<p>১৭ অক্টোবর থেকে নেপালের কাঠমাণ্ডু শহরে বসবে মেয়েদের সাফ ফুটবলের আসর। এবার শিরোপা ধরে রাখার অভিযানে যাচ্ছেন বাংলাদেশের মেয়েরা। ম্যাচ প্রস্তুতির ঘাটতি থাকলেও শিরোপা জেতার লক্ষ্য ঠিক করেছেন দলের কোচ <strong>পিটার বাটলার</strong>। সেসব নিয়েই ব্রিটিশ এই কোচের সঙ্গে কথা বলেছেন কালের কণ্ঠ’র প্রতিবেদক <strong>রানা শেখ</strong>।</p> <p>কালের কণ্ঠ : দক্ষিণ এশিয়ার শ্রেষ্ঠত্ব মিশনের খুব বেশিদিন বাকি নেই। প্রস্তুতি কেমন চলছে?</p> <p>পিটার বাটলার : যেমনটা আশা করেছিলাম সেভাবেই প্রস্তুতি নিচ্ছি আমরা। ম্যাচ খেলার সুযোগ না পেলেও মেয়েরা প্রস্তুতিতে খুবই ভালো করছে। নিজেদের মধ্যে ম্যাচ খেলেই আমরা অনুশীলন সেশন করছি।</p> <p>প্রশ্ন : প্রস্তুতি ম্যাচ খেলতে পারলে নিশ্চয়ই নিজেদের অবস্থান বুঝতে পারতেন। এতে কি প্রস্তুতিতে কিছুটা ঘাটতি থেকে গেল?</p> <p>পিটার বাটলার : এটা আমাদের জন্য কিছুটা দুঃখজনক। এর পরও আমাদের ইতিবাচক হিসেবে নিতে হবে। কোনো ম্যাচ নেই মানে নিজেদের পরখ করে নেওয়ার সুযোগ নেই।</p> <p>শুধু অনুশীলন করে প্রস্তুতি নেওয়া খুবই কঠিন। আমাদের আসলে কিছু করার নেই। আমরা তিন মাস আগে দুটি ম্যাচ খেলেছিলাম, চায়নিজ তাইপে এবং ভুটানের বিপক্ষে। দুটি প্রতিপক্ষই একেবারে আলাদা ছিল। যদিও আমরা ভিন্ন অভিজ্ঞতা পেয়েছি।</p> <p>প্রশ্ন : শিরোপা ধরে রাখার লক্ষ্যে খেলতে যাচ্ছে বাংলাদেশ। এতে কি বাড়তি চাপ অনুভব করছেন?</p> <p>পিটার বাটলার : দুই বছর আগের দল নিয়ে আমার কোনো ধারণা নেই। আমি পেছনে ফিরে তাকাতে পছন্দ করি না। আমার হাতে যাঁরা আছেন তাঁদের নিয়ে পরিকল্পনা করেছি। সর্বশেষ আসরে বাংলাদেশ শিরোপা জিতেছিল, এটা গর্বের ব্যাপার। এখন সেটা মাথায় রাখলে চাপ বাড়াটা স্বাভাবিক। যেটা হয়ে গেছে সেটা তো শেষ, অতীত হয়ে গেছে সেটা। আপনাকে সামনে এগিয়ে যেতে হবে।</p> <p>প্রশ্ন : দুই বছর আগে সাফে খেলা দলটি লম্বা সময় ধরে একসঙ্গে থাকায় বোঝাপড়া দারুণ ছিল। এবার তো নতুন কিছু খেলোয়াড় এসেছেন। দলের ভারসাম্য কেমন দেখছেন?</p> <p>পিটার বাটলার : আমি একজন আত্মবিশ্বাসী মানুষ। কিছু সময় আমরা জিতব, আবার কিছু সময় হারব; আবার কিছু সময় জয়ের পথ খুঁজে বের করতে হবে। যে দল নিয়ে আমি কাজ করছি, আমার বিশ্বাস এরা দারুণ ও আকর্ষণীয় ফুটবল খেলবে। আক্রমণভাগে দারুণ কিছু খেলোয়াড় আছেন। এঁরা অনেক সাহসী। পাশাপাশি এই দলের মেয়েরা শৃঙ্খলা মেনে চলেন। চায়নিজ তাইপে ও ভুটানের বিপক্ষে বেশ কয়েকজনকে ছাড়াই খেলতে হয়েছিল। তহুরা খাতুন, শামসুন্নাহার, আফিদা খন্দকার ছিলেন না। এর পরও আমরা ভালো করেছিলাম। আমি বিশ্বাস করি, এবারের দল একেবারে আলাদা এবং অন্যান্যবারের চেয়েও ভালো।</p> <p>প্রশ্ন : আপনি দায়িত্ব নিয়েই পারফরমারদের গুরুত্ব দিয়েছেন। শুধু অভিজ্ঞদের দিকে না ছুটে তরুণদের সুযোগ দিয়েছেন। এটার কারণ কী?