বাংলাদেশের দ্বীপগুলোর মধ্যে অন্যতম একটি দ্বীপ হচ্ছে মনপুরা দ্বীপ। অন্য দ্বীপদেশগুলোর মতো জাঁকজমক না হলেও প্রাকৃতিক শোভা থেকে মোটেই বঞ্চিত হয়নি এই দ্বীপটি। ২০০৯ সালে ‘মনপুরা’ চলচ্চিত্রটি মুক্তি পাওয়ার পর থেকে ভ্রমণপিপাসুদের নজরে পড়ে দ্বীপটি। দেশের মূল ভূখণ্ডের সঙ্গে সরাসরি কোনো যোগসূত্র না থাকলেও তারা ছুটে গেছে এই দ্বীপ সৈকতে।
এই প্রতিবেদনে জেনে নেওয়া যাক সেই মনপুরা দ্বীপ ভ্রমণের আদ্যোপান্ত।
মনপুরা নামের পটভূমি
দ্বীপের নাম কিভাবে মনপুরা হলো, সে নিয়ে অনেক মতভেদ আছে। স্থানীয় বয়োজ্যেষ্ঠদের মতে, দ্বীপের অপরূপ সৌন্দর্য ও উপকূলবর্তী খাবার আগন্তুকদের মন জয় করত। এ কারণেই দ্বীপ ও ইউনিয়নের নাম মনপুরা হয়েছে।
সংগৃহীত ছবি
অনেকের ধারণা, মনগাজী শাহবাজপুর জমিদারের কাছ থেকে ইজারা নেওয়া হয়েছিল বিস্তৃত এই জায়গাটি। ফলে তার নামের ওপর ভিত্তি করেই এলাকার নামকরণ করা হয়েছে।
এ ছাড়া একটি অদ্ভুত গল্পও প্রচলিত আছে এ দ্বীপকে ঘিরে। জায়গাটিতে আগে বাঘ ও হাতির মতো হিংস্র সব জন্তু-জানোয়ার বিচরণ করত।
একদা মনগাজী নামের এক লোক বাঘের আক্রমণে শিকার হয়ে বেঘোরে প্রাণ হারান। সেই থেকে সবাই দ্বীপটিকে মনপুরা নামে ডাকতে শুরু করে।
দ্বীপের ভৌগোলিক অবস্থান
বঙ্গোপসাগরের উত্তর দিকে মেঘনা নদীর মোহনায় ৩৭৩ বর্গকিলোমিটার জায়গা নিয়ে জেগে আছে দ্বীপটি। বরিশালের ভোলা জেলার মূল ভূখণ্ড থেকে বিচ্ছিন্ন স্থলভাগটির তিন দিকে মেঘনা আর একদিকে বঙ্গোপসাগর। ভোলা জেলার প্রাণকেন্দ্র থেকে ৮০ কিলোমিটার দক্ষিণ পূর্ব দিকে অবস্থিত মোট চারটি ইউনিয়ন নিয়ে গঠিত এই মনপুরা উপজেলা।
আরো পড়ুন
ট্রেকিং, হাইকিং ও ক্যাম্পিংয়ে সাপের কামড় থেকে দূরে থাকবেন যেভাবে
এর উত্তরের উপজেলার তজুমদ্দিন, দক্ষিণে রয়েছে বঙ্গোপসাগর এবং পূর্বে নোয়াখালী জেলার হাতিয়া। পশ্চিমে রয়েছে তজুমদ্দিনের কিছু অংশ, লালমোহন ও চরফ্যাশন উপজেলা।
মনপুরা দ্বীপের বিশেষত্ব
মনপুরার আকর্ষণীয় বিষয়গুলোর মধ্যে প্রথমেই আছে মাইলের পর মাইল সবুজ ম্যানগ্রোভ বন। দক্ষিণের চির সতেজ বনের চারপাশ ঘিরে আছে নদীর ঢেউ।
উপজেলা ঘুরে দেখার সময় পর্যটকদের দৃষ্টি আকর্ষণ করে উপজেলা পরিষদের ৫ দিঘি ও চৌধুরী ফিশারিজ প্রজেক্ট। মেঘনা নদীর ওপর দিয়ে ৫০০ মিটার দীর্ঘ মনপুরা ল্যান্ডিং স্টেশনটি এখানকার বেশ জনপ্রিয় একটি স্থান। বিকেল থেকে শুরু করে রাত অবধি এখানে ভিড় হয় দ্বীপবাসী ও ভ্রমণপিপাসুদের।
সংগৃহীত ছবি
আলমনগর কেওড়া বনে নদীর পার ধরে ভিড় করা হরিণে পাল আলাদাভাবে মনপুরার প্রতিনিধিত্ব করে। জোয়ারের সময় হরিণগুলো মূল সড়কের একদম কাছাকাছি চলে আসে। কখনো এমন অবস্থা হয়, এদের নির্বিঘ্নে রাস্তা পার হওয়ার জন্য গাড়ি থামিয়ে অপেক্ষা করা ছাড়া আর কোনো উপায় থাকে না।
