ফিলিস্তিনের দক্ষিণ ও মধ্য গাজায় ইসরায়েলি হামলা এবং কামানের আঘাতে সাত শিশুসহ কমপক্ষে ২৩ জন ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছেন। আহত হয়েছেন আরো অনেকেই।
স্থানীয় সময় আজ মঙ্গলবার ভোরে এই হামলা চালায় ইসরায়েলি বাহিনী। খবর আল জাজিরার।
ফিলিস্তিনের দক্ষিণ ও মধ্য গাজায় ইসরায়েলি হামলা এবং কামানের আঘাতে সাত শিশুসহ কমপক্ষে ২৩ জন ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছেন। আহত হয়েছেন আরো অনেকেই।
স্থানীয় সময় আজ মঙ্গলবার ভোরে এই হামলা চালায় ইসরায়েলি বাহিনী। খবর আল জাজিরার।
এর আগের দিন গাজায় ইসরায়েলি হামলায় অন্তত ৬৫ জন নিহত হয়েছেন, এমনটি জানিয়েছে ফিলিস্তিনের স্বাস্থ্য কর্তৃপক্ষ। এই পরিস্থিতিতে মিশর ফিলিস্তিনের এই ভূখণ্ডে যুদ্ধবিরতি ফেরাতে নতুন একটি প্রস্তাব দিয়েছে, যা এখনো ইসরায়েল আনুষ্ঠানিকভাবে গ্রহণ করেনি।
গাজার যুদ্ধবিরতি গত ১৯ জানুয়ারি শুরু হলেও, ১৮ মার্চ (মঙ্গলবার) ইসরায়েল হামলা শুরু করে। এতে এ পর্যন্ত প্রায় ৭০০ মানুষের মৃত্যু হয়েছে, যাদের মধ্যে অন্তত ৪০০ জন নারী ও শিশু।
সম্পর্কিত খবর
জাতিসংঘের বিশ্ব খাদ্য কর্মসূচির (ডব্লিউএফপি) মাধ্যমে রোহিঙ্গা শরণার্থীদের জন্য ৭৩ মিলিয়ন ডলার নতুন আর্থিক সহায়তা দেওয়ার ঘোষণা দিয়েছে যুক্তরাষ্ট্র।
মার্কিন পররাষ্ট্র দপ্তরের মুখপাত্র ট্যামি ব্রুস এক্স (সাবেক টুইটার) পোস্টে বলেছেন, ‘ডব্লিউএফপির মাধ্যমে এই খাদ্য ও পুষ্টি সহায়তা ১০ লাখের বেশি মানুষের জন্য অত্যন্ত প্রয়োজনীয় খাদ্য ও পুষ্টি সহায়তা প্রদান করবে।’
তিনি এ-ও বলেন, ‘এটা গুরুত্বপূর্ণ যে আমাদের আন্তর্জাতিক অংশীদাররা এ ধরনের জীবন রক্ষাকারী সহায়তার মাধ্যমে বোঝা ভাগ করে নেওয়ার সঙ্গে মিলিত হবেন।’
মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প ও তার প্রশাসন ‘আমেরিকা ফার্স্ট’ নীতির অংশ হিসেবে বিদেশি সহায়তায় ব্যাপক ছেদ টেনেছেন।
এর আগে, জাতিসংঘের দুটি সংস্থা সতর্ক করে দিয়েছিল যে তহবিলের ঘাটতি গত আট বছর ধরে প্রতিবেশী মায়ানমারে সহিংসতার কারণে পালিয়ে বাংলাদেশে আশ্রয় নেওয়া রোহিঙ্গাদের জন্য রেশনের পরিমাণ কমিয়ে দেবে। শরণার্থীরা আশঙ্কা করছেন যে, তহবিল হ্রাসের ফলে ক্ষুধা আরো বাড়বে। গুরুত্বপূর্ণ স্বাস্থ্যসেবা সুবিধা কমার পাশাপাশি এগুলো অপরাধ বাড়াবে বলেও আশঙ্কা করা হয়েছে।
মার্কিন পররাষ্ট্র দপ্তরের তথ্য অনুযায়ী, ২০১৭ সাল থেকে রোহিঙ্গা শরণার্থীদের সবচেয়ে বড় সহায়তা প্রদানকারী দেশ যুক্তরাষ্ট্র; প্রায় ২.৪ বিলিয়ন ডলার সহায়তা দিয়েছে দেশটি।
