মহানবীর যুগে যেমন ছিল ধর্মীয় সহাবস্থান

মো. আলী এরশাদ হোসেন আজাদ
মো. আলী এরশাদ হোসেন আজাদ
শেয়ার
মহানবীর যুগে যেমন ছিল ধর্মীয় সহাবস্থান

প্রিয় নবী (সা.) মদিনায় হিজরতকালে (সেপ্টেম্বর ৬২২ খ্রি.) পাঁচ ধরনের মানুষের সংশ্লেষের এক নতুন অভিজ্ঞতার মুখোমুখি হন। যথা—মুহাজির, আনসার, ইহুদি, খ্রিস্টান, পৌত্তলিক। তখন তাঁর প্রথম ও প্রধান অগ্রাধিকার হয় ভ্রাতৃবিরোধ-বিদ্বেষ ও বিগ্রহের অবসান ঘটানো। প্রিয় নবী (সা.)-এর দর্শন—‘সহজ করো, জটিল কোরো না।

সুসংবাদ দাও, ভয় দেখিয়ে তাড়িয়ে দিয়ো না।’ (বুখারি)

এই নীতিতে ‘শান্তি ও আনুগত্য-আত্মসমর্পণ’ তথা Peace & Submission-এর শিক্ষায় তিনি Social contract বা সামাজিক চুক্তির মতো সম্প্রীতিমূলক ‘মদিনা সনদ’ প্রণয়ন করেন।

মদিনা সনদের প্রধান অর্জন—

(ক) তাওহিদভিত্তিক লিখিত সনদের আলোকে সংঘাতের স্থলে সর্বজনীন নিরাপত্তা।

(খ) প্রিয় নবী (সা.)-এর নেতৃত্বে শান্তি ও রাজনৈতিক ঐক্য।

(গ) সাম্য ও মানবাধিকারের নিশ্চয়তা। মদিনা সনদের ফলে অসাম্প্রদায়িকতা ও সহিষ্ণুতার পরিবেশ গড়ে ওঠা সহজতর হয়। মদিনা সনদকে বলা হয়, মানব ইতিহাসের প্রথম লিখিত সংবিধান Written constitution.

সনদের সারসংক্ষেপ

(ক) মুসলিম, ইহুদি, খ্রিস্টান ও পৌত্তলিক সমান নাগরিক অধিকার ভোগ করবে।

(খ) রাসুলুল্লাহ (সা.) হবেন নব গঠিত ‘মদিনা প্রজাতন্ত্রে’র প্রধান ও সর্বোচ্চ বিচারালয়ের Court of Appeal-এর সর্বময় কর্তা।

(গ) সবার পরিপূর্ণ ধর্মীয় স্বাধীনতা থাকবে, এতে কোনো হস্তক্ষেপ করা যাবে না।

(ঘ) কোনো ব্যক্তির অপরাধের দায়ে তার সম্প্রদায়কে দায়ী করা যাবে না।

(ঙ) দুর্বল, অসহায়কে সাহায্য ও রক্ষা করতে হবে।

(চ) সনদ স্বাক্ষরকারী পক্ষগুলোর মধ্যে কোনো বিরোধ দেখা দিলে রাসুল (সা.) তা আল্লাহর বিধান অনুযায়ী মীমাংসা করবেন।

মদিনা সনদের মাধ্যমে রাসুলুল্লাহ (সা.) ক্ষমতা ও শ্রেষ্ঠত্ব বৃদ্ধি পায়, ইসলামী রাষ্ট্রের ভিত্তি রচিত হয়, ধর্মীয় স্বাধীনতা ও মদিনার পুনর্গঠন সম্ভব হয়।

