<p style="text-align:justify">সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার স্পিচ রাইটার ছিলেন নজরুল ইসলাম। প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে তাঁর ছিল দোর্দণ্ড প্রতাপ। সেই প্রতাপ খাটিয়ে তিনি বিভিন্ন ক্ষেত্রে ক্ষমতার অপব্যবহার করেছেন। এমনকি তাঁর ক্ষমতার দাপট শেষ পর্যন্ত গিয়ে ঠেকেছে সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে।</p> <div class="d-flex justify-content-center"> <div class="col-12 col-md-10 position-relative"><strong>আরো পড়ুন</strong> <div class="card"> <div class="row"> <div class="col-4 col-md-3"><img alt="আবরার হত্যার ৫ বছর আজ : ছেলের স্মৃতি আঁকড়ে সময় কাটে মায়ের" height="66" src="https://cdn.kalerkantho.com/public/news_images/2024/10/07/1728268562-491d397e856d105fea49f9c5a96645a2.jpg" width="100" /></div> <div class="col-8 col-md-9"> <p>আবরার হত্যার ৫ বছর আজ : ছেলের স্মৃতি আঁকড়ে সময় কাটে মায়ের</p> </div> </div> </div> <a class="stretched-link" href="https://www.kalerkantho.com/online/national/2024/10/07/1432658" target="_blank"> </a></div> </div> <p style="text-align:justify">নিজের সম্পাদিত বই ৬৫ হাজার সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়কে কিনতে বাধ্য করেন তিনি। প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তর ও জেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তাদের চাপে কোনো উপায় না পেয়ে স্কুলগুলো ‘স্লিপ’ ফান্ডের টাকায় ২০ কোটি টাকা ব্যয়ে এসব বই কেনে।</p> <p style="text-align:justify">সূত্র জানায়, ২০২২ সালের ১১ অক্টোবর প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের প্যাডে ৭৯.৩৯.১৬.২২.০০.০৪.২০২২-১৯৮ নম্বর স্মারকে প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তরের মহাপরিচালকের কাছে প্রধানমন্ত্রীর স্পিচ রাইটার (সচিব পদমর্যাদার) মো. নজরুল ইসলাম স্বাক্ষরিত একটি চিঠি দেওয়া হয়। ওই চিঠিতে বলা হয়, ‘প্রিয় মহাপরিচালক, সালাম ও শুভেচ্ছা নিবেন।</p> <div class="d-flex justify-content-center"> <div class="col-12 col-md-10 position-relative"><strong>আরো পড়ুন</strong> <div class="card"> <div class="row"> <div class="col-4 col-md-3"><img alt="সামিট গ্রুপের চেয়ারম্যান আজিজ খানের সব ব্যাংক হিসাব স্থগিতের নির্দেশ" height="66" src="https://cdn.kalerkantho.com/public/news_images/2024/10/07/1728268501-b241da9913cc47a13520f344e699f661.jpg" width="100" /></div> <div class="col-8 col-md-9"> <p>সামিট গ্রুপের চেয়ারম্যান আজিজ খানের সব ব্যাংক হিসাব স্থগিতের নির্দেশ</p> </div> </div> </div> <a class="stretched-link" href="https://www.kalerkantho.com/online/business/2024/10/07/1432657" target="_blank"> </a></div> </div> <p style="text-align:justify">আমি