্ত উপদেষ্টা আদিলুর রহমান খান, খাদ্য এবং ভূমি উপদেষ্টা আলী ইমাম মজুমদার, বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ, সড়ক পরিবহন ও সেতু এবং রেলপথ উপদেষ্টা মুহাম্মদ ফাওজুল কবির খান, পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন এবং পানি সম্পদ উপদেষ্টা সৈয়দা রিজওয়ানা হাসানসহ সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা।

অনুমোদিত প্রকল্পসমূহ হলো : নৌপরিবহন মন্ত্রণালয়ের পায়রা সমুদ্র বন্দরের প্রথম টার্মিনাল এবং আনুষঙ্গিক সুবিধাদি নির্মাণ (২য় সংশোধিত) প্রকল্প; বেসামরিক বিমান পরিবহন ও পর্যটন মন্ত্রণালয়ের চট্টগ্রাম শাহ আমানত আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে বিদ্যমান রানওয়ে ও টেক্সিওয়ের শক্তি বৃদ্ধিকরণ (১ম সংশোধিত) প্রকল্প।

স্থানীয় সরকার, পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় মন্ত্রণালয়ের ৩টি প্রকল্প- চট্টগ্রাম মহানগরীর কালুরঘাট এলাকায় পয়ঃশোধনাগার নির্মাণের জন্য ভূমি অধিগ্রহণ প্রকল্প, Strengthening Institutions for Climate Change Adapted Water Resource Management in Dhaka প্রকল্প, এবং সায়েদাবাদ পানি শোধনাগার প্রকল্প ফেজ-৩ (২য় সংশোধিত) প্রকল্প। বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের বাংলাদেশ-চায়না ফ্রেন্ডশিপ এক্সিবিশন সেন্টার নির্মাণ (২য় সংশোধিত) প্রকল্প; ডাক, টেলিযোগাযোগ ও তথ্য প্রযুক্তি মন্ত্রণালয়ের ডিজিটাল কানেকটিভিটি শক্তিশালীকরণে সুইচিং ও ট্রান্সমিশন নেটওয়ার্ক উন্নয়ন (৩য় সংশোধিত) প্রকল্প; সড়ক পরিবহন ও সেতু মন্ত্রণালয়ের পঞ্চবটি হতে মুক্তারপুর সেতু পর্যন্ত সড়ক প্রশস্তকরণ ও দোতলা রাস্তা নির্মাণ প্রকল্প (১ম সংশোধন) প্রকল্প।

স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রণালয়ের রাঙামাটি মেডিক্যাল কলেজ ও হাসপাতাল এবং নার্সিং কলেজ স্থাপন প্রকল্প; শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের ঢাকা শহর সন্নিকটবর্তী এলাকায় ১০টি সরকারি মাধ্যমিক বিদ্যালয় স্থাপন প্রকল্প (২য় সংশোধিত) প্রকল্প; প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ের সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে ফিডিং কর্মসূচি প্রকল্প; খাদ্য মন্ত্রণালয়ের সারাদেশে অবস্থিত ক্ষতিগ্রস্ত খাদ্য গুদাম এবং অন্যান্য আনুষঙ্গিক অবকাঠামোর মেরামত ও সংস্কার প্রকল্প; ভূমি মন্ত্রণালয়ের জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ে স্থাপিত রেকর্ড রুমসমূহ সংস্কার ও মেরামত প্রকল্প; মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয়ের দুধ ও মাংস উৎপাদন বৃদ্ধির লক্ষ্যে প্রভেন বুল তৈরি প্রকল্প এবং বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি মন্ত্রণালয়েশ রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎ কেন্দ্রের ভৌত সুরক্ষা ব্যবস্থা নির্মাণ (২য় সংশোধিত) প্রকল্প।

এছাড়া কুষ্টিয়া জেলায় নতুন সার্কিট হাউজ নির্মাণ (১ম সংশোধিত) ৪র্থ বার বৃদ্ধি, চট্টগ্রাম সিটি আউটার রিং রোড (পতেঙ্গা হতে সাগরিকা) (৪র্থ সংশোধিত) ৪র্থ বার বৃদ্ধি এবং বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয় (বিএসএমএমইউ)-এর অধীনে সুপার স্পেশিয়ালাইজড হাসপাতাল স্থাপন (২য় সংশোধিত) চতুর্থ বার মেয়াদ বৃদ্ধির প্রস্তাব সভায় পাস করা হয়।

