বাংলাদেশে বিদেশি বিনিয়োগ আকৃষ্টের মাধ্যমে নতুন যুগের সূচনা করার প্রচেষ্টা চালাচ্ছে অন্তর্বর্তী সরকার। সরকারের এ প্রচেষ্টায় সাড়া দিয়ে বাংলাদেশে বড় আকারে বিনিয়োগে আগ্রহ দেখিয়েছেন দক্ষিণ কোরিয়ার বিনিয়োগকারীরা।
আজ মঙ্গলবার (৮ এপ্রিল) প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূসের সঙ্গে এক বৈঠকে এই বিনিয়োগ পরিকল্পনার ঘোষণা দেয় ইয়াংওয়ান করপোরেশনের চেয়ারম্যান কিহাক সং-এর নেতৃত্বাধীন কোরিয়ান বিনিয়োগকারীদের প্রতিনিধিদল।
বৈঠকে প্রধান উপদেষ্টা জানান, তিনি কোরিয়ান ও চীনা বিনিয়োগকারীদের জন্য যেকোনো বিনিয়োগ-সম্পর্কিত উদ্বেগ দূর করতে এবং বাংলাদেশে তাদের বিনিয়োগ দ্রুততর করার জন্য একটি প্রাতঃরাশ বৈঠকের আয়োজন করবেন।
প্রতিনিধিদলে এলজিসহ কোরিয়ার শীর্ষস্থানীয় টেক্সটাইল, ফ্যাশন, স্পিনিং, লজিস্টিকস, স্বাস্থ্যসেবা, বিদ্যুৎ ও নবায়নযোগ্য জ্বালানি খাতের উদ্যোক্তারা অংশ নেন।
সোমবার প্রতিনিধি দলটি চট্টগ্রামে অবস্থিত কোরিয়ান রপ্তানি প্রক্রিয়াকরণ অঞ্চল (কেইপিজেড) পরিদর্শন করে। ইয়াংওয়ান করপোরেশন পরিচালিত এই শিল্প পার্কে তাৎক্ষণিক বিনিয়োগের প্রতিশ্রুতি দেন কয়েকজন বিনিয়োগকারী।
প্রধান উপদেষ্টা বলেন, ‘আমরা এখন একটি নতুন বাংলাদেশ গড়ে তুলছি, যেখানে বিদেশি বিনিয়োগ সহজ এবং ঝামেলামুক্ত।
গত ১৬ বছরে যেসব কঠিন সময় গেছে, আমরা সেই ক্ষতিপূরণ এখন দিতে চাই। আমাদের দায়িত্ব হলো আপনাদের জন্য পথকে মসৃণ করে তোলা।’
শ্রম, শিল্প, জ্বালানি ও বিনিয়োগ নীতিতে বড় ধরনের সংস্কারের মাধ্যমে ব্যবসাবান্ধব পরিবেশ তৈরিতে সরকার কাজ করে যাচ্ছে বলেও জানান তিনি।
কিহাক সং ১৯৯০-এর দশকের মাঝামাঝি সময়ে বাংলাদেশে আসেন।
প্রধান উপদেষ্টার ব্যবসাবান্ধব দৃষ্টিভঙ্গি ও নীতিকে সাধুবাদ জানান। তিনি বলেন, ‘এই পদক্ষেপগুলো দেশের ব্যবসার সামগ্রিক পরিবেশে ইতিবাচক পরিবর্তন এনেছে।’
ড. ইউনূস বিনিয়োগকারীদের উদ্দেশে বলেন, ‘বাংলাদেশকে আপনার ব্যবসার গন্তব্য এবং অনুপ্রেরণার উৎস হিসেবে ভাবুন। আপনারা কোটি কোটি মানুষের জীবনে পরিবর্তন আনতে পারেন।’
কিহাক সং জানান, আগামী কয়েক মাসের মধ্যে ইয়াংওয়ান করপোরেশন চট্টগ্রামে একটি টেক্সটাইল ও ফ্যাশন কলেজ স্থাপন করবে, যা দেশের টেক্সটাইল খাতে দক্ষ জনবল তৈরিতে সহায়ক হবে।
আরো পড়ুন
বিনিয়োগের এত অনুকূল পরিবেশ কখনো ছিল না : ড. ইউনূস
তিনি যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পকে উদ্দেশ করে প্রধান উপদেষ্টার লেখা চিঠিরও প্রশংসা করেন। তিনি বলেন, ‘চিঠিটি অত্যন্ত সুনিপুণভাবে লেখা হয়েছে।’ (মার্কিন শুল্কারোপের কারণে) তিনি পোশাক শিল্পের উদ্যোক্তাদের বিচলিত না হওয়ার পরামর্শ দেন।
কোরিয়ান ফ্যাশন ও খুচরা বিক্রেতা প্রতিষ্ঠানগুলো বাংলাদেশ থেকে পোশাক কিনতে আগ্রহ প্রকাশ করেছে। তাদের প্রতিনিধিরা বলেন, বাংলাদেশের সরবরাহ শৃঙ্খল অত্যন্ত দক্ষ এবং সমন্বিত।
বাংলাদেশের ওষুধ শিল্পও দ্রুত বিকাশমান। বৈশ্বিক বাণিজ্য প্রেক্ষাপটে দেশের সম্ভাবনা উজ্জ্বল। একজন বিনিয়োগকারী এখানে একটি এপিআই (অ্যাকটিভ ফার্মাসিউটিক্যাল ইনগ্রেডিয়েন্ট) প্ল্যান্ট স্থাপনের আগ্রহ প্রকাশ করেন। এ ছাড়া প্রতিনিধিদলে থাকা একজন শীর্ষ কোরিয়ান সার্জনকে চট্টগ্রামে একটি হাসপাতাল স্থাপনের প্রস্তাব দেন অধ্যাপক ইউনূস।
বৈঠকে বিডার নির্বাহী চেয়ারম্যান চৌধুরী আশিক মাহমুদ বিন হারুন এবং প্রধান উপদেষ্টার এসডিজিবিষয়ক কো-অর্ডিনেটর লামিয়া মোর্শেদ উপস্থিত ছিলেন। তারা সরকারের বিদেশি বিনিয়োগ সহায়ক নীতির প্রতিশ্রুতি পুনর্ব্যক্ত করেন।