লক্ষ্মীপুরে তাহের সাম্রাজ্যে হাহাকার

  • তাহেরের তিন পুত্র ভারতে পিংকি প্লাজায় ক্ষোভের আগুন
কাজল কায়েস, লক্ষ্মীপুর
কাজল কায়েস, লক্ষ্মীপুর
শেয়ার
লক্ষ্মীপুরে তাহের সাম্রাজ্যে হাহাকার
এই পিংকি প্লাজায় বসে রাজনৈতিক কর্মকাণ্ড পরিচালনা করতেন তাহের ও তাঁর পুত্ররা। ছাত্র-জনতা সেই আস্তানা গুঁড়িয়ে দিয়েছে। ছবি : কালের কণ্ঠ

এই পরিবারের কথাই ছিল শেষ কথা। বাবা মারা গেলে মেজো ছেলে ভার নেন সাম্রাজ্য রক্ষার। সাম্রাজ্য চলত অস্ত্র ও ক্যাডারের জোরে। চলত বেশুমার কমিশনবাজি-দখলবাজি-চাঁদাবাজি।

চলত তদবিরও। এ রকম বহু অপকর্মের মাধ্যমে সাম্রাজ্যে বাণিজ্য জমজমাট ছিল।

লক্ষ্মীপুরে তাহের সাম্রাজ্যে হাহাকারসাম্রাজ্যের রাজা ও অন্যরা বাণিজ্যের সুবিধা নিয়ে হয়েছেন বিপুল সম্পদের মালিক। সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ভারতে পালিয়ে যাওয়ার পর তাহেরের মোজা ছেলে টিপু তাঁর আরো দুই ভাইকে নিয়ে পালিয়ে এই সাম্রাজ্য ছাড়তে বাধ্য হয়েছেন।

তাঁরাও তাঁদের নেত্রীর মতো ভারতে নিয়েছেন ঠাঁই। পালিয়ে যাওয়ার সাত মাস পরও এলাকায় তাঁদের অপকর্মের লোমহর্ষক কাহিনি লোকমুখে ফিরছে। দেশে আলোচিত এই পরিবার হলো লক্ষ্মীপুরের তাহের পরিবার। তাহের মানে জেলা আওয়ামী লীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক ও পৌরসভার মেয়র বহুল আলোচিত আবু তাহের।
তাহের ২০২৩ সালে মারা গেলে হাল ধরেন মেজো ছেলে এ কে এম সালাউদ্দিন টিপু। আওয়ামী লীগ সরকারে থাকলে আবু তাহেরের মেজো ছেলে টিপুই লক্ষ্মীপুরে রাজা থাকতেন।

সূত্র জানায়, আওয়ামী লীগের চট্টগ্রাম বিভাগের সাংগঠনিক দায়িত্বে যে যখন থাকতেন তিনিই তাহেরপুত্র টিপুর সঙ্গে যোগাযোগ রাখতেন। শেখ হাসিনার আমলে গণভবনে টিপুর যাতায়াত ছিল। সেই প্রধানমন্ত্রীর বাসার ৪০০ কোটি টাকার চাকরিচ্যুত পিয়ন জাহাঙ্গীর আলমের সঙ্গে টিপুর ঘনিষ্ঠতা ছিল।

জাহাঙ্গীর নোয়াখালীর চাটখিলে গ্রামের বাড়িতে গেলে দলবল নিয়ে টিপু হাজির হতেন। তাঁর (জাহাঙ্গীর) মাধ্যমে বিভিন্ন তদবির করতেন। নিজে উপজেলা চেয়ারম্যান, বাবার জন্য মেয়র, ঘনিষ্ঠদের জন্য ইউপি চেয়ারম্যান পদে দলীয় মনোনয়ন পেতে ঢাকায় কেন্দ্রীয় নেতাদের বাসায়-অফিসে গিয়ে তদবির, উপঢৌকন বিতরণ করতেন।