সভায় পরিকল্পনা উপদেষ্টা অনুমোদিত ১৩টি প্রকল্প সর্ম্পকে একনেক সদস্যদের অবহিত করা হয়। সেগুলো হলো: ১. -বানৌজা শের-ই-বাংলা পটুয়াখালী স্থাপন (২য় সংশোধিত) প্রকল্প; ২. নরসিংদী জেলা কারাগার নির্মাণ (১ম সংশোধিত) প্রকল্প; ৩. ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের বিভিন্ন অঞ্চলের ক্ষতিগ্রস্ত সড়ক, নর্দমা, ফুটপাত নির্মাণ ও উন্নয়নসহ সড়ক নিরাপত্তা (২য় সংশোধিত) প্রকল্প; ৪. ইসিবি চত্বর হতে মিরপুর পর্যন্ত সড়ক প্রশস্তকরণ ও উন্নয়ন এবং কালশী মোড়ে ফ্লাইওভার নির্মাণ (২য় সংশোধিত) প্রকল্প; ৫. বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ে পূর্ণাঙ্গ শিশু কার্ডিওলজি ও শিশু কার্ডিয়াক সার্জারি ইউনিট স্থাপন (১ম সংশোধিত) প্রকল্প; ৬. বাংলাদেশ পরমাণু শক্তি কমিশনের বিদ্যমান গামা সোর্স শক্তিশালীকরণ (২য় সংশোধিত) প্রকল্প; ৭. ভ্রাম্যমাণ বিজ্ঞান প্রদর্শনী-বিসিএসআইআর (২য় সংশোধিত) প্রকল্প; ৮. সিলেট টেক্সটাইল ইনস্টিটিউট স্থাপন-(২য় সংশোধিত) প্রকল্প; ৯. কৃষি আবহাওয়া তথ্য পদ্ধতি উন্নতকরণ (কম্পোনেন্ট-সি) (২য় সংশোধিত) প্রকল্প; ১০. বান্দরবান জেলার লামা উপজেলায় লামাবাজার রক্ষাকল্পে মাতামুহুরী নদীতে প্রতিরক্ষা কাজ বাস্তবায়ন প্রকল্প; ১১. কক্সবাজার জেলায় সবুজ বেষ্টনী সৃজন, প্রতিবেশ পুনরুদ্ধার এবং ইকো-ট্যুরিজম উন্নয়ন প্রকল্প (২য় সংশোধিত) প্রকল্প; ১২. চট্টগ্রাম মহানগরীর বন্যা নিয়ন্ত্রণ, জলমগ্নতা/জলাবদ্ধতা নিরসন ও নিষ্কাশন উন্নয়ন শীর্ষক প্রকল্প (১ম সংশোধিত) প্রকল্প; ১৩. Feasibility Study on Livestock service Transformation (LST) প্রকল্প।

একনেক সভা শেষে এনইসি সম্মেলন কক্ষে পরিকল্পনা উপদেষ্টা ওয়াহিদউদ্দিন মাহমুদ এসব প্রকল্প সম্পর্কে সাংবাদিকদের ব্রিফ করেন। এ সময় পরিকল্পনা মন্ত্রণালয় ও কমিশনের সচিব ও সদস্যরা উপস্থিত ছিলেন।

মন্তব্য

সম্পর্কিত খবর

কালো টাকা সাদা করেছেন সাবেক প্রেস সচিব, শ্যামল দত্তের ব্যাংক হিসাব ফ্রিজ

নিজস্ব প্রতিবেদক
নিজস্ব প্রতিবেদক
শেয়ার
কালো টাকা সাদা করেছেন সাবেক প্রেস সচিব, শ্যামল দত্তের ব্যাংক হিসাব ফ্রিজ
শ্যামল দত্ত

সাবেক প্রেস সচিব আবুল কালাম আজাদ ও তার পরিবারের বিরুদ্ধে কালো টাকা সাদা করার প্রমাণ পেয়েছে আয়কর গোয়েন্দা ও তদন্ত ইউনিট (আইটিআইআইইউ)। তাদের তিনজনের নামে ছয় কোটি টাকার এফডিআর ফ্রিজ করা হয়েছে। এ ছাড়া সাংবাদিক শ্যামল দত্ত ও তার স্ত্রীর ব্যাংক অ্যাকাউন্টও ফ্রিজ করা হয়েছে। 

মঙ্গলবার (২৫ মার্চ) জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর) সূত্রে এ তথ্য জানা গেছে।


 
এনবিআর সূত্র জানিয়েছে, সাবেক প্রেস সচিব আবুল কালাম আজাদ, তার স্ত্রী আক্তারি বেগম ও ছেলে ইশতিয়াক আজাদের নামে চারটি ফ্ল্যাট রয়েছে। এগুলোর মূল্য ৫ কোটি ৭৬ লাখ টাকা। তারা করফাইলে দেখিয়েছেন ২ কোটি ৩ লাখ টাকা। এসব ফ্ল্যাটের কর পরিশোধ করেছেন আয়কর আইনের কালো টাকা সাদা করার ধারার সুযোগ নিয়ে।
এ ছাড়া আক্তারি বেগম ২০২০-২০২১ করবর্ষে কালো টাকা সাদা করার ধারার সুযোগ নিয়ে আরো ৪ কোটি টাকা ঘোষণা দিয়েছেন, অর্থাৎ কর ফাইলে প্রদর্শন করেছেন। তাদের তিনজনের নামে ছয় কোটি টাকার এফডিআরও পাওয়া গেছে। এফডিআরের এ টাকা ফ্রিজ করেছে আয়কর গোয়েন্দা ও তদন্ত ইউনিট (আইটিআইআইইউ)।   

সাংবাদিক শ্যামল দত্ত ও তার স্ত্রী সঞ্চিতা দত্তের ব্যাংক হিসাবও স্থগিত করা হয়েছে।

তাদের ও তাদের মালিকানাধীন ব্যবসা প্রতিষ্ঠানের (প্রোপাইটরশীপ-সাদিয়া ট্রাভেলস ও অন্যান্য) নামে এফডিআর হিসাব ও স্থায়ী আমানত হিসাব থেকে অর্থ উত্তোলন বা স্থানান্তর স্থগিত করা হয়েছে। তাদের আমানতের স্থিতির তথ্য তিন কার্য দিবসের মধ্যে পাঠাতে দেশের সব তফসিলি ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলোকে চিঠি দিয়েছে আয়কর গোয়েন্দা।

এনবিআর সূত্রে জানা গেছে, শ্যামল দত্ত তার বেতনের অর্থও আয়কর নথিতে প্রদর্শন করতেন না।

মন্তব্য

সেনাবাহিনী নিয়ে হাসনাত-সারজিসের বক্তব্যে অনেকটা ‘কোণঠাসা’ এনসিপি

অনলাইন ডেস্ক
অনলাইন ডেস্ক
শেয়ার
সেনাবাহিনী নিয়ে হাসনাত-সারজিসের বক্তব্যে অনেকটা ‘কোণঠাসা’ এনসিপি
সংগৃহীত ছবি

