মার্চ ফর গাজা

ঢাকায় উত্তাল জনসমুদ্র ফিলিস্তিনের প্রতি সংহতি

  • স্মরণকালের সর্ববৃহৎ গণজমায়েত
  • ফিলিস্তিনের স্বাধীনতা দাবি লাখো মানুষের
  • ইসরায়েলের সঙ্গে সম্পর্ক বিচ্ছিন্ন ও পণ্য বর্জনের ডাক
  • আমাদের হৃদয়ে আছে একেকটা ফিলিস্তিন : আজহারি
নিজস্ব প্রতিবেদক
নিজস্ব প্রতিবেদক
শেয়ার
ঢাকায় উত্তাল জনসমুদ্র ফিলিস্তিনের প্রতি সংহতি
ফিলিস্তিনের গাজায় ইসরায়েলের গণহত্যা বন্ধের দাবিতে গতকাল সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে লাখো মানুষের জমায়েত। ছবি : শেখ হাসান

ইসরায়েলি বাহিনীর গণহত্যা ও নিপীড়নের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ এবং ফিলিস্তিনের জনগণের প্রতি সংহতি জানাতে গতকাল শনিবার রাজধানীর সোহরাওয়ার্দী উদ্যানের গণজমায়েতে অংশ নেয় লাখো মানুষ। এই গণজমায়েত থেকে গাজায় গণহত্যা ও চলমান হামলার ঘটনায় আন্তর্জাতিক আদালতে ইসরায়েলের বিচারসহ বেশ কয়েকটি দাবি জানানো হয়। একই সঙ্গে ইসরায়েলি প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে যত চুক্তি হয়েছে, তা বাতিল করে জায়নবাদী কম্পানির পণ্য বর্জন করতে বাংলাদেশ সরকার ও জনগণের প্রতি আহবান জানানো হয়।

প্যালেস্টাইন সলিডারিটি মুভমেন্ট বাংলাদেশ গতকাল মার্চ ফর গাজা শিরোনামে এই গণজমায়েতের আয়োজন করে।

বিকেল ৪টায় উপস্থিত রাজনৈতিক নেতা ও জনগণের পক্ষ থেকে ঘোষণাপত্র পাঠ করেন দৈনিক আমার

দেশ সম্পাদক মাহমুদুর রহমান। ঘোষণাপত্রে বিভিন্ন দাবি তুলে ধরা হয়। সমাবেশে সভাপতিত্ব করেন জাতীয় মসজিদ বায়তুল মোকাররমের খতিব মাওলানা মুফতি মোহাম্মদ আবদুুল মালেক।

ইসরায়েলের গণহত্যার বিরুদ্ধে বাংলাদেশে বছরের পর বছর নানা প্রতিবাদ কর্মসূচি পালিত হলেও এবারই স্মরণকালের সর্ববৃহৎ জমায়েত হয়েছে।

দেশের সব রাজনৈতিক দল, ওলামা-মাশায়েখ, ইসলামী পণ্ডিত, সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমের ইনফ্লুয়েন্সার, জাতীয় দলের খেলোয়াড়, শিক্ষার্থী, সাধারণ মানুষসবাই কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে এই জমায়েতে উপস্থিত হয়। অনেকের মাথায় মোড়ানো ছিল কালেমা লেখা কাপড়ফিলিস্তিনের পতাকা। অনেকের হাত-মাথায় ছিল বাংলাদেশ ও ফিলিস্তিনের পতাকা। মুখে ইসরায়েলবিরোধী স্লোগান।

কর্মসূচিতে বিএনপি, জামায়াতে ইসলামী, হেফাজতে ইসলাম, জাতীয় নাগরিক পার্টি, খেলাফত মজলিস, বাংলাদেশ খেলাফত মজলিসসহ রাজনৈতিক দলের নেতারা সংহিত জানান। দলগুলো নেতাকর্মী নিয়ে গণজমায়েতে অংশ নেয়।

যুক্তরাষ্ট্র ও ইউরোপজুড়ে শান্তিপ্রিয় মানুষ রাজপথে নেমে এসে গাজায় ইসরায়েলি বর্বরতার প্রতিবাদ জানাচ্ছে। বাংলাদেশেও বিভিন্ন রাজনৈতিক, সামাজিক ও ধর্মীয় সংগঠনের উদ্যোগে গাজায় চলমান নিপীড়নের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ কর্মসূচি পালিত হচ্ছে। এর ধারাবাহিকতায় এই কর্মসূচি পালন করা হচ্ছে বলে জানিয়েছে প্যালেস্টাইন সলিডারিটি মুভমেন্ট।

গত সোমবার বিশ্বব্যাপী ডাকা নো ওয়ার্ক, নো স্কুল কর্মসূচির সঙ্গে সংহতি প্রকাশ করে ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে ধর্মঘট ও বিক্ষোভ পালিত হয়। বিক্ষোভে সর্বস্তরের মানুষ অংশ নেয়।

অনুষ্ঠানের শুরুতে সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে উপস্থিত লাখো জনতার সামনে বাংলাদেশের জনপ্রিয় ইসলামী বক্তা মিজানুর রহমান আজহারি বলেন, মার্চ করতে গিয়ে লাথি-গুঁতা সব খেয়েছি। তার পরও এই গণজমায়েত, গণসমুদ্রে উপস্থিত হয়ে বুঝতে পেরেছি ফিলিস্তিন, আল-আকসার প্রতি বাংলাদেশের জনগণের ভালোবাসার বহিঃপ্রকাশ। ভৌগোলিকভাবে আমরা ফিলিস্তিন থেকে অনেক দূরে হতে পারি, কিন্তু এই জনসমুদ্র প্রমাণ করে আমাদের একেকজনের হৃদয়ে-বুকের ভেতর বাস করে একেকটা ফিলিস্তিন। আমাদের হৃদয়ে বাস করছে একেকটা গাজা।

