ফরিদপুরের ভাঙ্গায় আধিপত্য বিস্তার নিয়ে দুই পক্ষের সংঘর্ষে কমপক্ষে ২৫ জন আহত হয়েছেন। আহতদের মধ্যে গুরুতর আহত একজনকে ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে ও তিনজনকে ফরিদপুর মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। এছাড়া ভাঙ্গা উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি হয়েছেন ১২ জন। বাকিরা স্থানীয়ভাবে চিকিৎসা নিয়েছেন বলে জানা গেছে।
রবিবার (২ ফেব্রুয়ারি) সকাল সাড়ে ৯টার দিকে উপজেলার ঘারুয়া ইউনিয়নের খারদিয়া গ্রামে এ ঘটনা ঘটে।
এলাকাবাসী সূত্রে জানা যায়, ঘারুয়া ইউনিয়নের খারদিয়া গ্রামে আধিপত্য বিস্তার নিয়ে দুটি পক্ষ রয়েছে। একপক্ষের নেতৃত্ব দেন ঘারুয়া ইউনিয়ন বিএনপির সাধারণ সম্পাদক আনোয়ার মুন্সী (৪৫) ও বিএনপির সমর্থক চান মিয়া (৪০)। অপরপক্ষের নেতৃত্ব দেন খারদিয়া গ্রামের বাসিন্দা ও ঘারুয়া ইউনিয়ন যুবলীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক ফিরুজুর রহমান নিরু খলিফা (৪৮) ও ঘারুয়া ইউনিয়নের ৮ নম্বর ওয়ার্ড কৃষক দলের সভাপতি করিম মোল্লা (৬০)।
শনিবার রাত ৯টার দিকে দুই পক্ষের মধ্যে উত্তেজনা ছড়িয়ে পরে। রবিবার সকাল সাড়ে ৯ টার দিকে দুই পক্ষ সংঘর্ষে লিপ্ত হয়। খবর পেয়ে ভাঙ্গা থানা পুলিশ ঘটনাস্থলে গিয়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণ করে। এ সংঘর্ষে আনোয়ার মুন্সীর পক্ষের ইদ্রিস মোল্লাকে (৪৫) গুরুতর আহত অবস্থায় ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে পাঠানো হয়েছে।
অন্যদিকে, আনোয়ার মুন্সীর পক্ষের ফজলুল হক মুন্সী (৫০), জিয়াদ আলী মাতুব্বর (৪২) ও ফিরুজুর রহমান নিরু খলিফার পক্ষের ফয়সাল শেখকে (৪২) ফরিদপুর মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে পাঠানো হয়েছে।
ঘারুয়া ইউনিয়ন পরিষদের ৮ নম্বর ওয়ার্ডের সদস্য এবং ওই এলাকার বাসিন্দা কাওছার খন্দকার বলেন, ‘গত সরকারের পতনের পর নিরু খলিফা জেলে যান। সম্প্রতি জামিনে আসেন। তার (যুবলীগ নেতা নিরু খলিফা) লোকজনের এখন নেতৃত্ব দেন ওয়ার্ড কৃষকদলের সভাপতি করিম মোল্লা। আনোয়ার মুন্সীর লোকজন রবিবার সকালে নিরু খলিফার বাড়িতে হামলা করতে গেলে করিম মোল্লার লোকজন বাঁধা দিতে যায়।
এ নিয়ে সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে। এতে বেশ কিছু লোক আহত হয়। পুলিশ এসে দুইপক্ষকে শান্ত করে।’
ঘারুয়া ইউনিয়ন বিএনপির সাধারণ সম্পাদক আনোয়ার মুন্সী বলেন, ‘সাবেক এমপি নিক্সন চৌধুরীর ঘনিষ্ঠ যুবলীগ নেতা নিরু খলিফার নেতৃত্বে কয়েক শত লোক ঢাল, সড়কি, রামদা নিয়ে আমাদের ওপর আক্রমণ করে। নিরু খলিফা বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে বাঁধা দিয়েছিল। এ মামলায় কয়েক মাস জেল খেটে সম্প্রতি জামিনে আসে। এসেই আবার বেপরোয়া হয়ে ওঠে। গত আওয়ামী লীগের আমলে নিরু খলিফা আমাদের এলাকায় ত্রাসের রাজত্ব কায়েম করেছিল।’
ঘারুয়া ইউনিয়ন যুবলীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক ফিরোজুর রহমান নিরু খলিফা বলেন, ‘আমি আজ এলাকায় ছিলাম না। আমার জামাতা শনিবার দিবাগত ভোরে বিদেশে গিয়েছে। তাকে নিয়ে আমি শনিবার ঢাকায় এসেছি। আমি শুনেছি আনোয়ার মুন্সীর নেতৃত্বে কয়েক শত লোক ঢাল, সড়কি, ইট, পাটকেল নিয়ে আমার বাড়িতে হামলা করে। এ সময় আমার চাচা ওয়ার্ড কৃষক দলের সভাপতি করিম মোল্লার নেতৃত্বে এ হামলা প্রতিহত করা হয়।’
ভাঙ্গা উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের মেডিক্যাল অফিসার মিঠুন মজুমদার বলেন, ‘গুরুতর আহত ৪ জনকে আমরা উন্নত চিকিৎসার জন্য মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে প্রেরণ করেছি। বাকি বেশ কয়েকজন আহত রোগী এখানে ভর্তি রয়েছে।’
ভাঙ্গা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মো. মোকছেদুর রহমান বলেন, ‘সংঘর্ষের খবর পেয়ে ওই এলাকায় পুলিশ পাঠানো হয়েছিল। পুলিশ গিয়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণ করে। এ ব্যাপারে থানায় কেউ অভিযোগ দেয়নি। অভিযোগ পেলে তদন্ত করে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’