ভাগ্যে বিশ্বাস করা ছাড়া কোনো ব্যক্তি মুমিন হতে পারে না। আর ভাগ্যে বিশ্বাস করার অর্থ হলো, এটা বিশ্বাস করা যে জীবনের ভালো ও মন্দ, আনন্দ ও দুঃখ, জীবিকা ও সম্পদ, জীবন ও মৃত্যু ইত্যাদি বিষয় আল্লাহ কর্তৃক নির্ধারিত। ভাগ্য আল্লাহর এক রহস্যময় জগৎ। এই জগৎ সম্পর্কে আল্লাহ কাউকে অবগত করেননি।
কোরআনের বর্ণনায় মানুষের ভাগ্য
মো. আবদুল মজিদ মোল্লা

কোরআনের বর্ণনায় ভাগ্য : ভাগ্য সম্পর্কে মানুষ ততটুকু জানে, যতটুকু আল্লাহ কোরআন ও তাঁর নবীর মাধ্যমে জানিয়েছেন। নিম্নে ভাগ্য বিষয়ে কোরআনের বর্ণনা তুলে ধরা হলো—
১. আল্লাহ কর্তৃক নির্ধারিত : মানুষের ভাগ্যের ভালো ও মন্দ আল্লাহ কর্তৃক নির্ধারিত। আল্লাহ বলেন, ‘আমি সব কিছু সৃষ্টি করেছি নির্ধারিত পরিমাপে, আমার আদেশ তো একটি কথায় নিষ্পন্ন, চোখের পলকের মতো।
২. ভাগ্য অনিবার্য : আল্লাহ মানুষের জন্য যা নির্ধারিত করে রেখেছেন তা অবশ্যই বাস্তবায়িত হবে। ইরশাদ হয়েছে, ‘আল্লাহ তাঁর ইচ্ছা পূরণ করবেনই; আল্লাহ সব কিছুর জন্য স্থির করেছেন নির্দিষ্ট মাত্রা।’ (সুরা : তালাক, আয়াত : ৩)
৩. ভাগ্য পূর্বনির্ধারিত : মানুষের ভাগ্যে যা ঘটে তা পূর্ব থেকেই আল্লাহ নির্ধারণ করে রেখেছেন। ইরশাদ হয়েছে, ‘পৃথিবীতে অথবা ব্যক্তিগতভাবে তোমাদের ওপর যে বিপর্যয় আসে আমি তা সংঘটিত করার আগেই তা লিপিবদ্ধ থাকে।
৪. ভাগ্য জীবনে সংযম আনে : ভাগ্য মানুষের জীবনকে সংযত করে। আল্লাহ বলেন, ‘এটা (ভাগ্য নির্ধারণ) এ জন্য যে, তোমরা যা হারিয়েছ তাতে যেন তোমরা বিমর্ষ না হও এবং যা তিনি তোমাদের দিয়েছেন তার জন্য হর্ষোত্ফুল্ল না হও। আল্লাহ পছন্দ করেন না উদ্ধত ও অহংকারীদের।’ (সুরা : হাদিদ, আয়াত : ২৩)
৫. ভাগ্য অনুসারেই সব হয় : আল্লাহর ইচ্ছা ও পরিকল্পনা অনুযায়ীই সব কিছু সংঘটিত হয়।
মুমিনের ভাগ্যে বিশ্বাস যেমন হবে : আবু আবদুল্লাহ ইবনে দায়লামি (রহ.) বলেন, আমি উবাই বিন কাব (রা.)-এর কাছে এসে তাকে বললাম, তাকদির সম্পর্কে আমার মনে একটা দ্বিধার উদ্রেক হয়েছে। তাই আপনি আমাকে এমন কিছু বলুন যাতে মহান আল্লাহ আমার মনের দ্বিধা-দ্বন্দ্ব দূর করবেন। তিনি বললেন, মহান আল্লাহ তাঁর আসমান ও পৃথিবীবাসী সবাইকে শাস্তি দিতে পারেন। তার পরও তিনি তাদের প্রতি অন্যায়কারী হবেন না। পক্ষান্তরে তিনি যদি তাদের সবাইকে দয়া করেন তাহলে তাঁর এই দয়া তাদের জন্য তাদের নেক আমল হতে উত্তম হবে। সুতরাং যদি তুমি উহুদ পাহাড় পরিমাণ স্বর্ণও আল্লাহর পথে দান করো আর তাকদিরে বিশ্বাস না রাখো, তবে তা গ্রহণ করা হবে না যতক্ষণ না তুমি পুনরায় তাকদিরে বিশ্বাস করবে এবং উপলব্ধি করবে যে, যা তোমার ঘটেছে তা ভুলেও তোমাকে এড়িয়ে যাওয়ার ছিল না। আর যা এড়িয়ে গেছে তা কখনো ভুলেও তোমার বেলায় ঘটার ছিল না। আর এ বিশ্বাস ছাড়া তুমি মারা গেলে জাহান্নামে যাবে। (সুনানে আবি দাউদ, হাদিস : ৪৬৯৯)