মদিনা সনদের ধারাবাহিকতায় প্রিয় নবী (সা.) গোত্রপ্রধান শাসিত ২৭৬টি দেশীয় রাজ্যকে একত্র করেন। মদিনাকেন্দ্রিক এ ব্যবস্থার বিস্তৃতি ছিল ১০-১১ লাখ বর্গমাইলেরও বেশি এলাকা। পরবর্তী সময়ে প্রিয় নবী (সা.) সংঘাতের স্থলে শান্তি প্রতিষ্ঠার জন্যই ষষ্ঠ হি./ ৬২৮ খ্রি. ‘হুদাইবিয়া’র সন্ধি স্বাক্ষর করেন।

হুদাইবিয়ার সন্ধির ফলে মক্কা-মদিনার মধ্যে যুদ্ধবিগ্রহ স্থগিত থাকার সুবাদে প্রিয় নবী (সা.) ইসলাম প্রচারে কূটনৈতিক তৎপরতা শুরু করেন। ফলে প্রিয় নবী (সা.)-এর জীবদ্দশায় ইসলাম আন্তর্জাতিকরূপ পরিগ্রহ করে। যার ভিত্তি হলো—

উম্মাহ (অভিন্ন জাতীয়তাবোধ ও অখণ্ডতা),

উখওয়াৎ (বিশ্বজনীন ইসলামী ভ্রাতৃত্ব),

তাবলিগ (ধর্মীয় প্রচার) ও

খিদমতে খালক (সৃষ্টির সেবা-সংরক্ষণ)।

এই চেতনাবোধের সার্থকতায় প্রিয় নবী (সা.) পত্রাবলি অনন্য কিংবদন্তি ও প্রিয় নবী (সা.)-এর চলন্ত-জীবন্ত মুজিজা। মিসরীয় গবেষক ড. হামিদুল্লাহর মতে, প্রিয় নবী (স.) যাঁদের কাছে পত্র পাঠিয়েছিলেন তাঁদের সংখ্যা দু-আড়াই শর কম নয়। তাঁদের অন্যতম হলেন—

রোম সম্রাট (কায়সার) হিরাক্লিয়াস,

ইয়ামামার গভর্নর হাওয়া বিন আলী,

বাহরাইনের গভর্নর মুনজির বিন সাওয়া,

ওমানের গভর্নর জাফর বিন জুলান্দি,

দামেস্কের গভর্নর হারিস বিন আবি শামর গাসসানি,

আবিসিনিয়া বা হাবশার বাদশাহ নাজ্জাসি আসহাম,

মিশররাজ মাকাওকাস এবং ইরানের শাহানশাহ কিসরা খসরু পারভেজ।

রোম সম্রাটের কাছে লিখিত পত্রের ভাষ্য—

প্রিয় নবী (সা.)-এর পবিত্র পত্র পাঠে রোম সম্রাট হিরাক্লিয়াসের মনোজগতে ঝড় বইতে শুরু করে। তিনি প্রিয় নবী (সা.)-এর নবুয়তের সত্যতা নিশ্চিত হয়ে বলেছিলেন—‘হায়! আমি যদি তাঁর কাছে পৌঁছাতে পারতাম! তবে আমি তাঁর পা ধুয়ে দিতাম।’ (বুখারি)

শুধু তাই নয়, তিনি রাজপ্রাসাদে রোমের নেতৃস্থানীয় ব্যক্তিদের সামনে ঘোষণা করলেন : ‘হে রোমবাসী। তোমরা কি কল্যাণ, হিদায়াত এবং তোমাদের রাষ্ট্রের স্থায়িত্ব চাও? তাহলে এই নবীর আনুগত্য (বাইআত) গ্রহণ করো...’ (বুখারি)

বস্তুত এভাবেই ইসলাম ‘বিশ্ব বিজয়ী ধর্ম’ হিসেবে প্রতিষ্ঠা পায়, এতেও আল-কোরআনের বাণীর নিত্যতা প্রমাণিত হলো : ‘তোমরা পরস্পর শত্রু ছিলে, অতঃপর আল্লাহ তোমাদের মনে সম্প্রীতি দান করেছেন, এখন তোমরা তাঁর অনুগ্রহের কারণে পরস্পর ভাই ভাই হয়েছ...।’ (সুরা : আলে ইমরান, আয়াত : ১০৩)