সোহরাওয়ার্দী উদ্যানের এই নির্দলীয় কর্মসূচিতে অংশ নিতে মানুষের ঢল নামে। দুপুর ২টায় সমাবেশ শুরু হওয়ার কথা থাকলেও দুপুরের আগে থেকে খণ্ড খণ্ড মিছিল নিয়ে সোহরাওয়ার্দী উদ্যান অভিমুখে রওনা হয় সাধারণ মানুষ। রাজধানীর বিভিন্ন এলাকা থেকে প্রতিবাদী মানুষ শাহবাগের উদ্দেশে আসতে থাকে। দুপুর গড়াতেই পুরো গণজমায়েতস্থল কানায় কানায় পরিপূর্ণ হয়ে ওঠে। দুপুরের পর ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাস, শাহবাগ, জিরো পয়েন্ট, পুরানা পল্টনসহ আশপাশের এলাকা লোকে লোকারণ্য হয়ে পড়ে।

এ সময় ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু, মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প, ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির পোস্টার ঘিরে বিক্ষোভ করতে দেখা যায় অনেককে। ফিলিস্তিনি জনতা ও নিরীহ শিশু হত্যার প্রতিবাদে প্রতীকী লাশ ও কফিন নিয়েও মিছিল করতে দেখা যায়।

 

ইসরায়েলের পণ্য বর্জনের আহবান

ঘোষণাপত্রে সারা দেশের মানুষের প্রতি ইসরায়েলের পণ্য বর্জনের আহবান জানান মাহমুদুর রহমান। একই সঙ্গে চার স্তরে দাবি জানানো হয়, পড়া হয় অঙ্গীকারনামা।

প্রথম দাবিগুলো হলো জাতিসংঘ ও আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের প্রতি, যেখানে বলা হয়জায়নবাদী ইজরায়েলের গণহত্যার বিচার আন্তর্জাতিক আদালতে নিশ্চিত করতে হবে; যুদ্ধবিরতি নয়, গণহত্যা বন্ধে কার্যকর ও সম্মিলিত পদক্ষেপ গ্রহণ করতে হবে; ১৯৬৭ সালের পূর্ববর্তী ভূমি ফিরিয়ে দেওয়ার জন্য বাধ্যবাধকতা তৈরি করতে হবে; পূর্ব জেরুজালেমকে ফিলিস্তিন রাষ্ট্রের রাজধানী হিসেবে আন্তর্জাতিকভাবে স্বীকৃতি দিতে হবে; ফিলিস্তিনিদের আত্মনিয়ন্ত্রণ, নিরাপত্তা এবং রাষ্ট্রীয় সার্বভৌমত্ব প্রতিষ্ঠার পথ উন্মুক্ত করতে হবে।

দ্বিতীয় দাবিগুলো মুসলিম উম্মাহর নেতাদের প্রতি। এতে বলা হয়, ইসরায়েলের সঙ্গে অর্থনৈতিক, সামরিক ও কূটনৈতিক সব সম্পর্ক অবিলম্বে ছিন্ন করতে হবে; জায়নবাদী রাষ্ট্রের বিরুদ্ধে বাণিজ্যিক অবরোধ ও নিষেধাজ্ঞা আরোপ করতে হবে; গাজার মজলুম জনগণের পাশে সর্বাত্মক সহযোগিতা নিয়ে দাঁড়াতে হবে; আন্তর্জাতিক পর্যায়ে ইসরায়েলকে একঘরে করতে সক্রিয় কূটনৈতিক অভিযান শুরু করতে হবে; জায়নবাদীদের দোসর ভারতে মুসলিমদের অধিকার হরণ, বিশেষ করে ওয়াক্ফ আইন সংশোধনের মতো রাষ্ট্রীয় আগ্রাসনের বিরুদ্ধে ওআইসি ও মুসলিম রাষ্ট্রগুলোকে দৃঢ় প্রতিবাদ ও কার্যকর কূটনৈতিক অবস্থান নিতে হবে। কারণ গাজার রক্তে লজ্জিত হওয়ার আগেই, গাজার পাশে দাঁড়ানোই উম্মাহর জন্য সম্মানের একমাত্র পথ। যে নেতৃত্ব আজ নীরব, কাল ইতিহাসের কাঠগড়ায় দাঁড়াতে বাধ্য হবে।