মুমিন ভাগ্যে সন্তুষ্ট থাকে : ভাগ্যের ভালো ও মন্দের ব্যাপারে মুমিন সন্তুষ্ট থাকে। কখনো তাকে অপছন্দের কোনো বিষয় স্পর্শ করলেও সে তা নিয়ে প্রশ্ন উত্থাপন করে না। কেননা আল্লাহর নির্দেশ হলো, ‘তিনি (আল্লাহ) যা করেন সে বিষয়ে তাঁকে প্রশ্ন করা যাবে না, বরং তাদেরকেই প্রশ্ন করা হবে।’ (সুরা : আম্বিয়া, আয়াত : ২৩)
সম্পর্কিত খবর

কোরআন থেকে শিক্ষা
- পর্ব : ৭৬০

আয়াতের অর্থ
‘এবং তারা রাত অতিবাহিত করে তাদের প্রতিপালকের উদ্দেশে সিজদাবনত হয়ে এবং দাঁড়িয়ে থেকে। আর তারা বলে, হে আমাদের প্রতিপালক! আমাদের থেকে জাহান্নামের শাস্তি দূর করো, তার শাস্তি নিশ্চিত বিনাশ। নিশ্চয়ই তা অস্থায়ী ও স্থায়ী আবাস হিসেবে নিকৃষ্ট। এবং যখন তারা ব্যয় করে, তখন অপব্যয় করে না, কার্পণ্যও করে না; বরং তারা আছে এতদুভয়ের মাঝে মধ্যম পন্থায়।
আয়াতগুলোতে আল্লাহর প্রিয় বান্দাদের বৈশিষ্ট্য বর্ণনা করা হয়েছে।
শিক্ষা ও বিধান
১. রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেন, আল্লাহ রাতে তাঁর (রহমতের) হাত প্রসারিত করেন দিনে পাপকারীকে ক্ষমা করতে এবং তিনি দিনে তাঁর (রহমতের) হাত প্রসারিত করেন রাতে পাপকারীকে ক্ষমা করতে।
২. আল্লাহর ইবাদত ও স্মরণে রাত অতিবাহিত করা আল্লাহর ওলিদের প্রধান বৈশিষ্ট্য। তাহাজ্জুদ ছাড়া আল্লাহর নৈকট্যপ্রাপ্ত বান্দা হওয়ার আশা করা যায় না।
৩. মুমিন অর্থ ব্যয় করবে প্রয়োজন অনুপাতে। প্রয়োজনীয় ব্যয় বেশি হলেও অপচয় নয়, কিন্তু অপ্রয়োজনীয় ব্যয় সামান্য হলেও অপচয়।
৪. পাপ কাজে অর্থ ব্যয় মানেই অপচয়—চাই তা বেশি হোক বা সামান্য।
৫. জাহান্নামের ভয়ে কান্না করা এবং আল্লাহর কাছে জাহান্নাম থেকে আশ্রয় চাওয়া ছাড়া পরকালে মুক্তি আশা করা দুরূহ।

মুসলিম নারীর পর্দা ও পোশাক
জাওয়াদ তাহের

পর্দা ইসলামের একটি গুরুত্বপূর্ণ বিধান, যা শালীনতা, নৈতিকতা ও সামাজিক শৃঙ্খলা বজায় রাখতে সহায়ক। কোরআন ও হাদিসে পর্দার গুরুত্ব বারবার তুলে ধরা হয়েছে। আল্লাহ তাআলা বলেন, ‘হে নবী! আপনি আপনার স্ত্রী, কন্যা এবং মুমিন নারীদের বলে দিন, তারা যেন নিজেদের চাদরের কিছু অংশ নিজেদের ওপর টেনে নেয়। এটি তাদের চিনে নেওয়ার জন্য উত্তম, ফলে তাদের উত্ত্যক্ত করা হবে না।
পর্দার প্রকারভেদ
১. শারীরিক পর্দা : পুরুষদের জন্য নাভি থেকে হাঁটু পর্যন্ত এবং নারীদের জন্য সম্পূর্ণ শরীর আবৃত রাখা আবশ্যক। আল্লাহ বলেন, ‘তারা যেন তাদের নিজেদের ভূষণ অন্যদের কাছে প্রকাশ না করে, তবে যা স্বাভাবিকভাবে প্রকাশ পায় তা ছাড়া। এবং তারা যেন তাদের মাথার ওড়না বুকের ওপর ফেলে রাখে...’