মন্তব্য

সম্পর্কিত খবর

যে সময়ে নফল নামাজ পড়া মাকরুহ

আহমাদ রাইদ
আহমাদ রাইদ
শেয়ার
যে সময়ে নফল নামাজ পড়া মাকরুহ

এমন কিছু সময় আছে, যে সময় ফরজ, ওয়াজিব ও নফল কোনো ধরনের নামাজ আদায় করা জায়েজ নেই। এমনকি কাজা নামাজও পড়া যাবে না। 

► সূর্যোদয়ের সময়, যতক্ষণ তা পুরোপুরি উদয় হয়ে না যায়। (বুখারি, হাদিস : ১৫২৩)

►সূর্য মধ্যাকাশে অবস্থানের সময়।

যতক্ষণ পর্যন্ত তা ঢলে না পড়ে। (মুসলিম, হাদিস : ১৩৭৩)

►সূর্য যখন হলুদ বর্ণ ধারণ করে তখন থেকে সূর্যাস্ত পর্যন্ত। তবে ওই দিনের আসর সূর্য অস্ত যাওয়া পর্যন্ত আদায় করতে পারবে। (বুখারি, হাদিস : ৫৪৫)

►নামাজের নিষিদ্ধ সময়ে জানাজা এলে তা আদায় করতে পারবে।

কিন্তু মাকরুহ হবে। সেরূপ কোনো ব্যক্তি এ সময় আয়াতে সিজদা পাঠ করলে সিজদায়ে তিলাওয়াত আদায় করতে পারবে। কিন্তু মাকরুহ হবে। (তিরমিজি, হাদিস : ১৫৬)

যে সময়ে নফল নামাজ মাকরুহ

► ফজর উদয় হওয়ার পর দুই রাকাত সুন্নত থেকে অতিরিক্ত পড়া মাকরুহ।

(মুসলিম, হাদিস : ১১৮৫)

► ফজর নামাজের পর সূর্য উদয় হওয়া পর্যন্ত। (বুখারি, হাদিস : ৫৫১)

► আসরের পর সূর্যাস্ত পর্যন্ত নামাজ পড়া মাকরুহ। (বুখারি, হাদিস : ৫৫১)

► ইকামতের সময় নামাজ পড়া মাকরুহ। (মুসলিম, হাদিস : ১১৬০)

► ঈদের নামাজের আগে ঈদগাহে কোনো নামাজ পড়া মাকরুহ। 

► ঈদের নামাজের পরে ঘরেও কোনো নামাজ নেই, ঈদগাহেও নেই।

(ইবনে মাজাহ, হাদিস : ১২৮৩)

► সময় যদি এত কম হয় যে সুন্নত পড়তে গেলে ফরজ নামাজের সময় শেষ হয়ে যাবে, এমন সময় নামাজ পড়া মাকরুহ।

► খুব ক্ষুধা ও খানার প্রতি তীব্র চাহিদা হলে সে সময় নামাজ পড়া মাকরুহ। এর ফলে খানার সঙ্গেই মন লেগে থাকবে, নামাজের সঙ্গে নয়। (মুসলিম, হাদিস : ৮৬৯)

► প্রস্রাব-পায়খানার বেগ নিয়ে নামাজ পড়া মাকরুহ। (মুসলিম, হাদিস : ৮৬৯)
 

মন্তব্য

শাওয়াল মাসের বিয়ে প্রসঙ্গে রাসুল (সা.) যা বলেছেন

ইসলামী জীবন ডেস্ক
ইসলামী জীবন ডেস্ক
শেয়ার
শাওয়াল মাসের বিয়ে প্রসঙ্গে রাসুল (সা.) যা বলেছেন