রাজনৈতিক দল হিসেবে আত্মপ্রকাশের পর শীর্ষ কয়েকজন নেতার নানা মন্তব্য ও কর্মকাণ্ডে বেশ অস্বস্তিতে পড়ে জাতীয় নাগরিক পার্টি (এনসিপি)। বিশ্লেষকদের অনেকে বলছেন, সর্বশেষ সেনাবাহিনীকে জড়িয়ে দলটির শীর্ষ দুই নেতা হাসনাত আব্দুল্লাহ ও সারজিস আলমের ফেসবুক পোস্ট ঘিরে অনেকটা কোণঠাসা হয়ে পড়েছে ছাত্রদের এই দলটি।

এ নিয়ে রাজনৈতিক অঙ্গনসহ সাধারণ নাগরিকদের অনেককে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে নানা ধরনের নেতিবাচক মন্তব্যও করতে দেখা গেছে।

এই দুই নেতার বাইরেও সম্প্রতি মুখ্য সংগঠক নাসীরুদ্দীন পাটওয়ারী ও যুগ্ম মুখ্য সংগঠক আব্দুল হান্নান মাসউদেরও কিছু বক্তব্য নিয়েও দলের শীর্ষ নেতাদের মধ্যে বেশ অসন্তোষ রয়েছে।

দু’দিন আগে এসব বিষয় নিয়ে শীর্ষ নেতাদের মধ্যে বৈঠক হয়। সেখানে হাসনাত, সারজিসসহ কোনো কোনো নেতার কর্মকাণ্ড ও বিভিন্ন মন্তব্য নিয়ে প্রশ্নও তোলেন কেউ কেউ।

সংগঠনটির কেন্দ্রীয় কমিটির দুই শতাধিক নেতা নিয়ে একটি হোয়াটসঅ্যাপ গ্রুপ রয়েছে। সেখানে গত কয়েকদিনে শীর্ষ পর্যায়ের কয়েকজন নেতার এসব কর্মকাণ্ড নিয়ে দলের মধ্যেই সমালোচনা চলছে বলে প্রথম সারির কয়েকজন নেতা জানিয়েছেন।

নাম গোপন রাখার শর্তে দলের শীর্ষ একজন নেতা বলেন, ‘হাসনাত আব্দুল্লাহ ও সারজিস আলমের ব্যক্তিগত পরিচিতি ও ফেসবুকে ফ্যান, ফলোয়ার থাকার কারণে তারা নিজেদেরকে অনেকটা দলের ঊর্ধ্বে মনে করেন’।

জাতীয় নাগরিক পার্টির শীর্ষ পর্যায়ের কোনো কোনো নেতার আর্থিক অস্বচ্ছতা নিয়েও নানা প্রশ্ন উঠছে দলের মধ্যে।

গত সোমবার শতাধিক গাড়িবহর ও ব্যান্ড পার্টি নিয়ে নিজ জেলা পঞ্চগড়ে শোডাউন করেছেন উত্তরাঞ্চলের সংগঠক সারজিস আলম। এটি নিয়ে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমেও নানা সমালোচনা দেখা গেছে।

এই বিষয়টি নিয়ে মঙ্গলবার আলোচিত কন্টেন্ট ক্রিয়েটর ও নাগরিক পার্টির জ্যেষ্ঠ যুগ্ম সদস্য সচিব তাসনিম জারা নিজের ভেরিফাইড ফেসবুক পেজে সারজিস আলমকে উদ্দেশ্য করে একটি খোলা চিঠি লিখেন।

এতে সারজিসের এই আয়োজনে অর্থের উৎস নিয়ে প্রশ্ন তোলেন মিস জারা।

নাগরিক পার্টির সদস্য সচিব আখতার হোসেন বলেন, ‘জনমনে অস্বস্তি তৈরি হলে তাতে দলের ভেতরেও অস্বস্তি দেখা যায়। জনগণের প্রত্যাশা পূরণের ভবিষ্যতে যেন এসবের পুনরাবৃত্তি না হয়, সেই বিষয়ে গুরুত্ব দেব আমরা।’

সেনাবাহিনী নিয়ে দেশজুড়ে আলোচনা তৈরির পর সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে গত দুই দিনে ‘সেনা শাসন, জরুরি অবস্থা জারি’র মতো একের পর এক গুজবও ছড়িয়ে পড়তে দেখা যায়।

রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা বলছেন, এই ধরনের কর্মকাণ্ড শুরুতেই জাতীয় নাগরিক পার্টিকে এক ধরনের চ্যালেঞ্জের মুখে ফেলেছে।

‘ক্যান্টনমেন্টে বৈঠক নিয়ে যেসব প্রশ্ন’

গত বৃহস্পতিবার রাতে জাতীয় নাগরিক পার্টির সংগঠক হাসনাত আব্দুল্লাহ তার ভেরিফাইড ফেসবুক পোস্টে অভিযোগ করেন, ‘ক্যান্টনমেন্ট থেকে’ আওয়ামী লীগকে পুনর্বাসনের পরিকল্পনা করা হচ্ছে।

সেখানে বিষয়টিকে তিনি ‘রিফাইন্ড আওয়ামী লীগ’ নামে ‘নতুন একটি ষড়যন্ত্র’ হিসেবে বর্ণনা করেছেন।

তার ওই স্ট্যাটাস ঘিরে নতুন আলোচনার সৃষ্টি হয় বাংলাদেশের রাজনীতিতে। ওই ফেসবুক পোস্টের পরদিনই কেউ কেউ হাসনাত আব্দুল্লাহর পক্ষ নিয়ে রাস্তায় মিছিলেও নামেন।

