ফিলিস্তিনের গাজা উপত্যকায় শত শত মানুষ হামাসবিরোধী বিক্ষোভে অংশ নিয়েছে। গাজার ক্ষমতা ছাড়তে হামাসের প্রতি আহবান জানিয়েছে তারা। ২০২৩ সালের অক্টোবরে ইসরায়েলি আগ্রাসন শুরুর পর গাজায় এটাই হামাসের বিরুদ্ধে সবচেয়ে বড় বিক্ষোভ।
তবে মুখোশধারী হামাস সদস্যরা বিক্ষোভকারীদের জোরপূর্বক ছত্রভঙ্গ করে দেয় এবং মারধর করে।
তাদের অনেকের হাতে অস্ত্র ও লাঠি ছিল।
সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়া ভিডিওতে গত মঙ্গলবার উত্তর গাজার বেইত লাহিয়ার সড়কে গাজার যুবকদের মিছিল করতে এবং ‘হামাস বেরিয়ে যাও’ স্লোগান দিতে দেখা যায়।
ইসলামিক জিহাদের বন্দুকধারীরা ইসরায়েলে রকেট হামলা চালানোর একদিন পর গাজায় এই বিক্ষোভ শুরু হয়। এই হামলার ফলে বেইত লাহিয়ার বিশাল অংশ খালি করার নির্দেশ দেয় ইসরায়েল, যা স্থানীয়দের মধ্যে ক্ষোভ সৃষ্টি করে।
প্রায় দুই মাসের যুদ্ধবিরতি শুরুর পর ইসরায়েল গাজায় পুনরায় সামরিক অভিযান শুরু করেছে। যুদ্ধবিরতির মেয়াদ বাড়ানোসংক্রান্ত একটি প্রস্তাব প্রত্যাখ্যানের জন্য হামাসকে দায়ী করেছে ইসরায়েল। অন্যদিকে গত জানুয়ারিতে স্বাক্ষরিত মূল চুক্তি ইসরায়েল অমান্য করেছে বলে অভিযোগ হামাসের। গত ১৮ মার্চ থেকে পুনরায় ইসরায়েলি অভিযান শুরুর পর শত শত ফিলিস্তিনি নিহত এবং হাজার হাজার বাস্তুচ্যুত হয়েছে।
বিক্ষোভে অংশ নেওয়া বেইত লাহিয়ার বাসিন্দা মোহাম্মদ দিয়াব বলেন, যুদ্ধে তাঁর বাড়ি ধ্বংস হয়ে গেছে এবং ইসরায়েলি বিমান হামলায় বছরখানেক আগে নিজের ভাইকে হারিয়েছেন। তিনি বলেন, আমরা কারো জন্য কোনো পার্টির এজেন্ডা বা বিদেশি রাষ্ট্রের স্বার্থের বলি হতে চাই না।
দিয়াব আরো বলেন, হামাসকে পদত্যাগ করতে হবে এবং শোকাহতদের কণ্ঠস্বর শুনতে হবে, যেই কণ্ঠস্বর ধ্বংসস্তূপের নিচ থেকে ভেসে আসে—এটা সবচেয়ে সত্যিকারের কণ্ঠস্বর।
আরেক ফুটেজে বিক্ষোভকারীদের ‘হামাসের শাসন নিপাত যাক, মুসলিম ব্রাদারহুডের শাসন নিপাত যাক’ বলে চিৎকার করতে শোনা যায়।
এ ছাড়া বেইত হানুন ও জাবালিয়ায়ও বিক্ষোভ হয়েছে।
এ সময় তাদের হাতে ‘আমরা মরতে রাজি নই’, ‘আমাদের শিশুদের রক্ত সস্তা নয়’ এবং ‘যুদ্ধ বন্ধ রাখুন’ প্ল্যাকার্ড দেখা গেছে।
এক বিক্ষোভকারী বলেন, ‘যথেষ্ট বাস্তুচ্যুতি হয়েছে। আমরা বাঁচতে চাই। অবরোধ খুবই তীব্র। খাবার, নিরাপত্তা, পানি, এমনকি টাকাও নেই। আমরা মর্যাদার সঙ্গে বাঁচতে চাই।’
আরেক বিক্ষোভকারী বলেন, ‘যদি গাজায় হামাসের ক্ষমতা ছেড়ে দেওয়াই সমাধান হয়, তাহলে জনগণকে রক্ষার জন্য হামাস কেন ক্ষমতা ছেড়ে দেয় না।’
নির্বাচনে জয়ের পর এবং প্রতিদ্বন্দ্বীদের উত্খাতের পর ২০০৭ সাল থেকে গাজায় এককভাবে শাসন করে আসছে হামাস। ২০২৩ সালে যুদ্ধ শুরুর পর হামাসের বিরুদ্ধে প্রকাশ্য সমালোচনা বেড়েছে। যদিও হামাসের অনুগত লোকও আছে অনেক। তাই গোষ্ঠীটির প্রতি সমর্থন কতটা কমেছে তা অনুমান করা কঠিন।
গাজার বাসিন্দা মোহাম্মদ আল-নাজার ফেসবুকে লিখেছেন, ‘মাফ করবেন; কিন্তু হামাস ঠিক কিসের ওপর বাজি ধরেছে? তারা আমাদের রক্তের ওপর বাজি ধরেছে, যেই রক্তকে পুরো বিশ্ব শুধু সংখ্যা হিসেবে দেখে থাকে। এমনকি হামাসের কাছেও আমরা একটি সংখ্যা মাত্র। পদত্যাগ করুন এবং আমাদের ক্ষত সারতে দিন।’
এদিকে হামাসকে গাজার ক্ষমতা ছেড়ে দেওয়ার আহবান জানিয়েছেন ফাতাহর গাজা শাখার মুখপাত্র মুনথার আল-হায়েক। তাঁর মতে, গাজায় হামাসের শাসন ফিলিস্তিনি স্বার্থের জন্য হুমকি।
অন্যদিকে হামাস বন্দিদের জিম্মি করে রাখলে গাজার কিছু অংশ দখলের হুমকি দিয়েছেন ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু। পার্লামেন্টে দেওয়া ভাষণে তিনি বলেন, হামাস যত বেশি সময় ইসরায়েলি বন্দিদের মুক্তি দিতে অস্বীকৃতি জানাবে, গাজার ওপর দমন তত বাড়বে। এর মধ্যে রয়েছে অঞ্চল দখল এবং অন্যান্য বিষয়।
বন্দিদের জীবিত ফিরিয়ে আনতে পারে যুদ্ধ—নেতানিয়াহুর এমন বক্তব্যকে মিথ্যা আখ্যা দিয়ে হামাস বলেছে, ইসরায়েল যদি বলপ্রয়োগ করে বন্দিদের উদ্ধারের চেষ্টা করে, তাহলে তাদের কফিনে ফিরিয়ে দেওয়া হবে।
গাজার স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, গত ২৪ ঘণ্টায় গাজায় ইসরায়েলি হামলায় আরো ৩৯ জন নিহত হয়েছে। আহত হয়েছে আরো ১২৪ জন। এ নিয়ে গাজায় নিহতের সংখ্যা ৫০ হাজার ১৮৩ জন হলো। আর গত ১৮ মার্চ থেকে ইসরায়েলি হামলায় অন্তত ৮৩০ জন নিহত হয়েছে। সূত্র : বিবিসি, আলজাজিরা