বিয়ে নবীদের অন্যতম সুন্নত। আল্লাহ তাআলা আদম (আ.)-কে সৃষ্টি করার পর হাওয়া (আ.)-কে তাঁর জীবনসাথিরূপে সৃষ্টি করেন এবং তাঁদের বিয়ের ভালোবাসার বন্ধনে আবদ্ধ করে দেন। সেই ধারাবাহিকতা এখনো পৃথিবীতে চলমান। এমনকি অনন্ত অনাবিল সুখের জান্নাতেও নারী-পুরুষ পরস্পরের সঙ্গবিহীন অতৃপ্ত থাকবে।

ইরশাদ হয়েছে, ‘আর তাঁর (আল্লাহ) নিদর্শনাবলির মধ্যে রয়েছে যে তিনি তোমাদের জন্য তোমাদের থেকেই স্ত্রীদের সৃষ্টি করেছেন, যাতে তোমরা তাদের কাছে প্রশান্তি পাও। আর তিনি তোমাদের মধ্যে ভালোবাসা ও মায়া সৃষ্টি করেছেন।’ (সুরা রুম, আয়াত : ২১)

নবীজি (সা.) বিয়েকে ঈমানের অর্ধেক আখ্যা দিয়েছেন। ইরশাদ হয়েছে, রাসুল (সা.) বলেন, যে ব্যক্তি বিয়ে করল, সে ঈমানের অর্থেক পূর্ণ করল।

অতএব বাকি অর্ধেকে সে যেন আল্লাহকে ভয় করে। (সহিহুল জামে, হাদিস : ৬১৪৮)

শাওয়াল মাসে বিয়ে করা মুস্তাহাব। নবীজি (সা.) আয়েশা (রা.)-কে এই মাসে বিয়ে করেছেন। ইরশাদ হয়েছে, আয়েশা (রা.) বলেন : রাসুলুল্লাহ (সা.) আমাকে বিয়ে করেন শাওয়াল মাসে এবং শাওয়াল মাসেই আমাদের বাসর হয়।

আর আয়েশা (রা.) শাওয়ালে তাঁর (সম্পর্কীয়) মেয়েদের বাসর হওয়া পছন্দ করতেন। (তিনি বলতেন) : তাঁর কোন স্ত্রী তাঁর কাছে আমার চাইতে অধিক ভাগ্যবতী ছিল? (নাসায়ি, হাদিস : ৩২৩৬)

ইমাম নববী (রহ.) সহিহ মুসলিমের ব্যাখ্যা গ্রন্থে এই হাদিস উল্লেখ করার পর বলেন, এই হাদিস দ্বারা বোঝা যায় যে শাওয়াল মাসে বিয়ে দেওয়া, বিয়ে করা ও বাসর করা মুস্তাহাব। আমাদের পূর্বসূরিরাও এই হাদিস দ্বারা শাওয়াল মাসে বিয়ে মুস্তাহাব হওয়ার দলিল দিতেন।

আয়েশা (রা.) এই মাসে বিয়ে মুস্তাহাব বলার কারণ হলো, জাহেলি যুগে এই মাসে বিয়ে দেওয়া, করা ও বাসর করাতে অপছন্দনীয় মনে করা হতো। যার কোনো ভিত্তি ছিল না।

মন্তব্য

সন্তানের সুশিক্ষা নিশ্চিতে অভিভাবকের যা করণীয়

আলেমা হাবিবা আক্তার
আলেমা হাবিবা আক্তার
শেয়ার
সন্তানের সুশিক্ষা নিশ্চিতে অভিভাবকের যা করণীয়

সন্তানের প্রতিপালন মা-বাবার পবিত্রতম দায়িত্ব। তবে এই দায়িত্ব পালনে সবার অবস্থান ও ভূমিকা সমান নয়, সমান সবার সাফল্য ও ব্যর্থতার পরিমাণ। দ্বিনি শিক্ষা, নীতি-নৈতিকতা, আদব-শিষ্টাচারের পাঠদানসহ নানা বিবেচনায় অভিভাবকদের সাফল্য ও ব্যর্থতা পরিমাপ করা যায়। আর হিসাবে তাদের ভেতর আছে একাধিক শ্রেণি বিভাগ।

