কুমিল্লার শাসনগাছা ফ্লাইওভারের ৬৪টি ল্যাম্পপোস্টে বাতি থাকলেও একটিতেও আলো জ্বলে না। বছরের পর বছর বাতিগুলো বিকল হয়ে থাকলেও সড়ক ও জনপথ (সওজ) বিভাগ এবং কুমিল্লা সিটি করপোরেশন (কুসিক) কেউই এর মেরামতে উদ্যোগ নেয়নি। রাত হলেই ফ্লাইওভারটি অন্ধকারে ডুবে যায়, ফলে সেখানে প্রায়ই ছিনতাইসহ নানা অপরাধমূলক কর্মকাণ্ড ঘটে।
শাসনগাছা ফ্লাইওভারে সরেজমিন পরিদর্শনে দেখা গেছে, সব ল্যাম্পপোস্টের নিচে গর্ত এবং বৈদ্যুতিক তারের কোনো চিহ্ন নেই।
স্থানীয়রা জানান, মাদকাসক্ত ও চোরেরা ল্যাম্পপোস্টের গোড়া ভেঙে বৈদ্যুতিক তার চুরি করে নিয়ে গেছে। এতে ফ্লাইওভারটি ভূতুড়ে পরিবেশ ধারণ করেছে।
সিএনজিচালক মো. মোশারফ হোসেন বলেন, গত কয়েক দিন ধরে দেখি মাদকাসক্ত একজন ফ্লাইওভারের গোড়া খুঁড়ছে। সে বৈদ্যুতিক তার চুরি করে নিয়ে গেছে।
এখন ফ্লাইওভার অন্ধকারে ডুবে থাকে।
একই অভিজ্ঞতা সিএনজিচালক মো. জাকির হোসেনের। তিনি জানান, আগে রাতেও ফ্লাইওভারে যাত্রী আনা-নেওয়া করতাম। এখন আলো না থাকায় সন্ধ্যার পর গাড়ি চালানো বন্ধ করে দিই।
মাদকাসক্তরা পুরো তার চুরি করে নিয়েছে।
ফ্লাইওভারটি উদ্বোধনের সময় সিসিটিভি ক্যামেরা স্থাপন করা হলেও আলো না থাকায় ক্যামেরাগুলো কার্যত অকেজো। ফলে ফ্লাইওভারটি মাদকাসক্তদের আড্ডাখানায় পরিণত হয়েছে এবং যাত্রীদের নিরাপত্তাহীনতার কারণ হয়ে উঠেছে।
যাত্রী মো. হোসেন বলেন, রাতে অন্ধকারে ফ্লাইওভারের ওপর দিয়ে যাওয়া ভয়ংকর। যেকোনো সময় ছিনতাইয়ের শিকার হতে পারি।
শাসনগাছা ফ্লাইওভারটি ২০১৮ সালের ৫ এপ্রিল প্রায় ৯৪ কোটি টাকা ব্যয়ে নির্মাণ করা হয় এবং উদ্বোধন করেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। ফ্লাইওভারটি নির্মাণ ও ব্যবস্থাপনার দায়িত্ব নিয়ে সওজ ও কুসিকের মধ্যে রয়েছে মতবিরোধ।
কুমিল্লা সওজ বিভাগের নির্বাহী প্রকৌশলী সুনীতি চাকমা বলেন, ফ্লাইওভারটি কুসিকেরও দেখভালের দায়িত্বে রয়েছে। বাতিগুলো কেন জ্বলে না, তা চেক করার জন্য লোক পাঠিয়েছি। দ্রুত মেরামতের ব্যবস্থা করা হবে।
অন্যদিকে কুমিল্লা সিটি করপোরেশনের প্রধান নির্বাহী মো. ছামছুল আলম বলেন, ফ্লাইওভারটি আমাদের আওতাধীন নয়। এটি সওজের অধীনে। তবে নগরবাসীর স্বার্থে আমরা মাঝে মাঝে লাইটিংয়ের কাজ করি। যেহেতু আপনি বলেছেন, আমরা বিষয়টি দেখে ব্যবস্থা নেব।
স্থানীয় বাসিন্দা এবং যানবাহনের চালকরা ফ্লাইওভারের ল্যাম্পপোস্টের লাইটগুলো সচল করার দাবি জানিয়েছেন। তারা বলেন, আলো না থাকায় নিরাপত্তাহীনতা বেড়েছে। দ্রুত ব্যবস্থা না নিলে অপরাধের ঝুঁকি আরো বাড়বে।
সাধারণ মানুষের প্রত্যাশা, সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ বিষয়টি গুরুত্ব দিয়ে দ্রুততার সঙ্গে ব্যবস্থা নেবে।