</p> <p>পিটার বাটলার : আমার কাছে মনে হয়, বাংলাদেশের পাশাপাশি দক্ষিণ এশিয়ার অন্য দলগুলোও শুধু সাফ নিয়েই চিন্তা করে। শুধু সাফের দলগুলোর সঙ্গে নিজেদের তুলনা করে। এখন একটা ব্যাপার লক্ষ্য করেছি যে বড় দলগুলোর পাশাপাশি কম শক্তির দলগুলোও উন্নতির পথে আছে। সপ্তাহের পর সপ্তাহ, মাসের পর মাস ধরে পরিকল্পনা করে উন্নতির ছক আঁকছে। শুধু এক বছর নয়, দুই-তিন-পাঁচ বছরের পরিকল্পনা নিয়ে এগোচ্ছে। বাংলাদেশেরও তেমনটা করা উচিত। আমি তরুণদের নিয়ে সেটাই করতে চেয়েছি। এখানেও অনেক প্রতিভাবান খেলোয়াড় আছেন, যাঁরা পর্যাপ্ত সুযোগ পেলে নিজেদের মেলে ধরতে পারবেন। আমি নিশ্চয়তা দিচ্ছি না, তবে বিশ্বাস করি। এঁদের দিয়েও সাফল্য পাওয়া সম্ভব। আমি সব সময় স্বচ্ছ থাকতে চেয়েছি। স্বচ্ছতা নিয়েই দল সাজাতে পছন্দ করি। আমি একজন ভালো কোচ হতে চাই, সৎ কোচ হতে চাই। সাফের আগে এসে ‘হাই’, ‘হ্যালো’ করবেন কিন্তু জিততে না পারলে আপনিই আমাকে খারাপ কোচ বানিয়ে দেবেন! আমার কাছে মনে হয়, সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ হচ্ছে পারফরমারদের সুযোগ করে দেওয়া। কাউকে বাদ দিতে আমি ভয় পাই না। ২৩ জনের দলে যে-ই থাকুন না কেন, তাঁদের বিশ্বাস করতে হবে সেরাটা না দিলে সাফল্য পাওয়া যাবে না।</p> <p>প্রশ্ন : অভিজ্ঞতার সঙ্গে নৈপুণ্যের ক্ষেত্রে কতটা সমঝোতা করবেন?</p> <p>পিটার বাটলার : আমার দলে কেউ-ই ‘অটো চয়েস’ নন। শুরু থেকে খেলতে হলে অনুশীলনে নিজেকে প্রমাণ করতে হবে। বোঝাতে হবে আমি খেলতে চাই।</p> <p>প্রশ্ন : আপনার অধীনে মেয়েরা চারটি আন্তর্জাতিক ম্যাচ খেলেছেন। প্রতিটা ম্যাচেই আক্রমণাত্মক, কৌশলে খেলেছেন। কোন ছকে খেলাতে সবচেয়ে স্বাচ্ছন্দ্যবোধ করেন?</p> <p>পিটার বাটলার : ফরমেশনের ব্যাপারে আমি আক্রমণাত্মক। আমরা ভিন্ন ধারায় অনুশীলন করছি। ম্যাচেও সেটা বাস্তবায়ন করার চেষ্টা করব। আমি একটি আক্রমণাত্মক দলের কোচ, আমিও তাই সেই কৌশলই পছন্দ করি। আবার প্রতিপক্ষ কোন কৌশলে খেলে সেটাও আমাদের মাথায় রাখতে হবে। হ্যাঁ, সাফেও আমরা আক্রমণাত্মক মনোভাব নিয়েই খেলব। আমাদের মানসিকতা উঁচুতে রাখতে হবে।</p> <p>প্রশ্ন : পাকিস্তানের বিপক্ষে প্রথম ম্যাচ বাংলাদেশের। কেমন শুরুর আশা করছেন?</p> <p>পিটার বাটলার : পাকিস্তানের প্রতি আমাদের অনেক শ্রদ্ধা। ওদের হালকাভাবে নেওয়া যাবে না। আমরা তিন পয়েন্ট পকেটে নিয়ে টুর্নামেন্ট শুরু করতে চাই। আমাদের গ্রুপে ভারতও আছে। ওরা ঠিক কোন অবস্থায় আছে, সেটা প্রথম ম্যাচ (ভারত-পাকিস্তান) দেখলেই বুঝতে পারব। তার পরই পরিকল্পনা সাজাব।</p> <p>প্রশ্ন : শিরোপা অক্ষুণ্ণ রাখার ব্যাপারে আপনি কতটা আশাবাদী?</p> <p>পিটার বাটলার : আগেই বলেছি, এবারের দলটার ওপর আমার বিশ্বাস অনেক। তাই আমরা জেতার লক্ষ্যেই যাচ্ছি। তবে আমাদের আরো নিখুঁত ও সাহসী হতে হবে। আশা করছি, মেয়েরা মাঠে পরিকল্পনা বাস্তবায়ন করতে পারবেন। তাহলে হয়তো লক্ষ্য পূরণ হয়ে যেতে পারে।</p>