<p>কুমিল্লার চৌদ্দগ্রামের বীর মুক্তিযোদ্ধা আবদুল হাই কানুর গলায় জুতার মালা পরিয়ে তাকে লাঞ্ছিত করার ঘটনায় এখন পর্যন্ত কাউকে আটক করতে পারেনি পুলিশ। তবে পুলিশ বলছে, ঘটনার সঙ্গে জড়িত ব্যক্তিদের গ্রেপ্তারে কাজ করছেন তারা।</p> <p>এদিকে লাঞ্ছনার শিকার বীর মুক্তিযোদ্ধা কানু অসুস্থ হয়ে পড়েছেন। তাকে হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে বলে জানিয়েছেন তার ছেলে গোলাম মোস্তফা বিপ্লব। একই সঙ্গে নিরাপত্তাহীনতার কারণে কানুর পরিবার গ্রাম ছেড়ে এলাকার বাইরে অবস্থান করছে।</p> <p>বীর মুক্তিযোদ্ধা আবদুল হাই কানুর গলায় জুতার মালা পরিয়ে লাঞ্ছিত করে একদল দুর্বৃত্ত। রবিবার (২২ ডিসেম্বর) এ ঘটনা ঘটে। রাতে এ ঘটনার একটি ভিডিও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ভাইরাল করা হয়।</p> <p>১ মিনিট ৪৭ সেকেন্ডের ভাইরাল ওই ভিডিওতে দেখা গেছে, দুই ব্যক্তি জুতার মালা পরা অবস্থায় ওই বীর মুক্তিযোদ্ধাদের টানাহেঁচড়া করছেন। তাকে লাঞ্ছিত করা ব্যক্তিদের একজনই পুরো ঘটনার ভিডিও করেছেন। এ সময় ওই বীর মুক্তিযোদ্ধা বারবার তাকে ছেড়ে দেওয়ার আকুতি জানান। যিনি ভিডিও করছেন তিনি ওই বীর মুক্তিযোদ্ধাকে বলে ওঠেন, আপনি পুরো গ্রামের মানুষের কাছে মাফ চাইতে পারবেন। তখন ওই বীর মুক্তিযোদ্ধা দুই হাত তুলে বলেন, ‘আমি মাফ চাই। যে দুজন ওই মুক্তিযোদ্ধার দুই হাত ধরে টানাহেঁচড়া করছিলেন তাদের একজন বলে ওঠেন আপনি এলাকা থেকে কবে চলে যাবেন।’ লাঞ্ছিতকারীরা বারবার ওই মুক্তিযোদ্ধাকে এলাকা ছেড়ে চলে যেতে হুমকি দিতে থাকেন। কিন্তু ওই বীর মুক্তিযোদ্ধা বারবার লাঞ্ছিতকারীদের হাতে ধরে এলাকায় নিজ বাড়িতে থাকার আকুতি জানান।</p> <div class="d-flex justify-content-center"> <div class="col-12 col-md-10 position-relative"><strong>আরো পড়ুন</strong> <div class="card"> <div class="row"> <div class="col-4 col-md-3"><img alt="মুক্তিযোদ্ধার গলায় জুতার মালা, প্রশাসনকে যে নির্দেশ দিল সরকার" height="66" src="https://asset.kalerkantho.com/public/news_images/2024/12/23/1734946226-0ef085cb5a660a1f90744c90fd2cd34f.jpg" width="100" /></div> <div class="col-8 col-md-9"> <p>মুক্তিযোদ্ধার গলায় জুতার মালা, প্রশাসনকে যে নির্দেশ দিল সরকার</p> </div> </div> </div> <a class="stretched-link" href="https://www.kalerkantho.com/online/national/2024/12/23/1460489" target="_blank"> </a></div> </div> <p>কৃষক লীগের কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য ও কুমিল্লা দক্ষিণ জেলা কৃষক লীগের সাবেক সহসভাপতি পদে আছেন বীর মুক্তিযোদ্ধা আবদুল হাই কানু। তিনি লুদিয়ারা গ্রামের বাসিন্দা। তার বিরুদ্ধ আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে এলাকাবাসীর ওপর নির্যাতনের অভিযোগ আছে।</p> <p>লাঞ্ছিতকারীরা সবাই স্থানীয় জামায়াত-শিবিরের নেতাকর্মী বলে অভিযোগ কানুর পরিবারের। তার ছেলে বিপ্লব কালের কণ্ঠকে বলেন, ‘কুলিয়ারা গ্রামের আব্দুল বারিকের ছেলে জামায়াত নেতা আবুল হাশেম মজুমদারের নেতৃত্বে আমার বাবাকে লাঞ্ছিত করেছে। ওখানে যারা ছিল সবাই জামায়াত-শিবিরের নেতাকর্মী।’ </p> <p>তার বাবা হাসপাতালে ভর্তি আছেন জানিয়ে বিপ্লব আরো বলেন, ‘আমার বাবা অপমান সইতে না পেরে অসুস্থ হয়ে যান। ফেনীর একটা হাসপাতালে ভর্তি আছেন। আমাদের এলাকায় থাকা নিরাপদ নয়, বারবার আমাকে বিষয়টি নিয়ে বাড়াবাড়ি না করতে হুমকি দেওয়া হচ্ছে। পরিবার নিয়ে নিরাপত্তাহীনতায় এলাকার বাইরে আছি।’</p> <p>তবে বীর মুক্তিযোদ্ধাকে নির্যাতনের সঙ্গে জামায়াত-শিবিরের নেতাকর্মীদের জড়িত থাকার বিষয়টি অস্বীকার করেছেন উপজেলা জামায়াতের আমির মো. মাহফুজুর রহমান। দলের পক্ষ থেকে তিনিও এ ঘটনার শাস্তি দাবি করেছেন।</p> <p>চৌদ্দগ্রাম থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) এ টি এম আক্তার উজ জামান বলেন, ‘ভিডিওটি দেখে আমি ওই বীর মুক্তিযোদ্ধার সঙ্গে দুইবার কথা বলেছি। তিনি কোনো অভিযোগ করতে রাজি হচ্ছেন না। তবে আমরা এ ঘটনা জড়িত ব্যক্তিদের গ্রেপ্তার করতে পুলিশ কাজ করছে। জড়িত ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।'</p> <p>কুমিল্লার অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (প্রশাসন) আরাফাতুল ইসলাম বলেন, ‘আমরা লিখিত কোনো অভিযোগ পাইনি, তবে আমরা মুক্তিযোদ্ধার সঙ্গে যোগাযোগ করেছি। তিনি অসুস্থ, ফেনিতে চিকিৎসা নিচ্ছেন। যারা এ ঘটনাটি ঘটিয়েছে আমাদের টিম রাত থেকে এখন পযন্ত মাঠে আছে, গ্রেপ্তারের চেষ্টা চলছে।’</p> <p>কুমিল্লায় মুক্তিযোদ্ধার গলায় জুতার মালা পরানোর ঘটনায় জড়িতদের বিরুদ্ধে তদন্ত সাপেক্ষে আইনের আওতায় আনার নির্দেশ দিয়েছে সরকার। সরকারের পক্ষ থেকে মুক্তিযোদ্ধার মানহানির ঘটনার তিব্র নিন্দা জানানো হয়েছে। সোমবার (২৩ ডিসেম্বর) প্রধান উপদেষ্টার প্রেস উইং থেকে এ তথ্য জানানো হয়েছে।</p>