এশিয়ার মধ্যে বড় ফ্যাক্টরি তৈরি করেছি, যদি ব্যাংক এগুলো না দেখে আমার মনে হয় এই বাংলাদেশে নতুন করে কোনো লোক এ ধরনের রিস্ক নিয়ে নতুন করে আর ব্যবসা করবে না।’
ফিরোজ আহমেদের মতো বহু ব্যবসায়ী ব্যবসাপ্রতিষ্ঠান শিল্প-কারখানা চালাতে হিমশিম খাচ্ছেন বলে ব্যবসায়ী সংগঠনগুলো জানাচ্ছে। বলা হচ্ছে, অতীত সংকট আর বর্তমান অস্থিতিশীল পরিস্থিতি মিলিয়ে বাংলাদেশে ব্যবসা বিনিয়োগে যে স্থবিরতা সৃষ্টি হয়েছে তা নিয়ে উদ্বেগ তৈরি হয়েছে সর্বস্তরের ব্যবসায়ীদের মধ্যে।
প্রাণ-আরএফএল গ্রুপের চেয়ারম্যান আহসান খান চৌধুরী বিবিসি বাংলাকে বলেন, ‘ব্যবসায়ীদের অবস্থা ভীষণ খারাপ। তাঁদের লোনের টাকা শোধ করতে বেগ পেতে হচ্ছে। ব্যবসায়ীরা নিজেদের ব্যয় নিয়ে কষ্টের মধ্যে আছেন। বিদেশি ক্রেতারা আরো স্বল্পমূল্যে পণ্য ক্রয় করতে চাচ্ছেন। ভারতীয় কম্পিটিশন আসছে গার্মেন্টস সেক্টরে। সো অভারঅল ব্যবসায়ীরা কিন্তু বিভিন্নমুখী চাপের সম্মুখীন হচ্ছেন, এটা কিন্তু কেউ ডিনাই করতে পারবে না।’
তিনি বলেন, এখন বিনিয়োগে একটা ভাটা তৈরি হয়েছে। বাংলাদেশ ব্যাংক সূত্রে স্থানীয় গণমাধ্যমের খবরে বলা হয়েছে, অর্থবছরের প্রথম প্রান্তিকে বিদেশি বিনিয়োগ এসেছে গত অর্থবছরের তুলনায় ৭১ শতাংশ কম।
আরো পড়ুন
বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনে অংশ নেওয়ায় ছাত্রদল কর্মীর শাস্তি মওকুফ
গবেষণা প্রতিষ্ঠান সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগের নির্বাহী পরিচালক ফাহমিদা খাতুন বিবিসিকে বলেন, ঘুষ-দুর্নীতি এগুলো কিন্তু কমেনি। ব্যক্তি খাতে বিনিয়োগ জিডিপির ২৩.৫ শতাংশ এবং বিদেশি বিনিয়োগ জিডিপির ১ শতাংশের নিচে ছিল। সেটা কমে কমে ০.৩-এর কাছাকাছি রয়েছে। একটা বড় সময় ধরে বাংলাদেশে বিনিয়োগে স্থবিরতা দেখা যাচ্ছে।
ফাহমিদা খাতুন বলেন, “ব্যবসায়ীরা বলতে পারছেন না দুর্নীতির ‘সরাসরি কারণ’। যাঁরা ব্যবসা করেন, তাঁরা সেনসিটিভিটির মধ্যে থাকেন, তাঁরা ভয়ের মধ্যে থাকেন যে কী বলতে কী বলে ফেলি।’
ন্যাশনাল ব্যাংকের চেয়ারম্যান ও এফবিসিসিআইয়ের সাবেক সভাপতি এবং বিএনপির রাজনীতির সঙ্গে যুক্ত আবদুল আউয়াল মিন্টু বিবিসিকে বলেন, যে পরিবেশ-পরিস্থিতিতে একটা দেশে ব্যবসা-বাণিজ্যের প্রসার ঘটে, বিনিয়োগ বৃদ্ধি পায় এবং কর্মসংস্থান সৃষ্টি হয়, সেটা অনুপস্থিত।
তাঁর ভাষায়, ‘দেশি বিনিয়োগকারীকে যখন দেখবে যে এরা বিনিয়োগ করছে, তখন আস্তে আস্তে আসবে। না হয় বিদেশি যেগুলো আছে, এগুলো কেমনে চলে যাবে, সেই চিন্তা করবে। আমি যদি আমার দেশে বিনিয়োগ না করি, তো বিদেশিরা কি মরতে আসবে এখানে? ও তো আমাদের থেকে বেশি চালাক। সে পরিসংখ্যান আমাদের থেকে বেশি বোঝে। সে দেশের রাজনীতির অবস্থা বেশি দেখছে। আমরা তো এখানে ভেতরে বসে অনেক কিছু বুঝি না, কিন্তু তারা বেশি বোঝে।’
ব্যবসায়ী ও অর্থনীতিবিদরা বলছেন বিনিয়োগ ও অর্থনীতিতে গতি সঞ্চারে প্রয়োজন দুর্নীতিমুক্ত স্থিতিশীল পরিবেশ, আইন-শৃঙ্খলার উন্নতি এবং আর্থিক খাতে শৃঙ্খলা।
আবদুল আউয়াল মিন্টু বলেন, ‘বিনিয়োগের জন্য যে পরিবেশ দরকার সেই পরিবেশ সৃষ্টি করুন। সেটা হলো আর্থিক খাতকে ঠিক করে বিনিয়োগের জন্য টাকা সাপ্লাই বাড়ান। দুই নম্বর হলো, সামাজিক শৃঙ্খলা ফিরিয়ে আনুন। তিন নম্বর হলো রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা ফিরে আসুক।’
অর্থনীতিবিদরা বলছেন, চলমান সংকট সমাধানে সময় লাগবে। কর্মসংস্থান, মূল্যস্ফীতি, প্রবৃদ্ধিসহ বিভিন্ন সূচক খারাপের দিকে থাকায় ঢালাওভাবে কারখানা বন্ধ এবং শ্রমিক ছাঁটাই যাতে না হয় সেদিকে লক্ষ রেখে পদক্ষেপ নিতে হবে।’
অন্তর্বর্তী সরকার দেশের ব্যাংকব্যবস্থা এবং আর্থিক খাতে নানা সংস্কার শুরু করেছে। বিনিয়োগ বাড়ানোর লক্ষ্যেও পদক্ষেপ নিচ্ছে। ভবিষ্যতে ব্যবসা সংকট উত্তরণে কী ধরনের পদক্ষেপ নিতে যাচ্ছেন সেটি নিয়ে অর্থ উপদেষ্টা ড. সালেহউদ্দিন আহমেদ বিবিসিকে বলেন, বিনিয়োগ বাড়াতে সরকার উদ্যোগ নিয়েছে। তাঁর ভাষায়, ‘যখন দেশি বিনিয়োগকারীরা উদ্বিগ্ন থাকেন, তখন বিদেশিরাও আসেন না।’
সূত্র : বিবিসি বাংলা