স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, শেখ হাসিনার সরকার পতনের পর তিন দফা ভাঙচুর ও অগ্নিসংযোগ এবং সব শেষে সাম্রাজ্য পরিচালনার কেন্দ্র পিংকি প্লাজার অংশ এক্সকাভেটর দিয়ে ভেঙে ফেলা হয়েছে। গত বছরের ৪, ৫ আগস্ট ও গত ৬ ফেব্রুয়ারি শহরে টিপুর দুটি বাসায় ভাঙচুর, লুটপাট ও অগ্নিসংযোগ করে বিক্ষুব্ধ ছাত্র-জনতা। সবশেষে এক্সকাভেটর দিয়ে তিনতলা পিংকি প্লাজার সামনের অংশ ভেঙে ফেলা হয়।

পুলিশ সূত্রে জানা গেছে, চারজন শিক্ষার্থী হত্যাসহ আলাদা পাঁচটি মামলা আছে টিপুর বিরুদ্ধে। হত্যাসহ বিভিন্ন অভিযোগে টিপুর বড় ভাই আফতাব উদ্দিন বিপ্লবের বিরুদ্ধে চারটি ও ছোট ভাই শাহাদাত হোসেন শিবলুর বিরুদ্ধে তিনটি মামলা রয়েছে। 

টিপু জেলা যুবলীগের স্থগিত কমিটির সভাপতি ও জেলা আওয়ামী লীগের প্রস্তাবিত কমিটির যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক। এ ছাড়া তিনি তিনবার সদর উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান ছিলেন।

স্থানীয় পুলিশ ও রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা বলছেন, ক্যাডারভিত্তিক রাজনীতি করায় টিপু ও তাঁর অনুসারীদের হাতে অবৈধ অত্যাধুনিক অগ্নেয়াস্ত্র ছিল। খোদ লক্ষ্মীপুর জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি গোলাম ফারুক পিংকু ও সাধারণ সম্পাদক নুরউদ্দিন চৌধুরী নয়ন ভয় পেতেন টিপুকে। অথচ তাঁরা দুজনই সংসদ সদস্য ছিলেন। কারণে-অকারণে টিপুকে চাহিদা মতো অর্থ দিয়ে, আবদার রেখে খুশি রাখতেন।

যেখানে জেলার শীর্ষ দুই নেতা টিপুকে সমীহ করতেন, সেখানে সাধারণ মানুষ ও নিজ দলের অন্য নেতাকর্মীরাও ভয়ে তটস্থ থাকতেন। টিপুদের ভয়ে আতঙ্কগ্রস্ত কেউ প্রকাশ্যে কথা বলতে পারত না। তবে সাত মাস ধরে তাদের অনেকের মুখ ফুটেছে। 

জেলা প্রশাসন সূত্রে জানা গেছে, ২০০৯ সালের ৬ জানুয়ারির পর দেওয়া অস্ত্রের লাইসেন্স বাতিল করে জমা দেওয়ার প্রজ্ঞাপন জারি করেছিল স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়। গত ৩ সেপ্টেম্বর ওই অস্ত্র জমা দেওয়ার শেষ দিন ছিল। টিপু তাঁর লাইসেন্সকৃত অস্ত্রটি জমা দেননি।

লক্ষ্মীপুর সদর মডেল থানা সূত্র জানায়, গত আগস্টে লক্ষ্মীপুরে ছাত্র হত্যা ও পুলিশের ওপর হামলার ঘটনায় আলাদা পাঁচটি মামলার আসামি টিপু। এসব মামলায় সদর উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি হুমায়ুন কবির পাটওয়ারী ও পৌর কমিটির সভাপতি সৈয়দ আহমেদ পাটওয়ারীসহ আওয়ামী লীগের দেড় শতাধিক নেতাকর্মীকে পুলিশ গ্রেপ্তার করেছে।

লক্ষ্মীপুর পৌর যুবদলের সাবেক সভাপতি আলমগীর হোসেন বলেন, ছাত্র আন্দোলনের সময় লক্ষ্মীপুরের পরিবেশ ঠাণ্ডা ছিল। টিপু অতি উৎসাহীি হয়ে ছাত্র-জনতার ওপর গুলি করায় দলের নেতাকর্মীদের এলাকাছাড়া হতে হয়েছে।

বারবার যোগাযোগ করা হলেও অভিযুক্ত টিপুর বক্তব্য জানা যায়নি। তাঁর স্ত্রী জান্নাতুল নাইম মৌসুমী দাবি করেন, আত্মরক্ষার্থে ও পরিবারের হেফাজতের জন্য টিপু বাসার ছাদ থেকে ফাঁকা গুলি করেছেন। তাঁদের বিরুদ্ধে তোলা অন্য সব অভিযোগ মিথ্যা।