তৃতীয় দাবিগুলো বাংলাদেশ সরকারের প্রতি। এই দাবিগুলোতে বলা হয়েছেবাংলাদেশি পাসপোর্টে একসেপ্ট ইসরায়েল (ইসরায়েল ব্যতীত) শর্ত পুনর্বহাল করা, রাষ্ট্র হিসেবে তাদের স্বীকৃতি না দেওয়ার অবস্থান সুস্পষ্টভাবে প্রকাশ করতে হবে; সরকারের সঙ্গে ইসরায়েলি যত প্রতিষ্ঠানের চুক্তি হয়েছে, তা বাতিল করতে হবে; রাষ্ট্রীয়ভাবে গাজায় ত্রাণ ও চিকিৎসা সহায়তা পাঠানোর কার্যকর ব্যবস্থা নিতে হবে; সব সরকারি প্রতিষ্ঠানে এবং আমদানিনীতিতে জায়নবাদী কম্পানির পণ্য বর্জনের নির্দেশ দিতে হবে; জায়নবাদীদের দোসর ভারতের হিন্দুত্ববাদী সরকারের অধীনে মুসলিম ও অন্য সংখ্যালঘুদের ওপর চলমান নির্যাতনের বিরুদ্ধে রাষ্ট্রীয়ভাবে প্রতিবাদ জানাতে হবে; পাঠ্যবই ও শিক্ষানীতিতে আল-আকসা, ফিলিস্তিন এবং মুসলিমদের সংগ্রামী ইতিহাস অন্তর্ভুক্ত করতে হবে, যাতে ভবিষ্যৎ প্রজন্ম মুসলিম আত্মপরিচয়ের সঙ্গে গড়ে ওঠে।

সর্বশেষ দাবিগুলো নিজেদের প্রতি বলে জানান মাহমুদুর রহমান, যা মূলত একটি অঙ্গীকারনামা হিসেবেও তিনি অভিহিত করেন। সেগুলো হলোআমরা বয়কট করব প্রতিটি সেই পণ্য, কম্পানি ও শক্তিকে, যারা ইসরায়েলের দখলদারিকে টিকিয়ে রাখে; আমাদের সমাজকে প্রস্তুত করব এমন নুরউদ্দীন, এমন সালাহউদ্দিন তৈরি করার জন্য, যারা বায়তুল মুকাদ্দিসের মিম্বার পুনরুদ্ধার করবে। আমাদের সন্তানদের এমনভাবে গড়ে তুলব, যারা নিজেদের আদর্শ ও ভূখণ্ড রক্ষায় জান ও মালের সর্বোচ্চ ত্যাগে প্রস্তুত থাকবে; আমরা বিভাজিত হব না, কারণ আমরা জানি, বিভক্ত জনগণকে দখল করতে দেরি হয় না। আমরা ঐক্যবদ্ধ থাকব, যাতে এই বাংলাদেশ কখনো কোনো হিন্দুত্ববাদী প্রকল্পের পরবর্তী গাজায় পরিণত না হয়। আমরা শুরু করব নিজেদের ঘর থেকে, ভাষা, ইতিহাস, শিক্ষা, অর্থনীতি, সমাজসবখানে এই অঙ্গীকারের ছাপ রেখে।

শেষে বলা হয়, শান্তি বর্ষিত হোক গাজার সম্মানিত অধিবাসীদের ওপর, যারা সবুর করেছে, যারা ঈমানের প্রমাণ দিয়েছে, যারা ধ্বংসস্তূপের মাঝেও প্রতিরোধের আগুন জ্বেলেছে, বিশ্বের নীরবতা ও উদাসীনতার যন্ত্রণা হাসিমুখে বুকের মাঝে ধারণ করেছে।

সমাবেশে আস-সুন্নাহ ফাউন্ডেশনের চেয়ারম্যান শায়খ আহমাদুল্লাহ বলেন, বাংলাদেশের সব দল, মত, চিন্তা-দর্শনের মানুষ মজলুম ফিলিস্তিন ও মজলুম গাজার পাশে আছে, সহাবস্থান করছে। আমরা এক কাতারে দাঁড়িয়ে আজ বিশ্ববাসীকে দেখিয়ে দিতে চাই, আমাদের মধ্যে বিভিন্ন চিন্তা, মতগত পার্থক্য, ভিন্নতা থাকতে পারে; কিন্তু মজলুম ফিলিস্তিনিদের স্বাধীনতা, ভূমির অধিকারের দাবিতে আমরা প্রত্যেকটা বাংলাদেশের মানুষ ধর্ম-বর্ণ-নির্বিশেষে তাদের সঙ্গে সংহতি প্রকাশ করছি।

 

অশ্রুসিক্ত মোনাজাত

ফিলিস্তিনের মানুষের প্রতি সহমর্মিতা জানিয়ে আল্লাহর কাছে হাত তুলে দোয়া চেয়ে কর্মসূচি শেষ হয়। দোয়া ও মোনাজাত পরিচালনা করেন জাতীয় মসজিদ বায়তুল মোকাররমের খতিব মাওলানা আবদুল মালেক। তিনি বলেন, ফিলিস্তিনে যে নৃশংসতা চালাচ্ছে ইসরায়েল, তা মানবতার ওপর চরম আঘাত। আমরা আল্লাহর কাছে প্রার্থনা করছি, তিনি যেন নির্যাতিত মুসলমানদের রক্ষা করেন এবং ফিলিস্তিনকে স্বাধীনতার আলো দেখান। এ সময় মোনাজাতে অংশ নেওয়া লাখো মানুষের চোখ ছিল অশ্রুসিক্ত। ইসরায়েলি বাহিনীর অব্যাহত হামলা, শিশু ও নারীদের মৃত্যু, ধ্বংসস্তূপে পরিণত হওয়া গাজার করুণ বাস্তবতা হৃদয়ে নিয়ে মানুষ প্রার্থনা করে শান্তির জন্য।

এর আগে বিকেল সোয়া ৩টার দিকে বিখ্যাত ক্বারি আহমদ বিন ইউসুফের কোরআন তিলাওয়াতের মাধ্যমে কর্মসূচি আনুষ্ঠানিকতা শুরু হয়।