এ ছাড়া মনপুরার চরগুলো শীতের মৌসুমে বিচিত্র ধরনের অতিথি পাখির কলকাকলিতে মুখরিত হয়ে থাকে। ছোট-বড় সব মিলিয়ে মোট ১০টি চর রয়েছে এই মনপুরায়। এগুলো হলো চর মুজাম্মেল, চর পাতালিয়া, চর নিজাম, চর পিয়াল, লালচর, চর শামসুউদ্দিন, ডাল চর, কলাতলীর চর ও চর নজরুল।
আরো পড়ুন
ঘুরতে গিয়ে খরচ কমাবেন যেভাবে
মনপুরা দ্বীপ ভ্রমণের সেরা সময়
কুয়াকাটার মতো সূর্যোদয় ও সূর্যাস্ত দেখার জন্য এই দ্বীপের খ্যাতি রয়েছে। জনবসতির মাঝে দেখা যায় বিশাল এলাকাজুড়ে বিস্তৃত পুকুর, যাকে ঘিরে দাঁড়িয়ে আছে সারি সারি নারকেলগাছ।
মনপুরা দ্বীপ। ছবি : সংগৃহীত
যারা সাইক্লিং করতে ভালোবাসেন, তাদের জন্য এই মনপুরা সেরা জায়গা। এ ছাড়া সবুজের সমারোহে ক্যাম্পিং করা যেকোনো হোটেলে রাত্রিযাপনের দারুণ বিকল্প হতে পারে।
এখানে মন ভরে ঘুরতে হলে আসতে হবে শীতকালে। কিছুটা শুষ্ক থাকায় ঠাণ্ডা মৌসুমে সাইক্লিং ও তাঁবু খাটানোর আনন্দটা পুরোটাই পাওয়া যাবে। পাশাপাশি সুযোগ থাকে বিরল সব অতিথি পাখি দর্শনের। অন্যান্য মৌসুমে, বিশেষ করে বর্ষার সময় এখানে আসার সমুদ্রপথটা বেশ কঠিন হয়ে পড়ে।
কিভাবে যাবেন
ভোলা শহরের স্থলভাগের সঙ্গে সরাসরি কোনো যোগসূত্র না থাকায় এই দ্বীপে পৌঁছানোর একমাত্র বাহন হচ্ছে লঞ্চ ও ট্রলার। এ জন্য প্রথমে ঢাকার সদরঘাট থেকে হাতিয়ার লঞ্চে উঠতে হবে। লঞ্চগুলো প্রতিদিন বিকেল ৫টায় ছাড়ে এবং পরদিন সকাল সাড়ে ৭টার মধ্যে মনপুরা পৌঁছে।
১২ থেকে ১৩ ঘণ্টার এই দীর্ঘ যাত্রায় লঞ্চের ডেক ভাড়া নেবে জনপ্রতি ৪০০ টাকা। নন-এসি সিঙ্গেল কেবিন ভাড়া ২ হাজার টাকার মতো এবং ডাবল কেবিন ভাড়া ২ হাজার ৫০০ টাকা প্রায়। এ ছাড়া আরো ভালো মানের কেবিনও রয়েছে। সেগুলোর জন্য আরো বেশি ভাড়া গুণতে হবে। ফেরার সময় সরাসরি ঢাকার পথ ধরতে হলে মনপুরার রামনেওয়াজ লঞ্চঘাটে দুপুর ২টার আগেই উপস্থিত থাকতে হবে।
আরো পড়ুন
ঢাকার কাছেই ঈশা খাঁর জঙ্গলবাড়ি, ঘুরে আসুন এক দিনেই
আরেকটি পথ হচ্ছে ঢাকা থেকে বরিশালের ভোলা হয়ে যাওয়া। ঢাকা-টু-মনপুরা লঞ্চগুলো রাত ১২টার দিকে ভোলার জংশন ঘাটে থামে। এরপর থামে ইলিশা ফেরিঘাটে রাত সাড়ে ১২টায়, দৌলতখান ঘাটে রাত ২টায় এবং রাত সোয়া ৩টায় হাকিমুদ্দিন ঘাটে। শেষ রাতে পৌনে ৪টায় সরাজগঞ্জ ঘাটে ভেড়ে, আর সব শেষে ভোর পৌনে ৫টায় থামে তজুমুদ্দিন ঘাটে। এই ঘাটগুলোর যেকোনোটি থেকে মনপুরায় যাওয়া যায়।
তজুমদ্দিন ঘাট থেকে মনপুরা দ্বীপের উদ্দেশে সি-ট্রাক ছাড়ে প্রতিদিন বিকেল ৩টায়। পরদিন সকাল ১০টায় এটি মনপুরা থেকে ফেরার পথ ধরে। এ ছাড়া ভোলার চরফ্যাশনের বেতুয়াঘাট থেকে মনপুরার লঞ্চ আছে, যেটি জনতা বাজারে থামে। তবে এই পথটি এপ্রিল থেকে নভেম্বর মাস পর্যন্ত আবহাওয়া প্রতিকূল থাকার কারণে বন্ধ থাকে।
হাজিরহাট। ছবি : সংগৃহীত
দ্বীপে এক জায়গা থেকে আরেক জায়গায় যাওয়ার উপায় হলো অটোরিকশা, রিকশা, মোটরসাইকেল, বোরাক ও সাইকেল। এক মোটরসাইকেলে পুরো দ্বীপ ঘোরার জন্য খরচ পড়তে পারে ৭০০ থেকে ৮০০ টাকা।
মনপুরা দ্বীপে থাকা-খাওয়ার ব্যবস্থা