লক্ষ্মীপুরের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (সদর সার্কেল)  মো. রেজাউল হক বলেন, টিপু ও তাঁর পরিবারের সদস্যদের বিরুদ্ধে হত্যাসহ কয়েকটি মামলা রয়েছে। তাঁদের ব্যবহৃত মোবাইল ফোন নম্বরগুলো বন্ধ রয়েছে। লোক মারফত জেনেছি, টিপু দেশের বাইরে আছেন। আসামিদের গ্রেপ্তারে মামলার তদন্ত কর্মকর্তাদের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।

১৯৯৬ সালে আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় আসার পর আবু তাহের জেলা কমিটির সাধারণ সম্পাদক হন। ক্ষমতা ও রাজনৈতিক প্রভাব ধরে রাখতে প্রতিটি গ্রামে অনুগত নেতাকর্মীর বলয় তৈরি করেন। তাহের পরিবারের নাম ব্যবহার করে অনুসারীরাও চাঁদাবাজি, প্রভাব বিস্তারসহ নানা অপকর্ম চালাতেন। তাহেরের পরিবারের সদস্যরা বিভিন্ন পারিবারিক অনুষ্ঠানে অংশ নিয়ে ওই সব নেতাকর্মীকে স্বীকৃতি দিতেন। জেলা বিএনপির সাংগঠনিক সম্পাদক অ্যাডভোকেট নুরুল ইসলাম হত্যার মাধ্যমে দেশব্যাপী এই পরিবার আলোচনায় আসে। প্রতিযোগিতা করে লক্ষ্মীপুরে খুন, হত্যা, চাঁদাবাজিসহ ত্রাসের রাজত্ব চলে তাহের সাম্রাজ্যে। তখন সন্ত্রাসের জনপদের পরিচিতি পায় লক্ষ্মীপুর। ২০০১ সালের নির্বাচনে ক্ষমতার পরিবর্তনের পর তাহের, তাঁর স্ত্রী, ছেলেরা হত্যা-লুটপাটসহ বিভিন্ন মামলায় কারাগারে ছিলেন। পরে তাহের জামিনে মুক্তি পান। ২০০৭-০৮ সালে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের আমলে তাহের ও তাঁর ঘনিষ্ঠরা পলাতক ছিলেন। ২০০৯ সালে আওয়ামী লীগ আবার ক্ষমতায় এলে তাহের পরিবার লক্ষ্মীপুরে ফেরে। তাহের আওয়ামী লীগের সমর্থনে লক্ষ্মীপুর পৌরসভার মেয়র নির্বাচিত হন। ২০১৪ সালে তাহেরপুত্র যুবলীগ নেতা টিপু আওয়ামী লীগের টিকিটে প্রথম সদর উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান নির্বাচিত হন। পরে ২০১৮ সালে আওয়ামী লীগের প্রার্থী আবুল কাশেমকে হারিয়ে দ্বিতীয়বার চেয়ারম্যান হন। সব শেষ গত বছরের ২৯ মে নিয়ম রক্ষার নির্বাচনে তৃতীয়বারের মতো উপজেলা চেয়ারম্যান হন।

২০২৩ সালের ১৮ মার্চ আবু তাহের মারা গেলে সাম্রাজ্যভার নেন টিপু নিজেই। বিপুল সম্পদের মালিক বনে যাওয়া টিপুর জমি ও অ্যাপার্টমেন্ট আছে ঢাকা, কক্সবাজার, লক্ষ্মীপুরের বিভিন্ন স্থানে। তিনি পরিবারের সদস্যদের নামে-বেনামে সম্পদ গড়েছেন। ২০১৬ সালে লক্ষ্মীপুরে নতুন মুখ হিসেবে আবির্ভাব হয় কাজী শহীদুল ইসলাম পাপুলের। পরে তিনি ভর করেন জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক নুর উদ্দিন চৌধুরী নয়ন ও যুবলীগ নেতা টিপুর ওপর। পাপুলকে এমপি বানানোর সহযোগিতার কথা বলে অর্থ হাতিয়ে নেন টিপু। কুয়েতে দণ্ডপ্রাপ্ত লক্ষ্মীপুর-২ আসনের সাবেক সংসদ সদস্য কাজী শহিদুল ইসলাম পাপুলের ২০১৮ সালের নির্বাচনের সময় টিপু সদর উপজেলার ৯টি ইউনিয়নের ভোট কাটার দায়িত্ব নেন। ভোটের আগের রাতেই অস্ত্রধারী দলবল নিয়ে টিপু তাঁর দায়িত্ব পালন করেন। যদিও তখন পাপুল বলেছিলেন, শুধু টিপুই কয়েক ধাপে তাঁর কাছ থেকে চার কোটি টাকা নিয়েছেন।