 

অনুষ্ঠানে যাঁরা উপস্থিত ছিলেন

বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য সালাহউদ্দিন আহমেদ, যুগ্ম মহাসচিব শহীদ উদ্দীন চৌধুরী এ্যানি, জামায়াতে ইসলামীর সেক্রেটারি জেনারেল মিয়া গোলাম পরওয়ার, ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের নায়েবে আমির মুফতি সৈয়দ মুহাম্মদ ফয়জুল করীম, এবি পার্টির চেয়ারম্যান মজিবুর রহমান মঞ্জু, খেলাফত মজলিসের মহাসচিব আহমদ আবদুল কাদের, বাংলাদেশ খেলাফত মজলিসের আমির মাওলানা মামুনুল হক, ইসলামী ঐক্যজোটের মহাসচিব মাওলানা সাখাওয়াত হোসাইন রাজী, গণ অধিকার পরিষদের সভাপতি নুরুল হক নুর, জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) দক্ষিণাঞ্চলের মুখ্য সংগঠক হাসনাত আবদুল্লাহ প্রমুখ। এ ছাড়া নিরাপদ সড়ক আন্দোলনের চেয়ারম্যান ও চিত্রনায়ক ইলিয়াস কাঞ্চন মঞ্চে এসে কর্মসূচির সঙ্গে একাত্মতা প্রকাশ করেন।

আরো সংহিত জানিয়েছেন জাতীয় ক্রিকেট দলের খেলোয়াড় মাহমুদ উল্লাহ রিয়াদ, মেহেদী হাসান মিরাজ, নাহিদ রানা ও তাইজুল ইসলাম, বুয়েটের প্রভাষক ও জনপ্রিয় ইউটিউবার এনায়েত চৌধুরী, ড্যাফোডিল ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটির অধ্যাপক মোক্তার আহমেদ, ডা. জাহাঙ্গীর কবির, ইসলামী বক্তা আব্দুল হাই মুহাম্মদ সাইফুল্লাহ, ঝালকাঠি নেছারাবাদ দরবার শরিফের পীর ছাহেব আল্লামা খলিলুর রহমান নেছারাবাদী, টিভি উপস্থাপক, কনটেন্ট ক্রিয়েটর আরজে কিবরিয়া, উদ্যোক্তা মাহমুদুল হাসান সোহাগ, অভিনেতা তামিম মৃধা, টেন মিনিট স্কুলের প্রতিষ্ঠাতা আয়মান সাদিক, ইসলামী ছাত্রশিবিরের কেন্দ্রীয় সভাপতি জাহিদুল ইসলাম প্রমুখ।

মন্তব্য

সম্পর্কিত খবর

শুল্কঝড়ের চ্যালেঞ্জ মোকাবেলায় আঞ্চলিক-দ্বিপক্ষীয় চুক্তিতে জোর

    ছায়া সংসদে ফাহমিদা খাতুন
নিজস্ব প্রতিবেদক
নিজস্ব প্রতিবেদক
শেয়ার
শুল্কঝড়ের চ্যালেঞ্জ মোকাবেলায় আঞ্চলিক-দ্বিপক্ষীয় চুক্তিতে জোর

সারা বিশ্বে এখন শুল্কঝড় বইছে। মার্কিন প্রশাসন শুল্কহার বৃদ্ধিতে কোনো নিয়ম-কানুনের ধার ধারেনি। যুক্তরাষ্ট্র ও চীনের মধ্যে শুল্ক আরোপ নিয়ে পরস্পরবিরোধী অবস্থা দেখে মনে হচ্ছে বাণিজ্যযুদ্ধ শুরু হয়েছে। বাংলাদেশও এই চ্যালেঞ্জের বাইরে নয়।

যুক্তরাষ্ট্রের উচ্চ শুল্কের চাপ এবং ২০২৬ সালে স্বল্পোন্নত দেশের (এলডিসি) তালিকা থেকে উত্তরণ বাংলাদেশের সামনে বড় চ্যালেঞ্জ। এটি মোকাবেলায় আঞ্চলিক কয়েকটি দেশের জোট এবং দ্বিপক্ষীয় চুক্তির ওপর জোর দিতে হবে বলে মন্তব্য করেছেন গবেষণা সংস্থা সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগের (সিপিডি) নির্বাহী পরিচালক ড. ফাহমিদা খাতুন। 

গতকাল শনিবার রাজধানীর এফডিসিতে যুক্তরাষ্ট্রের উচ্চ শুল্কহারের চ্যালেঞ্জ মোকাবেলা নিয়ে ডিবেট ফর ডেমোক্রেসি আয়োজিত ছায়া সংসদে বিতর্ক প্রতিযোগিতায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে এ কথা বলেন তিনি। অনুষ্ঠানে ডিবেট ফর ডেমোক্রেসির চেয়ারম্যান হাসান আহমেদ চৌধুরী কিরণ সভাপতিত্ব করেন।

 

ড. ফাহমিদা খাতুন বলেন, বাংলাদেশের ওপর ৩৭ শতাংশ কর আরোপের প্রক্রিয়া ত্রুটিপূর্ণ। তবে ট্রাম্পের উচ্চ শুল্কনীতি আমাদের জন্য ওয়েক-আপ কল। ব্যক্তি সমালোচনা না করে প্রাতিষ্ঠানিক দক্ষতা বাড়াতে হবে। দেশের করকাঠামো শক্তিশালী করতে আয়কর আদায়ে জোর দিতে হবে।

