<p style="text-align:justify">পঞ্চগড় জেলা ও দায়রা জজ কার্যালয়ের নিয়োগে সাবেক আইনমন্ত্রী আনিসুল হকের নির্বাচনী এলাকা ব্রাহ্মণবাড়িয়ার কসবা ও আখাউড়া উপজেলা থেকে ৮ জন প্রার্থী নিয়োগ পেয়েছেন। ৬টি পদে নিয়োগ দেওয়া ৩৪ জনের মধ্যে ওই ৮ জন ছাড়াও অন্য জেলা থেকে নিয়োগ দেওয়া হয়েছে ১৩ জনকে। আর পঞ্চগড় জেলা থেকে নিয়োগ পেয়েছেন মাত্র ১৩ জন।</p> <p style="text-align:justify">নিয়োগ বিজ্ঞপ্তিতে ২৯ জন নিয়োগের কথা বলা হলেও ৩৪ জনকে নিয়োগ দেওয়া হয়েছে। বিষয়টি নিয়ে প্রশ্ন তোলেন অনেকেই। সামাজিক যোগাযোগের মাধ্যমেও বেশ আলোচনার সৃষ্টি হয়েছে এই নিয়োগকে কেন্দ্র করে। এবার সাবেক আইনমন্ত্রীর হস্তক্ষেপে যাদের নিয়োগ হয়েছে, তাদের নিয়োগ বাতিলের দাবিতে আন্দোলনে নেমেছেন শিক্ষার্থীরা। </p> <p style="text-align:justify">মঙ্গলবার (৮ অক্টোবর) দুপুরে সচেতন পঞ্চগড়বাসী ও শিক্ষার্থীদের ব্যানারে আদালতের সামনে মানববন্ধন কর্মসূচি পালন করেন তারা। মানববন্ধনে বক্তব্য দেন বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন পঞ্চগড়ের সমন্বয়ক ফজলে রাব্বী, ঢাকা মেট্রো পুলিশ আইডিয়াল ল কলেজের আইন বিভাগের শিক্ষার্থী রেজাউল করিম রেজা ও মকবুলার রহমান সরকারি কলেজের বাংলা বিভাগের শিক্ষার্থী মনিরুজ্জামান ফয়সাল। </p> <p style="text-align:justify">এ সময় বক্তারা জানান, পঞ্চগড় জেলা ও দায়রা জজ কার্যালয়ে গত মার্চে সার্ট-মুদ্রাক্ষরিক কাম কম্পিউটার অপারেটর পদে ১ জন, অফিস সহকারী কাম কম্পিউটার অপারেটর পদে ২ জন, অফিস সহকারী পদে ৯ জন, গাড়িচালক পদে ১ জন, জারিকারক পদে ৮ জন, অফিস সহায়ক পদে ৮ জনের নিয়োগের বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করে কর্তৃপক্ষ। নিয়োগ পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হয় ৩ ও ৪ মে। ২১ মে পরীক্ষায় উত্তীর্ণদের তালিকা প্রকাশ করা হয়। ২৮ মে থেকে ২ জুন যোগদানের সময় নির্ধারণ করা হয়।</p> <p style="text-align:justify">নিয়োগ পরীক্ষার আগেই সাবেক আইনমন্ত্রীর হস্তক্ষেপমুক্ত ও পঞ্চগড়ের যোগ্য মেধাবীদের নিয়োগের দাবিতে মানববন্ধন করে আইনজীবীসহ জেলার সচেতন নাগরিকরা। তাদের শঙ্কা ছিল, বরাবরের মতো এবারও আদালতের নিয়োগে সাবেক আইনমন্ত্রী আনিসুল হক তার এলাকার লোকজনকে নিয়োগ দেবেন। বঞ্চিত হবে পঞ্চগড়ের শিক্ষিত বেকার তরুণরা। </p> <p style="text-align:justify">পরে ঘোষিত ফলাফলে দেখা যায়, আওয়ামী লীগ সরকারের ওই আইনমন্ত্রীর নির্বাচনী এলাকার ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলার কসবা ও আখাউড়া উপজেলা থেকে ৮ জন নিয়োগ পেয়েছেন। দিনাজপুর