দুই দিন পর গত রবিবার হাসনাত আব্দুল্লাহর বক্তব্যের ভাষা নিয়ে কিছুটা দ্বিমত পোষণ করে ফেসবুকে পোস্ট দেন নাগরিক পার্টির উত্তরাঞ্চলের মুখ্য সংগঠক সারজিস আলম।

তিনি লিখেন, ক্যান্টনমেন্টে সেনাপ্রধানের সঙ্গে একটি বৈঠক হয়েছিল। তবে হাসনাত আব্দুল্লাহর পোস্টে লেখা কিছু বক্তব্যের সঙ্গে তিনি একমত নন।

সেনাপ্রধানের সঙ্গে এই বৈঠকের বিষয়টি নিয়ে সারজিসের পোস্টের পরই এ নিয়ে নাগরিক পার্টির মধ্যেও আলোচনা তৈরি হয়।

দলের শীর্ষ একজন নেতা বলেন, ‘তারা সেনাপ্রধানের সঙ্গে কিংবা সেনাবাহিনীর সঙ্গে বৈঠকের বিষয়টি নিয়ে আগে থেকে দলের মধ্যে আলোচনা করেননি’।

দলের শীর্ষ নেতারা এই বিষয়টি নিয়েও তাদের নিজস্ব আলোচনায় প্রশ্ন তুলেছেন বলেও জানিয়েছেন দলের শীর্ষ পর্যায়ের একাধিক নেতা।

তারা বলছেন, নাগরিক পার্টির দায়িত্বে থাকার পর তারা যদি সেনাবাহিনীর সঙ্গে বৈঠক করতে যান, সেটি দলকে জানিয়ে যাওয়া উচিত ছিল। কিন্তু যেহেতু তারা সেটি করেননি, এ নিয়ে দলের নেতাদের মধ্যেও অসন্তোষ কাজ করছে।

কেন্দ্রীয় কমিটির শীর্ষ একজন নেতা বলেন, ‘গোপন বৈঠকের বিষয়টি গোপন না রেখে তারা যখন স্পর্শকাতর প্রসঙ্গ সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে এনেছেন, এটি নিয়ে দলের মধ্যে ক্ষোভও তৈরি হয়েছে।’

বিতর্কিত মন্তব্য নিয়ে নানা প্রশ্ন

বর্তমান বাংলাদেশে সেনাবাহিনীকে জড়িয়ে হাসনাত আব্দুল্লাহ সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমের পোস্ট দেওয়া নিয়ে শুরুতেই দলের মধ্যে একটি পক্ষ বেশ অসন্তোষ জানায়।

ওই পোস্টের পর উত্তরের সংগঠক সারজিস আলম নতুন করে আরেকটি পোস্ট দেওয়ায় বিষয়টি পরিস্থিতি আরো জটিল করে তোলে।

দলের একজন যুগ্ম আহবায়ক বলেন, ‘হাসনাত আব্দুল্লাহর পোস্টের পর যাও কিছু মানুষের মধ্যে ইতিবাচক সাড়া ফেলেছিল, পরে সারজিসের পোস্টে পুরো দলটিই তখন বিতর্কের মুখে পড়েছে’।

সারজিস আলমের পোস্টের নিচেই মন্তব্যে জাতীয় নাগরিক পার্টির সিনিয়র যুগ্ম মুখ্য সমন্বয়ক আবদুল হান্নান মাসউদ দাবি করেন, হাসনাত আব্দুল্লাহ ও সারজিস আলম, এই দুজনের মধ্যে একজন মিথ্যা বলছেন।

জাতীয় নাগরিক পার্টির মুখ্য সংগঠক নাসির উদ্দীন পাটোয়ারী গত শুক্রবার নিজের ফেসবুক একাউন্টে বিএনপির প্রতিষ্ঠাতা জিয়াউর রহমানকে নিয়ে একটি মন্তব্য করেন। এ বিষয়টিও দলের মধ্যে ব্যাপক সমালোচিত হয়।

সম্প্রতি পাঠ্যপুস্তক কমিটির সদস্য রাখাল রাহাকে নিয়ে সারজিস আলমের পোস্ট নিয়েও নানা বিতর্ক তৈরি হয়। পরে দলের মধ্যেই সমালোচনার মধ্যে পড়েন সারজিস আলম।

সেনাবাহিনী নিয়ে হাসনাত-সারজিসের পোস্টের প্রসঙ্গ টেনে দলের শীর্ষ এক নেতা বলেন, ‘এই ধরনের পোস্ট করা সাংগঠনিকভাবে ভুল হইছে। তাদেরকে এই কাজগুলো যেন আর না করে সেটা বলা হয়েছে’।

সাম্প্রতিক এমন বেশ কিছু ঘটনায় পর অলিখিতভাবে দলের মধ্যে সিদ্ধান্ত হয় যে, সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে যেকোনো পোস্ট দেওয়ার বিষয়ে যেন দলটির নেতারা সতর্ক থাকে।

জাতীয় নাগরিক পার্টির সদস্য সচিব আখতার হোসেন বলেন, ‘আমরা জাতীয় নাগরিক পার্টির নেতারা যাতে সবাই এক সুরে, এক সঙ্গে পথ চলতে পারি সে বিষয়ে গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে’।

রাজনৈতিক আস্থাহীনতা

জাতীয় নাগরিক পার্টিতে নুরুল হক নুরের যোগদানের ইচ্ছা প্রকাশ নিয়ে মন্তব্য করেছিলেন এনসিপির জ্যেষ্ঠ যুগ্ম মুখ্য সমন্বয়ক আব্দুল হান্নান মাসউদ।

