<p style="text-align:justify">দেশের অন্যতম প্রাচীন জনপদ ময়মনসিংহ শহর। আজকের ইট-পাথরের সুউচ্চ ভবনের বেড়াজালে হারিয়ে গেছে এই নগরীর পুরনো দিনের সেই খোলা মাঠ, পুকুর, অলিগলির মেঠো পথ কিংবা বাড়িঘরের ছোট-বড় উঠান। তবে পুরনো কিছু নিদর্শন এখনো রয়ে গেছে। তেমনই একটি হলো পদ্মপুকুর।</p> <p style="text-align:justify">তবে পদ্মপুকুর বললে এখন কেউই আর চিনবে না। কালের বিবর্তনে পুকুরটির নাম হয়ে গেছে পচা পুকুর।</p> <p style="text-align:justify">প্রায় দেড় শত বছরের পুরনো এই পুকুরটি শুরুর দিকে শহরবাসীর পানীয় জলের চাহিদা মেটাত। টলমলে স্বচ্ছ পানিতে ছিল হয়তো পদ্ম ফুলও।</p> <p style="text-align:justify">তাই নাম হয়ে উঠেছিল পদ্মপুকুর। একসময়ে পানীয় জলের জন্য পুকুরটি তার প্রয়োজনীয়তা হারায়। অনাদরে ও অবহেলায় কচুরিপানার দাপটে পুকুরটি ঢাকা পড়ে যায়। অনেকটা ময়লা-আবর্জনার ভাগাড়ে পরিণত হয় পুকুরটি।</p> <p style="text-align:justify">পদ্মপুকুরের নাম হারিয়ে পুকুরটির নাম হয়ে যায় পচা পুকুর। তবে স্বাধীনতার বেশ কয়েক বছর পর পুকুরটির সংস্কার চলে। প্রাণ ফিরে আসে আবারও পুকুরটির। টলটলে পানিতে চাষ হয় মাছের। আশপাশের বাসিন্দারাও স্নান/গোসল শুরু করেন এখানে।</p> <p style="text-align:justify">পুকুরটির কারণেই এলাকাটির পরিবেশ অনেকটা নিরিবিলি ও শান্ত। এই পুকুরটির বড় বৈশিষ্ট্য হলো শীত কিংবা গ্রীষ্মে এর পানি কখনো শুকায় না।</p> <p style="text-align:justify">পুকুরটির অবস্থান নগরীর ১০ নম্বর ওয়ার্ডে। ময়মনসিংহ-জামালপুর রেললাইনের একেবারে পাশেই দক্ষিণ-পশ্চিম দিকে। নগরীর মিন্টু কলেজের লেভেল ক্রসিং থেকে পাঁচ মিনিট পশ্চিম দিকে হেঁটে এসে বায়ে মোড় নিলেই পুকুরটি চোখে পড়বে। জায়গাটি পচা পুকুর পার এলাকা নামেই পরিচিত। স্বাধীনতার বেশ কয়েক বছর পর পুকুরটি সংস্কার করে মাছ চাষ শুরু হয়।</p> <p style="text-align:justify">‘ময়মনসিংহ শহর’ নামে একটি ছোট্ট প্রকাশনা রয়েছে প্রয়াত লেখক আহম্মেদ তৌফিক চৌধুরীর। সেই বই সূত্রে জানা যায় পুকুরটির জন্ম ময়মনসিংহের স্বনামধন্য জমিদার সূর্যকান্তের হাতে। ১৮৯১ সালে তিনিই শহরবাসীর পানীয় জলের সুব্যবস্থা করার জন্য পুকুরটি খনন করেছিলেন। ওই সময়ে বিশুদ্ধ পানীয় জলের চাহিদা মেটাতে একটি পরিচ্ছন্ন পুকুরের কতটুকু প্রয়োজনীয়তা ছিল তা আজ অনুমান করাও কঠিন। তবে জমিদার সূর্যকান্ত ছিলেন মানবদরদী জমিদার। এই শহরের অনেক জনকল্যাণকর সৃষ্টির পেছনে রয়েছে তাঁর ভূমিকা। তেমনই একটি হলো এই পদ্ম পুকুর।</p> <p style="text-align:justify">পুকুরটি তৈরির কাছাকাছি সময়ে নগরীতে পানীয় জলের আধুনিক ব্যবস্থা শুরু হয় রাজ রাজেশ্বরী ওয়াটার ওয়ার্কাসের মাধ্যমে। এটিও জমিদার সূর্যকান্ত আচার্য চালু করেন। তাই ক্রমে ক্রমে পদ্ম পুকুরটির গুরুত্ব কমতে থাকে। এর পরও দীর্ঘ সময় পুকুরটি সচল ছিল। কিন্তু একসময়ে কুচুরিপানায় সয়লাব হয়ে যায় পুকুরটি। আশপাশের লোকজনও এতে ময়লা-আবর্জনা ফেলতে থাকে। মূলত স্বাধীনতা পূর্বকালে অর্থাৎ পাকিস্তান আমলেই পুকুরটি নোংরা দৃশ্যের কারণে তার আগের নাম হারিয়ে ফেলে পরিচিত হয়ে ওঠে পচা পুকুর নামে। এই নগরীর যাঁরা ৫০-৬০ বছর বয়সী বাসিন্দা, তাঁরা জন্মের পর থেকে এই পুকুরকে পচা পুকুর হিসেবেই চেনেন।</p> <p style="text-align:justify">তবে স্বাধীনতার বেশ কয়েক বছর পর পুকুরটি ব্যাপকভাবে সংস্কার করা হয়। প্রাণ ফিরে যায় পুকুরটি। সরেজমিনে দেখা গেছে, পুকুরটি ভালো অবস্থায়ই আছে। আশপাশের লোকজন গোসল করছেন। মাছ চাষও হচ্ছে। পুকুরটির কারণেই এলাকাটি অনেকটা শান্ত ও নিরিবিলি। একাধিক ব্যক্তি বলেন, সরকারি পুকুর বলেই পুকুরটি এখনো ভরাট হয়নি। ব্যক্তি মালিকানাধীন হলে এত দিনে এখানে বহুতল ভবন হয়ে যেত।</p> <p> </p>