(সুরা : আন-নুর, আয়াত : ৩১)
২. দৃষ্টির পর্দা : আল্লাহ বলেন, ‘মুমিন পুরুষদের বলো, তারা যেন তাদের দৃষ্টি নত রাখে এবং নিজেদের যৌনাঙ্গের হেফাজত করে।
৩. আচরণগত পর্দা : নারীদের কোমল কণ্ঠে কথা না বলার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। আল্লাহ বলেন, ‘তোমরা (নারীরা) নম্রভাবে কথা বোলো না, যাতে হৃদয়ে ব্যাধিগ্রস্ত ব্যক্তি কুভাব পোষণ করে। তোমরা সংগত কথাবার্তা বলো।
(সুরা : আল-আহজাব, আয়াত : ৩২)
পর্দার গুরুত্ব ও প্রয়োজনীয়তা
১. পর্দা ব্যক্তিগত চরিত্র গঠনে সহায়ক: লজ্জাশীলতা ঈমানের অংশ। রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, ‘প্রত্যেক দ্বিনেরই একটা চরিত্র (বৈশিষ্ট্য) আছে। আর ইসলামের চরিত্র হচ্ছে লজ্জাশীলতা।’
(ইবনে মাজাহ, হাদিস : ৪১৮১)
২. পারিবারিক বন্ধন সুদৃঢ় করে : নারী-পুরুষের মধ্যে অবৈধ সম্পর্ক প্রতিরোধ করে পারিবারিক বন্ধন শক্তিশালী করে। আল্লাহ বলেন, ‘ব্যভিচারের কাছেও যেয়ো না।
৩. সামাজিক স্থিতিশীলতা বজায় রাখে : পর্দাহীনতা সমাজে বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি করে। মহানবী (সা.) বলেন, পুরুষের ওপর নারীর চেয়ে বড় কোনো ফিতনা আমি রেখে যাইনি।’ (বুখারি, হাদিস : ৫০৯৬)
৪. নারীর মর্যাদা ও সুরক্ষা নিশ্চিত করে : নারীদের সম্মান রক্ষার জন্য পর্দার নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। আল্লাহ বলেন, ‘...এটি (পর্দা) তাদের চিনে নেওয়ার জন্য উত্তম, ফলে তাদের উত্ত্যক্ত করা হবে না।’
(সুরা : আল-আহজাব, আয়াত : ৫৯)
৫. মানসিক প্রশান্তি আনে : রাসুল (সা.) বলেছেন, ‘যে ব্যক্তি দৃষ্টি সংযত রাখে, আল্লাহ তাকে অন্তরের প্রশান্তি দান করেন।’ (মুসনাদে আহমাদ, হাদিস : ১৯৬৬২)
পর্দার ইহকালীন ফায়দা
১. বিবাহ সম্পর্ক সংহত করে : পর্দার ফলে অবৈধ সম্পর্ক কমে, যা দাম্পত্য সম্পর্ককে মজবুত করে। আল্লাহ বলেন, ‘তারা তোমাদের জন্য পোশাকস্বরূপ এবং তোমরা তাদের জন্য পোশাকস্বরূপ।’
(সুরা : বাকারাহ, আয়াত : ১৮৭)
২. নারীর প্রতি শ্রদ্ধা বৃদ্ধি করে : রাসুল (সা.) বলেছেন, ‘নারীরা হলো মোতিহারের (মূল্যবান রত্ন) মতো, তাদের সুরক্ষিত রাখো।’ (জামে তিরমিজি, হাদিস : ১১৬৩)
