<p style="text-align:justify">ওয়েব সিরিজের মাধ্যমে বিশ্বব্যাপী আলাদা একটা নাম ছড়িয়েছে কোরিয়ার। বিশেষ করে তরুণদের মধ্যে ব্যাপক জনপ্রিয়তা পেয়েছে কোরিয়ার নাম। তবে অনেকেরই জানার আগ্রহ, কোরিয়ানদের ত্বক এত সুন্দর ও মসৃণ হয় কিভাবে?</p> <p style="text-align:justify">কোরিয়ার মেয়েরা একটা সময় ময়েশ্চারাইজার ক্রিম থেকে শুরু করে স্ক্রাব, সব ধরনের স্কিনকেয়ার পণ্য নিজেরাই বাড়িতে তৈরি করতেন। সবুজ মুগ ডাল বেটে পানির সঙ্গে মিশিয়ে ক্লিনজারে রূপ দিতেন তারা। আর একই উদ্ভিদের রস থেকে বানিয়ে নিতেন ক্রিম। ভিটামিন-ই যে ত্বকের আর্দ্রতা ধরে রাখে, সে কথা অজানা ছিল না তাদের। তাই তো ভিটামিনে ভরপুর কুসুম ফুলের তেল মাখতেন তারা। </p> <p style="text-align:justify">কোরিয়ান নারীদের কাছে ভ্রুর আবেদন ছিল অনেক। আইব্রো ইঙ্ক বা কাজল দিয়ে চেহারার সাথে মানানসই আকৃতিতে ভ্রু এঁকে নিতেন তারা। জিনসেংয়ের সাহায্যে পাতলা ভ্রু আঁকাও তখন স্বাভাবিক ছিল। শেষে সামান্য পাউডার মেখে মুখটাকে ফ্যাকাশে আর সাদাটে করার চল ছিল তাদের মধ্যে।</p> <p style="text-align:justify">ঐতিহ্যগতভাবেই কোরিয়ান প্রসাধনী মেশিনে তেরি না করে হাতেই তৈরি করা হতো। সে সময় আধুনিক কোনো সংরক্ষণ ব্যবস্থা ছিল না। তাই তারা অল্প পরিমাণে এসব বিউটি পণ্য তৈরি করে ছোট ছোট ভাগে সংরক্ষণ করতেন। আর প্রসাধনী ও ক্রিম রাখার পাত্রগুলো ছিল সিরামিকের।</p> <p style="text-align:justify">আয়নাযুক্ত একটি কাঠের বাক্সে তারা সব মেকআপ সামগ্রী রাখতেন। সেখানে পাউডার ব্লেন্ডের জন্য ব্রাশ, আইব্রো ইঙ্ক, গাল রাঙানোর রুজ ইত্যাদি একসঙ্গে সাজানো থাকত। এতেই বোঝা যায় তারা সাজের ব্যপারে কতটা শৌখিন।</p> <p style="text-align:justify">আর এখন তো আই ক্রিম, মাস্ক, বলিরেখা নিরোধী ওষুধ, লোশন, ময়েশ্চারাইজার, সেরামের মতো শত শত পণ্যে সয়লাব কোরিয়ার প্রসাধনীর বাজার। বর্তমানে নেচার রিপাবলিক, স্কিন ফুড, ল্যানেইজ, মিশশা, ইনস্ফ্রি, টনি মলি, ফেস শপের মতো ব্র্যান্ড আমাদের দেশেও সমান জনপ্রিয়।</p> <p style="text-align:justify">কোরিয়ান ত্বক পরিচর্যাকারী পণ্যের অন্যতম বড় দিক হলো, এখানে প্রতিটি উপাদানের সর্বোত্তম ব্যবহার নিশ্চিত করা হয়। বেশির ভাগ কোরিয় ব্র্যান্ড এমন উপাদান বেছে নেওয়ার পক্ষে, যেন তা সব ধরনের ত্বকের উপযোগী হয়। তারাই প্রথম ‘নো কসমেটিক’ মেকআপের প্রচলন করেছেন। এসব কসমেটিক মুখে লাগালেও মেকআপের কোনো অস্তিত্ব বোঝা যাবে না। আর সে ক্ষেত্রে ত্বক সুন্দর ও সুস্থ হওয়া তো বাঞ্ছনীয়। ডিউয়ি লুক, বেবি ফেসের মতো ধারাগুলোও কোরীয় প্রসাধন কম্পানির মাধ্যমে প্রচলিত হয়েছে।</p> <p style="text-align:justify">তাদের প্রতিটি প্রসাধন একটি অন্যটি থেকে আলাদা। এক কথায় বলতে গেলে, কোরিয়ান প্রসাধনী ত্বকের সহজাত বৈশিষ্ট্য ফুটিয়ে ত্বককে করে তোলে প্রাণবন্ত, উজ্জ্বল ও ডিউয়ি বা গ্লোয়ি।</p> <p style="text-align:justify">আজ জানতে পারবেন ৬টি ত্বক পরিচর্যাকারী উপাদান, যা কোরিয়ানরা বহুলভাবে ব্যবহার করে থাকেন।