এখানে রাত্রি যাপনের জন্য রয়েছে উপজেলা সরকারি ডাকবাংলো, পানি উন্নয়ন বোর্ডের ভবন এবং কিছু বেসরকারি হোটেল। সরকারি ডাকবাংলো ও পানি উন্নয়ন বোর্ডের ভবনে থাকার জন্য যথারীতি আগে থেকেই অনুমতি নিতে হবে। এগুলোতে বেশ স্বল্প খরচে রাত কাটানো যাবে।
অন্যান্য হোটেলে রুম ভাড়া নিতে পারে ৩০০ থেকে ৫০০ টাকার মতো। হাজির বাজার ও পুলিশ ফাঁড়ির পাশে পাওয়া যাবে মোটামুটি মানের বাজেট হোটেল। এখানে সিঙ্গেল রুম ১০০ টাকা, আর ডাবল রুম ২০০ টাকা ভাড়া পাওয়া যাবে। একটু ভালো মানের হোটেলের জন্য যেতে হবে বাজারের একদম শেষ প্রান্তে। সেখানে ৩০০ টাকায় সিঙ্গেল রুম এবং ৫০০ থেকে ৬০০ টাকা ভাড়ায় ডাবল রুমের ব্যবস্থা করা যেতে পারে।
সংগৃহীত ছবি
এখানকার সেরা খাবার হচ্ছে মহিষের দুধের দই আর মেঘনার ইলিশ। এখানে শীতের সময় প্রায় সব হোটেলেই হাঁসের মাংস ভুনা পাওয়া যায়। এ ছাড়া আরো আছে বোয়াল, কোরাল ও গলদা চিংড়ির মতো দারুণ সব সামুদ্রিক খাবার।
মনপুরা দ্বীপে ভ্রমণকালীন প্রয়োজনীয় সতর্কতা
গত কয়েক বছর ধরে দ্বীপটি ভূমি ক্ষয়ের প্রবল ঝুঁকিতে রয়েছে। বর্ষাকাল এড়িয়ে শীতকালে এলেও দ্বীপে ঘুরে বেড়ানোর সময় সতর্ক থাকতে হবে। এ জন্য যাওয়ার আগে অবশ্যই দ্বীপের বর্তমান অবস্থার কথা জেনে নিবেন। এ ছাড়া আরো কিছু সতর্কতা হচ্ছে—
নদী ভ্রমণের সময় সঙ্গে লাইফ জ্যাকেট পড়ে নিন।
ভ্রমণকালে যেকোনো বিষয়ে লেনদেনের আগে ভালোভাবে দরদাম করে নেবেন।
দলগতভাবে ভ্রমণে খরচ বাঁচে এবং নিরাপত্তাও জোরদার হয়। এরপরও অতিরিক্ত সাবধানতার জন্য স্থানীয় প্রশাসনের যোগাযোগ নাম্বারগুলো সংগ্রহে রাখবেন।
পাশাপাশি স্থানীয় লোকদের সঙ্গে ভালো ব্যবহার করুন, এতে নানা বিপদে-আপদে তারা এগিয়ে আসবে।
দ্বীপের পরিবেশ ও সৌন্দর্য রক্ষার্থে সতর্ক থাকুন। এমন কোনো কাজ করা উচিত নয়, যার ফলে প্রকৃতি ও দ্বীপবাসী উভয়ের ক্ষতিসাধন হয়।
আরো পড়ুন
সাগরের মাঝে এক টুকরো স্বর্গ নিঝুম দ্বীপ, যেভাবে যাবেন
যেখানে জনস্রোতের কোলাহল থেমে যায়, সেখানে সরব হয়ে ওঠে প্রকৃতির কণ্ঠস্বর। এমনি নির্জনতায় তাঁবু থেকে সাগরের গর্জনে ঢাকা পড়তে পারে হরিণের পালের পায়চারির শব্দ। এর সঙ্গে ম্যানগ্রোভ বনের গাছের বৈঠকি সংগীত মনপুরা দ্বীপ ভ্রমণ ষোলো আনা পুষিয়ে দিতে পারে। তখন সাইকেলে চেপে পুরো দ্বীপ ঘুরতে গিয়ে সৈকতে চাকা আটকে যাবার বিরক্তিটাও সযত্নে তোলা থাকবে স্মৃতির মণিকোঠায়। বাড়ি ফেরার পর সে স্মৃতি তাড়না দিবে জানালার ওপারে দিগন্তরেখায় কোনো অর্ধচন্দ্রাকার ডিঙি নৌকা খোঁজার।
ষাটগম্বুজ মসজিদ বাংলাদেশের বাগেরহাট জেলার দক্ষিণ-পশ্চিমে অবস্থিত একটি ঐতিহাসিক মসজিদ। এটি বাংলার প্রথম স্বাধীন মুসলিম সুলতান শামসুদ্দীন ইলিয়াস শাহের বংশধর সুলতান নাছিরুদ্দীন মাহমুদ শাহের রাজত্বকালে নির্মাণ করা হয়। খানজাহান আলী দিল্লী থেকে এসে সুন্দরবন অঞ্চলে ইসলামিক খেলাফত প্রতিষ্ঠা করেন এবং বাগেরহাট শহরকে তাঁর প্রশাসনিক কেন্দ্র হিসেবে গড়ে তোলেন। এই মসজিদটি ছিল তাঁর বৃহত্তম কীর্তি।
