<p style="text-align:justify">সকাল তখন ১১টা। রাজধানীর মিরপুর মডেল থানায় প্রবেশ করতেই চোখে পড়ে বিক্ষুব্ধ জনতার দেওয়া আগুনে পুড়ে যাওয়া একটি সাঁজোয়া যান ও একটি পুলিশ ভ্যান। গাড়ি দুটির পোড়া দৃশ্যই বলে দেয় শেখ হাসিনা সরকারের পতনের দিন গত ৫ আগস্ট কিভাবে মিরপুর মডেল থানায় অগ্নিসংযোগ ও লুটপাট চালানো হয়েছিল। শুধু এ দুটি গাড়ি নয়, ভেতরে থানার মূল ভবনও ধ্বংস্তূপে পরিণত হয়েছে।</p> <p style="text-align:justify">ফলে বর্তমানে থানার মূল ভবনের পেছনে কোয়ার্টার ভবন (সালদা) ও ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তার বাংলো নামে পরিচিত ভবনে চলছে থানার কার্যক্রম। অনেকটা জোড়াতালি দিয়ে কোনোভাবে চালানো হচ্ছে থানার কার্যক্রম। গতকাল মঙ্গলবার সকালে সরেজমিন মিরপুর মডেল থানা ঘুরে এমন দৃশ্য দেখা গেছে। বৈষম্যবিরোধী ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে গত ৫ আগস্ট হাসিনা সরকারের পতন হয়।</p> <p style="text-align:justify">পতনের পর বিক্ষুব্ধ জনতার রোষানলে পড়েন পুলিশ সদস্যরা। ভাঙচুর, লুটপাট ও অগ্নিসংযোগ করা হয় রাজধানীসহ সারা দেশের বেশির ভাগ থানায়। এর মধ্যে অন্যতম ছিল রাজধানীর মিরপুর মডেল থানা। সরেজমিন দেখা যায়, থানায় আগে সাধারণ ডায়েরি (জিডি) করার রুমটি ভেঙে তছনছ করে দেওয়া  হয়েছে।</p> <p style="text-align:justify">কক্ষটির অবশিষ্ট আছে দুই পাশের দেয়াল। ওই দেয়ালের ওপর টিনের চালা দিয়ে তৈরি করা হয়েছে একটি খোলা রুম। তবে সেখানে এখন আর সাধারণ ডায়েরির কার্যক্রম চলে না। সেখানে পুলিশ সদস্যরা বিশ্রাম নেন। সাধারণ মানুষ এলে তাদের পাঠিয়ে দেওয়া হয় সালদা ভবনে। সেখানে অবস্থানরত পুলিশ সদস্যের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, থানার মূল ভবনের পেছনে কোয়ার্টার ভবন (সালদা) ও ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তার বাংলো নামে পরিচিত পরিত্যক্ত ভবনে জোড়াতালি দিয়ে থানার বর্তমান কার্যক্রম চালানো হচ্ছে।</p> <p style="text-align:justify">কোয়ার্টার ভবন সালদায় গিয়ে দেখা যায়, খুব অল্পসংখ্যক মানুষ নানা অভিযোগ নিয়ে আসছে। ডিউটি অফিসারসহ দায়িত্বরতরা হাতে লিখে বিভিন্ন অভিযোগ নিচ্ছেন। এ ছাড়া ইন্টারনেট সার্ভার এখনো ঠিক না হওয়ায় কিছু ক্ষেত্রে সেবা দিতে বিলম্ব হচ্ছে।</p> <p style="text-align:justify">দায়িত্বরত এক পুলিশ সদস্য বলেন, ‘এখন আগের মতো মামলা ও অভিযোগ জমা পড়ছে না। অনেক কমে গেছে। তবে জিডি হচ্ছে। আমরা নাগরিক সেবা শতভাগ নিশ্চিত করতে চেষ্টা করছি।’</p> <p style="text-align:justify">ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তার বাংলো নামে পরিচিত পরিত্যক্ত ভবনে বসছেন থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তাসহ ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা। সেখান থেকে থানার মূল কার্যক্রম পরিচালনা করা হচ্ছে।</p> <p style="text-align:justify">পোড়া ক্ষতচিহ্ন নিয়ে তিনতলা থানা ভবনটি দাঁড়িয়ে আছে। এখনো সেখানে পাওয়া যাচ্ছে পোড়া গন্ধ। ভেতরে দেখা গেছে, ভাঙাচোরা দরজা-জানালা আর পোড়া আসবাবের স্তূপ। তবে ভবনটি উপযোগী করার কার্যক্রমও চলছে। জরাজীর্ণ থানাকে নতুনরূপে ফেরাতে কাজ শুরু করে দিয়েছেন রাজমিস্ত্রি।</p> <p style="text-align:justify">থানাটিতে আগুন দেওয়ার আগে অফিসারদের মোটরসাইকেল, ল্যাপটপ, কক্ষের এসি, টিভি, ফ্যান, এমনকি ফ্লোরের কার্পেট পর্যন্ত লুটপাট করে নিয়ে যাওয়া হয়। যেগুলো নিতে পারেনি, সেগুলো ভাঙচুর করে আগুন লাগিয়ে দেওয়া হয়।</p> <p style="text-align:justify"> </p> <p style="text-align:justify"><strong>উদ্ধার করা হচ্ছে অস্ত্র</strong></p> <p style="text-align:justify">মিরপুর মডেল থানা থেকে লুট হওয়া অস্ত্র উদ্ধারের কার্যক্রম অব্যাহত আছে। থানার ওসি (তদন্ত ও অপারেশন) খালিদ মুনসুর এই প্রতিবেদককে গতকাল ম্যাগজিনসহ দুটি অস্ত্র উদ্ধারের খবর জানিয়েছেন। উদ্ধার করা অস্ত্রগুলো থানার অস্ত্রাগারে জমা করা হচ্ছে বলে জানান তিনি। কালের কণ্ঠকে খালিদ মুনসুর বলেন, ‘আমাদের এখান থেকে লুট হওয়া বেশির ভাগ অস্ত্র উদ্ধার সম্পন্ন হয়েছে। আমরা এখনো আমাদের অস্ত্র উদ্ধারের কার্যক্রম অব্যাহত রেখেছি। খুব দ্রুত সব অস্ত্র উদ্ধার করা হবে।’</p> <p style="text-align:justify">থানার সব কার্যক্রম জোড়াতালি দিয়ে হলেও আগামী এক মাসের মধ্যে পুরোদমে কার্যক্রম শুরু করা যাবে বলে জানিয়ে তিনি আরো বলেন, ‘আমরা এরই মধ্যে সব কাজ শুরু করে দিয়েছি। তবে প্রতিটি কাজই জোড়াতালি দিয়ে চালানো হচ্ছে। আমাদের কোয়ার্টার ভবনের নিচে মামলা, জিডি ও অভিযোগের কার্যক্রম পরিচালনা করা হচ্ছে। এ ছাড়া আমাদের পেট্রল টিমও পরিচালিত হচ্ছে। পেট্রল টিমের গাড়ি ডিএমপির সদর দপ্তরের সঙ্গে সমন্বয় করে নেওয়া হচ্ছে। কারণ আমাদের গাড়িগুলো পুড়িয়ে দেওয়া হয়েছে। আগামী এক মাসের মধ্যে আমরা মূল ভবনের সংস্কারকাজ শেষ করতে পারব। তখন পুরোদমে কার্যক্রম পরিচালনা করা যাবে বলে আশা করছি।’ </p>