ইসরায়েলি ভয়াবহ তাণ্ডবে গাজা এখন মৃত্যুপুরী। হামলায় ধ্বংসস্তূপে পরিণত হওয়া এই নগরীতে আজ ঈদ। পুরো রমজান মাস ফিলিস্তিনিদের কেটেছে দুঃসহ কষ্টে। এ সময়ে তাদের সঙ্গী ছিল ইসরায়েলি বোমা, রক্ত আর মৃত্যুর ভয়।
ইসরায়েলি ভয়াবহ তাণ্ডবে গাজা এখন মৃত্যুপুরী। হামলায় ধ্বংসস্তূপে পরিণত হওয়া এই নগরীতে আজ ঈদ। পুরো রমজান মাস ফিলিস্তিনিদের কেটেছে দুঃসহ কষ্টে। এ সময়ে তাদের সঙ্গী ছিল ইসরায়েলি বোমা, রক্ত আর মৃত্যুর ভয়।
টানা দ্বিতীয় বছরের মতো গাজায় ঈদুল ফিতরের উৎসবমুখর পরিবেশ নেই। হাজার হাজার পরিবার তাদের ঘরবাড়ি এবং প্রিয়জনদের হারানোর শোকে অস্থায়ী তাঁবুতে বাস্তুচ্যুত হয়ে পড়ে আছে।
ইসলামিক ক্যালেন্ডার অনুসারে, বিশ্বব্যাপী মুসলমানরা রবিবার বা সোমবার ঈদুল ফিতরের প্রথম দিন উদযাপন করবে, যা চাঁদ দেখার ওপর নির্ভর করে। কিন্তু গাজায় ঈদ এলেও উদযাপন করার মতো আনন্দ নেই।
ফিলিস্তিনিরা বলছেন, ‘তাদের উদযাপনের কিছুই নেই’। ২০২৫ সালের ২ মার্চ থেকে ইসরায়েল সকল ক্রসিং বন্ধ করে দেয়। সকল মানবিক, চিকিৎসা এবং ত্রাণ সহায়তা প্রবেশে বাধা দিয়ে গাজা উপত্যকায় পূর্ণ অবরোধ আরোপ করেছে ইসরায়েল। বাজার প্রায় খালি এবং অবশিষ্ট যা পণ্য রয়েছে তার দাম চড়া, যার ফলে যুদ্ধের কারণে দরিদ্র ফিলিস্তিনিদের জন্য মৌলিক চাহিদা পূরণ করা প্রায় অসম্ভব হয়ে পড়েছে।
গত সপ্তাহে গাজা সরকারি মিডিয়া অফিস জানিয়েছে, হামলা এবং জীবন রক্ষাকারী সাহায্যের বাধার কারণে এই অঞ্চলটি দুর্ভিক্ষের প্রথম পর্যায়ে প্রবেশ করেছে।
গাজা শহরের পশ্চিমে অবস্থিত আল-শাতি শরণার্থী শিবিরে, ২৯ বছর বয়সী সুয়াদ আবু শাহলা একটি ছেঁড়া কাপড়ের তাঁবুর বাইরে বসে তার কান্নারত সন্তানকে শান্ত করার চেষ্টা করছেন।
চার সন্তানের মা সুয়াদ ২০২৪ সালের নভেম্বরে ইসরায়েলি বাহিনী বোমাবর্ষণ করলে বেইত লাহিয়ায় তার বাড়ি হারিয়ে ছিলেন। তারপর থেকে, তিনি এবং তার পরিবার একটি ভঙ্গুর আশ্রয়স্থলে নির্মম পরিস্থিতি সহ্য করেছেন।
তিনি বলেন, ‘গাজায় ঈদের অর্থ এখন আর নেই। যুদ্ধের আগে, আমরা শিশুদের জন্য পোশাক এবং মিষ্টি কিনতাম। এখন আমরা রুটিও কিনতে পারি না। আমার বাচ্চারা আমাকে জিজ্ঞেস করে, 'আমরা কি নতুন পোশাক পাব? আমরা কি কখনও বাড়ি ফিরব?' কিন্তু আমার কাছে কোনো উত্তর নেই।’