৩. যৌন হয়রানি ও অপরাধ হ্রাস করে : পর্দাহীনতা থেকে নানা অপরাধ সৃষ্টি হয়। আল্লাহ বলেন, ‘যারা চায় যে মুমিনদের মাঝে অশ্লীলতা ছড়িয়ে পড়ুক, তাদের জন্য আছে যন্ত্রণাদায়ক শাস্তি।’
(সুরা : আন-নুর, আয়াত : ১৯)
পর্দার পরকালীন ফায়দা
১. আল্লাহর সন্তুষ্টি অর্জন : পর্দা পালন আল্লাহর নির্দেশ মানার শামিল, যা জান্নাতের পথে নিয়ে যায়।
আল্লাহ বলেন, ‘এসব আল্লাহর (স্থিরীকৃত) সীমা। যে ব্যক্তি আল্লাহ ও তাঁর রাসুলের আনুগত্য করবে, তিনি তাকে এমন উদ্যানসমূহে দাখিল করবেন, যার তলদেশে নহর প্রবাহিত হবে। তারা সর্বদা তাতে থাকবে। আর এটা মহাসাফল্য।’
(সুরা : নিসা, আয়াত : ১৩)
২. কিয়ামতের দিনে বিশেষ মর্যাদা : পর্দাশীল নারীরা জান্নাতে বিশেষ মর্যাদা পাবে। রাসুল (সা.) বলেছেন, ‘যে নারী পাঁচ ওয়াক্ত সালাত আদায় করে, রমজানের রোজা রাখে, তার লজ্জাস্থানের হেফাজত করে এবং স্বামীর আনুগত্য করে, সে জান্নাতে প্রবেশ করবে।’
(জামে তিরমিজি, হাদিস : ১০৩৭)
পরিশেষে, পর্দা ব্যক্তিগত, পারিবারিক ও সামাজিক জীবনে শৃঙ্খলা আনে এবং ইহকাল ও পরকালের জন্য তা কল্যাণকর।

তাওয়াক্কুল কী এবং কেন
মাইমুনা আক্তার

‘তাওয়াক্কুল’ মূলত আরবি শব্দ। এর অর্থ হলো নির্ভর করা, ভরসা করা, আস্থা রাখা। ‘তাওয়াক্কুল আলাল্লাহ’ অর্থ হলো আল্লাহর ওপর ভরসা করা। মুমিনজীবনে তাওয়াক্কুলের গুরুত্ব অপরিসীম।
আল্লাহ তাআলার ওপর ভরসা করার মানে এই নয় যে আসবাব ও উপকরণ গ্রহণ করা বৈধ। কেননা আল্লাহ তাআলা দুনিয়াকে দারুল আসবাব তথা উপকরণের কেন্দ্রবিন্দু বানিয়েছেন।
হাসান বসরি (রহ.) বলেন, ‘রিজিক অন্বেষণের ক্ষেত্রে কোনো উপায়-উপকরণ অবলম্বন করা তাওয়াক্কুল পরিপন্থী নয়। যেমন—কোনো যানবাহনে আরোহণ করেই গন্তব্যস্থলে কেউ নিরাপদে পৌঁছে যাবে, তার নিশ্চয়তা নেই; বরং নিরাপদে গন্তব্যে পৌঁছার জন্য আল্লাহর ওপর ভরসা করতে হবে।’
তাওয়াক্কুলের সুফল
আল্লাহর ভালোবাসা অর্জন : কেননা পবিত্র কোরআনে মহান আল্লাহ বলেছেন, ‘আল্লাহ তাওয়াক্কুলকারীদের ভালোবাসেন।’
(সুরা : আলে ইমরান, আয়াত : ১৫৯)