কারণ মার্কিন শুল্কারোপ ৯০ দিনের জন্য স্থগিত হলেও কাটেনি অনিশ্চয়তা।

তিনি বলেন, শুল্ক ও অশুল্ক বাধা কাটিয়ে বাণিজ্যের সম্প্রসারণে বিশ্ব বাণিজ্য সংস্থা (ডব্লিউটিও) গঠিত হয়েছিল। কিন্তু প্রভাবশালী দেশগুলো ডব্লিউটিওর নিয়ম-নীতির তোয়াক্কা করেনি। তাই সংস্থাটি এ ক্ষেত্রে সেভাবে প্রভাব রাখতে পারেনি। এর পর থেকেই নিজেদের মধ্যে সমমনা ১৫ থেকে ২০টি দেশ মিলে একাধিক জোট করে সুযোগ-সুবিধা নিশ্চিতের মধ্য দিয়ে বাণিজ্য করছে।

আরো আগে আমাদের এই পথে যাওয়া দরকার ছিল।

ড. ফাহমিদা খাতুন আরো বলেন, বাণিজ্য সক্ষমতা বাড়াতে আমরা অনেক দিন ধরেই বেশ কিছু দেশের সঙ্গে এফটিএ করার কথা বলে আসছি। কিন্তু বাস্তবতা হচ্ছে, প্রতিযোগী দেশ ভিয়েতনামে যেখানে ৫০ দেশের সঙ্গে এফটি রয়েছে সেখানে আমাদের রয়েছে শুধু ভুটানের সঙ্গে। যত দ্রুত সম্ভব আরো কিছু দেশের সঙ্গে এফটি করতে হবে। একই সঙ্গে নতুন বাজার, পণ্য বহুমুখীকরণ ও উৎপাদনশীলতার ওপর জোর দিতে হবে।

হাসান আহমেদ চৌধুরী কিরণ বলেন, যুক্তরাষ্ট্রে পণ্য রপ্তানিতে ঘোষিত নতুন শুল্ক আরোপ তিন মাসের জন্য স্থগিত করায় বাংলাদেশের রপ্তানি খাতে সাময়িক স্বস্তি মিললেও অনিশ্চয়তা কাটেনি। এই ৯০ দিনের মধ্যে নতুন করে এলসি খোলা হলে তার জাহাজীকরণ যদি ৯০ দিনের পরে হয়, তাহলে সে ক্ষেত্রে ওই রপ্তানির বিপরীতে স্থগিত কর সুবিধা প্রযোজ্য হবে কি না, তা স্পষ্ট নয়। যদি এই স্থগিতাদেশের ৯০ দিন পর মার্কিন শুল্ক বিভাগ পণ্য খালাসীকরণের লক্ষ্যে শুল্ক অ্যাসেসমেন্ট করে তাহলে কত শতাংশ শুল্ক আরোপ করা হবে, তা নিশ্চিত করা না গেলে ব্যবসায়ীদের মধ্যে শঙ্কা থেকেই যাবে।

 

চ্যালেঞ্জ মোকাবেলায় ১০ সুপারিশ

বাংলাদেশকে যুক্তরাষ্ট্রের উচ্চ শুল্কহারের চ্যালেঞ্জ মোকাবেলায় ডিবেট ফর ডেমোক্রেসি ১০ দফা সুপারিশ করে। এগুলো হচ্ছে এক. শুধু পোশাক খাতকেন্দ্রিক রপ্তানিনির্ভরতা না রেখে রপ্তানি পণ্যের বহুমুখিতা ও বৈচিত্র্য বাড়ানো এবং বিকল্প বাজার খুঁজে বের করা, যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে বাণিজ্য কূটনীতি জোরদার করে সে দেশের বাজারে বাংলাদেশি পণ্যের রপ্তানি অব্যাহত রাখা, ৯০ দিনের স্থগিতাদেশের মেয়াদ শেষে রপ্তানি পণ্য যুক্তরাষ্ট্রে পৌঁছালে বা জাহাজীকরণ হলে রপ্তানির বিপরীতে স্থগিতকৃত শুল্ক সুবিধা প্রযোজ্য হবে কি না তা স্পষ্ট করা অন্যতম।

ডিবেট ফর ডেমোক্রেসির আয়োজনে যুক্তরাষ্ট্রের উচ্চ শুল্কহারের চ্যালেঞ্জ মোকাবেলায় বাংলাদেশ সক্ষম হবে শীর্ষক ছায়া সংসদে মানারাত ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটির বিতার্কিকদের পরাজিত করে বাংলাদেশ ইউনিভার্সিটি অব বিজনেস অ্যান্ড টেকনোলজির বিতার্কিকরা বিজয়ী হন। প্রতিযোগিতায় বিচারক ছিলেন অধ্যাপক আবু মুহাম্মদ রইস, সুলতান আহমেদ ভূঁইয়া এফসিএ, সাংবাদিক দৌলত আক্তার মালা, ড. এস এম মোর্শেদ এবং টিভি অনুষ্ঠান নির্মাতা কে এম মাহমুদ হাসান।

মন্তব্য
ঢা‌বি সাদা দল

ফ্যাসিবাদের মুখোশে আগুন পরিকল্পিত

ঢাকা বিশ্ব‌বিদ‌্যা‌লয় প্রতিনিধি
ঢাকা বিশ্ব‌বিদ‌্যা‌লয় প্রতিনিধি
শেয়ার
ফ্যাসিবাদের মুখোশে আগুন পরিকল্পিত