গাজা শহরজুড়ে যুদ্ধের ক্ষত সর্বত্র। ধসে পড়া ভবন, ধ্বংসস্তূপে ভরা রাস্তা এবং ক্ষতিগ্রস্ত অবকাঠামো সংঘাতের ভয়াবহতা প্রতিফলিত হচ্ছে। আল-রিমাল পাড়ায়, যা একসময় গাজা শহরের সবচেয়ে সমৃদ্ধ এলাকাগুলোর মধ্যে একটি ছিল, তার বেশিরভাগ ভবন সমতল হয়ে গেছে অথবা মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। পুড়ে যাওয়া গাড়ি এবং পতিত বিদ্যুৎ লাইন নির্জন রাস্তায় পড়ে আছে।
মারওয়ান আল-হাদ্দাদ নামে একজন বলেন, ‘গত বছর যুদ্ধ সত্ত্বেও আমরা আনন্দের পরিবেশ তৈরি করার চেষ্টা করেছি। এখন আমি আমার বাচ্চাদের জন্য মিষ্টিও কিনতে পারছি না। তিনি গত সপ্তাহে সাম্প্রতিক ইসরায়েলি উত্তেজনার পর বেইত হানুন থেকে বাস্তুচ্যুত হয়েছিলেন।
তিনি বলেন, ‘আমি কীভাবে আমার বাচ্চাদের বলতে পারি যুদ্ধ কবে শেষ হবে?’ তিনি আরো বলেন, ‘যখনই আমরা বোমা হামলার শব্দে ঘুম থেকে উঠি, তখনই আমরা বুঝতে পারি যে শান্তি এখনও অনেক দূরে।’
ব্যবসায়িক মালিকদের জন্য পরিস্থিতি ঠিক ততটাই ভয়াবহ। যুদ্ধের আগে গাজা শহরের কেন্দ্রস্থল ওয়েহদা স্ট্রিটে বেশিরভাগ দোকান এখন বন্ধ অথবা ধ্বংস হয়ে যায়। মিষ্টির দোকানের মালিক ইব্রাহিম সিয়াম তার ব্যবসার জন্য দুঃখ প্রকাশ করেন।
তিনি বলেন, ‘ঈদের সময় আমি কেজি কেজি মিষ্টি বিক্রি করতাম। এখন, মানুষ রুটি খুঁজে পায় না।’ গাজা উপত্যকার উত্তরে জাবালিয়া শরণার্থী শিবিরে বাজারের কার্যক্রম স্থবির রয়ে গেছে। পোশাকের দোকানের মালিক আব্দুল রহমান আল-জেইন বলেন, ‘ঈদের পোশাক কেনার সামর্থ্য খুব কম লোকেরই আছে। মানুষ বেঁচে থাকার দিকে মনোনিবেশ করছে।’
দক্ষিণ গাজা উপত্যকার খান ইউনিসে ৩২ বছর বয়সী ফাতিমা কুদেইহ বলেন, ‘আমার সন্তানরা জিজ্ঞাসা করে কেন আমরা আগের মতো নতুন পোশাক কিনি না, বাজারে যাই না। আমি তাদের বলি, যুদ্ধ শেষ হওয়ার পরে আমরা পোশাক কিনব, কিন্তু তারা আমার কথায় বিশ্বাস হারাতে শুরু করেছে।’
বেঁচে থাকার সংকল্প
দক্ষিণ গাজার খান ইউনিসের একটি আশ্রয়কেন্দ্রে। ফিলিস্তিনি নারীরা কাক নামে ঐতিহ্যবাহী ঈদের বিস্কুট তৈরি করছেন। ১৮ মার্চ ২০২৫ তারিখে পুনরায় শুরু হওয়া ইসরায়েলি সামরিক আক্রমণ সত্ত্বেও এই নারীরা চাচ্ছেন সন্তানদের মনোবল কিছুটা চাঙ্গা করতে। এক সমুদ্র শোক, যুদ্ধ, ঘরবাড়ি ও প্রিয়জনদের হারানো এই মানুষগুলো আপ্রাণ চেষ্টা করছে তাদের সন্তানদের মন ভালো করতে।