</p> <p style="text-align:justify"><strong>গ্রিন টি</strong></p> <p style="text-align:justify">শুধু স্বাদেই দারুণ নয়, ত্বক পরিচর্যায়ও জাদুকরী ভূমিকা রাখে এই গ্রিন টি। আপনার ত্বক শুষ্ক থাকলে বেছে নিতে পারেন গ্রিন টিয়ের নির্যাস সমৃদ্ধ পণ্য। এটি মূলত আপনার ত্বকে আর্দ্রতা ধরে রাখে। এ ছাড়া  ক্যান্সার প্রতিরোধী এজেন্ট থাকায় গ্রিন টি ত্বকে ভিটামিনেরও জোগান দেয়। এতে থাকা অ্যান্টি-অক্সিডেন্ট ত্বকের প্রদাহজনিত সমস্যাও দূর করে।</p> <p style="text-align:justify"><strong>শামুকের শ্লেষ্মা</strong></p> <p style="text-align:justify">কোরিয়ান ত্বক পরিচর্যাকারী পণ্যে ব্যবহৃত উপাদানের অন্যতম শামুকের শ্লেষ্মা বা মিউসিন। বর্তমানে দক্ষিণ কোরিয়ার পাশাপাশি অন্যান্য দেশেও জনপ্রিয় হয়ে উঠেছে এই উপাদানসমৃদ্ধ প্রসাধনী। দাগ হালকা করা, ক্ষত সারানো ও বলিরেখা কমানো ইত্যাদিতে অবদান রাখে এই শ্লেষ্মা। ত্বক বিশেষজ্ঞদের মতে, শামুকের মিউসিন প্রোটিন, গ্লাইকোলিক এসিড ও ইলাস্টিনের একটি সংমিশ্রণ। এই শ্লেষ্মার জন্যই শামুক তীক্ষ্ম পাথর ও ডালপালার মধ্যে অনায়াসে চলাচল করতে পারে।</p> <p style="text-align:justify"><strong>ফারমেন্টেড সয়াবিন</strong></p> <p style="text-align:justify">সময়ের আগে ত্বকের বুড়িয়ে যাওয়া প্রতিরোধ করতে সক্ষম ফারমেন্টেড বা গাঁজানো সয়া বীজ। এটি কোলাজেন অ্যাক্টিভেটর হিসেবে ত্বকের নমনীয়তা ধরে রাখে। ফারমেন্টেড সয়াবিনে থাকা কোলাজেন বলিরেখা কমাতে ভূমিকা রাখে।</p> <p style="text-align:justify"><strong>অ্যাভোকাডো</strong></p> <p style="text-align:justify">অ্যাভোকাডোতে প্রচুর পরিমাণে প্রাকৃতিক ফ্যাট ও তেল রয়েছে। এটি ত্বকে আর্দ্রতা ধরে রেখে মসৃণ করতে সাহায্য করে। অনেক সময় ত্বক শুষ্ক হয়ে চামড়া উঠতে শুরু করে। সেক্ষেত্রে অ্যাভোকাডো বেশ কার্যকরী ভূমিকা পালন করে। তাই অ্যাভোকাডো অয়েল সমৃদ্ধ পণ্য ব্যবহারে উপকার পাওয়া সম্ভব। শুধু মুখের ত্বকেই নয়, ভঙ্গুর নখ সারাতে ও চুলের আগা ফাটা রোধেও এই তেল বেশ কার্যকর। </p> <p style="text-align:justify"><strong>জিনসেং</strong></p> <p style="text-align:justify">কোরিয়ায় যত ধরনের ভেষজ মূল মেলে, তার মধ্যে জিনসেংয়ের অবস্থান একেবারে শীর্ষে। এই উপাদানটি রান্না ও ত্বকচর্চা দুই ক্ষেত্রেই বহুল ব্যবহৃত। জিনসেংয়ে এমন উপাদান রয়েছে, যা ত্বকের তারুণ্য ধরে রাখে। অ্যাটি-এজিং উপাদানের পাশাপাশি এই ভেষজটি মুখের দাগ দূর করতে সাহায্য করে। সেই সঙ্গে ত্বককে ফর্সা করে। প্রয়োজনীয় ভিটামিন ও ক্যান্সার প্রতিরোধী এজেন্ট সরবরাহ করে এই জিনসেং।</p> <p style="text-align:justify"><strong>টমেটো</strong></p> <p style="text-align:justify">ভিটামিনে ভরপুর টমেটো ত্বকে আর্দ্রতা বজায় রাখতে সহায়ক। টমেটোকে উচ্চমাত্রার অ্যাস্ট্রিনজেন্টে রূপান্তরিত করা যেতে পারে। অ্যাস্ট্রিনজেন্ট হলো এমন উপাদান, যা ত্বক পরিষ্কার করতে ও অতিরিক্ত তেল শোষণে সাহায্য করতে পারে। তবে টমেটোর মূল অবদান ত্বকের উজ্জ্বলতা বৃদ্ধিতে। টমেটোর কনসেনট্রেশন বা ঘনত্ব এমন যে, আমাদের ত্বক তা দ্রুত শুষে নেয়। ত্বক পরিচর্যাকারী উপাদান হিসেবে টমেটো ব্যবহারে তাই দাগ দ্রুত দূর হয়।</p> <p style="text-align:justify">সূত্র : কিউ-ডিপো ডটকম</p>