একটি টিনের ঘর আর নামমাত্র জমি থেকে এক কর কর্মকর্তা এখন কোটি কোটি টাকার মালিক। অবৈধ পন্থায় আয় করা এসব টাকা দিয়ে দেশ-বিদেশে নামে-বেনামে গড়ে তুলেছেন সম্পদের পাহাড়। অনেক ব্যবসায়ী তার বিরুদ্ধে দপ্তরে অভিযোগ দিয়েও রক্ষা পাননি।
আওয়ামী লীগ শাসনামলে ধরাকে সরা মনে করে বিভিন্ন ব্যবসায়ী ও রাজনৈতিক নেতাদের কালো টাকা সাদা করে দিয়ে হাতিয়ে নিয়েছেন কোটি কোটি টাকা।
বলছিলাম খুলনা কর কমিশনার কার্যালয়ের সহকারী কর কমিশনার ও ঝিনাইদহের শৈলকুপা উপজেলার ফুলহরি গ্রামের সন্তান অনাথ বন্ধু সাহার কথা। ছাত্র জীবনে যেখানে নিজের পড়ালেখার খরচ জোগাতে পারতেন না এখন তিনি নিজের সন্তানকে ব্যয়বহুল খরচে কানাডায় লেখাপড়া করাচ্ছেন। এমনকি তার নিজ এলাকায় করেছেন আলীশান বাড়ি।
স্থানীয়রা জানান, অনাথ বন্ধু সাহার পৈতৃক অবস্থা আগে তেমন একটা ভালো ছিল না।
ছোটবেলায় অনাথের লেখাপড়ার খরচ ঠিকমতো জোগাতে পারতেন না তাঁর বাবা। সেই অনাথ চাকরি পাওয়ার পর থেকে বদলে যেতে শুরু করে।
জানা যায়, আশির দশকের শেষ দিকে আয়কর কার্যালয়ে সাঁট মুদ্রাক্ষরিক কাম কম্পিউটার অপারেটর পদে চাকরিতে যোগদান অনাথ বন্ধু সাহা। চাকরির শুরুর দিকে খুলনা, নড়াইল, ঝিনাইদহ, কুষ্টিয়া ও রাজশাহীসহ বেশ কয়েক জায়গায় তিনি কর্মরত ছিলেন।
আওয়ামী লীগ শাসনামলে ২০১৫ সালে কর পরিদর্শক পদে পদোন্নতি, ২০১৯ সালে অতিরিক্তি সহকারী কর কমিশনার পদে পদোন্নতি ও ২০২৪ সালে অতিরিক্ত সহকারী কর কমিশনার পদে পদোন্নতি পান তিনি। সে সময় থেকে বেপরোয়া হয়ে ওঠেন অনাথ। তখন থেকেই ঘুষ, বদলি, নিয়োগ বাণিজ্য, আওয়ামী লীগ নেতাদের কালো টাকা সাদা করাসহ নানা অবৈধ পন্থায় আয় করতে থাকেন কোটি কোটি টাকা। সেই থেকে তাকে আর পিছু ফিরে তাকাতে হয়নি।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক ঝিনাইদহের প্রভাবশালী এক ব্যবসায়ী বলেন, ‘অনাথ বন্ধু আমাদের জেলাতে বেশ কিছুদিন উপ-কমিশনার পদে কর্মরত ছিলেন।
তার দাবি অনুযায়ী টাকা না দিলে আমাদের মতো অনেক ব্যবসায়ীদের নানা চাপে রাখতেন। পরে তার দাবিকৃত টাকা আদায় করে নিতেন। তার অত্যাচারে আমরা অতিষ্ঠ হয়ে পড়েছিলাম।
তিনি আরো বলেন, ‘অনাথ বন্ধু মাদক ও নারীতে আসক্ত ছিলেন। একবার অপরিচিত এক নারীসহ আমাদের এখানে স্থানীয়দের হাতে আটক হয়েছিলেন।’
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক ঝিনাইদহ কর অফিসে কর্মরত সাবেক এক কর্মকর্তা বলেন, ‘অনাথ যেখানে কর্মরত ছিলেন সেখান থেকে নানা অজুহাতে দুই হাত ভরে টাকা আয় করতেন। আওয়ামী লীগ সরকার ক্ষমতায় আসলে অনাথ আরো বেপেরোয়া হয়ে ওঠে। শুনেছি এখন সে খুলনা কর কমিশনার কার্যালয়ে সহকারী কর কমিশনার পদে দায়িত্ব পালন করছেন।’
সূত্র বলছে, অবৈধ পন্থায় আয়ের টাকা দিয়ে গ্রামের বাড়ি শৈলকুপার ফুলহরিতে গড়ে তুলেছেন আলীশান বাড়ি। খুলনার অভিজাত এলাকায় রয়েছে দুইটি বাড়ি। পার্শ্ববর্তী ভারতের পশ্চিবঙ্গেও একাধিক বাড়ি রয়েছে তার। এ ছাড়াও নিজের কন্যার জন্য কানাডাতেও বাড়ি কিনেছেন তিনি।
এ ব্যাপারে সহকারী কর কমিশনার অনাথ বন্ধু সাহা কোনো মন্তব্য করতে রাজি হননি।