কাওসার হুসেন আশ্রয়কেন্দ্রের কোণে একটি মাটির চুলার পাশে বসে ঈদের বিস্কুট বেক করার জন্য আগুন জ্বালানোর চেষ্টা করছেন, তখন ইসরায়েলি আর্টিলারি গাজা উপত্যকার কাছাকাছি এলাকায় গোলাবর্ষণ করছে। যুদ্ধের কারণে রান্নার গ্যাস নেই, তাই নারীরা রান্নার জন্য পিচবোর্ড এবং কাঠ ব্যবহার করছেন, যা সময়সাপেক্ষ এবং ক্লান্তিকর। ধোঁয়া উপেক্ষা করে হুসেন সাবধানে ট্রেতে বিস্কুট রেখে বেক করা শুরু করেন।
তিনি বলেন, ‘এখানকার পরিবেশ খুবই দুঃখজনক। আমরা অনেক আত্মীয়স্বজন এবং প্রিয়জনকে হারিয়েছি। আমরা একটি বড় মানবিক সংকটে ভুগছি।’
তিনি বলেন, ‘আমরা এমন এক জাতি যারা জীবনকে ভালোবাসি। আমরা চাই না আমাদের সন্তানরা বঞ্চনার মধ্যে থাকুক। আমরা তাদের যা কিছু সম্ভব তাই দেওয়ার চেষ্টা করি, এমনকি যদি তা সামান্যও হয়।’
যুদ্ধের আগে তিনি ঈদের সময় প্রায় ৯ কিলোগ্রাম (১৯.৮ পাউন্ড) বিস্কুট বানাতেন। এই বছর, তিনি মাত্র এক কিলোগ্রাম (২.২ পাউন্ড) কুকিজ তৈরি করছেন শুধুমাত্র যুদ্ধে ক্ষতিগ্রস্ত শিশুদের জন্য কিছুটা সান্ত্বনা বয়ে আনার আশায়। যদিও তাদের চারপাশে শোক বিরাজ করছে। তবুও তিনি বিশ্বাস করেন, ঈদ উদযাপন করা উচিত।
যুদ্ধের মধ্যে আনন্দ
আরেকজন ফিলিস্তিনি নারী উম্মে মোহাম্মদও তার সন্তানদের এবং নাতি-নাতনিদের জন্য বিস্কুট তৈরি করে তাদের ঈদের আনন্দ দেওয়ার চেষ্টা করছেন। তিনি আনাদোলুকে বলেন, ‘গণহত্যার সময় ঈদের আচার-অনুষ্ঠান থেকে শিশুদের যা হারিয়েছে তার ক্ষতিপূরণ দেওয়ার জন্য আমরা সামান্য কিছু বিস্কুট তৈরি করতে পেরেছি।’ তিনি আরো বলেন, ‘শিশুরা কষ্টে আছে আমরা খুশি করার চেষ্টা করছি এবং আমরা কেবল এটাই দিতে পারি।’
২০২৫ সালের ১৮ মার্চ ইসরায়েল গাজায় নতুন করে হামলা শুরু করেছে। এতে গত ১১ দিনে ৮৯০ জন নিহত হয়েছেন। ২০২৩ সালের ৭ অক্টোবর হামলা শুরুর পর থেকে ইতিমধ্যে ইসরায়েলি হামলায় ৫০ হাজারের বেশি মানুষ মারা গেছেন। অন্যদিকে এ মাসের শুরু থেকে গাজায় ত্রাণসহায়তা পৌঁছাতে দেয়নি ইসরায়েল। হামাসের ওপর চাপ প্রয়োগের জন্য ইসরায়েল এই কৌশল নিয়েছে।
আন্তর্জাতিক অপরাধ আদালত গাজায় যুদ্ধাপরাধ এবং মানবতাবিরোধী অপরাধের জন্য নভেম্বরে ইসরায়েলি প্রধানমন্ত্রী নেতানিয়াহু এবং সাবেক প্রতিরক্ষামন্ত্রী ইয়োভ গ্যালান্টের বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করেছে। ছিটমহলে যুদ্ধের জন্য ইসরায়েল আন্তর্জাতিক বিচার আদালতে গণহত্যার মামলার মুখোমুখিও হচ্ছে।