জান্নাতে প্রবেশের উপায় : যেসব মুমিন ধৈর্য ও তাওয়াক্কুলের সঙ্গে আল্লাহর আদেশ মেনে চলে, আল্লাহর নিষেধ করা পথ থেকে নিজেকে বিরত রাখে, তাদের জন্য মহান আল্লাহ জান্নাতে ঘর নির্মাণের ঘোষণা দিয়েছেন। পবিত্র কোরআনে ইরশাদ হয়েছে, ‘আর যারা ঈমান আনে ও সৎ কর্ম করে, তাদেরকে অবশ্যই আমি জান্নাতে কক্ষ বানিয়ে দেব, যার তলদেশ দিয়ে নদীসমূহ প্রবাহিত হবে, সেখানে তারা স্থায়ী হবে। কতই না উত্তম আমলকারীদের প্রতিদান! যারা ধৈর্য ধারণ করে এবং তাদের রবের ওপরই তাওয়াক্কুল করে।’ (সুরা : আনকাবুত, আয়াত : ৫৮-৫৯)
আত্মিক শক্তি, সাহস ও শত্রুর চক্রান্ত থেকে মুক্তি : আল্লাহর ওপর তাওয়াক্কুল মানুষকে আত্মিক ও আধ্যাত্মিক শক্তি জোগায়, যেমন শক্তি জুগিয়ে ছিল সাহাবায়ে কেরামকে। পবিত্র কোরআনে ইরশাদ হয়েছে, ‘যাদেরকে মানুষেরা বলেছিল, ‘নিশ্চয় লোকেরা তোমাদের বিরুদ্ধে সমবেত হয়েছে। সুতরাং তাদেরকে ভয় করো’, কিন্তু তা তাদের ঈমান বাড়িয়ে দিয়েছিল এবং তারা বলেছিল, ‘আল্লাহই আমাদের জন্য যথেষ্ট এবং তিনি কতই না উত্তম কর্মবিধায়ক’! অতঃপর তারা ফিরে এসেছে আল্লাহর পক্ষ থেকে নেয়ামত ও অনুগ্রহসহ। কোনো মন্দ তাদেরকে স্পর্শ করেনি এবং তারা আল্লাহর সন্তুষ্টির অনুসরণ করেছিল। আর আল্লাহ মহা অনুগ্রহশীল।
(সুরা : আলে ইমরান, আয়াত : ১৭৩-১৭৪)
সত্যের ওপর দৃঢ় থাকা : আল্লাহর ওপর তাওয়াক্কুল মানুষকে সত্যের ওপর দৃঢ় থাকতে সাহায্য করে। পবিত্র কোরআনে ইরশাদ হয়েছে, ‘তুমি আল্লাহর ওপর ভরসা করো, তুমি অবশ্যই স্পষ্ট সত্যের ওপর আছ।’
(সুরা : নামল, আয়াত : ৭৯)
ঈমানের পূর্ণতা : আল্লাহ বলেছেন, ‘আল্লাহর ওপর তাওয়াক্কুল করো, যদি ঈমানদার হও।’ (সুরা : মায়িদা, আয়াত : ২৩)
জীবনের সব ক্ষেত্রে আল্লাহর সাহায্য পাওয়া : ‘যে আল্লাহর ওপর ভরসা করে, তিনিই তার জন্য যথেষ্ট।’ (সুরা : তালাক, আয়াত : ৩)
রিজিকে বরকত : মানুষ প্রকৃত তাওয়াক্কুল অর্জন করলে পাখির মতো রিজিক পেত।
(তিরমিজি, হাদিস : ২৩৪৪)
শয়তানের প্রভাব থেকে রক্ষা : ইরশাদ হয়েছে, ‘নিশ্চয় যারা ঈমান এনেছে এবং তাদের রবের ওপর তাওয়াক্কুল করেছে, তাদের ওপর শয়তানের কোনো ক্ষমতা নেই।’
(সুরা : নাহল, আয়াত : ৯৯)
মহান আল্লাহ প্রতিটি মুমিনকে জীবনের প্রতিটি ক্ষেত্রে তাওয়াক্কুল করার তাওফিক দান করুন। আমিন।

দ্বিনি প্রতিষ্ঠানের জন্য সহযোগিতা গ্রহণের নিয়ম
আল্লামা আশরাফ আলী থানবি (রহ.)