বিশ্ব বাণিজ্য সংস্থায় (ডব্লিউটিও) মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র আর্থিক সহায়তা বন্ধ করে দিয়েছে। বার্তা সংস্থা রয়টার্স তিনটি বাণিজ্যসংক্রান্ত সূত্রের বরাতে এ খবর জানিয়েছে। মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প প্রশাসনের সরকারি ব্যয় সংকোচন প্রচেষ্টার অংশ হিসেবেই এটি করা হয়েছে।
চলতি বছরের জানুয়ারিতে হোয়াইট হাউসে প্রত্যাবর্তনের পর থেকেই ট্রাম্প প্রশাসন ‘আমেরিকা ফার্স্ট’ অর্থনৈতিক নীতির সঙ্গে সাংঘর্ষিক বলে মনে করে এমন বৈশ্বিক প্রতিষ্ঠান থেকে সরে আসছে।
তারা বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থাসহ (ডব্লিউএইচও) কিছু প্রতিষ্ঠান থেকে বেরিয়ে যাওয়ার পরিকল্পনা করছে। ফেডারেল ব্যয়ের বিস্তৃত পর্যালোচনার অংশ হিসেবে অন্য প্রতিষ্ঠানগুলোতে বরাদ্দ কমিয়ে দিয়েছে।
২০১৯ সালে চীনের সঙ্গে একটি শুল্ক-যুদ্ধের সময় ট্রাম্প আপিল পরিচালনার জন্য বিচারক নিয়োগ বাধাগ্রস্ত করেন। এর পর থেকে ডব্লিউটিওর বিরোধ নিষ্পত্তি ব্যবস্থা কার্যকরভাবে বন্ধই রয়েছে।
জেনেভাভিত্তিক বাণিজ্য পর্যবেক্ষণকারী সংস্থা ডব্লিউটিওর ২০২৪ সালে বার্ষিক বাজেট ছিল ২০৫ মিলিয়ন সুইস ফ্রাঙ্ক (২৩২.০৬ মিলিয়ন ডলার)। ডব্লিউটিওর নথি অনুসারে, বিশ্বব্যাপী বাণিজ্যে তার অংশের সমানুপাতিক ফি ব্যবস্থার ভিত্তিতে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র এর প্রায় ১১% দেওয়ার কথা ছিল।
৪ মার্চ অনুষ্ঠিত ডব্লিউটিওর বাজেট সভায় একজন মার্কিন প্রতিনিধি জানান, আন্তর্জাতিক সংস্থাগুলোতে অবদানের পর্যালোচনা না হওয়া পর্যন্ত ২০২৪ এবং ২০২৫ সালের বাজেটে তাদের অর্থ প্রদান স্থগিত রাখা হয়েছে।
ওই বৈঠক সংশ্লিষ্ট দুটি সূত্র রয়টার্সকে জানিয়েছে, যে কোনো দিন এই পর্যালোচনার সিদ্ধান্ত যুক্তরাষ্ট্রের পক্ষ থেকে ডব্লিউটিওকে অবহিত করা হবে।
তৃতীয় একটি বাণিজ্য সূত্র নিশ্চিত করেছে, যুক্তরাষ্ট্রের পক্ষ থেকে তহবিল স্থগিত দীর্ঘায়িত হওয়ার আশঙ্কা থেকে ডব্লিউটিও একটি ‘প্ল্যান বি’ নিয়ে এগোচ্ছে। যদিও এ সম্পর্কে সূত্রটি বিস্তারিত কিছু বলেনি।
তিনটি সূত্রই গোপনীয়তা বজায় রাখার অনুরোধ করেছিল। কারণ বাজেট সভাটি ছিল রুদ্ধদ্বার। এর পাশাপাশি মার্কিন তহবিল স্থগিতের আনুষ্ঠানিক ঘোষণাও এখনও আসেনি।
হোয়াইট হাউস তাৎক্ষণিকভাবে এ ব্যাপারে মন্তব্য করতে রাজি হয়নি। জেনেভায় ডব্লিউটিওতে মার্কিন মিশনের একজন মুখপাত্র তাৎক্ষণিকভাবে মন্তব্যে রয়টার্সের অনুরোধের জবাব দেননি।
ডব্লিউটিওর মুখপাত্র ইসমাইলা দিয়েং বলেন, ‘মার্কিন বরাদ্দ আসছিল। তবে আন্তর্জাতিক সংস্থাগুলোকে সব ধরনের অর্থ প্রদান স্থগিত হওয়ার কারণে এটিও আটকা পড়েছে।’