থেকে ৩ জন, ঠাকুরগাঁও থেকে ৩ জন, রাজশাহী থেকে ২ জন ও কুষ্টিয়া, গোপালগঞ্জ, ময়মনসিংহ, ঝিনাইদহ, রংপুর থেকে নিয়োগ পেয়েছেন ১ জন করে। এ ছাড়া পঞ্চগড় জেলা থেকে নিয়োগ পেয়েছেন মাত্র ১৩ জন। এ ছাড়া ২৯ জন নিয়োগ দেয়ার কথা থাকলেও নিয়োগ দেওয়া হয়েছে ৩৪ জনকে। অফিস সহকারী পদে ৯ জনের বদলে ১২ জন ও অফিস সহায়ক পদে ৮ জনের  বদলে ১০ জন নিয়োগ দেওয়া হয়েছে। </p> <p style="text-align:justify">আনিসুল হকের এলাকা থেকে যারা নিয়োগ পেয়েছেন তারা হলেন অফিস সহকারী পদে ব্রাহ্মণবাড়িয়ার আখাউড়া উপজেলার রাধানগর কলেজপাড়া এলাকার দিদারুল ইসলাম, কসবা উপজেলার তালতলা এলাকার আরিফুল ইসলাম শান্ত, কসবা উপজেলার সাহাপাড়া এলাকার ধ্রুব দত্ত, জারিকারক পদে কসবা উপজেলার মইনপুর গোবিন্দপুর এলাকার মহিন উদ্দিন মিয়া, কসবার তেতৈয়া এলাকার আব্দুল কাদির, অফিস সহায়ক পদে আখাউড়া উপজেলার মসজিদপাড়া রজব আলী। কসবা উপজেলার নেমতাবাদ ভরা জাঙ্গাল এলাকার নিবাস চন্দ্র দাস, কসবা উপজেলার বিষ্ণাউড়ী ধজনগর এলাকার মোহাম্মদ আল আমিন। </p> <p style="text-align:justify">জেলা বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সমন্বয়ক ফজলে রাব্বী বলেন, জেলা ও দায়রা জজ কার্যালয়ে বারবার নিয়োগে পঞ্চগড়ের মানুষকে বঞ্চিত করা হয়েছে। যেখানে আইনের শাসন চলার কথা সেখানেই হয়েছে বেআইনি কাজ। আনিসুল হক আইনমন্ত্রী হওয়ার পর থেকে এখানে যতগুলো নিয়োগ হয়েছে তার হস্তক্ষেপে তার এলাকার মানুষদের নিয়োগ দেওয়া হয়েছে। পঞ্চগড়ের মেধাবীদের বঞ্চিত করে কোটি কোটি টাকার নিয়োগ বাণিজ্য করেছেন তিনি। তাই অবিলম্বে তার হস্তক্ষেপে যাদের নিয়োগ হয়েছে, তাদের বহিষ্কার করতে হবে। একই সঙ্গে তাকে বিচারের মুখোমুখি করতে হবে। </p> <p style="text-align:justify">এর আগে একাধিকবার সাবেক আইনমন্ত্রী আনিসুল হকের নিয়োগ বাণিজ্যের প্রতিবাদে আন্দোলন করেছেন জেলা পরিষদের সাবেক প্রশাসক ও জেলা আওয়ামী লীগের সাবেক আইনবিষয়ক সম্পাদক ও সিনিয়র আইনজীবী আবু বকর সিদ্দিক।</p> <p style="text-align:justify">তিনি বলেন, ‘এবারও হাজার হাজার টাকা খরচ করে নিয়োগের আবেদন করে পরীক্ষায় অংশ নিয়েছে ঠিকই কিন্তু তাদের মধ্যে অল্প কয়েকজন নিয়োগ পেলেও বেশির ভাগ নিয়োগ পেয়েছে সাবেক আইনমন্ত্রীর এলাকা ব্রাহ্মণবাড়িয়াসহ অন্য এলাকার মানুষ। ক্ষমতার প্রভাব খাটিয়ে এবারো বঞ্চিত করা হয়েছে পঞ্চগড়ের মেহনতি শ্রমজীবী মানুষের সন্তানদের। পঞ্চগড়ে তেমন কোনো ভারী শিল্পপ্রতিষ্ঠান নেই। তাই বেকারের সংখ্যা অনেক বেশি। সব দিকেই আমরা পিছিয়ে রয়েছি। এই অনিয়ম তদন্ত করে ব্যবস্থা নেওয়া উচিত।’</p>