আধিপত্যে মাই ম্যান : জেলা, উপজেলা, পৌরসভা, ইউনিয়ন পর্যায়ে রাজনীতিতে টিপু মাই ম্যান সৃষ্টি করেছিলেন। বিভিন্ন নির্বাচনে চুক্তিবদ্ধ প্রার্থীর পক্ষে ওই কর্মী বাহিনীকে ভাড়া খাটাতেন। তাঁর অনুগত নেতাকর্মীদের সুযোগ-সুবিধা দিতেন। মতের বিরুদ্ধে গেলেই হয়রানি করতেন। ২০১৭ সালের ২৩ নভেম্বর জেলা যুবলীগের সম্মেলনে টিপু সভাপতি ও আব্দুল্লাহ আল নোমান সাধারণ সম্পাদক হন। তবে তাঁরা চার বছরেও পূর্ণাঙ্গ কমিটি করতে পারেননি। টাকার বিনিময়ে পকেট কমিটি দিয়ে মতাদর্শবিরোধী নেতাকর্মীদের কোণঠাসা করে ফেলেন বলে দলের নেতাদের অভিযোগ। ২০২১ সালের ২১ সেপ্টেম্বর জেলা যুবলীগের বর্ধিত সভায় যোগ দিতে আসা কেন্দ্রীয় নেতাদের স্বাগত জানাতে রামগঞ্জ-লক্ষ্মীপুর সড়কের পাশে দাঁড়ান পদপ্রত্যাশী নেতাকর্মীরা। টিপুর নেতৃত্বে সশস্ত্র হামলা চালিয়ে জেলা যুবলীগের সাধারণ সম্পাদক প্রার্থী সৈয়দ নুরুল আজিম বাবরসহ ১৫ নেতাকর্মীকে আহত করা হয়। তার জেরে জেলা যুবলীগের কমিটি বিলুপ্ত করে কেন্দ্রীয় কমিটি। বিরুদ্ধে যাওয়ায় অনুসারীদের নিয়ে টিপু ২০১৯ সালের ৩ জানুয়ারি জেলা সদর হাসপাতালে চিকিৎসাধীন যুবলীগের কর্মী দেলোয়ার হোসেনের ওপর হামলা করেন। এ সময় বাধা দিলে তারা পুলিশের ওপরও হামলা চালায়। তখন পুলিশ আটক করেছিল টিপুর অনুসারী মাহবুবুর রহমানসহ কয়েকজনকে।

তবু বিপ্লব পেয়েছিল ক্ষমা : টিপুর বড় ভাই আফতাব উদ্দিন বিপ্লব বিএনপি নেতা নুরুল ইসলাম হত্যা মামলায় ফাঁসির দণ্ডপ্রাপ্ত আসামি ছিলেন। ২০১৬ সালের ১৪ জুলাই এই দণ্ড মওকুফ করেন তৎকালীন রাষ্ট্রপতি মো. জিল্লুর রহমান। পরের বছর আরো দুটি হত্যা মামলায় (কামাল ও মহসিন হত্যা) বিপ্লবের যাবজ্জীবন সাজা কমিয়ে ১০ বছর করেন রাষ্ট্রপতি। এরপর রাজনৈতিক বিবেচনায় ২০১২ সালে ফিরোজ হত্যা মামলা থেকেও তাঁর নাম প্রত্যাহার করা হয়। বিপ্লব ২০১৪ সালের ১ আগস্ট লক্ষ্মীপুর জেলা কারাগারের ভেতরে বিয়ে করে দেশ-বিদেশে আলোচনা-সমালোচনার ঝড় তোলেন।