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের (ঢাবি) চারুকলা অনুষদে ফ্যাসিবাদের মুখাকৃতি ও শান্তির পায়রা মোটিফে আগুন দেওয়ার ঘটনায় নিন্দা ও প্রতিবাদ এবং বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসের নিরাপত্তা নিয়ে উদ্বেগ জানিয়েছে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বিএনপি-জামায়াতপন্থী শিক্ষকদের সংগঠন সাদা দল।

একই সঙ্গে অবিলম্বে অগ্নিকাণ্ডে জড়িতদের চিহ্নিত করে আইনের মাধ্যমে সর্বোচ্চ শাস্তির দাবি জানায় সংগঠনটি।

গতকাল শনিবার ঢাবি সাদা দলের আহবায়ক অধ্যাপক মো. মোর্শেদ হাসান খান, যুগ্ম আহবায়ক অধ্যাপক আব্দুস সালাম ও অধ্যাপক মো. আবুল কালাম সরকার স্বাক্ষরিত এক বিবৃতিতে এই দাবি জানানো হয়।

বিবৃতিতে নেতারা বলেন, বাঙালি জাতির ঐতিহ্যের স্মরক পহেলা বৈশাখ।

এ উপলক্ষে আনন্দ শোভাযাত্রা উদযাপনের আর মাত্র দুই দিন বাকি। আনন্দ শোভাযাত্রা উদযাপনের জন্য ফ্যাসিস্টদের প্রতিকৃতি তৈরিসহ অন্যান্য প্রস্তুতি যখন প্রায় শেষ দিকে তখন শনিবার ভোরে চারুকলা অনুষদের চার দেয়ালের ভেতরে তৈরি করা এসব প্রতিকৃতিতে আগুন দেওয়া নিছক কোনো রহস্যজনক নয়। এটি একটি পরিকল্পিত অগ্নিকাণ্ড। এ ঘটনায় ফ্যাসিস্ট স্বৈরাচার সরকারের দোসর কিংবা ঘাপটি মেরে থাকা স্বৈরাচারের দোসরদের হাত থাকার সম্ভাবনা বেশি।

নেতারা অগ্নিকাণ্ডের ঘটনায় ঢাবি ক্যাম্পাসের নিরাপত্তাব্যবস্থা নিয়ে প্রশ্ন তুলে বলেন, পহেলা বৈশাখের আনন্দ শোভাযাত্রা পালনের লক্ষ্যে তৈরি প্রতিকৃতিসহ অন্যান্য জিনিসের নিরাপত্তার জন্য পর্যাপ্ত নিরাপত্তাব্যবস্থা ছিল না। ফ্যাসিস্ট স্বৈরাচার সরকারের পতনের পর চারুকলার শোভাযাত্রা নিয়ে আগে থেকেই সতর্ক থাকা অত্যাবশ্যক ছিল। অতএব পুরো ঘটনা খতিয়ে দেখা দরকার বলে মনে করি।

ঢাবি সাদা দলের নেতারা অবিলম্বে চারুকলায় অগ্নিকাণ্ডের ঘটনায় সুষ্ঠু তদন্ত করে দোষীদের চিহ্নিত করে আইনি ব্যবস্থা নেওয়ার দাবি জানান।

সেই সঙ্গে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ক্যম্পাসে নিরাপত্তাব্যবস্থা আরো জোরদার করতে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের কাছে আহবান জানান।

মন্তব্য

আদানির বিদ্যুৎ কেন্দ্রের একটি ইউনিট ১৭ ঘণ্টা পর চালু

নিজস্ব প্রতিবেদক
নিজস্ব প্রতিবেদক
শেয়ার
আদানির বিদ্যুৎ কেন্দ্রের একটি ইউনিট ১৭ ঘণ্টা পর চালু

ভারতের আদানি গ্রুপের কয়লাভিত্তিক বিদ্যুৎকেন্দ্র থেকে বিদ্যুৎ সরবরাহ পুরোপুরি বন্ধ হয়ে যায় গত শুক্রবার রাতে। এর ১৭ ঘণ্টা পর গতকাল শনিবার সন্ধ্যা ৬টা ১৫ মিনিটে পুনরায় একটি ইউনিট থেকে বিদ্যুৎ সরবরাহ শুরু হয়। সন্ধ্যা ৭টার দিকে জাতীয় গ্রিডে বিদ্যুৎ সরবরাহের পরিমাণ ছিল ৪৬ মেগাওয়াট। ক্রমান্বয়ে এক ইউনিট থেকে বিদ্যুতের পরিমাণ বাড়বে।

জাতীয় গ্রিডে বিদ্যুৎ সঞ্চালনে দায়িত্বে থাকা একমাত্র রাষ্ট্রীয় সংস্থা পাওয়ার গ্রিড কম্পানি অব বাংলাদেশের (পিজিসিবি) ঊর্ধ্বতন এক কর্মকর্তা গতকাল রাতে কালের কণ্ঠকে এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন।

সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা বলছেন, কেন্দ্রটির দুটি ইউনিট থেকে গড়ে এক হাজার ৪০০ মেগাওয়াটের বেশি বিদ্যুৎ পাওয়া যেত। কারিগরি ত্রুটির কারণে প্রথম ইউনিট থেকে উৎপাদন বন্ধ হয়েছে গত মঙ্গলবার। আর দ্বিতীয় ইউনিট বন্ধ হয় গত শুক্রবার রাত ১টার দিকে।