সূত্র : আলজাজিরা, আনাদোলু, সিনহুয়া
সম্পর্কিত খবর
২০১৭ সালের কথা। যুক্তরাজ্যের ক্যামব্রিজ ও হান্টিংডনের মধ্যকার সড়কের উন্নয়ন কাজের জন্য খোঁড়াখুঁড়ির সময় একটি প্রাচীন দেহাবশেষ পাওয়া যায়। শুরুতে প্রত্নতাত্ত্বিকরা ভেবেছিলেন, এটি হয়তো স্থানীয় কোনো সাধারণ মানুষের মরদেহ, যা সময়ের আবর্তনে ফসিলে রূপান্তরিত হয়েছে। ওই দেহাবশেষের বয়স আন্দাজ করা যায়নি তখনো।
কিন্তু গবেষণায় দেখা গেল, ক্যামব্রিজশায়ারে পাওয়া কঙ্কালটি দুই হাজার বছরের পুরনো এবং এটি সারমাশিয়ান নামে এক যাযাবর জাতিগোষ্ঠীর পুরুষের কঙ্কাল। এ তথ্য তখন রীতিমতো দ্বিধায় ফেলে দেয় গবেষকদের। কারণ সারমাশিয়ানরা ছিল পারস্য ভাষাভাষী জনগোষ্ঠী, যাদের বসবাস ছিল রোমান সাম্রাজ্যের আরেক প্রান্ত বর্তমান রাশিয়ার দক্ষিণাঞ্চলে। অশ্বারোহী ও যোদ্ধা হিসেবে খ্যাতি ছিল তাদের।
আজ থেকে দুই হাজার বছর আগে এখনকার রাশিয়ার দক্ষিণাঞ্চলে জন্ম নেওয়া এক যুবক কিভাবে দুই হাজার কিলোমিটারেরও বেশি দূরত্ব পাড়ি দিয়ে এখনকার ইংল্যান্ডে পৌঁছেছিলেন, তা এক বিরাট প্রশ্ন হয়ে দেখা দিয়েছিল গবেষকদের সামনে। আর সে প্রশ্নের উত্তর তারা খুঁজেছেন দক্ষ গোয়েন্দাদের মতো।
সম্প্রতি কারেন্ট বায়োলজি জার্নালে তাদের প্রকাশিত এক গবেষণা প্রতিবেদনে উঠে এসেছে এ নিয়ে চমকপ্রদ সব তথ্য। প্রত্নতাত্ত্বিকরা তাদের আবিষ্কৃত কঙ্কালটির নাম দিয়েছেন অফোর্ড ক্লুনি ২০৩৬৪৫, যা মূলত ক্যামব্রিজশায়ারের ওই গ্রাম আর নমুনা সংখ্যার মিশেল।
কঙ্কালের জাতিগত পরিচয় জানা গেল যেভাবে
ক্যামব্রিজশায়ারে একটা নালার মতো জায়গায় পাওয়া গিয়েছিল দেহাবশেষটি। সঙ্গে এমন কিছু ছিল না, যা দিয়ে তার পরিচয় বা আবাস সম্পর্কে কোনো ধারণা পাওয়া যায়। পুরো কঙ্কালের মধ্যে সবচে সুরক্ষিত অবস্থায় ছিলো তার কানের ভেতরের দিকের হাড়। ওই হাড়েরই একটি ছোট টুকরা থেকে ডিএনএ সংগ্রহ করেছিলেন লন্ডনের ফ্র্যান্সিস ক্রিক ইনস্টিটিউটের অ্যানসিয়েন্ট জেনোমিক ল্যাবরেটরির ড. মারিনা সিলভা।
ড. সিলভার ল্যাব থেকে পাওয়া বিশ্লেষণই প্রথম জানান দেয়, কঙ্কালের মানুষটি আসলে রোমান সাম্রাজ্যের দূরতম এক প্রান্ত থেকে এসেছিলেন।
তিনি আরো বলেন, ‘প্রথমই যেটা চোখে পড়ল, অন্য রোমানো-ব্রিটিশদের চেয়ে জিনগতভাবে অনেক আলাদা এই মানুষটি।’
