প্রশ্ন : পেছন ফিরে তাকালে চ্যাম্পিয়নস ট্রফিতে বাংলাদেশ দলের কোন বিষয়টিকে বিশেষ বলে মনে হয় আপনার?
আন্দ্রে অ্যাডামস : সত্যি যদি দারুণ কিছুর ইঙ্গিত আমরা দিয়ে থাকি, তাহলে সেটি অবশ্যই আমাদের বোলিং। নিউজিল্যান্ড ম্যাচে দারুণ বোলিং করে যেতে থাকা ছেলেরা (ফাস্ট বোলাররা) উইকেট তুলে নিতেও মরিয়া ছিল। তার মানে শিকারের নেশা এবং মানসিকতায় ওরা ঠিকঠাকই ছিল; যদিও দিনের শেষে আমাদের সফল দল বলে মনে হচ্ছে না একদমই।
প্রশ্ন : বোলিং ভালো হওয়ার পরও দল পুরোপুরি ব্যর্থ।
বাংলাদেশের চ্যাম্পিয়নস ট্রফি অভিযানকে আপনি মূল্যায়ন করবেন কিভাবে?
অ্যাডামস : আমরা ব্যাটিংয়েই ভুগেছি বেশি। আর একই রকম ভোগান্তির মধ্যে ওয়েস্ট ইন্ডিজ সফরেও পড়েছিলাম। এটি মোটামুটি একটি ট্রেন্ডই হয়ে গেছে যে মাঝের ওভারগুলোতে আমরা একের পর এক উইকেট হারাতে থাকব। তবে ব্যাটিংয়ে আরো বেশি কার্যকর হওয়ার পথও আমাদেরই খুঁজে বের করতে হবে।
দেখুন, দুবাইতে (ভারত ম্যাচে) আমাদের ঘাটতি ছিল ৪০ রানের। রাওয়ালপিন্ডিতে (প্রতিপক্ষ নিউজিল্যান্ড) তা আরো বেশি। সেখানে ৫০ থেকে ৮০ রান আমরা কম করেছি। কাজেই আমাদের এই অভিযানকে গড়পড়তার বেশি কিছু বলার সুযোগ নেই।
প্রশ্ন : এটিও বলতে হয়, দুই ম্যাচেই ভালো শুরু দিয়েছেন ফাস্ট বোলাররা, কিন্তু পরের পর্যায়ে আর সেই ছন্দ তাঁরা ধরে রাখতে পারেননি। ধারাবাহিকতার এই অভাব কেন?
অ্যাডামস : এমন নয় যে ওরা হাল ছেড়ে দিয়েছিল। উইকেট নেওয়ার জন্য বাড়তি চেষ্টা করতে গিয়েও বাজে বল বেরিয়েছে ওদের হাত থেকে। সত্যি কথা বললে, গত কয়েক বছরে বোলিংয়েও কিন্তু খুব ধারাবাহিক দল আমরা ছিলাম না। তবে এখন আগের চেয়ে অনেক বেশি ধারাবাহিক অবশ্যই।
কিভাবে ও কখন আক্রমণে যেতে হবে, সেটি বোঝার ব্যাপারও আছে এখানে। পেস বিভাগে সবাই আবার একই রকম অভিজ্ঞও নয়।
প্রশ্ন : একাদশে তাসকিন আহমেদ আর মুস্তাফিজুর রহমান থাকলে তো অভিজ্ঞতার ঘাটতি থাকার কথা নয়।
অ্যাডামস : খেলা নিয়ে বোঝাপড়ার কথা বলছিলাম। গেম রিড করে বোলিং করার ক্ষেত্রে তাসকিনকে ব্যতিক্রমীই বলতে হয়। তবে (নাহিদ) রানা এখনো অনভিজ্ঞ। আর ফিজ তো মূলত টি-টোয়েন্টিই খেলে বেশি। সে অভিজ্ঞ হলেও ওয়ানডেতে কিভাবে বোলিং করতে হয়, তা এখনো শিখছে। তা ছাড়া (চ্যাম্পিয়নস ট্রফির আগে) আপনি কোথায় খেলে এসেছেন, সেটিও বিবেচনায় রাখতে হবে।
