আধিপত্য বিস্তারকে কেন্দ্র করে পাবনার ঈশ্বরদীতে স্থানীয় বিএনপির দুই পক্ষের মধ্যে সংঘর্ষে একজন গুলিবিদ্ধ হয়েছেন। আজ রবিবার (১৩ এপ্রিল) দুপুরে উপজেলার দাশুড়িয়া নতুন গোলচক্কর মোড়ে এ ঘটনা ঘটে।
গুলিবিদ্ধ মনোয়ারুল দাশুড়িয়া ইউনিয়ন বিএনপির সিনিয়র সহসভাপতি বলে জানা গেছে। মনোয়ার একই ইউনিয়নের নওদাপাড়া এলাকার আবুল কালাম প্রামাণিকের ছেলে।
স্থানীয় বিএনপির নেতারা জানান, ঈশ্বরদীর দাশুড়িয়া ইউনিয়নের চাঁদপুর লক্ষ্মীকোলা, দাশুড়িয়া বস্তিপাড়া এলাকায় মাটি কাটা, দাশুড়িয়া মোড়ের সিএনজিস্ট্যান্ড, বাস কাউন্টারসহ বিভিন্ন পয়েন্ট থেকে চাঁদা আদায়কে কেন্দ্র করে ঈশ্বরদী উপজেলা যুবদলের যুগ্ম আহ্বায়ক রিপন প্রামাণিক ও তার বড় ভাই স্থানীয় শ্রমিক ইউনিয়নের সভাপতি রকু প্রামাণিকের সঙ্গে দাশুড়িয়া ইউনিয়ন যুবদলের সদস্যসচিব বিপুল মোল্লার সংঘর্ষসহ রেষারেষি চলে আসছিল। বিপুল মোল্লার নেতৃত্বে চাঁদপুর লক্ষ্মীকোলাসহ বেশ কয়েকটি স্থানে মাটি কাটা হচ্ছিল। আর রিপন প্রামাণিক ও তার ভাই শ্রমিক নেতা রকু প্রামাণিকের নেতৃত্বে দাশুড়িয়ার সিএনজি, অটোরিকশাসহ বেশ কিছু পয়েন্ট থেকে চাঁদা তোলা হচ্ছিল।
সূত্র মতে, গত শুক্রবার (১১ এপ্রিল) সন্ধ্যা থেকে দাশুড়িয়া সিএনজিস্ট্যান্ডসহ বেশ কিছু স্থান থেকে রিপন ও রকুকে চাঁদা তুলতে বাধা দেয় বিপুল মোল্লা গ্রুপ।
তখন ঈশ্বরদী উপজেলা যুবদলের যুগ্ম আহ্বায়ক রিপন প্রামাণিকের বড় ভাই ও স্থানীয় শ্রমিক ইউনিয়নের সভাপতি রকু প্রামাণিকের সঙ্গে দাশুড়িয়া ইউনিয়ন যুবদলের সদস্যসচিব বিপুল মোল্লার বাগবিতণ্ডা হয়। পরে দুই পক্ষের সংঘর্ষে বিপুল মোল্লাসহ তার অনুসারী কয়েকজন আহত হন। এই ঘটনায় বিপুল মোল্লা গ্রুপের লোকজন শ্রমিক ইউনিয়ন নেতা রকু প্রামাণিকের অফিস ভাঙচুর করে। এ নিয়ে দুই পক্ষই থানায় পাল্টাপাল্টি অভিযোগও করে। এসব নিয়ে দুই গ্রুপের মধ্যে বেশ উত্তেজনা চলছিল।
আরো পড়ুন
কালের ক্রমে জৌলুস হারিয়েছে চৈত্রসংক্রান্তির ‘ঘুড়ি উৎসব’
এই উত্তেজনা নিরাসনের জন্য পাবনা জেলা বিএনপির নেতৃবৃন্দের নির্দেশে সালিস বৈঠকের মাধ্যমে মীমাংসার কথা বলে রবিবার দুপুরে দাশুড়িয়া ইউনিয়ন বিএনপির সভাপতি সুলভ মালিথার বাড়িতে দুই পক্ষ থেকে ডাকা হয়। কিন্তু ঘটনাস্থলে উপজেলা যুবদলের যুগ্ম আহ্বায়ক রিপন প্রামাণিক ও তার বড় ভাই শ্রমিক ইউনিয়নের সভাপতি রকু প্রামানিকের নেতৃত্বে দাশুড়িয়া ইউনিয়ন বিএনপির সিনিয়র সহসভাপতি মনোয়ারুল ইসলামের ওপর হামলা চালানো হয়। হামলাকারীরা ধারালো অস্ত্র দিয়ে মনোয়ারের মাথা ও পিঠে কুপিয়ে জখম করে। একই সঙ্গে হামলাকারীরা মনোয়ারকে গুলি করে।
এতে দুটি গুলি মনোয়ারের পেটে ও কোমরে বিদ্ধ হয়। স্থানীয়রা আহত মনোয়ারকে উদ্ধার করে প্রথমে পাবনা জেনারেল হাসপাতালে ও পরে রাজশাহী মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে যান।
আরো পড়ুন
আ. লীগ আমলের ১০ অর্থনৈতিক অঞ্চল বাতিল করল সরকার
পাবনা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে ঘটনার সময় কর্তব্যরত চিকিৎসকদের বরাত দিয়ে দাশুড়িয়া ইউনিয়ন বিএনপির সভাপতি আব্দুস সামাদ সুলভ মালিথা জানান, আহত মনোয়ারের অবস্থা গুরুতর হওয়ায় তাকে রাজশাহী মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে পাঠানো হয়েছে।
উপজেলা বিএনপির যুগ্ম আহ্বায়ক ও দাশুড়িয়া ইউনিয়ন বিএনপির সভাপতি আব্দুস সামাদ সুলভ মালিথা জানান, সিএনজিস্ট্যান্ড নিয়ে দ্বন্দ্বের জেরে ইউনিয়ন বিএনপির সিনিয়র সহসভাপতি মনোয়ারুলকে যুবদল নেতা রিপন ও রকুর নেতৃত্বে গুলি করা হয়েছে। এ বিষয়ে জড়িতদের বিরুদ্ধে সাংগঠনিক ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে। দলীয় সাইনবোর্ড নিয়ে কেউ অপকর্মে জড়িত হলে তার দায় দল নেবে না। হামলাকারীরা পাবনা জেলা বিএনপির নেতাদের নির্দেশ উপেক্ষা করে এই হামলা করেছে।
ঈশ্বরদী থানার তদন্ত কর্মকর্তা মনিরুল ইসলাম জানান, গুলিবিদ্ধ মনোয়ারুলকে পাবনা জেনারেল হাসপাতাল থেকে উন্নত চিকিৎসার জন্য রাজশাহী মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে পাঠানো হয়েছে। গুলিবিদ্ধের ঘটনায় এখনো কোনো অভিযোগ হয়নি, তবে পূর্বের ঘটনায় দুই পক্ষের লিখিত অভিযোগ পাওয়া গেছে। দ্রুতই জড়িতদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।