আগে ঐতিহাসিক ঘটনা সম্পর্কে ধারণা পেতে দালিলিক ও প্রত্নতাত্ত্বিক প্রমাণপত্রের ওপর নির্ভর করতে হতো, আর সেসবে মোটা দাগে আর্থিক ও সামাজিকভাবে প্রভাবশালীদের কথাই থাকে। তবে হাল আমলে গবেষণার পদ্ধতিগত উৎকর্ষের কারণে ডিএনএ বিশ্লেষণের মাধ্যমেই এখন সেসব সম্পর্কে ধারণা পাওয়া যায়। বড় বড় ঐতিহাসিক ঘটনার নেপথ্যে থাকা সাধারণ মানুষের অজানা গল্পও বের করে আনা সম্ভব হয় এখন। যেমন হাড়ের ফসিলে লুকিয়ে থাকা হাজার বছরের পুরনো জেনেটিক কোড বলে দিতে পারে যে কারো নৃতাত্ত্বিক পরিচয়।
অফোর্ড ক্লুনিকে নিয়ে করা গবেষণাটিতে তো রীতিমতো গোয়েন্দা গল্পের আঁচ পাওয়া যায়, যেন এটি একটি ফরেনসিক তদন্তপ্রক্রিয়া। একজন সাধারণ মানুষ, যিনি ১২৬ থেকে ২২৮ সালের মধ্যকার কোনো সময়ে তার ২৫ বছরের জীবন কাটিয়েছেন। রোমানদের অধিকৃত ব্রিটেনের ক্যামব্রিজশায়ারে নালার মত কোনো এক জলাধারে যার কবর হয়েছিল। তার জীবন সম্পর্কে দুই হাজার বছর পরে এসে জানা যাচ্ছে এই গবেষণার বদৌলতে।
পিতৃভূমি থেকে এতটা দূরে যে এসেছিলেন, তা কিভাবে নিশ্চিত হওয়া গেল
এই প্রশ্নের উত্তর খুঁজতে ডারহাম বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রত্নতত্ত্ব বিভাগের শিক্ষার্থীরা আরেকটি গবেষণা কৌশল ব্যবহার করেন। তারা ফসিল হয়ে যাওয়া মানুষটির দাঁত পরীক্ষা করেন, যাতে ওই ব্যক্তির গ্রহণ করা খাদ্যবস্তুর রাসায়নিক ছাপ পাওয়া যায়।
বিশ্লেষণে উঠে আসে, পাঁচ বছর বয়স থেকে পরবর্তী সময়ে তার খাদ্যাভ্যাস কিভাবে পরিবর্তিত হয়েছে। গাছের কাণ্ডের চক্রাকার দাগ থেকে যেমন সেটি কী ধরনের পরিবেশ, আবহাওয়া আর সময়ের মধ্য দিয়ে এসেছে তা জানা যায়। একইভাবে মানুষের দাঁতের প্রতিটি স্তরেও সেটি কী ধরনের উপাদানের সংস্পর্শে এসেছে তার প্রভাব থেকে যায়। তার ফলে জানা যায় ব্যক্তির খাদ্যাভ্যাসের ধরন।
ছয় বছর বয়স পর্যন্ত জোয়ার ও বাজরার মতো শস্যই ছিল অফোর্ডের প্রধান খাদ্য। তখনকার দিনে সারমাশিয়ান অধ্যুষিত অঞ্চলে এই ধরনের শস্য প্রচুর পরিমাণে জন্মাত। গবেষণা দলের অন্যতম সদস্য অধ্যাপক জ্যানেট মন্টগোমারি বলেন, ‘কিন্তু সময়ের সঙ্গে সঙ্গে তার খাদ্য তালিকায় এসবের বদলে গমের আধিক্য দেখা দিয়েছিল, যা মূলত পশ্চিম ইউরোপের ফসল।’