নিম্নে ইসলামের দৃষ্টিতে অভিভাবকদের সাফল্যের শ্রেণি বিভাগ বর্ণনা করা হলো—

১. উভয় জগতে ক্ষতিগ্রস্ত : যে অভিভাবকরা তাদের সন্তানদের শুধু আধুনিক শিক্ষায় শিক্ষিত করাকে যথেষ্ট মনে করে, তারা তাদের দ্বিনি শিক্ষা ও তারবিয়াতের দিকে একেবারেই মনোযোগ দেয় না অথবা সামান্য মনোযোগকেই যথেষ্ট ও ফলপ্রসূ মনে করে।

এ ধরনের অভিভাবকরা পরকালে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হবে। কেননা তারা ইহকালকে পরকালের ওপর প্রাধান্য দিয়েছে। আর পরকালের ক্ষতিই প্রকৃত ক্ষতি।

এই শ্রেণির লোকদের ব্যাপারে ইরশাদ হয়েছে, ‘বরং তোমরা পার্থিব জীবনকে প্রাধান্য দিয়েছ, অথচ পরকালই উত্তম ও চিরস্থায়ী।’ (সুরা : আলা, আয়াত : ১৬-১৭)

এই শ্রেণির অভিভাবক ইহকালেও ক্ষতিগ্রস্ত হবে। মহানবী (সা.) বলেছেন, ‘যখন ইলম (ধর্মীয় জ্ঞান) উঠে যাবে এবং মূর্খতা বাড়বে, তখন কিয়ামতের বড় বড় আলামত প্রকাশ পাবে। তন্মধ্যে একটি এই যে দ্বিনি শিক্ষাবিমুখ সন্তানরা স্ত্রীর আনুগত্য করবে, আর মায়ের অবাধ্য হবে।

অন্যদিকে তারা বন্ধুবান্ধবের খুবই খাতির-তোয়াজ করবে, কিন্তু মা-বাবার কোনো খোঁজখবর নেবে না।’ (সুনানে তিরমিজি, হাদিস : ২২১৬)

করণীয় : এই শ্রেণির অভিভাবকের দায়িত্ব হলো, যেভাবে তারা সন্তানের পার্থিব শিক্ষা নিশ্চিত করতে পরিশ্রম করে, একইভাবে বা তার চেয়েও বেশি মৌলিক ধর্মীয় শিক্ষা নিশ্চিত করতে সচেষ্ট হওয়া। যেন সন্তানরা বিশ্বাস ও আমল, সমাজ ও নৈতিকতা, লেনদেন ও আদব-কায়দা সম্পর্কিত প্রয়োজনীয় বিষয়গুলো তাদের হৃদয় ও মস্তিষ্কে বদ্ধমূল করতে পারে, যাতে ফিতনার এই যুগে নাস্তিকতা ও ধর্মত্যাগের কোনো ঢেউ সন্তানদের ঈমানের সম্পদ থেকে বঞ্চিত করতে না পারে।

২. পার্থিব জীবনে ক্ষতিগ্রস্ত : যে অভিভাবকরা তাদের সন্তানদের শুধু ধর্মীয় জ্ঞান অর্জনে নিযুক্ত করে এবং ধর্মীয় জ্ঞানের বাইরে কোনো কিছু শেখার অবকাশ দেয় না, বরং জ্ঞাতসারে বা অজ্ঞাতসারে তাদেরকে পার্থিব জীবন পরিচালনার জন্য মৌলিক ও প্রয়োজনীয় জাগতিক শিক্ষা থেকেও বঞ্চিত করে—এই শ্রেণির অভিভাবক ও তাদের সন্তানরা পার্থিব জীবনে ক্ষতিগ্রস্ত। যদিও পরকালীন ক্ষতির তুলনায় পার্থিব জীবনের ক্ষতি খুবই সামান্য, তবু এই জেনে-বুঝে এবং সুযোগ থাকার পরও এই ক্ষতি বহন নিষেধ করে।