নিম্নস্বাক্ষরকারী, মো. নজরুল ইসলাম, প্রধানমন্ত্রীর স্পিচ রাইটার (সচিব পদমর্যাদা)। আপনার অবগতির জন্য জানাচ্ছি যে, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা প্রণীত প্রবন্ধের সংকলন ‘মুজিব বাংলার বাংলা মুজিবের’ সম্প্রতি প্রকাশিত হয়েছে। গ্রন্থটিতে ১১টি প্রবন্ধ স্থান পেয়েছে। এছাড়া আমার সম্পাদিত শেখ মুজিবুর রহমানের বক্তৃতার উদ্ধৃতি ‘বজ্রনিনাদ’ নামে একটি সংকলন প্রকাশিত হয়েছে। এতে বঙ্গবন্ধুর ভাষণের ৬০০-এর বেশি উদ্ধৃতি স্থান পেয়েছে। প্রধানমন্ত্রীর ভূমিকা সম্বলিত গ্রন্থটি বঙ্গবন্ধুকে জানার জন্য একটি মূল্যবান দলিল বলে আমি মনে করি।’</p> <p style="text-align:justify">চিঠিতে আরো বলা হয়, ‘জিনিয়াস পাবলিকেশন্স, ৩৮ বাংলাবাজার, ঢাকা-১১০০ গ্রন্থ দুটি প্রকাশ করেছে। গ্রন্থ দুটি আপনার অধিদপ্তরের অধীনে সকল বিভাগ, জেলা, উপজেলা ও শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলো যাতে সংগ্রহ করে সে ব্যপারে ব্যবস্থা নেওয়ার অনুরোধ জানাচ্ছি।’</p> <p style="text-align:justify">সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, অধিদপ্তর এই চিঠি পাওয়ার পর প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ে যোগাযোগ করে।</p> <p style="text-align:justify">মন্ত্রণালয় থেকে গ্রিন সিগন্যাল পাওয়ার পর ২০২৩ সালের ১৪ জানুয়ারি প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তরের সহকারী পরিচালক (সাধারণ প্রশাসন) মোহাম্মদ নজরুল ইসলাম স্বাক্ষরিত একটি চিঠি ইস্যু করা হয়। সেখানে বলা হয়, প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় থেকে প্রেরিত ১১ অক্টোবর ২০২২ তারিখের পত্রের বিষয়ে অবগতি ও প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য নির্দেশক্রমে অনুরোধ করা গেল।</p> <div class="d-flex justify-content-center"> <div class="col-12 col-md-10 position-relative"><strong>আরো পড়ুন</strong> <div class="card"> <div class="row"> <div class="col-4 col-md-3"><img alt="সাধারণের নাগালের বাইরে বিদেশি ফল" height="66" src="https://cdn.kalerkantho.com/public/news_images/2024/10/07/1728267649-09afcb144903273e06efdc4806e843a3.jpg" width="100" /></div> <div class="col-8 col-md-9"> <p>সাধারণের নাগালের বাইরে বিদেশি ফল</p> </div> </div> </div> <a class="stretched-link" href="https://www.kalerkantho.com/online/business/2024/10/07/1432656" target="_blank"> </a></div> </div> <p style="text-align:justify">এই চিঠির অনুলিপি দেওয়া হয় অধিদপ্তরের পরিচালক, প্রকল্প পরিচালকদের। এ ছাড়া ঢাকা, চট্টগ্রাম, রাজশাহী, খুলনা, বরিশাল, সিলেট, রংপুর, ময়মনসিংহ বিভাগের উপপরিচালক; সব জেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা, সব পিটিআই সুপার, সব থানা/উপজেলা শিক্ষা কর্মকর্তা, ইনস্ট্রাক্টর, ইউআরসি ও টিআরসিতেও এই চিঠি দেওয়া হয়। প্রতিটি বিদ্যালয়ে অবহিতকরণের অনুরোধসহ তাদের চিঠি দেওয়া হয়।