অধ্যাপক জ্যানেট আরো বলেন, ‘এ থেকে আমরা জানতে পারি, তার গোষ্ঠীর মধ্যে হয়তো তিনিই প্রথম ব্রিটেনে এসেছিলেন। পরিণত বয়সে পশ্চিমের অভিবাসী হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে তার খাদ্য তালিকা থেকে আগের শস্যগুলো বাদ পড়ে গিয়েছিল।’
আর ঐতিহাসিক নানা তথ্য-প্রমাণে জানা যায়, ওই সময়ে রোমান সেনাবাহিনীতে কর্মরত সারমাশিয়ানদের একটি দলকে ব্রিটেনে মোতায়েন করা হয়েছিল। এমন ঐতিহাসিক তথ্য থেকে বিশেষজ্ঞরা ধারণা করছেন, অফোর্ড কোনো অশ্বারোহীর ছলে হতে পারেন। কিংবা দাসও হয়ে থাকতে পারেন।
খননকাজে নেতৃত্ব দেয়া মিউজিয়াম অব লন্ডনের আর্কিওলজি বিভাগের ড. অ্যালেক্স স্মিথের মতে, ডিএনএর সূত্রে এমন একটা ঘটনাপ্রবাহের ব্যাপারে স্পষ্ট ইঙ্গিত মেলে। তিনি বিবিসিকে বলেন, ‘এটাই প্রথম বায়োলজিক্যাল এভিডেন্স।’
ড. স্মিথ বলছিলেন, ‘ডিএনএ প্রাপ্তি ও রাসায়নিক বিশ্লেষণের কৌশলের সুবাদে আমরা এখন অন্য বিষয়গুলোর দিকে নজর দিতে পারছি। জানতে পারছি রোমান শাসনামলে সমাজের গঠন, বিন্যাস ও বিবর্তনের ব্যাপারে। বোঝা যাচ্ছে, শুধু শহরগুলোতেই নয়, সে সময়ের গ্রামাঞ্চলেও ব্যাপক যাতায়াত ও স্থানান্তর ঘটত মানুষের।’
ক্রিক ইনস্টিটিউটের অ্যানসিয়েন্ট জেনোমিক ল্যাবরেটরির প্রধান ড. পন্টাস স্কগল্যান্ড বিবিসি নিউজকে বলেন, ‘নতুন প্রযুক্তি ইতিহাস সম্পর্কে আমাদের বোঝাপড়ায় রূপান্তর ঘটিয়ে চলেছে।’
ড. স্কগলান্ডের ভাষ্য, ‘প্রাচীন ডিএনএর হালনাগাদ বিশ্লেষণ প্রস্তর আর ব্রোঞ্জ যুগ সম্পর্কে আমাদের জানাশোনা বাড়িয়েছে। আর এখন, উন্নত কলাকৌশলের কারণে রোমান ও পরবর্তী সময়টাও ক্রমশ স্পষ্টতর হয়ে ধরা দিচ্ছে আমাদের কাছে।’
ইসরায়েলি প্রতিরক্ষামন্ত্রী ইসরায়েল কাটজ গাজায় সামরিক অভিযানের একটি বড় সম্প্রসারণের ঘোষণা দিয়েছেন। তিনি আজ বুধবার উপত্যকায় সামরিক অভিযান জোরদার করার ঘোষণা দিয়ে আরো বলেছেন, ইসরায়েলি সেনাবাহিনী ফিলিস্তিনি ভূখণ্ডের ‘বিস্তীর্ণ এলাকা’ দখল করবে।
এক বিবৃতিতে কাটজ বলেছেন, যুদ্ধরত এলাকাগুলো থেকে ফিলিস্তিনি জনসংখ্যা স্থানান্তরিত করা হবে। যুদ্ধ শেষ করার একমাত্র উপায় হামাসকে নির্মূল।
এদিকে গাজার উদ্ধারকারীরা জানিয়েছেন, দুটি বাড়িতে ইসরায়েলি হামলায় সকাল থেকে ১৫ জন নিহত হয়েছে। গাজার নাগরিক প্রতিরক্ষা সংস্থা জানিয়েছে, আজ বুধবার যুদ্ধবিধ্বস্ত ফিলিস্তিনি ভূখণ্ডের দুটি বাড়িতে ইসরায়েলি বিমান হামলায় শিশুসহ কমপক্ষে ১৫ জন নিহত হয়েছে।