মসজিদটির আকার বেশ বড়। মসজিদের বাইরের দৈর্ঘ্য প্রায় ১৬০ ফুট ও প্রস্থ ১০৪ ফুট। মসজিদের ভেতরের দৈর্ঘ্য ১৪৩ ফুট ও প্রস্থ ৮৮ ফুট। দেয়ালগুলোর পুরুত্ব প্রায় ৮.৫ ফুট।
মসজিদটির গম্বুজের সংখ্যা মোট ৮১। তবে লোকমুখে এটি ষাটগম্বুজ নামে পরিচিত। কিছু ঐতিহাসিকের মতে, সাতটি সারিবদ্ধ গম্বুজের কারণে মসজিদের নাম সাত গম্বুজ থেকে ষাটগম্বুজ হয়ে গেছে। কিছু গবেষক মনে করেন, গম্বুজের সংখ্যা ৬০টির স্তম্ভের ওপর নির্মিত হওয়ার কারণে মসজিদটির নাম ষাটগম্বুজ হয়েছে।
মসজিদের দেয়ালে ১১টি বড় খিলানযুক্ত দরজা রয়েছে। যার মধ্যে মাঝের দরজাটি সবচেয়ে বড়। এ ছাড়া উত্তর ও দক্ষিণ দেয়ালে ৭টি করে দরজা এবং মসজিদের ৪ কোণে ৪টি মিনার রয়েছে। মিনারগুলোর উচ্চতা ছাদের কার্নিশের চেয়ে বেশি। দুটি মিনারে সিঁড়ি রয়েছে, যেখানে আজান দেওয়ার ব্যবস্থা ছিল।
মসজিদের ভেতরে ৬০টি পাথরের স্তম্ভ রয়েছে। যা ৬টি সারিতে বিভক্ত। ৫টি স্তম্ভ ইটের হলেও বাকি স্তম্ভগুলো পাথরের। মসজিদের গম্বুজ এই স্তম্ভগুলোর ওপর স্থাপন করা হয়েছে।
মসজিদটি বর্তমানে একটি দর্শনীয় স্থানে পরিণত হয়েছে। বাহারি ফুলের গাছ দিয়ে আঙিনা সাজানো হয়েছে। ঐতিহাসিকদের মতে, খানজাহান আলী ৯০ বছর বয়সে এই মসজিদে এশার নামাজরত অবস্থায় মৃত্যুবরণ করেন। তাঁর কবর মসজিদের পাশের দিঘির পাড়ে অবস্থিত।
মোগল আমলে ঢাকা বাংলার রাজধানী হওয়ায়, ষাটগম্বুজ মসজিদ একসময় লোকচক্ষুর অন্তরালে চলে যায়। তবে ২০১৪ সাল থেকে এটি সরকারি ব্যবস্থাপনায় পরিচালিত হচ্ছে। এখানে রেস্ট হাউস ও গেস্ট হাউস নির্মাণ করা হয়েছে। দর্শকদের জন্য টিকিট সিস্টেম চালু করা হয়েছে।
কিভাবে যাবেন :
ঢাকার গুলিস্তান থেকে সরাসরি বাসে বাগেরহাট যেতে পারেন। গাবতলী থেকেও বাগেরহাটে যাওয়ার বাস রয়েছে। সময় নিয়ে যাতায়াত করতে চাইলে বাগেরহাট থেকে মোংলা গিয়ে সুন্দরবন ঘুরে আসা সম্ভব। বাগেরহাটে থাকার জন্য কিছু হোটেল রয়েছে, তবে সেখানে থাকার ব্যবস্থা সীমিত।
প্রিন্সেপ ঘাট
আমরা রওনা হলাম ঐতিহাসিক স্থান প্রিন্সেপ ঘাটের দিকে। কলকাতার ঘিঞ্জি শহর থেকে দূরে নির্জনে অবস্থিত প্রিন্সেপ ঘাট। হুগলি নদীর তীরে ঐতিহাসিক এ স্থানটি ব্রিটিশ আমলে ১৮৪১ সালে নির্মিত হয়েছে। ব্রিটিশ যাত্রীবাহী জাহাজের ওঠানামার কাজে ব্যবহার করা হত এই ঘাট।
ব্রিটিশরা ভারতবর্ষের প্রাকৃতিক ও খনিজ সম্পদ লুট করে নিয়ে যেত এই ঘাট দিয়ে।
ঘাটে পৌঁছে দেখলাম বিশেষ আকর্ষণীয় একটি মনুমেন্ট নির্মাণ করা হয়েছে। অন্ধকার আর বাহারি লাইট মিলিয়ে এক অপরূপ দৃশ্য ধারণ করেছে প্রিন্সেপ ঘাট। মনুমেন্টের পেছনে আবছা অন্ধকারে ছেয়ে আছে।
ঘাটের চারপাশের পরিবেশ বেশ মনোরম ও খোলামেলা, ডান দিকে সুসজ্জিত একটি পার্ক। বাহারি খাবারের দোকানে বিক্রি হচ্ছে পাউ ভাজি, ফুচকা। ঘাটকে ঘিরে পর্যটককেন্দ্র ভালোই গড়ে উঠেছে। সিঁড়ি বেয়ে ঘাটের নিচে নামলাম।