এতে দেশে বিদ্যুৎ সরবরাহে বড় ঘাটতি তৈরি হয়। পরে গতকাল সন্ধ্যায় একটি ইউনিট থেকে বিদ্যুৎ সরবরাহ শুরু করে আদানি। 

জানতে চাইলে বাংলাদেশ বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ডের সদস্য (উৎপাদন) মো. জহুরুল ইসলাম কালের কণ্ঠকে বলেন, ত্রুটি দেখা দেওয়ায় আদানি বিদ্যুৎকেন্দ্রের দুটি ইউনিট থেকেই বিদ্যুৎ সরবরাহ বন্ধ হয়ে যায়।  ঘাটতি পূরণে গ্যাস ও তেলভিত্তিক বিদ্যুৎকেন্দ্রের উৎপাদন বাড়ানো হয়।

জ্বালানির সরবরাহ পেলে চাহিদা মতো উৎপাদন করা যাবে। শনিবার রাতে বিদ্যুৎকেন্দ্রের একটি ইউনিট পুনরায় চালু হয়, আরেকটি ইউনিট ত্রুটি মেরামতের চেষ্টা করছে বলেও তিনি জানান। 

আদানির বিদ্যুৎকেন্দ্রে ব্যবহৃত কয়লার দাম নিয়ে বিরোধ আছে। এটি নিয়ে আদানি ও বিপিডিবির মধ্যে আলোচনা চলছে। বকেয়া শোধ নিয়েও বিভিন্ন সময় তাগাদা দিয়েছে আদানি।

গত বছর একবার বিদ্যুৎ সরবরাহ বন্ধ করেছিল আদানি। এরপর নিয়মিত চলতি বিল পরিশোধ করায় তারা একটি ইউনিটের উৎপাদন চালু করে। গত ফেব্রুয়ারিতে পুরো বিদ্যুৎ সরবরাহের অনুরোধ জানায় বিপিডিবি। গত মার্চে শুরু থেকেই দুটি ইউনিটের বিদ্যুৎ সরবরাহ করে তারা।

পিজিসিবি ও বিপিডিবি সূত্র বলছে, গতকাল শনিবার ছুটির দিন থাকায় বিদ্যুতের চাহিদা অন্য দিনের চেয়ে কিছুটা কম। গতকাল বিকেল ৩টা পর্যন্ত সর্বোচ্চ চাহিদা উঠেছে ১৩ হাজার ৫৫২ মেগাওয়াট। এ সময় ৪২৮ মেগাওয়াট লোডশেডিং করা হয়েছে। আদানির বিদ্যুৎকেন্দ্র থেকে সরবরাহ শুরু না হলে আজ রবিবার লোডশেডিং আরো বৃদ্ধি পেত। ঘাটতি মেটাতে পেট্রোবাংলার কাছে বাড়তি গ্যাস সরবরাহও চেয়েছিল বিপিডিবি।

আদানির কয়লাভিত্তিক বিদ্যুৎকেন্দ্রটি এক হাজার ৬০০ মেগাওয়াট ক্ষমতার। ৮০০ মেগাওয়াট সক্ষমতার দুটি ইউনিট আছে এই কেন্দ্রে। এতে উৎপাদিত বিদ্যুৎ ২৫ বছর ধরে কিনবে বাংলাদেশ। প্রথম ইউনিট থেকে বাণিজ্যিকভাবে বিদ্যুৎ উৎপাদন শুরু হয় ২০২৩ সালের এপ্রিলে। দ্বিতীয় ইউনিট থেকে বাণিজ্যিক উৎপাদন শুরু হয় একই বছরের জুনে। ২০১৭ সালে আদানির সঙ্গে বিদ্যুৎ কেনার চুক্তি করে বিপিডিবি। আদানির সঙ্গে বিপিডিবির চুক্তি পর্যালোচনায় অন্তর্বর্তী সরকারের গঠিত একটি কমিটি কাজ করছে।

মন্তব্য

ইসরায়েল গাজায় এবার পানি-অস্ত্র প্রয়োগ করছে

কালের কণ্ঠ ডেস্ক
কালের কণ্ঠ ডেস্ক
শেয়ার
ইসরায়েল গাজায় এবার পানি-অস্ত্র প্রয়োগ করছে

ধরার বুকে নির্মিত জাহান্নাম হিসেবে পরিচিত গাজার মানবিক পরিস্থিতির অবনতি বিশ্বসম্প্রদায়কে ভাবতে বাধ্য করছে। দখলদার ইসরায়েলের বেপরোয়া বিমান হামলা ও ভয়াবহ স্থল হামলায় অবরুদ্ধ গাজাবাসী এখন শুধু খাবারের অভাবে ধুঁকে ধুঁকে মরছে না; অনাহারি গাজাবাসী এক ঢোক সুপেয় জলও এখন পাচ্ছে না।

গাজায় বিশুদ্ধ পানির সবচেয়ে বড় উৎসটি ছিল ইসরায়েলি একটি কম্পানির। গত শুক্রবার কম্পানিটি পানির পাইপলাইন বন্ধ করে দিয়েছে।

