বঙ্গোপসাগরের মান্দারবাড়িয়া এলাকা থেকে গত রবিবার (২৬ জানুয়ারি) ১৫ জেলেকে অপহরণ করে দস্যুরা। চার দিন পার হলেও ১৫ জেলের কোনো সন্ধান পাওয়া যায়নি। অপহৃত জেলের অবস্থান শনাক্তের চেষ্টা চালাচ্ছে কোস্ট গার্ড ও বন বিভাগ। কিন্তু এখন পর্যন্ত কোনো তথ্য পাওয়া যায়নি।
বৃহস্পতিবার (৩০ জানুয়ারি) দুপুর আড়াইটার দিকে মোবাইল ফোনে এ তথ্য জানিয়েছে কোস্ট গার্ড পশ্চিম জোনের মিডিয়া সেল।
আরো পড়ুন
রাস্তার কাজ ফেলে লাপাত্তা ঠিকাদার, জনদুর্ভোগ
অপহৃত জেলেদের উদ্ধার ও সুন্দরবনকে দস্যুমুক্ত করতে দ্রুত কার্যকর ব্যবস্থা গ্রহণের দাবি জানিয়েছে দুবলার চরের ফিশারমেন গ্রুপ ও শুঁটকিপল্লীর জেলে সমিতি। এই সংগঠেনর পক্ষ থেকে সরকারের স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় ও র্যাবের কাছে আবেদন জানানো হয়েছে।
গত রবিবার (২৬ জানুয়ারি) দিবাগত রাত সাড়ে ১২টার দিকে বনদস্যু মজনু বাহিনীর অস্ত্রধারীরা সাগরে মৎস্য আহরণে নিয়োজিত জেলেবহরে হানা দেয়।
তারা অস্ত্রের মুখে জিম্মি করে একে একে ১৫টি ট্রলার থেকে ১৫ জেলেকে তাদের ট্রলারে তুলে নেয়। এক পর্যায় সব ট্রলারের জেলেরা সংঘবদ্ধ হয়ে প্রতিরোধ গড়ে তুলে দস্যুদের ওপর ঝাঁপিয়ে পড়ে। একটি বিদেশি বন্দুকসহ তিন দস্যুকে আটক করতে সক্ষম হন তারা। এ সময় দস্যুদলের অন্য সদস্যরা ১৫ জেলেকে নিয়ে পালিয়ে যায়। অপহৃত সবাই পূর্ব সুন্দরবনের শরণখোলা রেঞ্জের দুবলার চরের আলোরকোল শুঁটকিপল্লীর জেলে।
আরো পড়ুন
কোটা নিয়ে সরকারের ৩ সিদ্ধান্ত
আলোরকোল শুঁটকিপল্লীর চাকলা বেল্ট (সাতক্ষীরা অঞ্চলের জেলে সংগঠন) জেলে সমিতির সভাপতি মৎস্য ব্যবসায়ী আব্দুর রউফ মেম্বর মোবাইল ফোনে জানান, দীর্ঘদিন পর দস্যুদের আবির্ভাব ও জেলে অপহরণের ঘটনায় শুঁটকিপল্লীতে আতঙ্ক বিরাজ করছে। ভীত-সন্ত্রস্ত হয়ে পড়েছেন শুঁটকি উৎপাদনকারী চারটি চরের প্রায় ১২ হাজার জেলে। তারা মাছ শিকারে গভীর সাগরে যেতে এবং রাতে অবস্থান করতে ভয় পাচ্ছেন। চার দিনেও জেলেদের কোনো খোঁজ না পাওয়ায় উৎকণ্ঠায় দিন পার করছেন তাদের পরিবার ও মহাজনরা।
অপহৃত জেলেরা হলেন শাহ আলম, আজাহারুল ইসলাম, জাহাঙ্গীর আলম, আরাফাত হোসেন, আলমগীর হোসেন, শাহাজান গাজী, রাসেল, শাহজাহান ঢালী, হাফিজুর রহমান, শাহীনুর আলম, মতিয়ার সরদার, খান রফিক, রিপন মোড়ল, নুরে আলম ও নাথন বিশ্বাস। এদের বাড়ি সাতক্ষীরা জেলার শ্যামনগর, আশাশুনি, তালা, বাগেরহাটের রামপাল এবং খুলনার পাইকগাছা ও ডুমুরিয়া উপজেলার বিভিন্ন গ্রামে বলে জানিয়েছেন মৎস্যজীবী নেতা রউফ মেম্বার।
আরো পড়ুন
আজিজ স্টেডিয়াম ২৫ বছরের জন্য লিজ দেওয়া হঠকারী সিদ্ধান্ত : চসিক মেয়র
দুবলা ফিশারমেন গ্রুপের সভাপতি বীর মুক্তিযোদ্ধা মো. কামাল উদ্দিন আহমেদ বলেন, অপহৃত জেলে উদ্ধার ও দস্যু দমনে দ্রুত পদক্ষেপ নিতে খুলনা র্যাব-৬-এ আবেদন করা হয়েছে। এর আগে গত মঙ্গলবার স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা বরাবরে একটি স্মারকলিপি দিয়েছি।
কামাল আহমেদ বলেন, দস্যুদের সঙ্গে যোগাযোগের জন্য তাদের দুটি মোবাইল নম্বর দিয়েছে। কিন্তু ওই নম্বরে কল করা হলে তা বন্ধ পাওয়া যাচ্ছে। এ ঘটনার পর থেকে জেলেরা সাগরে যেতে ভয় পাচ্ছে। শুঁটকি পল্লীর জেলে-মহাজন সবাই আতঙ্কে আছে।
পূর্ব সুন্দরবনের শরণখোলা রেঞ্জের আলোরকোল শুঁটকিপল্লীর ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. আসাদুজ্জামান বলেন, জেলেদের নিরাপত্তায় সাগরে টহল জোরদার করা হয়েছে। বন বিভাগের পক্ষ থেকে অপহৃত জেলেদের অবস্থান শনাক্তের চেষ্টা চলছে।
আরো পড়ুন
এ আর রহমানের চেয়েও বেশি পারিশ্রমিক নেন সেই অনিরুদ্ধ
এ ব্যাপারে কোস্ট গার্ড পশ্চিম জোনের মোংলা সদর দপ্তরে যোগাযোগ করা হলে নাম প্রকাশ না করার শর্তে মিডিয়া সেলের এক কর্মকর্তা বলেন, ‘দস্যুদের অবস্থান শনাক্ত করার জন্য আমাদের গোয়েন্দা বিভাগ কাজ করছে। সঠিক তথ্য পেয়ে ঝটিকা অভিযান পরিচালনা করা হবে। তাছাড়া আমাদের নিয়মিত টহল অব্যাহত রয়েছে।’