 

 

মন্তব্য

সম্পর্কিত খবর

ছুটির ঘোষণা

শেয়ার
ছুটির ঘোষণা

আজ ১৪ এপ্রিল সোমবার বাংলা নববর্ষ উপলক্ষে কালের কণ্ঠের সব বিভাগ বন্ধ থাকবে। তাই কাল মঙ্গলবার পত্রিকা প্রকাশিত হবে না। তবে আমাদের অনলাইন ও মাল্টিমিডিয়া চালু থাকবে। সম্পাদক

মন্তব্য

আধাপাকা ধান কাটার উৎসব

শেয়ার
আধাপাকা ধান কাটার উৎসব
ব্রাহ্মণবাড়িয়ার বিভিন্ন হাওরাঞ্চলে চলছে আধাপাকা ধান কাটার উৎসব। সূর্য ওঠার সঙ্গে সঙ্গে কৃষকরা ছুটছেন মাঠে। দাবদাহ উপেক্ষা করে ধান কাটা, মাড়াই ও ঘরে তুলতে ব্যস্ত সময় পার করছেন চাষিরা। গতকাল সরাইল থেকে তোলা। ছবি : ফোকাস বাংলা
মন্তব্য

মডেল মেঘনার আটকাদেশ কেন অবৈধ নয় : হাইকোর্ট

    গ্রেপ্তার প্রক্রিয়া সঠিক ছিল না : আইন উপদেষ্টা
নিজস্ব প্রতিবেদক
নিজস্ব প্রতিবেদক
শেয়ার
মডেল মেঘনার আটকাদেশ কেন অবৈধ নয় : হাইকোর্ট
মেঘনা আলম

মিস আর্থ বাংলাদেশ বিজয়ী-২০২০ মডেল মেঘনা আলমকে বিশেষ ক্ষমতা আইনে আটকাদেশ কেন অবৈধ নয়, তা জানতে চেয়ে রুল জারি করেছেন হাইকোর্ট। গতকাল রবিবার এ বিষয়ে এক রিট আবেদনের শুনানি শেষে হাইকোর্টের একটি ডিভিশন বেঞ্চ এই আদেশ দেন। অন্যদিকে গতকাল সচিবালয়ে সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপকালে আইন উপদেষ্টা বলেছেন, মডেল মেঘনা আলমকে গ্রেপ্তার প্রক্রিয়া সঠিক ছিল না।

আগামী দুই সপ্তাহের মধ্যে এই রুলের জবাব দিতে বলেছেন আদালত।

আদালতে আবেদনের পক্ষে শুনানি করেন সিনিয়র আইনজীবী ব্যারিস্টার সারা হোসেন ও আইনজীবী জাহেদ ইকবাল।

মেঘনা আলমকে ৩০ দিনের আটকাদেশ কেন অবৈধ ঘোষণা করা হবে না, কেন তাঁকে মুক্তি দিতে নির্দেশ দেওয়া হবে না এবং কেন তাঁকে গ্রেপ্তার ও আটকের প্রক্রিয়াটি অসাংবিধানিক ও মৌলিক অধিকার পরিপন্থী ঘোষণা করা হবে নারুলে হাইকোর্ট এসব বিষয় জানতে চেয়েছেন।

আদালত স্বরাষ্ট্রসচিব, আইনসচিব, পুলিশের আইজি, ডিএমপি কমিশনার, জেলা ম্যাজিস্ট্রেটসহ সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিদের দুই সপ্তাহের মধ্যে রুলের জবাব দিতে বলেছেন।

এর আগে গত ১০ এপ্রিল আবেদনের ভিত্তিতে ঢাকা মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট সেফাতুল্লাহ মডেল মেঘনা আলমকে ৩০ দিনের জন্য কারাগারে পাঠানোর আদেশ দিয়েছিলেন।