তিনি মার্কিন কর্তৃপক্ষকে প্রশ্ন তুলে বলেন, ‘বকেয়া বরাদ্দ ডব্লিউটিও সচিবালয়ের পরিচালনা কার্যক্রমে প্রভাব ফেলতে পারে। কিন্তু সচিবালয় বিচক্ষণতার সঙ্গে নিজস্ব সম্পদ ব্যবস্থাপনা করে চলছে। যেকোনো আর্থিক বরাদ্দ বন্ধের কারণে উদ্ভূত সীমাবদ্ধতার মধ্যেও এটি কিভাবে পরিচালনা করা যায় সেই সক্ষমতা অর্জনের পরিকল্পনাও রয়েছে।’
ইরান সমর্থিত ইয়েমের হুতি গোষ্ঠী বৃহস্পতিবার জানিয়েছে, তারা ইসরায়েলি বিমানবন্দর ও সামরিক স্থাপনা এবং মার্কিন যুদ্ধজাহাজকে লক্ষ্য করে হামলা চালিয়েছে। এর কিছুক্ষণ আগেই ইসরায়েল জানায়, তারা ইয়েমেন থেকে ছোড়া ক্ষেপণাস্ত্র প্রতিহত করেছে।
হুতির সামরিক মুখপাত্র ইয়াহিয়া সারি বলেন, তারা বেন গুরিয়ন বিমানবন্দরকে ‘একটি ব্যালিস্টিক ক্ষেপণাস্ত্র দিয়ে’ এবং তেল আবিবের দক্ষিণে ‘একটি সামরিক লক্ষ্যবস্তুতে’ হামলা চালিয়েছে। এর আগে ইসরায়েলের সেনাবাহিনী জানায়, ইয়েমেন থেকে ছোড়া দুটি ক্ষেপণাস্ত্র তারা প্রতিহত করেছে, ‘যেগুলো ইসরায়েলি ভূখণ্ডে প্রবেশের আগেই ধ্বংস করা হয়’।
সারি আরো বলেন, বিদ্রোহীরা ‘লোহিত সাগরে শত্রু যুদ্ধজাহাজগুলোকেও লক্ষ্যবস্তু করেছে, যার মধ্যে রয়েছে মার্কিন বিমানবাহী রণতরি (ইউএসএস হ্যারি এস) ট্রুম্যান।’
হুতি মুখপাত্র জানান, ’আমাদের দেশের বিরুদ্ধে চলমান মার্কিন আগ্রাসনের প্রতিশোধ’ হিসেবে এ চালানো হয়েছে।
যুক্তরাষ্ট্র ১৫ মার্চ হুতির বিরুদ্ধে ব্যাপক আকারের সামরিক অভিযান চালায়, যা মার্কিন সেন্ট্রাল কমান্ড ‘বৃহৎ পরিসরের অভিযান’ বলে উল্লেখ করে।
২ জন নিহত
এর আগে হতি বৃহস্পতিবার জানায়, বিদ্রোহী নিয়ন্ত্রিত রাজধানী সানার কাছে রাতভর চালানো বিমান হামলায় দুই ব্যক্তি নিহত হয়েছেন।
হুতি মালিকানাধীন আল-মাসিরাহ টিভি চ্যানেল জানায়, সানা প্রদেশের উত্তর ও দক্ষিণ অংশে প্রায় ২০টি হামলা চালানো হয়েছে। এক্সে হুতি নিয়ন্ত্রিত স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র আনিস আল-আসবাহি বলেন, ‘মার্কিন আগ্রাসনে দুজন নিহত ও দুজন আহত হয়েছে।’
আল-মাসিরাহ আরো জানায়, স্থানীয় সময় বৃহস্পতিবার ভোরে সাদা শহরে নতুন করে বিমান হামলা চালানো হয়, যা হুতির উত্তরাঞ্চলীয় শক্ত ঘাঁটি হিসেবে পরিচিত। এর আগের দিন হুতি গণমাধ্যম জানায়, সেখানে ১৭ বার হামলা চালানো হয়েছে।
যুক্তরাষ্ট্র সব সময় এই ধরনের হামলার আনুষ্ঠানিক ঘোষণা দেয় না। তবে পেন্টাগনের এক কর্মকর্তা রবিবার এএফপিকে বলেন, মার্কিন বাহিনী ‘প্রতিদিন ও প্রতি রাতেই ইয়েমেনে ইরান সমর্থিত হুতির বিভিন্ন স্থানে হামলা চালিয়ে যাচ্ছে’।