পানির ওপর কয়েকটি জাহাজ নোঙর করা আছে। হুগলি নদীতে ভাটা চলছে। পানির ওপর আলোর ঝাপটা পড়ে অন্য রকম এক আবহ সৃষ্টি হয়েছে। সত্যিই ব্রিটিশ নির্মিত ঘাটের সৌন্দর্য্যের তুলনা হয় না।
হাওড়া ব্রিজ
দিনের শেষ ভ্রমণ হিসেবে বাসে চেপে রওনা হলাম হাওড়া ব্রিজের দিকে।
কলকাতা ও হাওড়া শহরের মধ্যে সংযোগকারী ব্রিজ হচ্ছে হাওড়া। সেতুর মূল আকর্ষণ হলো এতে কোনো পিলার নেই। বিশাল স্টিলের পাত একটার সঙ্গে আরেকটা জুড়ে বানানো হয়েছে। ব্রিজটি দেড়শ বছরের ইতিহাসের সাক্ষী দাঁড়িয়ে আছে। নাটবল্টু ছাড়াই ১৮৭৪ সালে ব্রিটিশরা নির্মিত করেছিলেন হাওড়া ব্রিজ। হাওড়া এখনো বিশ্বের ষষ্ঠ দীর্ঘতম সেতু।
হাওড়া ব্রিজের কাছে পৌঁছে দেখলাম ব্রিজের দুই পাশের পানির ওপর আলো পড়ে অন্য রকম আবহ সৃষ্টি করেছে। উপভোগ করছি, আলোর ছন্দে ছন্দে রং বদলানোর দৃশ্যপট। ভাবছি, আঠারো শতকে সেতু প্রকৌশল ও প্রযুক্তি জ্ঞানের কথা। দেড় শ বছর আগে কিভাবে নকশা প্রনয়ণ করে, নাটবল্টু ছাড়াই ব্রিজ নির্মাণ করল? সত্যি, ইংরেজরা শুধু ভারতবর্ষ নয় পুরো পৃথিবী শাসন করতো বুদ্ধির জোরে।
পথচারীদের দেখে মনে হচ্ছে, ব্রিজের ওপর দিয়ে নির্বাচনী মিছিল যাচ্ছে। মানুষের এমন চলন্ত স্রোত কখনো চোখে পড়েনি। দৈনিক ৮০,০০০ যানবাহন ও প্রায় ১০ লাখ পথচারী চলাচল করে।
জোড়াসাঁকোর ঠাকুরবাড়ি
দ্বিতীয় দিন সকালে রওনা হলাম কবি গুরুর জোড়াসাঁকোর বাড়ির উদ্দেশে। বাড়িতে প্রবেশের সময় মনে হচ্ছে ইতিহাসের পুরাতন অধ্যায়ে প্রবেশ করছি। বিশ্বভারতীর গেট পেরিয়ে সবুজ আঙিনা। ২০ রুপির টিকিট কেটে ঢুকে পড়লাম, বিশ্বকবির পদচারণে মুখরিত চোখধাঁধানো লাল বিল্ডিংয়ে। নীলমণি ঠাকুরের ১৭৮৪ খ্রিস্টাব্দে নির্মাণ করা জোড়াসাঁকোর ঠাকুরবাড়ি। বাড়ির সামনে মূর্তি হয়ে দাঁড়িয়ে আছেন মহর্ষি রবীন্দ্রনাথ। কবি গুরু হাতে বই রেখে সাহিত্য চর্চায় মগ্ন।
বিশ্বকবি ১৮৬১ সালে এ বাড়িতেই জন্মগ্রহণ করে ১৯৪১ সালে মারা যান। কবির স্মৃতি সংরক্ষণে মিউজিয়াম ও রবীন্দ্রভারতী বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠা করা হয়েছে বাড়িতে। ভবনটির দ্বিতীয় তলায় জাদুঘর ও সংরক্ষণাগার। সাউন্ড সিস্টেমে অবিরত রবীন্দ্রসংগীত বেজে চলেছে। বিল্ডিংয়ে রয়েছে সারি সারি রুম। প্রধান দর্শনীয় ঘরের নাম রবীন্দ্র প্রয়াণকক্ষ। এ ঘরেই কবি শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেছিলেন। বিছানাটি ঘেরা রয়েছে কাঠের বেষ্টনীতে। সময় সবাইকে অতীত করে দেয়। হোক সে মহা পরাক্রমশালী বা জ্ঞানী।
