<p style="text-align:justify">দেশে আশঙ্কাজনক হারে বাড়ছে মাদকসেবীর সংখ্যা। বেসরকারি সংস্থা মাদকদ্রব্য ও নেশা নিরোধের (মানস) হিসাব মতে, দেশে বর্তমানে মাদকসেবীর সংখ্যা প্রায় দেড় কোটি। এর মধ্যে এক কোটি মাদকাসক্ত এবং বাকি ৫০ লাখ মাঝেমধ্যে মাদক সেবন করে। সেই হিসাবে দেশের প্রায় ১৭ কোটি ১৫ লাখ জনসংখ্যার মধ্যে গড়ে প্রতি ১২ জনে (১১.৬৭) একজন মাদকসেবী। শতাংশের হিসাবে মোট জনংসংখ্যার ৮.৭৫ শতাংশ মাদকসেবী। সম্প্রতি সংস্থাটির পক্ষ থেকে এ তথ্য জানানো হয়।</p> <p style="text-align:justify">মাদক বিশেষজ্ঞরা বলছেন, মাদক উৎপাদনকারী দেশ না হয়েও মাদক পাচারের ট্রানজিট হিসেবে ব্যবহার করায় বাংলাদেশ মাদকের বড় ঝুঁকির মধ্যে রয়েছে। এ ছাড়া সহজে পাওয়া যাচ্ছে যেকোনো মাদক। ফলে দিন দিন বাড়ছে মাদকসেবীর সংখ্যা।</p> <p style="text-align:justify">মানসের চেয়ারম্যান ও জাতীয় মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ বোর্ডের উপদেষ্টা সদস্য অধ্যাপক ডা. অরূপ রতন চৌধুরী কালের কণ্ঠকে বলেন, ‘দেশে মোট মাদকসেবী প্রায় দেড় কোটি। এর মধ্যে এক কোটি মাদকাসক্ত। মোট মাদকসেবীর ৮৪ শতাংশ পুরুষ, আর ১৬ শতাংশ নারী।</p> <p style="text-align:justify">দিন দিন নারীদের মধ্যে এ প্রবণতা বাড়ছে। এ ছাড়া নতুন নতুন মাদকেও আসক্তি বাড়ছে। বর্তমানে আর আগের মতো সরাসরি মাদক ক্রয় করতে হয় না। অনলাইনের বিভিন্ন অ্যাপস ও ডেলিভারিতে মাদক সংগ্রহ করা যাচ্ছে। করোনাকাল থেকে মাদকের হোম ডেলিভারিও ক্রমে বাড়ছে।’</p> <p style="text-align:justify">তিনি বলেন, ‘মাদক হলো সব অপরাধের জনক। খুন, ধর্ষণ, পারিবারিক কলহ থেকে শুরু করে  ছিনতাইয়ের মতো ঘটনার বেশির ভাগ ঘটছে মাদকের কারণে।’</p> <p style="text-align:justify">দেড় কোটি মাদকসেবীর বিষয়ে সংস্থাটির পক্ষ থেকে জানানো হয়, বিভিন্ন গণমাধ্যমের রিপোর্ট, এবং সংস্থাটির পর্যবেক্ষণে এই সংখ্যা নির্ধারণ করা হয়েছে।</p> <p style="text-align:justify">এদিকে ইউএনওডিসি ওয়ার্ল্ড রিপোর্ট ২০২৩ অনুযায়ী, ২০২১ সালে বিশ্বে ১৫ থেকে ৬৪ বছর বয়সী মাদকসেবীর সংখ্যা ছিল ২৯৬ মিলিয়নেরও বেশি। আগের দশকের তুলনায় যা ২৩ শতাংশ বেড়েছে। উন্নত, অনুন্নত সব দেশের জন্য মাদক অন্যতম সমস্যা।</p> <p style="text-align:justify">আইন-শৃঙ্খলা রক্ষা বাহিনী মনে করছে, সাম্প্রতিক সময়ে নতুন পথে নতুন মাদকের অনুপ্রবেশ আরো বেশি আসক্ত করে তুলছে তরুণ ও যুবকদের। পাশাপাশি পূর্ণবয়স্ক এবং শিশু-কিশোরদের মধ্যেও মাদকাসক্তি আশঙ্কাজনক হারে বাড়ছে।</p> <p style="text-align:justify">বাংলাদেশে বহুল ব্যবহৃত মাদকের  মধ্যে রয়েছে গাঁজা, ইয়াবা, হেরোইন, ক্রিস্টাল মেথ বা আইস (মিথাইল অ্যাম্ফেটামিন), ডান্ডি, অ্যালকোহল। এ ছাড়া কুশ, ডিওবি (ডাইমেথক্সিব্রোমো অ্যাম্ফেটামিন), খাট (ক্যাথিনোন ও ক্যাথিন), ম্যাজিক মাশরুম, বুপ্রেনরফিন, কোডিন ট্যাবলেট, কোকেইন ও ক্র্যাটম প্লান্টের মতো মাদক দেশে প্রবেশ করছে।</p> <p style="text-align:justify">ডা. অরূপ রতন চৌধুরীর মতে, করোনার সময় যখন সব কিছু বন্ধ ছিল, তখন সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে মাদকের কেনাবেচা বেড়ে যায়। গড়ে প্রতিজন মাদকসেবী বছরে ৫৬ হাজার টাকা মাদকের পেছনে খরচ করে। সব মিলিয়ে বছরে এক লাখ ২০ হাজার কোটি টাকা খরচ হয় মাদক সেবনে।</p> <p style="text-align:justify">মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরের বার্ষিক প্রতিবেদনে দেখা গেছে, ২০২২ থেকে ২০২৩-এর জুলাই পর্যন্ত মাদকাসক্ত হয়ে মাদকাসক্তি নিরাময় কেন্দ্রে (রিহ্যাব) চিকিৎসা নিতে গেছে অন্তত ৫০ হাজার মাদকসেবী। আর গত পাঁচ বছরে রিহ্যাবে চিকিৎসা নিতে যাওয়া মাদকাসক্ত নারীর সংখ্যা বেড়েছে পাঁচ গুণ। ১৫ ও তার কম বয়সী মাদকাসক্তের সংখ্যা বেড়েছে তিন গুণ।</p> <p style="text-align:justify">মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরের মহাপরিচালক খোন্দকার মোস্তাফিজুর রহমান বলেন, ‘মিয়ানমার ও ভারত থেকে দেশে মাদক আসছে। চাহিদা থাকায় এই মাদক ঠেকানো কঠিন হয়ে পড়ছে। আমরা চেষ্টা করছি মাদক নিয়ন্ত্রণ করতে।’</p> <p style="text-align:justify">র‌্যাবের আইন ও গণমাধ্যম শাখার সহকারী পরিচালক আ ন ম ইমরান খান বলেন, ‘শুরু থেকেই মাদকের বিরুদ্ধে আমাদের নিয়মিত অভিযান চলছে। তবে শুধু আইন-শৃঙ্খলা রক্ষা বাহিনীর একার পক্ষে মাদক নিয়ন্ত্রণ করা সম্ভব নয়। পরিবার, সমাজ, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান, সবাই মিলে যে যার জায়গা থেকে এর জন্য কাজ করতে হবে।’</p>