প্রশ্ন : চ্যাম্পিয়নস ট্রফির আগে তো শুধু বিপিএলেই খেলেছেন ক্রিকেটাররা। এই আসরের জন্য বাংলাদেশের প্রস্তুতির অভাব নিয়ে কথা বলেছেন আরো অনেকেই।
অ্যাডামস : বাংলাদেশের দৃষ্টিকোণ থেকে দেখলে বলা যেতেই পারে যে (বিপিএলে) আমাদের বোলারদের আধিপত্য ছিল। কিন্তু ফ্র্যাঞ্চাইজি টুর্নামেন্টে ব্যাটারদের ওপর চড়ে বসা আর এ রকম একটি টুর্নামেন্টে বিশ্বমানের খেলোয়াড়দের বোলিং করা এক ব্যাপার নয় কিন্তু। তা ছাড়া আপনি খেলেও এসেছেন টি-টোয়েন্টি লিগ। খেলাটির চরিত্রের কারণেই এই সংস্করণে আপনার ধৈর্যেরও প্রয়োজন পড়েনি খুব। কিন্তু ভারত ও নিউজিল্যান্ডের মতো দলের সামনে ওয়ানডেতে কী করতে হবে, তা জানা-বোঝার ব্যাপার আছে। ওরা শিখছে এবং এগোচ্ছে। অগ্রগতির হার আমার জন্য সন্তোষজনকই।
প্রশ্ন : ব্যাটিংটা ভালো হলে কি চ্যাম্পিয়নস ট্রফিতে বোলাররা বাংলাদেশকে এগিয়ে দিতে পারতেন?
অ্যাডামস : হয়তো। পাকিস্তানে ফ্ল্যাট উইকেট থাকলেও দুবাইয়েরটি ছিল চ্যালেঞ্জিং এবং স্পিন সহায়ক। দুই জায়গায়ই আমরা বোলিং ভালো করেছি, তবে অসাধারণ কিছু নয়। তা ছাড়া আন্তর্জাতিক পর্যায়ে সবচেয়ে অমূল্য মুদ্রা হলো রান। আপনি উইকেট নিতে পারেন, কিন্তু রান না করলে কোনোই লাভ নেই; সেটি যে সংস্করণেই হোক না। তবে ধারাবাহিকভাবে ওয়ানডেতে ৩০০ রান করার সামর্থ্যের কাছাকাছিই আমরা আছি বলে মনে হয় আমার। কিছু তরুণ ক্রিকেটার আমাদের স্বপ্ন দেখাচ্ছে। আবার কেউ কেউ নিজেদের ক্যারিয়ারের শেষ পর্যায়ে আছে। একদিন না একদিন ওদের বিদায় দিতেই হবে আমাদের। নিশ্চিত করতে হবে, ওদের বিদায়ের সময় যেন পরবর্তী ক্রিকেটাররা তৈরি থাকে।
প্রশ্ন : মুস্তাফিজ অনেক দিন ধরেই সেরা ছন্দে নেই, তবু খেলে যাচ্ছেন। তিনি কি অটো চয়েস হয়ে গেছেন?
অ্যাডামস : দলে একজন বাঁহাতি বোলারের প্রয়োজন সব সময় থাকেই; বিশেষ করে ডেথ ওভারে ওর স্লোয়ার বলগুলো ভীষণ কার্যকর হয়ে ওঠে। শরিফুলের মতো বাঁহাতি বোলার ফিজকে শক্ত প্রতিদ্বন্দ্বিতার মুখেও ফেলতে সক্ষম। তবে আপনি নিজের সেরা দলটিই মাঠে নামাতে চাইবেন। তা ছাড়া কেউ যদি উন্নতির চেষ্টা করে যেতে থাকে এবং নিজের শতভাগ দেয়, তাহলে তাকে আপনি ফেলে দিতে পারবেন না।