ভবনে আর্কাইভ করে রাখা হয়েছে কবি গুরুর লিখার প্রয়োজনীয় উপকরণ। আছে কবির ব্যবহৃত পোশাক ও তার নানা বয়সের ছবি। কবিপত্নী মৃণালিনী দেবীর রান্নার কাজে ব্যবহৃত তৈজসপত্র সংরক্ষণিত আছে যথাযথ ভাবে। রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর বিশ্ব ভ্রমণে গিয়ে ৩০টির অধিক দেশ ভ্রমণ করেছিলেন। কবির ভ্রমণকালীন স্মৃতি সংরক্ষণের জন্য রয়েছে সংগ্রহশালা। গ্যালারিতে প্রদর্শিত আছে কবির আগের কয়েক প্রজন্মের শিল্পকলা ও সাহিত্য। শিল্পাচার্য অবনীন্দ্রনাথ ঠাকুরের চিত্রকর্ম, তৈলচিত্র, ল্যান্ডস্ক্যাপ দেখে মুগ্ধ হয়ে যাচ্ছি। এ বাড়িতেই কবি তার সাহিত্যের উন্মেষ ঘটিয়েছিলেন। ১৯১৩ সালে কবি নোবেল পুরস্কারে ভুষিত হয়েছিলেন। সব শেষে সিঁড়ির পাশের রুমে চোখে পড়ল বিশ্বকবির বংশতালিকার ওয়ালমেট।
ভবনের তত্ত্বাবধায়ককে জিজ্ঞেস করলাম, দাদা একটা ছবি নেওয়া যাবে? উনি বললেন, জাদুঘরের ভেতরে ফটোগ্রাফি নিষিদ্ধ কিন্তু বাইরে অনুমোদিত। আমি ছবি নিলে কর্তৃপক্ষ তার চাকরিটা নিয়ে নেবে।
পরদিন সকালে কলকাতা থেকে ঢাকার উদ্দেশে রওনা হলাম। ফিরতি পথে ভাবছি, এক সময় দুই বাংলার মানুষের দেখা করতে ভিসা পাসপোর্ট লাগত না। দেশভাগের সময় ব্রিটিশরা রাজনীতির কূটখেলায় অবিভক্ত বাংলাকে বিভক্ত করে দিয়ে গেছেন। দুই বাংলায় চির বিভাজন সৃষ্টি হলো। হয়তো দুই বাংলার বিভাজনের দেওয়াল আর ভাঙবে না কখনো। দুই বাংলা পরস্পরের সংস্কৃতি থেকে বঞ্চিত হবে চিরকাল। এটি হয়তো দেশ বিভাজনের সময় তলিয়ে দেখেনি বাঙালি। হয়তো দেখার মতো চোখও তখন তাদের ছিল না।
ভিক্টোরিয়া মেমোরিয়ালে
কলকাতার পথ ঘাট আমাদের অজানা। সূর্য পশ্চিম দিগন্তে ডুব দেওয়ার আগে ট্যাক্সি ক্যাবে ভিক্টোরিয়া মেমোরিয়ালে পৌঁছে আমরা বিদেশি কোঠায় টিকিট কেটে নিলাম।
কলকাতা শহরে বৃটিশদের তৈরি অনেক ভবন আছে। মহারানি ভিক্টোরিয়ার স্মৃতিসৌধটি তাজমহলের আদলে তৈরি।
কেউ হঠাৎ দেখলে তাজমহল মনে করে গোলকধাঁধায় পড়ে যাবে। স্মৃতি সৌধটির মধ্যভাগে মসজিদের মতো বিশালাকার গম্বুজ। চারিধারে রয়েছে আরো চারটি ছোট গম্বুজ। বড় গম্বুজটির চূড়ায় পিতলে মোড়ানো পরী বসানো।
রবার্ট ক্লাইভ সিরাজুদ্দৌলাকে গদিচ্যুত করতে সেনাপতি মীর জাফরকে ঘুষ দিয়েছিল, প্রতিশ্রতি দিয়েছিল পরবর্তী নবাব করার। মাকড়সার জালে পোকামাকড় আঁটকে পড়ার মতো লোভের ফাঁদে আটকে গিয়েছিল মীর জাফর। তার বিশ্বাসঘাতকতার কারণে পলাশীর যুদ্ধে ১৭৫৭ সালে ব্রিটিশ ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানির কাছে পরাজিত হন সিরাজউদ্দৌলা। ভারতবর্ষে ইংরেজ শাসন প্রতিষ্ঠিত হয়।
১৮৭৬ সাল থেকে ১৯০১ সাল অবধি ভারতবর্ষে সম্রাজ্ঞীর দায়িত্ব পালন করেন রানি। রানির ক্ষমতার পরিধি ছিল দুনিয়ার এক প্রান্ত থেকে অন্য প্রান্ত পর্যন্ত। ১৯০১ ইং সালে রানী মৃত্যুবরণ করলে ব্রিটিশ শাসকরা রানীর স্মৃতি ধরে রাখতে নির্মাণ করেন ভিক্টোরিয়া মেমোরিয়াল। অত্যন্ত সুদর্শনা দেখাচ্ছে ব্রোঞ্জ দিয়ে নির্মিত রানিকে।
পৃথিবীর অনেক রাজা বাদশা, প্রজাদের কাছ থেকে লুন্ঠন করা ধনসম্পদ রানীকে খুশি করতে বখরা দিত।
সময়ের স্রোতে রানী আজ মূর্তি হয়ে দাঁড়িয়ে আছেন।