সম্প্রতি দেশের এক বেসরকারি টেলিভিশনের টক শোতে তিনি মন্তব্য করেন, গণঅধিকার পরিষদের ‘নুরুল হক নুর তার দল বিলুপ্ত করে নাগরিক পার্টির সঙ্গে যুক্ত হওয়ার আশা ব্যক্ত করেছেন।’

তখন এই বিষয়টি নিয়েও বেশ সমালোচনা তৈরি হয়। অন্যদিকে, সেনাপ্রধানের সঙ্গে বৈঠকের বিষয়টিও প্রকাশ্যে আনার ঘটনাকে নাগরিক পার্টির অদূরদর্শিতা হিসেবে দেখছেন কেউ কেউ।

রাজনৈতিক বিশ্লেষকেরা বলছেন, রাজনৈতিক অঙ্গনে এমন অনেক আলোচনা হয়, যেগুলো পর্দার আড়ালে হয়। সেগুলোকে যখন প্রকাশ্যে আনা হয়, তখন রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে অনাস্থা ও অবিশ্বাস বাড়ে।

রাজনৈতিক বিশ্লেষক রাশেদা রওনক খান বলেন, ‘যেকোনো রাজনৈতিক নেগোসিয়েশনের বা বার্গেনিংয়ের বিষয়টা নিজেদের মধ্যে থাকতে হয়। এই ঘটনার আগ পর্যন্ত অনেক মিটিং হয়েছে কখনো তো সামনে আসে নাই’।

তিনি আরো বলেন, ‘এমন হলে ভবিষ্যতে আলোচনায় বসতে দ্বিতীয় বার চিন্তা করবে, বা খুব নির্ভয়ে খোলামনে আলোচনা করতে গিয়ে দ্বিধাগ্রস্ত হবে’। তবে রাজনীতিতে এই বিয়টিকে ইতিবাচক হিসেবে দেখার সুযোগ নেই বলেই মনে করছেন বিশ্লেষকদের কেউ কেউ।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক কাজী মারুফুল ইসলাম বলেন, রাজনীতিতে সামরিক বাহিনী ও এজেন্সির প্রভাব আছে, সেটা প্রমাণিত হলো। আগে বিষয়টি গোপন কিংবা অদৃশ্য আলোচনা ছিল, এখন এটার একটা স্বীকৃতি পেল।

আর্থিক স্বচ্ছতা নিয়ে প্রশ্ন ও চ্যালেঞ্জ

গত সোমবার ঢাকা থেকে উড়োজাহাজে সৈয়দপুর যান জাতীয় নাগরিক পার্টির নেতা সারজিস আলম। সেখান থেকে শতাধিক গাড়ি নিয়ে নিজ জেলা পঞ্চগড়ে শোডাউন ও অনুষ্ঠান করেন তিনি।

এ নিয়ে বিভিন্ন গণমাধ্যমে খবর প্রকাশিত হয়। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমেও অনেককে সমালোচনা করতে দেখা গেছে।

মঙ্গলবার বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর তাদের দলের এক অনুষ্ঠানে বলেন, ‘যারা ১০০ গাড়ি নিয়ে ইলেকশন ক্যাম্পেইন করতে যায়, তারা কী করবে, সেটা আমরা ভালো বুঝি।’

একইভাবে হাসনাত আব্দুল্লাহকে নিজ এলাকায় এমন সভা সমাবেশ করতে দেখা গেছে। বিভিন্ন অনুষ্ঠানে যোগ দিতেও দেখা গেছে। যদিও বিভিন্ন সময় তাদের টাকার উৎস নিয়ে নানা প্রশ্ন উঠেছে।

জাতীয় নাগরিক পার্টির কেন্দ্রীয় কমিটির একাধিক নেতা জানিয়েছেন, হাসনাত আব্দুল্লাহ ও সারজিস আলমসহ কিছু নেতার অর্থের উৎস নিয়ে দলের মধ্যেও নানা প্রশ্ন রয়েছে।

বড় বড় অনুষ্ঠানের অর্থ কোথা থেকে আসে, সেই প্রশ্নের উত্তরও জানেন না দলের নেতাদের অনেকেই।

দলটির একজন শীর্ষ নেতা জানিয়েছেন, হাসনাত-সারজিসের ফ্যান ফলোয়ার ও শুভাকাঙ্ক্ষীর সংখ্যা বেশি হওয়ায় তারা ব্যক্তিগত পরিসরে এমন অনেক কাজ করেন, যা দলের ভাবমূর্তিকে ক্ষুণ্ণ করে।

মঙ্গলবার সারজিস আলমকে উদ্দেশ্য করে ফেসবুকে লেখা চিঠিতে জ্যেষ্ঠ যুগ্ম সদস্য সচিব তাসনিম জারা লিখেন, ‘তুমি কিছুদিন আগেই প্রকাশ্যে বলেছিলে, ‘আমার আসলে এই মুহূর্তে কোনো টাকা নাই। ধার করে চলতেছি’।

‘কিন্তু সেই প্রেক্ষাপটে এত বড় একটি আয়োজন কীভাবে সম্ভব হলো — এর অর্থায়ন ও ব্যবস্থাপনা কীভাবে হয়েছে, তা নিয়ে মানুষের মনে প্রশ্ন আসাটা স্বাভাবিক। আমাদের দল স্বচ্ছতা, সততা ও জবাবদিহিতার ভিত্তিতে একটি নতুন রাজনৈতিক সংস্কৃতি গড়ে তোলার যে প্রতিশ্রুতি দিয়েছে, সে জায়গা থেকে এসব প্রশ্নের স্পষ্ট ও নির্ভরযোগ্য উত্তর দেওয়া আমাদের সবারই দায়িত্ব’ যোগ করেন মিজ জারা।