ধর্মীয় কার্যক্রম পরিচালনার জন্য চাঁদা বা সহযোগিতা গ্রহণের রীতি যুগ যুগ ধরে চলে আসছে। মানুষের কাছে এই সহযোগিতা চাওয়ার নানা পন্থা আছে। এর মধ্যে যেগুলো শরিয়তের সঙ্গে সংগতিপূর্ণ হবে তা গ্রহণযোগ্য আর যা অসংগতিপূর্ণ তা নিঃসন্দেহে নিন্দনীয়। ইসলামের নামে যে কাজই করা হোক না কেন, শরিয়তের মাপকাঠি দিয়ে মেপে নিতে হবে।
মানুষের আর্থিক লেনদেন দুই প্রকার—কোনো কিছুর বিনিময়ে কোনো কিছু দান করা এবং বিনিময় ছাড়াই কোনো কিছু দান করা। বিনিময়ভিত্তিক লেনদেনের তুলনায় বিনিময়হীন লেনদেনের ত্রুটি বেশি। বিনিময়হীন লেনদেন আবার দুই প্রকার—হাদিয়া ও চাঁদা। বর্তমান যুগে হাদিয়া ও চাঁদা উভয় ক্ষেত্রেই শরিয়ত প্রদত্ত শর্তগুলো মানা হচ্ছে না।
অন্য হাদিসে রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, ‘তোমরা পরস্পর উপহার বিনিময় করো, হৃদ্যতা বৃদ্ধি পাবে।
চাঁদা আদায়ের ক্ষেত্রে বহু অনিয়ম হয়ে থাকে এবং প্রয়োজনীয় দ্বিনি সতর্কতা অবলম্বন করা হয় না। চাঁদা আদায়ের একটি সাধারণ নিয়ম হলো কারো কাছ থেকে অতিরিক্ত গ্রহণ না করা; বিশেষত সাধ্যের বাইরে কোনো কিছু চাপিয়ে না দেওয়া। রাসুলুল্লাহ (সা.) সাধারণত কারো কাছ থেকে তার সাধ্যের বেশি কোনো দান গ্রহণ করতেন না। দাতার মনে কষ্ট আসতে পারে, এমনভাবেও কোনো চাঁদা আদায় করা উচিত নয়। কেননা রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, ‘কোনো ব্যক্তি সন্তুষ্ট চিত্তে দান না করলে তার দান গ্রহণ করা হালাল নয়।’
আলেম-ওলামা যাঁদের সমাজে দ্বিন ও ইসলামের প্রতিনিধি মনে করা হয়, তাঁরা মানুষের কাছে এমনভাবে চাইবেন, যাতে তাঁর অসম্মান না হয়। পাশাপাশি দ্বিন, দ্বিনি প্রতিষ্ঠান ও দ্বিনদার মানুষের অসম্মান হয় এমন ব্যক্তির কাছেও দ্বিনি কর্মকাণ্ডের জন্য চাঁদা বা সহযোগিতা চাওয়া উচিত নয়। দ্বিনি প্রতিষ্ঠানের প্রয়োজন হলে সাধারণ মুসলমানকে দ্বিনি কাজে সহযোগিতা করতে উৎসাহিত করা যেতে পারে। কিন্তু সমাজের সম্মানিত আলেমরা এমন ব্যক্তির কাছে যাবেন না, যার কাছে গেলে হেয় হওয়ার ভয় থাকে; বরং এমন ব্যক্তিদের চাঁদা ফেরত দেবেন। ইনশাআল্লাহ, এতে দ্বিনি প্রতিষ্ঠান ক্ষতিগ্রস্ত হবে না; আল্লাহই দ্বিনি প্রতিষ্ঠানকে সম্মানের সঙ্গে এগিয়ে নেবেন।
যারা দ্বিনি কাজে সহযোগিতা চাইলে বিরক্তি প্রকাশ করে তাদের ব্যাপারে আল্লাহর হুঁশিয়ারি হলো, ‘তোমাদের কাছে তিনি তা চাইলে ও তজ্জন্য তোমাদের ওপর চাপ দিলে তোমরা কার্পণ্য করবে এবং তখন তিনি তোমাদের বিদ্বেষভাব প্রকাশ করে দেবেন। দেখো, তোমরাই তারা, যাদেরকে আল্লাহর পথে ব্যয় করতে বলা হচ্ছে, অথচ তোমাদের অনেকে কৃপণতা করছে। যারা কার্পণ্য করে তারা নিজের প্রতিই কার্পণ্য করে। আল্লাহ অভাবমুক্ত এবং তোমরা অভাবগ্রস্ত। যদি তোমরা বিমুখ হও, তিনি অন্য জাতিকে তোমাদের স্থলবর্তী করবেন। তারা তোমাদের মতো হবে না।’
(সুরা : মুহাম্মদ, আয়াত : ৩৭-৩৮)
আল্লাহ সবাইকে দ্বিনের সঠিক বুঝ দান করুন। আমিন।
মাওয়ায়েজে আশরাফিয়া থেকে
মো. আবদুল মজিদ মোল্লার ভাষান্তর