ভিক্টোরিয়ার স্মৃতিসৌধটি বর্তমানে জাতীয় সংগ্রহশালা। গ্যালারিতে রয়েছে মহারানি ও তার পরিবারের ব্যবহৃত জিনিসপত্র। ১৬৫০ সাল থেকে সংরক্ষিত আছে ইতিহাসের প্রতাপশালী ব্যক্তিদের পদক, অস্ত্রশস্ত্র, ভাস্কর্য, কস্টিউমস এবং ব্যক্তিগত স্মৃতিচিহ্ন। সেখানে খাপ থেকে তরবারি খুলে দাঁড়িয়ে আছেন লর্ড ক্লাইড। যার কুট বুদ্ধির কাছে হার মেনে ভারতবর্ষকে প্রায় দুইশো বছর পরাধীনতার গ্লানির স্বাদ নিতে হয়েছে। ভিক্টোরিয়া মেমোরিয়াল থেকে বিদায় নিয়ে যখন পথ চলতি সেন্ট পল’স ক্যাথিড্রাল এর দিকে। তখন সূর্য পশ্চিম আকাশে সামান্য ঔজ্জ্বল্য ছড়াচ্ছে। তেজহীন সূর্যটা যেন অন্ধকারের কাছে বিদায় চেয়ে নিচ্ছে।
সেন্ট পল’স ক্যাথিড্রাল
সেন্ট পল’স ক্যাথিড্রাল কলকাতার বৃহত্তম গির্জা। এটির ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপিত হয় ১৮৩৯ সালে। নির্মাণকার্য সমাপ্ত হয় ১৮৪৭ সালে। ক্যাথিড্রালে সকল ধর্মের মানুষের প্রবেশাধিকার রয়েছে। যে কোন ধর্মীয় উপাসনালয় মনকে অন্য রকম প্রশান্তিতে ভরে দেয়।
টিকেট কেটে ক্যাথিড্রাল এর ভেতরে প্রবেশ করলাম। চোখে পড়ল যিশুর একটা ভাস্কর্য। প্রবেশ পথের ডানদিকে আছে বড় গ্রন্থাগার। পাশে রয়েছে স্মারক দ্রব্যের প্রদর্শশালা। ক্যাথিড্রালের বাম পাশে বিশাল উপাসনার স্থান। সুনশান নিরবতা বিরাজ করছে। চেয়ারে বসে ধ্যানী বকের মতো কেউ অর্ধেক চোখ বুজে, কেউ চোখ অর্ধেক খুলে প্রার্থনায় মগ্ন।
ক্যাথিড্রাল থেকে বেরিয়ে এলাম। ক্যাথিড্রালে প্রবেশের আগে প্রকৃতি চারদিকে অন্ধকারের যে প্রাচীর টেনে দিয়েছিল, বিদ্যুতের আলো সে অন্ধকারের স্থান দখল দিয়ে ঝিকিমিকি করে হাসছে। দিনের ঘুমন্ত জীর্ণ শীর্ণ নোংরা কলকাতা যেন রাতে জেগে উঠছে আলোর ঝলকানিতে। ধবধবে আলোয় বয়োজ্যেষ্ঠা কলকাতা যেন সদ্য যৌবনে পদার্পণ করা ষোড়শীর যৌবন পেয়েছে। আমরা সামনের দিকে আসতেই চোখে পড়ল বিড়লা প্ল্যানেটেরিয়াম। এটি ক্যাথেড্রাল ঠিক সামনেই অবস্থিত। ১৯৮৮ সালে নির্মিত এই প্ল্যানেটেরিয়ামটি এশিয়ার বৃহত্তম প্ল্যানেটেরিয়াম ও বিশ্বের দ্বিতীয় বৃহত্তম। টেলিস্কোপে চোখ রেখে মহাকাশের বিস্ময়কর দারুণ সব গ্রহ নক্ষত্র দেখা যায় এই সেন্টার থেকে। এটি রাতের আকাশে ভার্চুয়াল ভ্রমণ এবং মহাজাগতিক শো প্রদশন করে। এই
প্ল্যানেটেরিয়াম থেকে জ্যোতিবিজ্ঞান, মহাকাশবিজ্ঞান এবং গ্রহ নক্ষত্র সংক্রান্ত মহাবিশ্বের তথ্য জানতে পারে মানুষ ।
মহাকাশ বিজ্ঞান সম্পর্কে বিজ্ঞানীদের দেওয়া তথ্য অনেকেরই অজানা। আমাদের পৃথিবী নামক গ্রহের আয়তন ৫১ কোটি বর্গ কিলোমিটার। সূর্য পৃথিবী থেকে ১৫ কোটি কিলোমিটার দূরে অবস্থিত। পৃথিবী থেকে সূর্য তের লক্ষ গুন বড়। শুক্র, মঙ্গল, বৃহস্পতি, শনি, ইউরেনাস, নেপচুন ও পৃথিবী সহ যে ৮ টি গ্রহ সূর্যের চারপাশে ঘুরছে, আমরা একেই বলি সৌর জগৎ। সূর্য অবস্থান করছে মিল্কিওয়ে গ্যালাক্সিতে।