যাদের কারণে দলের মর্যাদা ক্ষুণ্ণ হচ্ছে, তাদের বিরুদ্ধে কেন ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে না- সেই প্রশ্নও উঠেছে।

দলটির শীর্ষ নেতাদের একজন নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, ‘দলের শীর্ষ দশটি পদকে বলা হয় সুপার টেন। এই সুপার টেনের চারজনের বিরুদ্ধে নানা নেতিবাচক কর্মকাণ্ডের অভিযোগ বার বার আসছে। ১০ জনের মধ্যে যখন ৪ জনই এই কাজে জড়িয়ে পড়ে, তখন তার বিচার করা মুশকিল’।

এসব প্রেক্ষিতে সম্প্রতি দলের মধ্যে আর্থিক জবাবদিহিতার বিষয়েও আলোচনা হয়েছে বলে জানান দলের কেন্দ্রীয় কমিটির দু’জন নেতা।

নাগরিক পার্টির সদস্য সচিব আখতার হোসেন বলেন, ‘ব্যক্তিগত পদক্ষেপে ভুল বুঝাবুঝি হয়। সেটাকে মিনিমাইজ করে এক সঙ্গে পথ চলার ব্যাপারে জোর দিচ্ছি’।

রাজনৈতিক বিশ্লেষকেরা বলছেন, দলটির কেউ কেউ নিজেকে বেশি গ্রহণযোগ্য মনে করেন, তারা তাদের মতো করে স্ট্যাটাস দিচ্ছেন। এতে দলের চেয়ে ব্যক্তি মানে ‘আমি’ গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠেছে। এটা নিয়ে ভুল বোঝাবুঝির সৃষ্টি হয়েছে।

বিশ্লেষক রাশেদা রওনক খান বলেন, ‘নেতিবাচক কর্মকাণ্ডের কারণে জনগণ বিভ্রান্ত হয় ও বিশ্বাসযোগ্যতার ঘাটতি তৈরি হয়। এতে যেকোনো দলের জন্যই তা একটু চ্যালেঞ্জ হয়ে দাঁড়ায়। জনসমর্থন পেতে এই বিষয়গুলোকে মোকাবেলা করতে হবে নতুন দলকে’। সূত্র : বিবিসি বাংলা

মন্তব্য

মহান স্বাধীনতা ও জাতীয় দিবস আজ

নিজস্ব প্রতিবেদক
নিজস্ব প্রতিবেদক
শেয়ার
মহান স্বাধীনতা ও জাতীয় দিবস আজ
ফাইল ছবি

আজ ২৬ মার্চ, মহান স্বাধীনতা ও জাতীয় দিবস। ১৯৭১ সালের ২৫ মার্চের কালরাতে পাকিস্তানি দখলদার বাহিনী ‘অপারেশন সার্চলাইট’ নামে বর্বর সামরিক অভিযান চালিয়ে ঘুমন্ত ও নিরস্ত্র বাঙালিদের নির্মমভাবে হত্যায় মেতে ওঠে। গ্রেপ্তার করে পাকিস্তানে নিয়ে যাওয়া হয় বাঙালির অবিসংবাদিত নেতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে। প্রথমে নিজের, পরে বঙ্গবন্ধুর পক্ষে স্বাধীনতা ঘোষণা করেন মেজর জিয়াউর রহমান (পরে রাষ্ট্রপতি)।

পাকিস্তানি বাহিনীর কাপুরুষোচিত আক্রমণ ও গণহত্যার পর দেয়ালে পিঠ ঠেকে যাওয়া বাঙালিদের অভিন্ন অভিপ্রায় হয়ে ওঠে স্বাধীনতা অর্জন। সশস্ত্র লড়াই ও প্রতিরোধে আগুয়ান হয় এ দেশের মুক্তিকামী জনতা। শুরু হয় মহান মুক্তিযুদ্ধ। 

৯ মাসের রক্তক্ষয়ী যুদ্ধ শেষে ১৯৭১ সালের ১৬ ডিসেম্বর চূড়ান্ত বিজয় আসে।

বিশ্বের বুকে জন্ম নেয় এক নতুন মানচিত্র—স্বাধীন-সার্বভৌম বাংলাদেশ। দীর্ঘদিন ধরে শোষিত ও বঞ্চিত বাঙালিরা পায় পরম আকাঙ্ক্ষিত স্বাধীনতার স্বাদ।

দিবসটি উপলক্ষে রাষ্ট্রপতি মো. সাহাবুদ্দিন ও প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূস পৃথক বাণী দিয়েছেন। বাণীতে রাষ্ট্রপতি বলেন, ‘স্বাধীনতার কাঙ্ক্ষিত লক্ষ্য অর্জনে গণতন্ত্রকে শক্তিশালী করার পাশাপাশি পরমতসহিষ্ণুতা, মানবাধিকার ও আইনের শাসন সুসংহত করতে হবে।

রাষ্ট্র ও সমাজের সব ক্ষেত্রে সাম্য, স্বচ্ছতা ও জবাবদিহি নিশ্চিত করতে হবে। জুলাই গণ-অভ্যুত্থানে তরুণ প্রজন্ম আমাদের স্বাধীনতার অপূর্ণ স্বপ্নগুলো পূরণে আবারও বুকের তাজা রক্ত দিয়ে গেছে। নতুন প্রজন্মের জন্য একটি নিরাপদ, সুখী, সুন্দর ও উন্নত-সমৃদ্ধ বাংলাদেশ গড়ে তোলা আমাদের পবিত্র কর্তব্য।’

দেশে ও প্রবাসে বসবাসকারী সব বাংলাদেশি নাগরিককে স্বাধীনতা দিবসের শুভেচ্ছা জানিয়ে প্রধান উপদেষ্টা বলেন, ‘গত ১৬ বছর দেশের মানুষ এই স্বাধীনতার সুফল ভোগ করতে পারেনি। স্বৈরাচারী শাসক জগদ্দল পাথরের মতো জনগণের ঘাড়ে চেপে বসে তাদের স্বাধীনতা ও মৌলিক সব অধিকার কেড়ে নিয়েছিল।

