<p>১৯২২ সাল। ফরাসি বিজ্ঞানী লুই ডি ব্রগলি বলেছিলেন, ইলেকট্রনের মতো খুদে কণারা সবসময় কণা ও তরঙ্গ— দুই অবস্থাতেই থাকে। মুশকিল হলো, কণা আর তরঙ্গ ব্যাখ্যার জন্য আলাদা আলাদা গণিত ব্যবহার করতে হয়। ১৯২৪ সাল নাগাদ ব্রগলি একটা সমীকরণ দাঁড় করালেন। কিন্তু কণাচরিত্রের ষোলআনা ব্যাখ্যা দিতে পারেনি সেই সমীকরণ। তবে সমীকরণ দেখে উৎসাহিত হলেন অস্ট্রিয়ান বিজ্ঞানী এরউইন শ্রোডিঙ্গার। ডি ব্রগলির সমীকরণ থেকে দুটো জিনিস ধার করলেন তিনি। ভরবেগ ও ইলেকট্রনের তরঙ্গ চরিত্র। প্রকাশ করলেন বস্তুতরঙ্গের সমীকরণ।</p> <p>ক্লাসিক্যাল বলবিদ্যায় তরঙ্গের আচরণ অন্যরকম। সেই তরঙ্গ মাধ্যমের কণাগুলো স্থান পরিবর্তন করে না। কিন্তু বস্তুতরঙ্গে ইলেকট্রন বা বস্তু নিজেই এগিয়ে চলে তরঙ্গাকারে। চিরায়ত তরঙ্গের সাথে এই তরঙ্গের তুলনা চলে না। চিরায়ত তরঙ্গের অবস্থান তরঙ্গ ফাংশন ব্যবহার করে বের করা যায়। শ্রোডিঙ্গার বস্তুতরঙ্গের জন্য এমন একটা ফাংশন বের করলেন। তা হলো ψ (শাই)।</p> <p>ψ পরমাণুর ভেতর নির্দিষ্ট কোনো বিন্দুতে ইলেকট্রন পাওয়ার সম্ভাবনা কতটুকু বলে দেয়। তবে বিন্দুটি হতে হবে ইলেকট্রন মেঘের ভেতর। ψ জটিল সংখ্যাযুক্ত রাশি। এর সাথে কাল্পনিক সংখ্যা জড়িয়ে থাকায় হিসাব-নিকাশ বেশ কঠিন। কঠিনের সহজ সমাধান দিলেন ম্যাক্স বর্ন। তিনি ψ-এর বর্গীয় মডুলাস | ψ² | ব্যবহার করলেন। রাশিটি কাল্পনিক থেকে পরিমাপযোগ্য রাশি হয়ে উঠল। সেইসাথে শ্রোডিঙ্গারের তরঙ্গ সমীকরণ সত্যিকার বলবিদ্যার রূপ পেল। যা ম্যাট্রিক্স বলবিদ্যার থেকেও সহজ। এই কাজের জন্য ১৯৩৩ সালে নোবেল পুরস্কার দেওয়া হয় এরউইন শ্রোডিঙ্গারকে।</p> <figure class="image"><img alt="হাইড্রোজেন পরমাণুতে ইলেকট্রনকে কোন কোন কক্ষপথে পাওয়া যাবে তার সম্ভাবনা। হাইড্রোজেনের তরঙ্গ ফাংশন থেকে পাওয়া যায় এই সম্ভাবনাগুলো।" height="753" src="https://cdn.kalerkantho.com/public/news_images/share/photo/shares/online/2024/10/12/my1182/atom 2.jpg" width="600" /> <figcaption>হাইড্রোজেন পরমাণুতে ইলেকট্রনকে কোন কোন কক্ষপথে পাওয়া যাবে তার সম্ভাবনা। হাইড্রোজেনের তরঙ্গ ফাংশন থেকে পাওয়া যায় এই সম্ভাবনাগুলো।</figcaption> </figure> <p><br /> <br /> শ্রোডিঙ্গারের সমীকরণকে বলা হয় সম্ভাবনার সমীকরণ। এটি নির্দিষ্ট বিন্দুতে কোনো কোয়ান্টাম কণা খুঁজে পাওয়ার সম্ভাবনা কতটুকু বলে দেয়। এই সমীকরণ দিয়ে ইলেকট্রনের চরিত্র আরও ভালোভাবে ব্যাখ্যা করা যায়।</p> <p>হাইজেনবার্গ ও শ্রোডিঙ্গার মূলত একই বিষয় নিয়ে কাজ করছিলেন। তা হলো কোয়ান্টাম কণাদের আচরণের একটা গাণিতিক সূত্র। হাইজেনবার্গ ব্যবহার করলেন ম্যাট্রিক্স বীজগণিত। শ্রোডিঙ্গার একই হিসেব কষলেন তরঙ্গ ফাংশন আকারে। শ্রোডিঙ্গারের সমীকরণ অধিক গ্রহণযোগ্যতা পেল। কেননা, এর ফলে কণা তরঙ্গের এক পরিপূর্ণ বলবিদ্যা তৈরি হয়। যা হাইজেনবার্গের ম্যাট্রিক্স বলবিদ্যার তুলনায় বেশ সহজ ও ভৌতভাবে পরিমাপযোগ্য।</p> <p><strong>সম্পর্কিত তত্ত্ব</strong><br /> তরঙ্গ-কণা দ্বৈততা<br /> ডি ব্রগলির বস্তুতরঙ্গ<br /> ম্যাট্রিক্স বলবিদ্যা</p> <p><br /> <strong>বিজ্ঞানী</strong><br /> <strong>এরউইন শ্রোডিঙ্গার</strong><br /> ১৮৮৭-১৯৬১<br /> অস্ট্রিয়ান পদার্থবিদ, কোয়ান্টাম তত্ত্বের অন্যতম স্থপতি, কসমোলজি বা সৃষ্টিতত্ত্ব এবং জেনেটিকসে যার অবদান অনস্বীকার্য।</p> <p><strong>বর্ণনা</strong><br /> ফিলিপ বল</p> <p> </p>