</p> <p style="text-align:justify">জানা যায়, অধিদপ্তর যখন এই চিঠি ইস্যু করে তখন প্রাথমিক ও গণশিক্ষা সচিব ছিলেন ফরিদ আহাম্মদ, যিনি এখনো একই মন্ত্রণালয়ের সচিবের দায়িত্বে রয়েছেন। আর তখন অধিদপ্তরের মহাপরিচালক ছিলেন শাহ রেজোয়ান হায়াত, যিনি এরই মধ্যে অবসরে গেছেন।</p> <p style="text-align:justify">সূত্র জানায়, প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়কে খুশি করতে নিয়মবহির্ভূতভাবে সব প্রাথমিক বিদ্যালয়ে এই বই কেনার ক্ষেত্রে মূল ভূমিকা পালন করেন সচিব ও ডিজি। আর মাঠপর্যায়ে এই বই কেনা নিশ্চিতের কাজ বাস্তবায়নের দায়িত্ব পালন করেন শিক্ষা কর্মকর্তা মো. শরীফ উল ইসলাম, যিনি বর্তমান ডিজির পিএস হিসেবে রয়েছেন।</p> <p style="text-align:justify">আরো দায়িত্বে ছিলেন উপপরিচালক (ট্রেনিং) আবদুল আলীম, শিক্ষা কর্মকর্তা আজহারুল ইসলাম, ডিজির সাবেক পিএস মো. হাবিবুর রহমান, ঢাকা জেলা শিক্ষা কর্মকর্তা আবদুল আজিজ, নেত্রকোনোর শিক্ষা কর্মকর্তা মোফাজ্জল হোসেন ও সাবেক উপপরিচালক সুলতান মিয়া।</p> <p style="text-align:justify">জানতে চাইলে প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ের সচিব ফরিদ আহাম্মদ কালের কণ্ঠকে বলেন, ‘মন্ত্রণালয় বা অধিদপ্তর থেকে প্রাথমিক বিদ্যালয়গুলোকে কোনো ধরনের বই কিনতে বলা বা এ ব্যাপারে চিঠি দেওয়ার সুযোগ নেই। আর ‘স্লিপ’ ফান্ড থেকে বই কেনারও সুযোগ নেই। এখন এ ব্যাপারে যদি অধিদপ্তর কোনো চিঠি দিয়ে থাকে তাহলে তাদের জিজ্ঞাসা করুন। আমার এ ব্যাপারে জানা নেই।’</p> <p style="text-align:justify">প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তরের সাবেক মহাপরিচালক শাহ রেজোয়ান হায়াত কালের কণ্ঠকে বলেন, ‘আমি চার-পাঁচ মাস আগে অবসরে গিয়েছি। গত বছরের জানুয়ারিতে কী চিঠি দেওয়া হয়েছিল তা আমার মনে নেই।’</p> <p style="text-align:justify">প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তরের বর্তমান মহাপরিচালক ড. মো. আব্দুল হাকিম কালের কণ্ঠকে বলেন, ‘ব্যাপারটি আমার জানা নেই। তাই এই মুহূর্তে আমি কোনো মন্তব্য করতে পারছি না।’</p> <p style="text-align:justify">একাধিক প্রধান শিক্ষক বলেছেন, জেলা শিক্ষা কর্মকর্তারা বইগুলো কেনার জন্য উপজেলা শিক্ষা কর্মকর্তার মাধ্যমে এবং সরাসরি প্রধান শিক্ষকদের ‘স্লিপ’ (স্কুল লেভেল ইমপ্রুভমেন্ট প্ল্যান—স্থানীয় পর্যায়ে উন্নয়ন পরিকল্পনা) ফান্ডের টাকা থেকে কিনতে বলেন। একই সঙ্গে প্রকাশকের নাম ও নম্বর দিয়ে দেন। তবে প্রকাশকের সঙ্গে যোগাযোগ করলে ওই দুটি বইয়ের বাইরে আরো একটি বই ধরিয়ে দেন।</p> <p style="text-align:justify">দুটি বইয়ের দুই সেট এবং একটি বইয়ের এক সেট মিলে মোট পাঁচটি সেট প্রতিটি স্কুলকে তিন হাজার ৪০০ টাকায় কিনতে হয়। সেটের বাইরে বই কেনার সুযোগ নেই বলে জানান প্রকাশক।