সন্ধ্যাবেলায় ধানক্ষেত দেখতে গিয়ে সেখানে বড় একটি ঈগল পাখি পড়ে থাকতে দেখে দুই কিশোর। মানুষ দেখে আতঙ্কিত হয়ে চোখ রাঙাতে থাকে পাখিটি। প্রথমে ভয় পেলেও সাহস করে দুই কিশোর ঈগল পাখিটার কাছে যায়। পাখিটি ব্যথা আর যন্ত্রণায় কাতরাচ্ছিল।
ধানক্ষেত থেকে তুলে জমির আইলে নিয়ে এলে দুটি ডানায় রক্তাক্ত ও গভীর ক্ষত দেখে দ্রুত চিকিৎসার জন্য ছুটে যায় তারা। প্রায় চার কিলোমিটার পথ পাড়ি দিয়ে অসুস্থ ঈগলটিকে জয়পুরহাটের আক্কেলপুর উপজেলা প্রাণিসম্পদ দপ্তরে নিয়ে আসে। সেখানে ঈগলটির দ্রুত চিকিৎসা দেন প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা।
এ সময় ঈগলটির দুই ডানায় গুলি করা হয়েছিল বলে জানান উপজেলার উপসহকারী প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা মঞ্জুরুল হাসান।
এদিকে আহত ঈগলকে দ্রুত উদ্ধার করে চিকিৎসার ব্যবস্থা করায় প্রশংসায় ভাসছে ওই দুই কিশোর। দুই কিশোর হলো- মো. সাব্বির হোসেন ও গোলাম রব্বানী। তাদের বাড়ি পাশের বদলগাছি উপজেলার খাদাইল ব্রাহ্মণপুকুর গ্রামে।
উপজেলা প্রাণিসম্পদ দপ্তর ও স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, শুক্রবার (১১ এপ্রিল) সন্ধ্যার পর ওই দুই কিশোর গুলিবিদ্ধ হয়ে অসুস্থ হলে ঈগল পাখিটিকে উদ্ধার করে চিকিৎসার জন্য প্রাণিসম্পদ দপ্তরে নিয়ে আসে।
পাখিটিকে দেখতে উৎসুক জনতা ভিড় করছিল।
চিকিৎসার পর অসুস্থ ঈগলের দায়িত্ব নেওয়ার ইচ্ছা প্রকাশ করেন পৌর শহরের পুরাতন বাজার এলাকার মোশারফ হোসেন। এরপর ঈগল পাখিটিকে তার জিম্মায় দেওয়া হয়।
সাব্বির হোসেন ও গোলাম রব্বানী নামের ওই দুই কিশোর জানায়, শুক্রবার সন্ধ্যার আগে পড়ন্ত বিকেলে শালুককুড়ি মাঠে নিজেদের ধানক্ষেত দেখতে গিয়েছিলাম। জমির আইল দিয়ে যেতেই বড় একটি ঈগল পাখিকে ধানক্ষেতে পড়ে থাকতে দেখি।
পাখিটি আমাদের দেখে চোখ রাঙাচ্ছিল। প্রথমে ভয় পেলেও আমরা সাহস করে ঈগল পাখিটির কাছে যাই। ঈগল পাখির দুটি ডানায় ক্ষতচিহ্ন ও রক্ত দেখতে পাই। আমরা তাৎক্ষণিক ঈগল পাখিটিকে সুস্থ করতে আক্কেলপুর উপজেলা প্রাণিসম্পদ দপ্তরে নিয়ে আসি। উপসহকারী প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা ঈগলের দুটি ডানা ড্রেসিং করে ইনজেকশন দিয়েছেন।
পাখিটির জিম্মা নেওয়া মোশারফ হোসেন বলেন, আমি ঈগল পাখিকে নিজের বাড়িতে রাখব। যত দিন লাগে ঈগলকে সুস্থ করব। সুস্থ না হওয়া পর্যন্ত নিজ উদ্যোগে নিয়মিত প্রাণিসম্পদ দপ্তরে আনা-নেওয়া করব।
প্রাণিসম্পদ দপ্তরের উপসহকারী কর্মকর্তা মঞ্জুরুল হাসান সুমন বলেন, ঈগলটি খুবই অসুস্থ হয়ে পড়েছিল। ঈগলের দুই ডানায় গুলির চিহ্ন রয়েছে। প্রায় চার কিলোমিটার পথ পাড়ি দিয়ে দুই কিশোর ঈগল পাখির চিকিৎসা করাতে এনেছে। তাদের এমন কর্মকাণ্ড সত্যিই প্রশংসনীয়। যারা ঈগলটিকে গুলি করেছে তারা নিকৃষ্ট মনের মানুষ।
উপজেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা আমিরুল ইসলাম বলেন, ঈগল পাখিটিকে প্রয়োজনীয় চিকিৎসা দেওয়া হয়েছে। বর্তমানে ভালো আছে। পাখি প্রকৃতির অবিচ্ছেদ্য অংশ। তাই পাখি শিকার থেকে সবাইকে বিরত থাকার আহ্বান জানাচ্ছি।