আদেশে বলা হয়, ১৯৭৪ সালের বিশেষ ক্ষমতা আইনের ২(এফ) ধারার জননিরাপত্তা ও আইন-শৃঙ্খলা পরিপন্থী ক্ষতিকর কার্য থেকে নিবৃত্ত করার জন্য এবং আইন-শৃঙ্খলা বজায় রাখার স্বার্থে আবশ্যক অনুভূত হওয়ায় ১৯৭৪ সালের বিশেষ ক্ষমতা আইনের ৩(১) ধারায় অর্পিত ক্ষমতাবলে মেঘনা আলমকে কর্তৃপক্ষের অনুমোদনক্রমে এই আটকাদেশ স্বাক্ষরের তারিখ থেকে ৩০ দিন কারাগারে আটক রাখার আদেশ প্রদান করা হলো। পরে তাঁকে কাশিমপুর কারাগারে পাঠানো হয়।

 

গ্রেপ্তার প্রক্রিয়া সঠিক ছিল না : আইন উপদেষ্টা

এদিকে গতকাল সচিবালয়ে সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপকালে আইন উপদেষ্টা আসিফ নজরুল বলেছেন, মডেল মেঘনা আলমকে রাতে যে প্রক্রিয়ায় বাসা থেকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে তা সঠিক ছিল না।

তিনি বলেন, আমরা স্বীকার করছি, গ্রেপ্তার প্রক্রিয়া সঠিক হয়নি।

গ্রেপ্তারের প্রক্রিয়া সঠিক হয়নি মানে উনার বিরুদ্ধে কোনো অপরাধের আলামত বা অভিযোগ নেই, সেটি নয়। সেটির ব্যাপারে করণীয় কী আছে, সে বিষয়ে অচিরেই স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় উপযুক্ত ব্যবস্থা গ্রহণ করবে।

 

 

মন্তব্য

জয়নুল আবদিন ফারুকের বক্তব্যের প্রতিবাদ জামায়াতের

নিজস্ব প্রতিবেদক
নিজস্ব প্রতিবেদক
শেয়ার
জয়নুল আবদিন ফারুকের বক্তব্যের প্রতিবাদ জামায়াতের

জামায়াত নিয়ে বিএনপি নেতা জয়নুল আবদিন ফারুকের বক্তব্যকে অসত্য উল্লেখ করে নিন্দা জানিয়েছেন জামায়াতে ইসলামীর সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল রফিকুল ইসলাম খান। গতকাল রবিবার এক বিবৃতিতে তিনি বলেন, বিএনপি নেতা জয়নুল আবদিন ফারুক গত ১০ এপ্রিল একটি বেসরকারি টেলিভিশন চ্যানেলের টক শোতে জামায়াতে ইসলামী মসজিদে মসজিদে মহিলাগুলোকে একত্র করে বেহেশতের টিকিট দেওয়া শুরু করেছে মর্মে যে বক্তব্য দিয়েছেন, আমি তার তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানাচ্ছি। তাঁর এই বক্তব্যে সত্যের লেশমাত্রও নেই। তাঁর এ বক্তব্য হীন রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিত।

জামায়াতের জনপ্রিয়তায় ঈর্ষান্বিত হয়েই তিনি জামায়াতের বিরুদ্ধে আজগুবি, বানোয়াট ও হাস্যকর বক্তব্য দিয়েছেন।

জয়নুল আবদিন ফারুকের মতো একজন ব্যক্তির মুখে এ ধরনের বক্তব্য মানায় না উল্লেখ করে তিনি বলেন, জামায়াতের সমালোচনা করার মতো কোনো কিছু না পেয়ে জয়নুল আবেদিন ফারুক ইসলামের দাওয়াত সম্পর্কে কটাক্ষপূর্ণ হাস্যকর বক্তব্য দিয়ে নিজের মর্যাদা ক্ষুণ্ন করেছেন। এভাবে বক্তব্য দিয়ে জনগণকে বিভ্রান্ত করার চেষ্টা অত্যন্ত হাস্যকর।

বিবৃতিতে রফিকুল ইসলাম খান বলেন, নিজের অবস্থান ও মর্যাদার কথা চিন্তা করেই জামায়াত সম্পর্কে বানোয়াট ও হাস্যকর মিথ্যা বক্তব্য দেওয়া থেকে বিরত থাকার জন্য আমি বিএনপি নেতা জয়নুল আবদিন ফারুকের প্রতি আহ্বান জানাচ্ছি।

 

 

মন্তব্য

সর্বশেষ সংবাদ