বেসামরিক প্রতিরক্ষা মুখপাত্র মাহমুদ বাসাল এএফপিকে বলেছেন, ‘দক্ষিণ গাজার মধ্য খান ইউনিসে বাস্তুচ্যুতদের আশ্রয়দানকারী একটি বাড়িতে দখলদার বাহিনী (ইসরায়েলি সেনাবাহিনী) বোমা হামলা চালালে ভোরে শিশুসহ ১৩ জন শহীদ হয়। মধ্য গাজার নুসাইরাত ক্যাম্পের একটি বাড়িতে ইসরায়েলি হামলায় আরো দুজন নিহত হয়েছে।’
ইসরায়েল ইতিমধ্যেই গাজার অভ্যন্তরে একটি গুরুত্বপূর্ণ বাফার জোন তৈরি করেছে। যুদ্ধের আগে ছিটমহলের প্রান্তের চারপাশে বিদ্যমান একটি এলাকা সম্প্রসারণ করেছে এবং গাজার মাঝখানে তথাকথিত নেটজারিম করিডরে একটি বৃহৎ নিরাপত্তা এলাকা যুক্ত করেছে।
একই সময়ে ইসরায়েলি নেতারা বলেছেন, তারা ছিটমহল থেকে ফিলিস্তিনিদের স্বেচ্ছায় প্রস্থানের সুযোগ করে দেওয়ার পরিকল্পনা করছেন। মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পও একই প্রস্তাব দিয়েছিলেন। ইসরায়েলি প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু বলেছেন, সামরিক চাপ প্রয়োগই বাকি ৫৯ জিম্মিকে ফিরিয়ে আনার সর্বোত্তম উপায়।
সূত্র : এএফপি
মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প আজ বুধবার ‘স্বাধীনতা দিবস’-এর দিন নতুন শুল্ক আরোপের ঘোষণা দিতে প্রস্তুত। তিনি এই বুধবারকে ‘লিবারেশন ডে’ বলে ঘোষণা দিয়েছেন। ট্রাম্প রিসিপ্রোক্যাল ট্যারিফ বা পাল্টাপাল্টি শুল্ক আরোপে করার প্রস্তুতি নিচ্ছেন। তিনি বলেছেন, এই শুল্কের ফলে সব দেশই প্রভাবিত হবে।
যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট হিসেবে দায়িত্ব নেওয়ার পর থেকে ডোনাল্ড ট্রাম্প একের পর এক বিভিন্ন দেশের পণ্য আমদানিতে শুল্ক আরোপ করেছেন। চীন থেকে শুরু করে কানাডা, যুক্তরাজ্যসহ ইউরোপের ঐতিহাসিক মিত্র দেশগুলোর ওপর শুল্ক আরোপ করেছেন।
মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের বাণিজ্যযুদ্ধ তীব্রতর হচ্ছে, তাই সবার দৃষ্টি বুধবারের দিকে। এ নিয়ে শেষ মুহূর্তে নানা জল্পনা-কল্পনা শুরু হয়েছে।
ওয়াল স্ট্রিটের বাজার বন্ধ হওয়ার পর স্থানীয় সময় বিকেল ৪টায় হোয়াইট হাউসের রোজ গার্ডেনে মন্ত্রিসভার সদস্যদের সঙ্গে নিয়ে ট্রাম্প তার প্রস্তাবগুলো নিয়ে বৈঠক করবেন। তিনি যুক্তরাষ্ট্রকে অন্যায্য বিদেশি প্রতিযোগিতা থেকে রক্ষা করবেন এবং মার্কিন শিল্পের একটি নতুন ‘স্বর্ণযুগ’ তৈরি করবেন বলে প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন।