বিজ্ঞানীদের মতে, একশো থেকে চারশ বিলিয়ন সূর্যের মতো নক্ষত্র মিল্কিওয়ে গ্যালাক্সির চারপাশে চক্রাকারে ঘুরছে। মহাকাশে দুই লক্ষ কোটি মিল্কিওয়ে গ্যালাক্সি আছে যা আমরা রাতের আকাশে তারা হিসাবে দেখি। মহাসাগরের পানির কাছে এক বালতি পানি যেমন তুচ্ছ তেমনি মহাবিশ্বের তুলনায় ক্ষুদ্র আমাদের এ পৃথিবী। তাহলে স্রষ্টা কত বড় আর তার শক্তি কতুটুকু, এটা মানুষের পক্ষে কল্পনা করাও অসম্ভব। সৃষ্টির বিশালত্বের কথা কেউ চিন্তা করলে সে কখনো ঠগবাজী, হানাহানি, খুনোখুনির কথা চিন্তা করবে না।
যাদুকাটা নদী সুনামগঞ্জ জেলার বাংলাদেশ-ভারত উত্তর-পূর্ব সীমান্তে অবস্থিত একটি সুন্দর নদী। এর দৈর্ঘ্য ৩৭ কিলোমিটার এবং প্রস্থ ৫৭ কিলোমিটার। নদীটির উৎপত্তি ভারতের খাসিয়া জৈন্তিয়া পাহাড় থেকে। জৈন্তিয়া পাহাড় থেকে নদীটি বাংলাদেশের সুনামগঞ্জ জেলার বিশ্বম্ভপুরে প্রবেশ করেছে।
পরে দক্ষিণ দিকে প্রবাহিত হয়ে সুরমা নদীতে গিয়ে মিশেছে। নদীর গভীরতা ৮ মিটার ও অববাহিকার আয়তন ১২৫ বর্গকিলোমিটার। সারা বছর ধরে এই নদীতে পানি থাকে। বর্ষা মৌসুমে পানির প্রবাহ সবচেয়ে বেশি থাকে।
যাদুকাটা নদীর নামকরণ :
এই নদীটির আদি নাম ছিল রেণুকা। কথিত আছে যে, একদিন গ্রামের একজন বধু নদীর তীরে বসে তার শিশুপুত্র যাদুকে কোলে নিয়ে মাছ কাটছিলেন। কিন্তু এক পর্যায়ে তিনি ভুলক্রমে তার সন্তানকে মাছের জায়গায় কেটে ফেলেন। এই ঘটনাটি থেকেই নদীটির নাম হয় যাদুকাটা।
যাদুকাটা নদীর সৌন্দর্য :
যাদুকাটা নদীর একদিকে সবুজ পাহাড় আর নীল আকাশ। পাহাড় ও আকাশের মিলনে এক অপূর্ব দৃশ্য সৃষ্টি হয়। নদীটির আশপাশে দেখতে পাওয়া যায় স্থানীয় মানুষদের পাথর, কয়লা ও বালি আহরণ করার দৃশ্য। বাংলাদেশের খনিজ শিল্পে যাদুকাটা নদীর অবদান গুরুত্বপূর্ণ।
নদীর সৌন্দর্য উপভোগ করতে দেশ-বিদেশের শত শত পর্যটক এখানে আসেন।
কীভাবে যাদুকাটা নদী ভ্রমণ করবেন :
যাদুকাটা নদীতে ঘুরতে যাবার জন্য প্রথমে আপনাকে সুনামগঞ্জ যেতে হবে। ঢাকা থেকে সুনামগঞ্জ যেতে শ্যামলী, এনা, হানিফ, গ্রীন লাইন, এস আলম সোহাগ পরিবহনসহ বেশ কয়েকটি বাস চলাচল করে। বাস ভাড়া ৭০০ থেকে ১৩০০ টাকা পর্যন্ত হতে পারে। যাত্রা সময় প্রায় ৬ ঘণ্টা। এরপরে সুনামগঞ্জ বাস স্টেশনে নেমে আপনি অটোরিকশা বা সিএনজিতে করে যাদুকাটা নদী যেতে পারবেন। এ ছাড়া ঢাকা থেকে ট্রেনে সিলেট যাওয়ার পর সিলেটের কুমারগাঁও বাসস্ট্যান্ড থেকে সুনামগঞ্জের উদ্দেশ্যে বিরতিহীন বাস ছাড়ে।
খাবারের ব্যবস্থা :
যাদুকাটা নদীর আশেপাশে তেমন খাবারের হোটেল নেই। লাউড়ের গড় বাজারে কিছু খাবারের হোটেল পাওয়া যায়। বারিক্কা টিলার নিচে সকালের নাস্তা ও দেশী খাবারের হোটেল রয়েছে। এ ছাড়া আপনি সুনামগঞ্জ শহরে গিয়ে রেস্টুরেন্ট থেকে খাবার নিইয়ে আসতে পারেন।
থাকার ব্যবস্থা :
টাঙ্গুয়ার হাওর ভ্রমণের সময় পর্যটকরা হাউসবোর্ডে রাত্রি যাপন করে থাকেন। যারা নদীসংলগ্ন থাকতে চান তারা বড়ছড়া বাজারে কিছু আবাসিক হোটেলে থাকতে পারেন। সুনামগঞ্জ শহরের বিভিন্ন হোটেলে ১০০০ থেকে ৪০০০ টাকার মধ্যে থাকার ব্যবস্থা পাওয়া যায়।