<p>ভূমধ্যসাগর ও এজিয়ান সাগরের তীরে অবস্থিত ইউরোপীয় দেশ গ্রিসে গত মঙ্গলবার (১ অক্টোবর) অভিবাসী পুলিশের হেফাজতে একজন বাংলাদেশি মারা গেছেন। ২৯ বছর বয়সী ওই বাংলাদেশি রাজধানী এথেন্সে একটি থানার হাজতে আটক ছিলেন বলে জানা গেছে। এ ঘটনায় সুষ্ঠু তদন্তের দাবি করেছে এথেন্সে অবস্থিত বাংলাদেশ দূতাবাস ও অভিবাসন সংস্থাগুলো। </p> <p>এথেন্সের বাংলাদেশ দূতাবাস সোমবার ইনফোমাইগ্রেন্টসকে বলেছে, ‘আমরা এটিকে আপাতত অপমৃত্যু হিসেবে দেখছি। বাকিটা তদন্তে শেষ জানা যাবে। স্থানীয় কমিউনিটি সূত্রে জানা গেছে, নিহত ব্যক্তির নাম খালিস মিয়া। তার দেশের বাড়ি সুনামগঞ্জ জেলার ছাতক উপজেলায়।’</p> <p>নিহত খালিস মিয়াকে বাংলাদেশি অধ্যুষিত ওমোনিয়া এলাকা থেকে পুলিশের গাড়ির ক্ষতি করার অপরাধে আটক করা হয়েছিল বলে জানিয়েছে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ। তিনি একজন অনথিভুক্ত অভিবাসী ছিলেন বলে প্রাথমিকভাবে ধারণা করা হচ্ছে।</p> <p>পুলিশ জানিয়েছে, স্থানীয় সময় মঙ্গলবার সকালে পুলিশ সদস্যরা নিহত খালিস মিয়াকে ফাঁসিতে ঝুলতে দেখতে পান। তাকে যে সেলে রাখা হয়েছিল, সেখানে আরো ১১ জন বন্দি ছিলেন। অভিবাসীর মৃত্যুর ঘটনা এথেন্সের প্রসিকিউটরকে জানানো হয়েছে বলে নিশ্চিত করেছে গ্রিক পুলিশ। এ ছাড়া একজন মেডিক্যাল পরীক্ষক ও ফৌজদারি অধিদপ্তরের একটি ইউনিট ঘটনা তদন্তের জন্য ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছে। </p> <p>গ্রিসে সদ্য দায়িত্ব নেওয়া বাংলাদেশ দূতাবাসের রাষ্ট্রদূত নাহিদা রহমান সুমনা এ ঘটনার বিষয়ে সোমবার ইনফোমাইগ্রেন্টসকে বলেন, ‘এ ঘটনায় আমি খুবই কষ্ট পেয়েছি। গ্রিসের মতো দেশে এটি মেনে নেওয়া কষ্টের। কর্তৃপক্ষ আমাদের এখনো আনুষ্ঠানিকভাবে কিছু জানায়নি। আমরা তাদের কাছে বিস্তারিত জানতে চেয়েছি।’</p> <p>তিনি আরো বলেন, ‘দূতাবাসের পক্ষ থেকে নিহতের একজন ভাইয়ের সঙ্গে যোগাযোগ করা হয়েছে। আমরা দেশে অবস্থানরত তার মায়ের সঙ্গে যোগাযোগের চেষ্টা করছি। পরিবারের সম্মতি মিললে এ ঘটনায় ন্যায়বিচার পেতে আমাদের পক্ষ থেকে একজন আইনজীবী নিয়োগ করা হবে।’