ইসলামের শিক্ষা হলো মুমিন পার্থিব জীবনের প্রয়োজনীয় পার্থিব জ্ঞান অর্জন করবে। মহান আল্লাহ বলেন, ‘আল্লাহ যা তোমাকে দিয়েছেন তার দ্বারা আখিরাতের আবাস অনুসন্ধান করো এবং দুনিয়া থেকে তোমার অংশ ভুলো না; তুমি অনুগ্রহ করো যেমন আল্লাহ তোমার প্রতি অনুগ্রহ করেছেন এবং পৃথিবীতে বিপর্যয় সৃষ্টি করতে চেয়ো না। আল্লাহ বিপর্যয় সৃষ্টিকারীকে ভালোবাসেন না।’ (সুরা : কাসাস, আয়াত : ৭৭)

করণীয় : এই শ্রেণির অভিভাবকের দায়িত্ব হলো, পরিবর্তিত পরিস্থিতির পরিপ্রেক্ষিতে প্রয়োজনীয় জাগতিক শিক্ষার পাঠদানের ব্যবস্থা করা, যেন মুসলমানের সন্তানরা কোনো পরিস্থিতির মুখাপেক্ষী না হয় এবং তাদের পার্থিব জীবনও ক্ষতিগ্রস্ত না হয়।

৩. উভয় জগতে লাভবান হওয়া : যে অভিভাবকরা তাদের সন্তানদের আধুনিক ও ধর্মীয় উভয় শিক্ষায় শিক্ষিত করে এবং সন্তানের নীতি-নৈতিকতা ও শিষ্টাচার শিক্ষা দেয়; সন্তান পার্থিব জীবনে একজন আদর্শ মানুষ হিসেবে জীবন যাপন করে এবং পরকালে মা-বাবা ও অভিভাবকদের জন্য নাজাতের মাধ্যম হয়—এই শ্রেণির অভিভাবক উভয় জগতে লাভবান। এটাই সন্তান প্রতিপালনে ইসলামের নির্দেশিত পদ্ধতি। কেননা পবিত্র কোরআনে দোয়া শেখানো হয়েছে, ‘আর তাদের মধ্যে যারা বলে, হে আমাদের প্রতিপালক! আমাদের দুনিয়াতে কল্যাণ দাও এবং আখিরাতে কল্যাণ দাও। আর আমাদেরকে জাহান্নামের শাস্তি থেকে রক্ষা করো। তারা যা অর্জন করেছে তার প্রাপ্য অংশ তাদেরই। বস্তুত আল্লাহ হিসাব গ্রহণে অত্যন্ত তৎপর।’ (সুরা : বাকারাহ, আয়াত : ২০১-২০২)

কাতাদা (রহ.) বলেন, দুনিয়ার কল্যাণ হলো শারীরিক সুস্থতা ও পর্যাপ্ত সম্পদ। হাসান বসরি (রহ.) বলেন, দুনিয়ার কল্যাণ হলো জ্ঞান ও আল্লাহর ইবাদত। আর সর্বসম্মতিক্রমে পরকালীন কল্যাণ হলো জান্নাত। (তাফসিরে কুরতুবি)

করণীয় : তারা অভিনন্দন পাওয়ার যোগ্য, তাদের উচিত এই পদ্ধতিকে প্রসারিত করা এবং পরিবার ও গোত্রের অন্যান্য অভিভাবকের কাছে একই পদ্ধতিতে পাঠদানে আহ্বান ছড়িয়ে দেওয়া।