</p> <div class="d-flex justify-content-center"> <div class="col-12 col-md-10 position-relative"><strong>আরো পড়ুন</strong> <div class="card"> <div class="row"> <div class="col-4 col-md-3"><img alt="আবরার হত্যার ৫ বছর আজ : ছেলের স্মৃতি আঁকড়ে সময় কাটে মায়ের" height="66" src="https://cdn.kalerkantho.com/public/news_images/2024/10/07/1728268562-491d397e856d105fea49f9c5a96645a2.jpg" width="100" /></div> <div class="col-8 col-md-9"> <p>আবরার হত্যার ৫ বছর আজ : ছেলের স্মৃতি আঁকড়ে সময় কাটে মায়ের</p> </div> </div> </div> <a class="stretched-link" href="https://www.kalerkantho.com/online/national/2024/10/07/1432658" target="_blank"> </a></div> </div> <p style="text-align:justify">জানা যায়, চিঠিতে থাকা দুটি বইয়ের বাইরে আরেকটি বইটির নাম ‘ভায়েরা আমার, ভাষণসমগ্র : শেখ মুজিবুর রহমান’ এই বইয়েরও সংকলন ও সম্পাদনা করেছেন নজরুল ইসলাম। তিনটি বই-ই প্রকাশ করা হয়েছে জিনিয়াস পাবলিকেশন্স থেকে। প্রকাশক হাবিবুর রহমান। এর মধ্যে পরে যুক্ত করা ‘ভায়েরা আমার’ বইটির দাম দুই হাজার টাকা। ‘বজ্রনিনাদ’ ৫০০ টাকা এবং ‘মুজিব বাংলার বাংলা মুজিবের’ বইয়ের দাম ৩০০ টাকা।</p> <p style="text-align:justify">এই হিসাবে দেখা যায়, ‘বজ্রনিনাদ’ দুটি বইয়ের দাম এক হাজার টাকা, ‘মুজিব বাংলার বাংলা মুজিবের’ দুটি বইয়ের দাম ৬০০ টাকা এবং ‘ভায়েরা আমার’ বইটির দাম এক হাজার টাকা। সব মিলিয়ে দাম হয় তিন হাজার ৬০০ টাকা। তবে মাত্র ২০০ টাকা ডিসকাউন্ট দিয়ে এক সেটের দাম রাখা হয় তিন হাজার ৪০০ টাকা। ৬৫ হাজার ১৯৩টি স্কুলে এ বই বিক্রি করলে মোট ২২ কোটি ১৬ লাখ ৫৬ হাজার ২০০ টাকা দাঁড়ায়। তবে খুব সামান্য কয়েকটি স্কুল এ বই কেনেনি। তার পরও অন্তত ২০ কোটি টাকার বই বিক্রি হয়েছে।</p> <p style="text-align:justify">নেত্রকোনার জেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা ও জেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা সমিতির সভাপতি মো. মোফাজ্জল হোসেন কালের কণ্ঠকে বলেন, ‘বই কেনার ব্যাপারে আমাদের কাছে অধিদপ্তর থেকে চিঠি এসেছিল। অধিদপ্তরের চিঠি মানে নির্দেশ। এটা পালনে বাধ্যবাধকতা থাকে। তাই স্বাভাবিকভাবেই আমরা তা বাস্তবায়ন করেছি। যদি কোনো ভুল করে থাকে সেটা অধিদপ্তর করেছে। এর দায় কোনোভাবেই আমাদের নয়।’</p> <p style="text-align:justify">জিনিয়াস পাবলিকেশন্সের স্বত্বাধিকারী মো. হাবিবুর রহমান কালের কণ্ঠকে বলেন, ‘প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় থেকে বই তিনটি কেনার ব্যাপারে একটি চিঠি দিয়ে অনুরোধ করা হয়েছিল। এটা কোনো নির্দেশ নয়, অনুরোধ। এর পরিপ্রেক্ষিতে অধিদপ্তর স্কুলগুলোকে বলেছে। যার দরকার সে কিনেছে, যার দরকার নেই সে কেনেনি। শুধু আমরাই নয়, গত সরকারের আমলে এভাবে বঙ্গবন্ধুর বই অনেক দপ্তরেই বিক্রি হয়েছে। প্রকাশক হিসেবে এখানে আমার কোনো ভূমিকা নেই।’</p> <p style="text-align:justify">সার্বিক বিষয়ে কথা বলতে গতকাল রবিবার রাতে সাবেক প্রধানমন্ত্রীর স্পিচ রাইটার মো. নজরুল ইসলামকে একাধিকবার ফোন করলেও তাঁর মোবাইল ফোন বন্ধ পাওয়া যায়।</p>