চ্যাট গ্রুপ কেলেঙ্কারি
এদিকে হুতির দাবি করা সর্বশেষ হামলাগুলোর মধ্যেই যুক্তরাষ্ট্র একটি কেলেঙ্কারিতে জড়িয়ে পড়েছে, যা ১৫ মার্চের হামলার সঙ্গে সম্পর্কিত। দ্য আটলান্টিক ম্যাগাজিন তাদের হাতে আসা এমন তথ্য প্রকাশ করেছে, যেখানে মার্কিন প্রশাসনের শীর্ষ কর্মকর্তাদের মধ্যে একটি সিগন্যাল চ্যাট গ্রুপে ভুলবশত শেয়ার করা বার্তার বিবরণ রয়েছে।
হোয়াইট হাউস অবশ্য বৃহস্পতিবার এই কেলেঙ্কারির প্রতিক্রিয়ায় জানিয়ে বলেছে, এতে কোনো গোপনীয় তথ্য ফাঁস হয়নি। এরপর দ্য আটলান্টিক ১৫ মার্চের হামলার বিস্তারিত প্রকাশ করে। মার্কিন হামলার প্রতিক্রিয়ায় ইয়েমেনের উপকূলে বিমানবাহী রণতরী গ্রুপ ট্রুম্যানের ওপর একাধিক হামলা ও ইসরায়েলের দিকে ক্ষেপণাস্ত্র নিক্ষেপের দায় স্বীকার করে হুতি।
গাজা যুদ্ধ শুরুর পর হুতি গোষ্ঠী লোহিত সাগর ও এডেন উপসাগরে জাহাজ লক্ষ্য করে হামলা শুরু করে। ফিলিস্তিনিদের প্রতি সংহতির অংশ হিসেবে তারা এসব চালায় বলে দাবি করে। তবে জানুয়ারিতে গাজায় যুদ্ধবিরতি কার্যকর হলে তারা এসব হামলা বন্ধ করে। পরে চলতি মাসের শুরুতে গোষ্ঠীটি ঘোষণা দেয়, ইসরায়েলের মানবিক সহায়তা অবরোধের প্রতিবাদে তারা আবারও হামলা শুরু করবে। এর ফলে যুক্তরাষ্ট্র প্রথমবারের মতো ইয়েমেনে সামরিক অভিযান চালায়, যা প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের শাসনামলের পর প্রথমবার ঘটে।
মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের আমদানি শুল্ক বৃদ্ধির সিদ্ধান্তে মার্কিন ভোক্তাদের ব্যয় বাড়বে বলে মন্তব্য করেছেন ফ্যাশন রিটেইলার এইচঅ্যান্ডএমের প্রধান নির্বাহী ড্যানিয়েল এরভার। বৃহস্পতিবার রয়টার্সকে দেওয়া সাক্ষাৎকারে তিনি বলেন, ‘নতুন বাণিজ্য বাধার কারণে প্রতিষ্ঠানটি তাদের সরবরাহ চেইনে পরিবর্তন আনতে বাধ্য হচ্ছে।’
বর্তমানে এইচঅ্যান্ডএমের প্রধান উৎপাদনকেন্দ্র চীনে, যেখান থেকে আমদানির ওপর ইতিমধ্যে ২০ শতাংশ অতিরিক্ত শুল্ক আরোপ করেছেন ট্রাম্প। এ ছাড়া আরো কয়েকটি দেশ ‘পারস্পরিক শুল্কের’ ঝুঁকিতে রয়েছে, যা ২ এপ্রিল ঘোষণা করা হতে পারে।
যুক্তরাষ্ট্র এইচঅ্যান্ডএমের দ্বিতীয় বৃহত্তম বাজার হওয়ায় প্রতিষ্ঠানটি শুল্কের প্রভাব সামাল দিতে দাম বাড়াতে পারে। এরভার বলেন, ‘পরিশেষে এই খরচ ভোক্তাদেরই বহন করতে হবে। আমরা ন্যায়সংগত ও সমান বাণিজ্যে বিশ্বাসী, কিন্তু শুল্ক বৈশ্বিক বাণিজ্যের উন্নয়নে সহায়ক নয়।’
প্রধান নির্বাহী ড্যানিয়েল এরভার জানান, এইচঅ্যান্ডএম শুল্ক আরোপের ওপর নজর রাখছে এবং প্রস্তুতি নিচ্ছে।