৪. যাদের ক্ষতি সীমাহীন : যে অভিভাবকরা অর্থনৈতিক অক্ষমতা বা অন্য কোনো কারণে—চাই তা যৌক্তিক হোক বা অযৌক্তি, সন্তানদের উজ্জ্বল ভবিষ্যতের সঙ্গে আপস করে; তারা সন্তানদের ধর্মীয় ও জাগতিক কোনো প্রকার শিক্ষা দেয় না। তারা তাদের নিজেদের কোনো পেশার সঙ্গে যুক্ত করে। এই শ্রেণির অভিভাবকের ক্ষতি সীমাহীন। কেননা উত্তম শিক্ষাই সন্তানের জন্য সর্বশ্রেষ্ঠ উপহার। আল্লামা আশরাফ আলী থানবি (রহ.) তাঁর বইয়ে খলিফা ওমর (রা.)-এর যুগের একটি মামলার বিবরণ দিয়েছেন। যার মূল কথা হলো, একজন পিতা সন্তানের অত্যাচারের শিকার হয়ে খলিফার দরবারে অভিযোগ পেশ করল। ওমর (রা.) সন্তানকে জিজ্ঞাসাবাদ করে জানতে পারলেন, এই পিতা জন্মের পর তার জন্য ভালো নাম নির্বাচন করেনি, তাকে উত্তম শিক্ষা দেয়নি এবং ভালো নারীর সঙ্গে বিয়ে দেয়নি। তখন ওমর (রা.) এ মামলা খারিজ করে দিলেন এবং পিতাকে বললেন, তুমিই প্রথমে নিজের সন্তানের ওপর জুলুম করেছ। এর ফল তোমাকে ভোগ করতেই হবে। (তারবিয়্যাতে আওলাদ, পৃষ্ঠা-১১৯)

করণীয় : তাদের উচিত গুরুত্বের সঙ্গে বিষয়টি বিবেচনা করা যে তাদের এই কাজ সন্তানদের ভবিষ্যতের জন্য মারাত্মক বিষের চেয়ে কম নয়। মৌলিকভাবে ধর্মীয় ও আধুনিক শিক্ষার বিদ্যালয়গুলোর সঙ্গে যোগাযোগ করে সন্তানদের যোগ্য করে তোলার চেষ্টা করা উচিত, যাতে জ্ঞানের আলোতে পুরো ঘর আলোকিত হয় এবং তারা দুনিয়া ও দ্বিন উভয় ক্ষেত্রেই উপকৃত ও লাভবান হতে পারে।

আল্লাহ সবাইকে সত্য উপলব্ধি করার তাওফিক দিন। আমিন।

মন্তব্য
হাদিসের কথা

মা-বাবার সেবায় জিহাদের সমতূল্য সওয়াব

ইসলামী জীবন ডেস্ক
ইসলামী জীবন ডেস্ক
শেয়ার
মা-বাবার সেবায় জিহাদের সমতূল্য সওয়াব

মা-বাবার সেবা করার প্রতিদান জিহাদের চেয়েও বেশি। তাই অনেক ক্ষেত্রে জিহাদে না গিয়ে তাদের সেবা করা উত্তম। হাদিস শরিফে এসেছে,

عَنْ عَبْدِ اللهِ بْنِ عَمْرٍو قَالَ‏:‏ جَاءَ رَجُلٌ إِلَى النَّبِيِّ صلى الله عليه وسلم يُرِيدُ الْجِهَادَ، فَقَالَ‏:‏ أَحَيٌّ وَالِدَاكَ‏؟‏ فَقَالَ‏:‏ نَعَمْ، فَقَالَ‏:‏ فَفِيهِمَا فَجَاهِدْ

আবদুল্লাহ ইবনে আমর (রা.) বলেন, এক ব্যক্তি জিহাদে অংশ নিতে নবী করিম (সা.)-এর কাছে উপস্থিত হন। তখন রাসুল (সা.) জিজ্ঞাসা করেন, তোমার মা-বাবা কি জীবিত? ওই ব্যক্তি বলল, হ্যাঁ।

তিনি বলেন, ‘যাও, তাদের কাছে যাও এবং (সেবাযত্নের মাধ্যমে) জিহাদ করো।’ (সহিহ বুখারি, হাদিস : ৩০০৪)।

মন্তব্য

সর্বশেষ সংবাদ