ছাত্র-শ্রমিক-জনতার সফল গণ-অভ্যুত্থান দেশের মানুষকে স্বৈরাচারের রাহুগ্রাস থেকে মুক্ত করেছে। অন্তর্বর্তী সরকার দেশকে আরো উন্নত ও শক্তিশালী করতে এবং স্বাধীনতার পূর্ণ সুফল জনগণের কাছে পৌঁছে দিতে বদ্ধপরিকর।’

দিবসটি যথাযোগ্য মর্যাদায় উদযাপনের লক্ষ্যে জাতীয় পর্যায়ে নানা কর্মসূচি গ্রহণ করা হয়েছে। এদিন ঢাকাসহ সারা দেশে প্রত্যুষে ৩১ বার তোপধ্বনির মাধ্যমে দিবসটির সূচনা হবে। সূর্যোদয়ের সঙ্গে সঙ্গে রাষ্ট্রপতি ও প্রধান উপদেষ্টা সাভারে জাতীয় স্মৃতিসৌধে পুষ্পস্তবক অর্পণ করবেন। এরপর মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক উপদেষ্টার নেতৃত্বে উপস্থিত বীরশ্রেষ্ঠ পরিবার, যুদ্ধাহত মুক্তিযোদ্ধা ও বীর মুক্তিযোদ্ধারা পুষ্পস্তবক অর্পণ করবেন।

আজ সরকারি ছুটির দিন। সব সরকারি, আধাসরকারি, স্বায়ত্তশাসিত ও বেসরকারি ভবনে সূর্যোদয়ের সঙ্গে সঙ্গে এবং ঢাকা শহরে সহজে দৃশ্যমান ভবনগুলোতে জাতীয় পতাকা উত্তোলন করা হবে এবং গুরুত্বপূর্ণ ভবন ও স্থাপনাগুলো আলোকসজ্জায় সজ্জিত করা হবে।

দিবসের তাত্পর্য তুলে ধরে এদিন সংবাদপত্রগুলো বিশেষ ক্রোড়পত্র, নিবন্ধ ও সাহিত্য সাময়িকী প্রকাশ করবে। এ উপলক্ষে ইলেকট্রনিক মিডিয়াগুলো মুক্তিযুদ্ধভিত্তিক বিভিন্ন অনুষ্ঠান প্রচার করছে। রাষ্ট্রীয় অনুষ্ঠানের বাইরেও বিভিন্ন রাজনৈতিক দল, সামাজিক ও সাংস্কৃতিক সংগঠন আজ নানা কর্মসূচি পালন করবে।

প্রতীকী ব্ল্যাক-আউটে গণহত্যা দিবস স্মরণ
এক মিনিট আলো নিভিয়ে ২৫ মার্চের গণহত্যা ও গণহত্যার শিকার শহীদদের স্মরণ করল জাতি। গণহত্যা দিবস উপলক্ষ গতকাল রাত ১০টা ৩০ মিনিট থেকে ১০টা ৩১ মিনিট পর্যন্ত এক মিনিট প্রতীকী ‘ব্ল্যাক-আউট’ পালন করা হয়েছে দেশজুড়ে। ঘড়িতে সাড়ে ১০টা বাজতেই বিভিন্ন সরকারি, আধাসরকারি, স্বায়ত্তশাসিত এবং বেসরকারি ভবন ও স্থাপনাগুলোতে আলো নিভিয়ে দেওয়া হয়। তবে কেপিআই এবং জরুরি স্থাপনা এ কর্মসূচির আওতামুক্ত ছিল। বিভিন্ন রাজনৈতিক, সামাজিক ও সাংস্কৃতিক সংগঠনও এ কর্মসূচি পালন করেছে।

এক মিনিটের প্রতীকী ব্ল্যাক-আউট ছাড়াও দিবসটি উপলক্ষে সরকারি-বেসরকারি নানা সংগঠন, রাজনৈতিক দল এবং সামাজিক ও সাংস্কৃতিক সংগঠন নানা কর্মসূচি পালন করেছে। ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন জেলায় অনুষ্ঠিত হয়েছে গণহত্যা দিবসের আলোচনা অনুষ্ঠান ও সেমিনার। 

মন্তব্য

স্বাধীনতা অক্ষুণ্ন রাখতে প্রত্যেক সদস্য প্রস্তুত রয়েছে : সেনাপ্রধান

অনলাইন ডেস্ক
অনলাইন ডেস্ক
শেয়ার
স্বাধীনতা অক্ষুণ্ন রাখতে প্রত্যেক সদস্য প্রস্তুত রয়েছে : সেনাপ্রধান
জেনারেল ওয়াকার-উজ-জামান। ছবি : সংগৃহীত

স্বাধীন সার্বভৌম বাংলাদেশ প্রতিষ্ঠার চূড়ান্ত লড়াই যেদিন শুরু হয়েছিল, সেই স্মৃতিময় দিন ২৬ মার্চ। এই দিন জাতির জন্য গৌরবময় মহান স্বাধীনতা ও জাতীয় দিবস।

এই মহান স্বাধীনতা ও জাতীয় দিবস উপলক্ষে বাণী দিয়েছেন বাংলাদেশ সেনাবাহিনী প্রধান জেনারেল ওয়াকার-উজ-জামান।