ইসরায়েলি নির্বিচার বিমান হামলা ও নির্মম স্থল অভিযানের পর যেসব হতভাগা গাজাবাসী বেঁচে ছিল, তারা এখন এক ফোঁটা সুপেয় পানির জন্য মাইলের পর মাইল চষে বেড়ায়। গাজার এক অবরুদ্ধ নগরীর পৌঢ়া নারী ফাতিন নাসের (৪২) বড়ই আক্ষেপের সঙ্গে বলেন, সকাল থেকে আমি পানির অপেক্ষায় আছি। কিন্তু সুপের পানির কোনো উৎস বা স্টেশন আর অক্ষত নেই। পানির ট্রাকও চোখে পড়ে না।
কোথাও পানি নেই। এলাকা ত্যাগ করে যে কোথাও যাব, তারও সুযোগ নেই। আল্লাহ যদি যুদ্ধটা থামিয়ে দিতেন। 

ইসরায়েল গত সপ্তাহেই গাজার শিজাইয়া এলাকার সব অধিবাসীকে এলাকা ছেড়ে চলে যাওয়ার নির্দেশ দিয়েছে।

কিন্তু তারা কোথায় যাবে, কেমন করে যাবে, সে ব্যাপারে কোনো নির্দেশনা দেয়নি। বাস্তবতা হচ্ছে, এমন কোনো ভূমি বাকি নেই, যেখানে এখন বোমা পড়ছে না। তবে ইসরায়েল বারবার দাবি করছে, তারা কোনো বেসামরিক এলাকায় বোমা ফেলছে না। তারা শুধু সন্ত্রাসীদের অবকাঠামো লক্ষ্য করে বোমা ফেলছে। দখলদার বাহিনী বেছে বেছে উত্তর গাজার সব পানির কূপও ধ্বংস করে ফেলছে।

মিউনিসিপ্যালিটির একজন কর্মকর্তা বলেন, গাজার পরিস্থিতি অত্যন্ত কঠিন এবং দিন দিন তা অবনতির দিকেই যাচ্ছে। পানি তো দৈনন্দিন নানা কাজে লাগে। কিন্তু পানি কোথাও মিলছে না। গাজা এখন বিশ্বের এক তৃষ্ণার্ত নগরী। আগামী দিনগুলোতে কী ঘটতে যাচ্ছে, তা আমরা কেউ জানি না।

গাজার লোকসংখ্যা ২৩ লাখ। কিন্তু যুদ্ধের কারণে বেশির ভাগ অধিবাসী এখন বাস্তুচ্যুত। প্রত্যন্ত এলাকায় এখনো দু-একটি কূপে পানি রয়েছে। কিন্তু সেই কূপে পানির বিশুদ্ধতার কোনোই গ্যারান্টি নেই।

গত শুক্রবার রেড ক্রসের প্রেসিডেন্ট মিরজানা স্পোলজারিক বলেন, গাজার মানবিক পরিস্থিতি পৃথিবীর দোজখে পরিণত হয়েছে। আগামী দুই সপ্তাহের মধ্যে অস্থায়ী হাসপাতালগুলো বন্ধ করে দিতে বাধ্য হবে। কারণ এরপর গাজাবাসীর রসদ ফুরিয়ে যাবে বলে জানিয়েছে আন্তর্জাতিক সাহায্যকারী সংস্থা রেড ক্রস।

তিনি বলেন, আমরা গাজায় এখন নিজেদের এমন পরিস্থিতিতে দেখছি। যেটিকে আমাকে বলতে হবে পৃথিবীর দোজখ। মানুষ বিভিন্ন জায়গায় বিদ্যুৎ, পানি, খাবার পায় না।

গত ২ মার্চ গাজায় পূর্ণ অবরোধ আরোপ করে দখলদার ইসরায়েল। ওই সময় দখলদারদের সঙ্গে ফিলিস্তিনি সশস্ত্র গোষ্ঠী হামাসের যুদ্ধবিরতি ভেস্তে যাওয়ার শঙ্কায় পড়ে। ওই দিন থেকে গাজায় যুদ্ধবিরতির দ্বিতীয় ধাপ শুরু হওয়ার কথা ছিল। কিন্তু ইসরাইল চুক্তি ভঙ্গ করে। এর কয়েক দিন পর ১৮ মার্চ রাতে গাজায় হঠাৎ তীব্র বিমান হামলা চালায় তারা। এতে এক রাতে চার শরও বেশি ফিলিস্তিনির মৃত্যু হয়।

জাতিসংঘের মতে, ইসরায়েলের বর্বর আক্রমণের কারণে গাজার প্রায় ৮৫ শতাংশ ফিলিস্তিনি বাস্তুচ্যুত হয়েছে। এ ছাড়া অবরুদ্ধ এই ভূখণ্ডের ৬০ শতাংশ অবকাঠামো ক্ষতিগ্রস্ত বা ধ্বংস হয়ে গেছে। উল্লেখ্য, ২০২৩ সালের ৭ অক্টোবর ভোরে গাজার শাসকগোষ্ঠী হামাসের নেতৃত্বাধীন হামলায় ইসরায়েলে অন্তত এক হাজার ১৩৯ জন নিহত হয় এবং দুই শর বেশি মানুষকে বন্দি করে গাজায় নিয়ে যাওয়া হয়। এই ঘটনার কয়েক ঘণ্টার ব্যবধানে গাজায় ভয়াবহ হামলা শুরু করে ইসরাইলি বাহিনী। সূত্র : এএফপি, রয়টার্স

মন্তব্য

সর্বশেষ সংবাদ