আমাদের শরীরকে ডিটক্স করার কথা বললেই অনেকে ‘মিরাকল ক্লিন্স’ বা ‘তাৎক্ষণিক সমাধান’ নিয়ে বিভ্রান্ত হন। কিন্তু বাস্তবে, আমাদের কিডনি ও লিভার স্বয়ংক্রিয়ভাবে শরীরের বিষাক্ত পদার্থ দূর করে। তাই কঠোর ডিটক্স প্রোগ্রামের পরিবর্তে, স্বাস্থ্যকর অভ্যাস গড়ে তোলা জরুরি।
সাতটি সহজ উপায় অনুসরণ করলে কিডনি ও লিভার সুস্থ ও কর্মক্ষম থাকবে।
১. সালফার সমৃদ্ধ খাবার খান
লিভার সালফার খুবই পছন্দ করে! রসুন, পেঁয়াজ, ব্রোকলি এবং ফুলকপির মতো সালফার সমৃদ্ধ খাবার লিভারকে বিষাক্ত পদার্থ দূর করতে সহায়তা করে। এই খাবারগুলো ভারী ধাতু ও অন্যান্য টক্সিন দূর করতে কার্যকর। তাই প্রতিদিনের খাদ্যতালিকায় রসুন বা ব্রোকলি যোগ করুন এবং লিভারকে তার কাজ সহজ করতে সহায়তা করুন।
আরো পড়ুন
এক দিন ‘ম্যানেজ’ করলেই ঈদে ছুটি মিলবে ৯ দিন
২. ইনফিউজড পানি পান করুন
কিডনির সুস্থতার জন্য পর্যাপ্ত পানি পান করা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।
তবে এতে একটু বৈচিত্র্য আনতে পারেন! শসা, পুদিনা বা আদা দিয়ে পানি ইনফিউজ করলে তা শুধু স্বাদ বাড়াবে না, বরং অতিরিক্ত অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট সরবরাহ করে কিডনির কার্যক্ষমতা বাড়াতে সাহায্য করবে। তবে যদি আপনি কোনো ওষুধ গ্রহণ করেন, তাহলে যেকোনো ভেষজ ইনফিউশন গ্রহণের আগে ডাক্তারের পরামর্শ নেওয়া ভালো।
৩. খাবারে ধনিয়া যোগ করুন
ধনিয়া শুধু একটি সুগন্ধযুক্ত মসলা নয়—এটি প্রাকৃতিক ডিটক্স উপাদানও বটে! গবেষণায় দেখা গেছে, ধনিয়া ভারী ধাতু দূর করতে সহায়ক, যা লিভারের জন্য উপকারী। আপনি সালাদ, স্মুদি বা জুসে ধনিয়া যোগ করতে পারেন।
এতে লিভার সুস্থ থাকবে এবং খাবারের স্বাদও বাড়বে।
৪. কিডনির জন্য উপকারী ভেষজ উপাদান ব্যবহার করুন
ভেষজ উপাদান দীর্ঘদিন ধরে কিডনির সুস্থতার জন্য ব্যবহৃত হয়ে আসছে। বিশেষ করে ড্যান্ডেলিয়ন (Dandelion) কিডনি ডিটক্সে সহায়ক বলে পরিচিত। আপনি চাইলে ড্যান্ডেলিয়ন চা পান করতে পারেন বা এর মূল বিভিন্ন খাবারে ব্যবহার করতে পারেন। তবে যদি আপনার কিডনি সম্পর্কিত কোনো সমস্যা থাকে বা ওষুধ গ্রহণ করেন, তাহলে ডাক্তারের পরামর্শ নেওয়া জরুরি।
আরো পড়ুন
শিশু ধর্ষণে জড়িতদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি নিশ্চিত করা হবে : উপদেষ্টা আসিফ
৫. খনিজ উপাদানের ভারসাম্য বজায় রাখুন
কিডনির কার্যকারিতার জন্য পটাশিয়াম ও ফসফরাসের মতো খনিজ উপাদান দরকার। তবে অতিরিক্ত পরিমাণে গ্রহণ করলে তা কিডনির ওপর চাপ সৃষ্টি করতে পারে। তাই ফলমূল, শাকসবজি, হোল গ্রেইন ও দুগ্ধজাত খাবার থেকে খনিজ গ্রহণ করে ভারসাম্য বজায় রাখুন। আর যদি মিনারেল সাপ্লিমেন্ট গ্রহণ করতে চান, তাহলে অবশ্যই চিকিৎসকের পরামর্শ নিন।
৬. লিম্ফ্যাটিক সিস্টেম সক্রিয় রাখতে ড্রাই ব্রাশিং করুন
একটি সহজ কিন্তু কার্যকর উপায় হলো ড্রাই ব্রাশিং! নরম ব্রিসলের ব্রাশ দিয়ে ত্বকে হালকা ঘষামাজা করলে লিম্ফ্যাটিক সিস্টেম সক্রিয় হয়, যা শরীর থেকে টক্সিন দূর করতে সহায়তা করে। এটি কিডনি ও লিভারের কার্যক্ষমতা বাড়াতে সাহায্য করে এবং ত্বককেও উজ্জ্বল রাখে।
৭. পরিবেশগত দূষণ থেকে দূরে থাকুন
বায়ুদূষণ, রাসায়নিক উপাদান ও প্রক্রিয়াজাত খাবার আমাদের লিভার ও কিডনির ওপর চাপ সৃষ্টি করে। তাই এসব বিষাক্ত পদার্থের সংস্পর্শ যতটা সম্ভব কমান। প্রাকৃতিক ক্লিনিং প্রোডাক্ট ব্যবহার করুন, বিশুদ্ধ পানি পান করুন এবং যখন সম্ভব, তখন অর্গানিক খাবার খান। এতে লিভার ও কিডনির ওপর চাপ কমবে এবং শরীর সহজেই বিষাক্ত উপাদান দূর করতে পারবে।
আরো পড়ুন
বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন, নাহিদের মন্তব্যে যা জানালেন উমামা
কিডনি ও লিভার সুস্থ রাখার জন্য কঠোর ডায়েট বা ডিটক্স প্রোগ্রামের প্রয়োজন নেই। বরং স্বাস্থ্যকর খাদ্যাভ্যাস, পর্যাপ্ত পানি পান এবং পরিবেশগত দূষণ থেকে দূরে থাকার মাধ্যমেই আমরা আমাদের শরীরের প্রাকৃতিক ডিটক্স সিস্টেমকে সক্রিয় রাখতে পারি।