বাণীতে তিনি বলেছেন, ‘আজ ২৬ মার্চ (২০২৫) মহান স্বাধীনতা ও জাতীয় দিবস।

আমাদের জাতীয় জীবনে এই দিনটির গুরুত্ব ও তাৎপর্য অপরিসীম। ১৯৭১ সালের এই দিনে এ দেশের মুক্তিকামী আপামর জনতা কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে দেশমাতৃকাকে পরাধীনতার শৃঙ্খলমুক্ত করার লক্ষ্যে পাকিস্তানি হানাদার বাহিনীর বিরুদ্ধে সশস্ত্র সংগ্রামে ঝাঁপিয়ে পড়েছিল। দীর্ঘ ৯ মাস রক্তক্ষয়ী সংগ্রামের মাধ্যমে অর্জিত হয় আমাদের চূড়ান্ত বিজয় এবং বিশ্ব মানচিত্রে স্বাধীন দেশ হিসেবে স্থান করে নেয় আমাদের প্রাণপ্রিয় মাতৃভূমি বাংলাদেশ। এ কারণেই ‘২৬ মার্চ’ আমাদের জাতীয় জীবনে গৌরব ও অনুপ্রেরণার চিরন্তন উৎস হয়ে থাকবে।
স্বাধীনতা দিবসের এই শুভলগ্নে আমি বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর সব সদস্যকে জানাচ্ছি আমার আন্তরিক শুভেচ্ছা ও প্রাণঢালা অভিনন্দন।’

‘স্বাধীনতা ও জাতীয় দিবসের এই মাহেন্দ্রক্ষণে আমি শ্রদ্ধার সঙ্গে স্মরণ করছি সেসব অকুতোভয় বীর শহীদকে, যাদের সুমহান আত্মত্যাগের বিনিময়ে অর্জিত হয়েছে আমাদের প্রাণপ্রিয় স্বাধীনতা। আমি আরো স্মরণ করছি, সেনাবাহিনীর সব শহীদকে, যারা শুধু স্বাধীনতা যুদ্ধেই নয়, স্বাধীনতা-পরবর্তী সময়েও দেশের স্বার্থে দেশে এবং বিদেশে দায়িত্বরত অবস্থায় নিজেদের জীবন উৎসর্গ করেছেন। আমি মহান আল্লাহ তায়ালার কাছে সব শহীদের বিদেহী আত্মার মাগফিরাত কামনা করছি এবং তাদের পরিবারের প্রতি সমবেদনা জ্ঞাপন করছি।

‘বাংলাদেশ সশস্ত্র বাহিনী তথা বাংলাদেশ সেনাবাহিনী দেশের গর্ব ও আস্থার প্রতীক। দেশের সার্বভৌমত্ব ও স্বাধীনতা অক্ষুণ্ন রাখার নিমিত্তে সেনাবাহিনীর প্রত্যেক সদস্য সর্বোচ্চ ত্যাগ স্বীকারের জন্য সদা প্রস্তুত রয়েছে। মহান মুক্তিযুদ্ধ ও দেশপ্রেমের চেতনায় উদ্বুদ্ধ বাংলাদেশ সেনাবাহিনী দেশের স্বাধীনতা ও সার্বভৌমত্ব রক্ষার মতো সাংবিধানিক দায়িত্ব পালনের পাশাপাশি পার্বত্য চট্টগ্রামে সন্ত্রাস দমন ও আর্থসামাজিক উন্নয়ন, ‘ইন এইড টু সিভিল পাওয়ার’-এর আওতায় আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণ, জাতীয় দুর্যোগ মোকাবিলা, অবকাঠামোগত উন্নয়ন, আর্তমানবতার সেবা প্রদান এবং আন্তর্জাতিক পরিমণ্ডলে শান্তিরক্ষাসহ বিভিন্ন কার্যক্রমে আত্মনিয়োগের মাধ্যমে অনন্য ভূমিকা রেখে আসছে এবং ভবিষ্যতেও তা অব্যাহত থাকবে বলে আমি প্রত্যাশা করি।’

‘স্বাধীনতার পরবর্তী সময়ের পরিক্রমায় বাংলাদেশ সেনাবাহিনী আজ একটি দক্ষ, সুশৃঙ্খল ও সুসংগঠিত বাহিনীরূপে আত্মপ্রকাশ করেছে। দেশমাতৃকার প্রয়োজনে যেকোনো অর্পিত দায়িত্ব পালনে সেনাবাহিনীর আধুনিকায়ন ও সমর সক্ষমতা অর্জন অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।

পরিকল্পিতভাবে এবং পর্যায়ক্রমে অত্যাধুনিক সমরাস্ত্র সংযোজন এবং উন্নত প্রশিক্ষণের মাধ্যমে বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর আধুনিকায়ন বাস্তবায়িত হচ্ছে।’

‘একবিংশ শতাব্দীর চ্যালেঞ্জ মোকাববেলার জন্য আমাদের সেনাবাহিনী এখন সুপ্রশিক্ষিত, দক্ষ এবং সদা প্রস্তুত। বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর প্রতিটি সদস্য আগামী দিনগুলোতে পেশাদারত্বের সঙ্গে দায়িত্ব পালনের মাধ্যমে দেশ এবং দেশের মানুষের সেবায় নিবেদিতভাবে কাজ করে যাবে বলে আমি দৃঢ়ভাবে বিশ্বাস করি।’

‘পরিশেষে আমি বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর উত্তরোত্তর উন্নতি ও সাফল্য কামনা করছি। মহান ‘স্বাধীনতা ও জাতীয় দিবস ২০২৫’ এর এই শুভলগ্নে দেশের আপামর মানুষের সুস্থ জীবন এবং সমৃদ্ধি কামনা করছি। মহান আল্লাহ তায়ালা আমাদের সকলের সহায় হোন। আমিন।’

মন্তব্য

সর্বশেষ সংবাদ