ছোট-বড় সব দেশের ওপর শুল্ক আরোপ করবেন।
সমালোচকরা বলছেন, আমদানিকারকরা এই খরচ বহন করলে শুধু মার্কিন ভোক্তাদের ওপরই এর প্রভাব পড়বে না, বরং তারা দেশে ও বিদেশে ক্ষতিকর মন্দার ঝুঁকিও বাড়িয়ে তুলতে পারে। ট্রাম্পের ঘোষণার কয়েক দিন আগে থেকেই বিশ্ববাজারে অস্থিরতা বিরাজ করছে।
অর্থনীতিবিদ সতর্ক করে দিয়েছেন, নতুন শুল্ক আরোপের ফলে অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি ধীর হয়ে যেতে পারে। মূল্যস্ফীতিও বাড়তে পারে। আবার বিভিন্ন দেশও পাল্টা প্রতিক্রিয়ায় প্রতিশোধমূলক শুল্ক আরোপের পদক্ষেপ নিতে পারে। তবে অন্য দেশগুলো যে ধরনের শুল্ক আরোপ করে তার সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ শুল্ক আরোপিত হবে বলেই ট্রাম্প প্রাথমিকভাবে জানিয়েছেন।
এদিকে সময়সীমা ঘনিয়ে আসার সঙ্গে সঙ্গেই মার্কিন মিডিয়া জানিয়েছে, ট্রাম্প ২০ শতাংশ শুল্ক কমানোর কথাও বিবেচনা করছেন এবং কিছু দেশের ওপর অগ্রাধিকারমূলক পদক্ষেপ নেওয়া হতে পারে।
হোয়াইট হাউসের প্রেস সেক্রেটারি ক্যারোলিন লেভিট বলেছেন, ট্রাম্প শুল্ক নিয়ে ঘোষণার প্রাক্কালে শীর্ষ উপদেষ্টাদের সঙ্গে বৈঠক করছেন। তিনি আরো জানান, বুধবারের ঘোষণার পরে ‘অবিলম্বে’ শুল্ক কার্যকর হবে। ট্রাম্প জানুয়ারিতে ক্ষমতায় ফিরে আসার পর থেকে বেশ কয়েকটি শুল্ক ঘোষণা নিয়ে দ্বিধাগ্রস্ত ছিলেন। তবে তার পরিকল্পনা বিশ্বজুড়ে বাণিজ্যযুদ্ধের আশঙ্কা বাড়িয়েছে।
সূত্র : এএফপি
চলন্ত ট্রেন থেকে ছোড়া পানিভর্তি বোতল লেগে বাদল সন্তোষভাই ঠাকুর (১৪) নামের এক কিশোরের মৃত্যু হয়েছে। ভারতের গুজরাটের রাজকোটের শাপার-ভেরাভাল এলাকায় সোমবার এ দুর্ঘটনা ঘটে। ভারতীয় গণমাধ্যম আনন্দবাজার পত্রিকা বুধবার (২ এপ্রিল) বিকেলে এক প্রতিবেদনে এ তথ্য জানিয়েছে।
প্রতিবেদন অনুযায়ী, ওই দিন বাড়ির বাগানে বাদল ও তার এক বন্ধু খেলছিল।
স্থানীয় সংবাদমাধ্যমের প্রতিবেদন অনুয়ায়ী, বাদল তার মা-বাবার একমাত্র সন্তান ছিল। মধ্য প্রদেশের বাসিন্দা হলেও ব্যবসার সূত্রে দুই বছর ধরে গুজরাটে বসবাস করছিলেন তারা।
এ ঘটনায় একটি মামলা করেছে শাপার পুলিশ। মামলাটি তদন্তাধীন। পুলিশ নিহতের দেহ উদ্ধার করে ময়নাতদন্তের জন্য রাজকোট সিভিল হাসপাতালে পাঠিয়েছে।