</p> <p>গ্রিসে এ নিয়ে সাম্প্রতিক দিনগুলোতে দুইজন অভিবাসী পুলিশের হেফাজতে মারা গেলেন। গত মাসে একজন পাকিস্তানি অভিবাসী একই থানায় মারা গেলে এ বিষয়ে বিশদ তন্তের আদেশ দিয়েছেন দেশটির বিচার বিভাগ। গ্রিক পুলিশের বিরুদ্ধে বিভিন্ন সময় আইন ও ক্ষমতার অপব্যবহারের অভিযোগ উঠেছে৷ যার ফলে গ্রিক পুলিশ নিয়মিতভাবে বিভিন্ন অভ্যন্তরীণ শাস্তিমূলক পদ্ধতির সম্মুখীন হয়৷ তবে এসব অভিযোগে শাস্তির মাত্রা খুব কমই বলে অভিযোগ করে আসছেন অধিকারকর্মীরা৷ </p> <p>গ্রিসে পুলিশি হেফাজতে অভিবাসী মৃত্যুর ঘটনার বিষয়ে ইনফোমাইগ্রেন্টসের সঙ্গে কথা বলেছেন দেশটির অভিবাসন সংস্থা কেরফার পরিচালক ও এথেন্স মিউনিসিপ্যালিটির কাউন্সিলর পেট্রোস কনস্টান্টিনো। তিনি বলেন, ‘গ্রিসে বর্তমানে বিভিন্ন ঘটনার পরিপ্রেক্ষিতে পুলিশি সহিংসতার মুখোমুখি হচ্ছেন অভিবাসী ও আশ্রয়প্রার্থীরা। খালিস মিয়াকে আটকের মাত্র দেড় ঘণ্টা পর তিনি মৃত্যুবরণ করেছেন। আমরা মনে করছি, সহিংসতায় তার মৃত‍্যু হয়েছে।’</p> <p>পেট্রোস কনস্টান্টিনো বলেন, ‘পুলিশ প্রথমে বলেছিল, খালিস মিয়া পুলিশের গাড়ি ভাঙচুর করেছে। আমরা সেই গাড়ি দেখতে চাইলে তারা জানায় তিনি গাড়ির আয়না ভেঙেছেন। তার মানে একটি গাড়ির আয়নার জন্য একজন অভিবাসীর প্রাণ চলে গেল? গত মাসে পাকিস্তানি অভিবাসী কামরানও এভাবে মারা গেলেন। আমরা তদন্ত কর্মকর্তা পরিবর্তনের দাবি জানিয়েছি এবং প্রাথমিক ময়নাতদন্ত প্রত্যাখ্যান করেছি।’</p> <p>এদিকে এ ঘটনায় সোমবার আটককেন্দ্র ও হাজতে মানুষের অধিকার নিয়ে দায়িত্বরত জাতিসংঘের বিশেষ সংস্থা প্রতিনিধিদলের সঙ্গে বৈঠক করেছে কেরফাসহ অভিবাসন ও অধিকার সংগঠনগুলো। পেট্রোস কনস্টান্টিনো বলেন, ‘আমরা জাতিসংঘের প্রতিনিধিদলের আগমনকে স্বাগত জানাই। তাদের উচিত গ্রিক সরকারকে পরামর্শ প্রদান করা। গ্রিসে বর্ণবাদ সীমা অতিক্রম করেছে। এগুলো পরিবর্তন হওয়া দরকার।’</p> <p>উল্লেখ্য, এথেন্সের অ্যাজিওস প্যানটেলিমন পুলিশ স্টেশনটি এক দশক আগে ‘নব্য-নাৎসি’ দল গোল্ডেন ডনের সঙ্গে যোগসূত্রের জন্য সমালোচিত হয়েছিল৷</p> <p>খালিস মিয়া মৃত্যুর প্রতিবাদে আগামী ১২ অক্টোবর ঘটনাস্থলে সামনে বিক্ষোভের ডাক দিয়েছে বাংলাদেশি কমিউনিটি ইন গ্রিস, বাংলাদেশ প্রবাসী অধিকার পরিষদ, অভিবাসন সংস্থা কেরফাসহ বেশ কয়েকটি সংগঠন।</p> <p>সূত্র : ইনফোমাইগ্রেন্টস</p>