রমজান মাস শেষে বিশ্বব্যাপী মুসলমানদের পালিত সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ধর্মীয় উৎসবগুলোর মধ্যে একটি ঈদুল ফিতর। এ উৎসবের মাধ্যমেই পবিত্র রমজান মাসের সমাপ্তি ঘটে। এক মাস সিয়াম সাধনার পর ঈদুল ফিতর হয়ে ওঠে পরিবার, বন্ধু ও সম্প্রদায়ের মিলনমেলা। অত্যন্ত উৎসাহ এবং আনন্দের সঙ্গে পালিত হয় এই পবিত্র উৎসব।
বিভিন্ন দেশ ও সংস্কৃতিতে কিভাবে উদযাপিত হয় ঈদুল ফিতর
অনলাইন ডেস্ক

সংযুক্ত আরব আমিরাত
বেশ কয়েক দিন আগে থেকেই ঈদ উদযাপনের জন্য প্রস্তুতি শুরু হয় সংযুক্ত আরব আমিরাতে।
ঈদের সকালে মুসলমানরা ঈদের নামাজ আদায়ের জন্য জড়ো হন। নামাজের পর শুরু হয় উপহার বিনিময়। থাকে নানা পদের খাবার। এ ছাড়া মানুষ আতশবাজি, সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান এবং কার্নিভালের মতো উৎসবে অংশগ্রহণ করে। সংযুক্ত আরব আমিরাতে দান করা ঈদের একটি অপরিহার্য অংশ।
সৌদি আরব
নতুন চাঁদ দেখা গেলেই সৌদি আরবে ঈদের আনন্দ শুরু হয়। মুসলমানরা মসজিদে অথবা খোলা জায়গায় ঈদের নামাজ আদায় করে। নামাজ আদায়ের পরে তারপর একে অপরকে ‘ঈদ মোবারক’ বলে শুভেচ্ছা জানায়। দিনটি পালন করা হয় পরিবার ও বন্ধুদের সঙ্গে খাওয়াদাওয়া এবং সময় কাটানোর মাধ্যমে। ঈদের দিন সৌদির মানুষ তাদের আত্মীয়-স্বজন এবং বন্ধুদের সঙ্গে দেখা করেন। শিশু এবং বয়স্কদের নানা উপহারও দেন। ঈদের দিন পুরুষরা ‘কান্দর’ নামের সাদা পোশাক পরিধান করেন। মাথায় দেন ‘গাহফিহ’ নামের টুপি। নারীরা এ দিনে ‘থাউব’ নামের বিশেষ পোশাক পরে থাকেন।
ঈদের দিন সৌদি মুসলিমরা বাজার থেকে বেশি পরিমাণে চাল কিনে আনেন। তা বাড়ির প্রবেশ দরজার বাইরে রেখে দেন। যাতে অসহায় ও অভাবগ্রস্ত মানুষ তা নিয়ে প্রয়োজন মেটাতে পারেন। সৌদিরা ঐতিহ্যবাহী অনুষ্ঠান যেমন বাজপাখি, উটের দৌড় এবং ঐতিহ্যবাহী নৃত্যে অংশগ্রহণ করে। অন্যান্য উৎসবের মধ্যে রয়েছে আতশবাজি, সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান এবং অন্যান্য বিনোদনমূলক কার্যক্রম।
তুরস্কে
তুরস্কে ঈদকে ‘শেকার বায়রামি’ বলা হয়, যার অর্থ ‘চিনির ভোজ’। তুরস্কে ঈদ উদযাপনের একটি অবিচ্ছেদ্য অংশ মিষ্টি খাবার। তুর্কি লোকেরা তাদের নতুন পোশাক পরে দিন শুরু করে। এরপর তারা বড়দের কাছে দোয়া চাইতে যায়। তুর্কি শিশুরা বড়দের কাছ থেকে মিষ্টি এবং সালামি পায়। তুর্কি লোকেরা ঈদের দিন বাকলাভা এবং হালভার মতো ঐতিহ্যবাহী খাবার প্রস্তুত করে।
নিউজিল্যান্ড
নিউজিল্যান্ডে মসজিদে বা বাইরের স্থানে সকালের নামাজের মাধ্যমে ঈদ উদযাপন শুরু হয়। তারপরে ইডেন পার্কে অনুষ্ঠিত হয় ‘বাই অ্যানুয়াল ঈদ ডে’। সেখানে বিভিন্ন আয়োজন দেখতে জড়ো হয় মানুষ। এরপর সমাবেশ এবং ভোজসভা অনুষ্ঠিত হয়। সেখানে পরিবারগুলো উপহার বিনিময় করে এবং ঐতিহ্যবাহী খাবার ভাগাভাগি করে নেয়। সম্প্রতি অকল্যান্ড, ওয়েলিংটন এবং ক্রাইস্টচার্চের মতো প্রধান শহরগুলোতে ঈদ উৎসবগুলো বেশ জনপ্রিয় হয়ে উঠেছে। এই উৎসবগুলোতে সাংস্কৃতিক পরিবেশনা, সুস্বাদু খাবারের স্টল এবং শিশুদের জন্য বিভিন্ন কার্যক্রম অন্তর্ভুক্ত থাকে। সবাই আনন্দ উৎসবে মেতে ওঠে দিনটিতে।
ইন্দোনেশিয়া
ইন্দোনেশিয়ায় ঈদকে বলা হয় ‘হারি রায়া ঈদুল ফিতর’। ঈদের নামাজ সাধারণত বড় খোলা জায়গায় অনুষ্ঠিত হয়। বিশেষ এ দিনটিতে নারীরা পরেন ‘কেবায়া কুরঙ্গ’ আর পুরুষরা ‘বাজু কোকো’, যা দেশটির ঐতিহ্যবাহী পোশাক। নামাজের পর মানুষ তাদের আত্মীয়-স্বজন এবং বন্ধুদের সঙ্গে দেখা করে। ঈদের দিন বিশেষ খাবার হিসেবে তারা কেতুপাত, দোদোল, লেমাংসহ বিভিন্ন সুস্বাদু খাবার রান্না করে থাকে। বাংলাদেশে প্রতিবছর ঈদে ঘরমুখো মানুষের ঢল নামে। ইন্দোনেশিয়াতেও একই অবস্থা দেখা যায়।
ইন্দোনেশিয়ায় ‘মুদিক’ করারও ঐতিহ্য রয়েছে, যার অর্থ ছুটির দিনে নিজের শহরে ফিরে যাওয়া। মুদিক ঐতিহ্য এত গুরুত্বপূর্ণ যে সরকার মানুষের ভ্রমণ সহজ করার জন্য বিনা মূল্যে পরিবহনের ব্যবস্থা করে থাকে। বিশ্বের সবচেয়ে বেশি মুসলমানের দেশটিতে প্রায় ৯ কোটি মানুষ মুদিক যাত্রা করেন। ঈদের দিনে স্থানীয়রা বিগত বছরের কৃতকর্মের জন্য আত্মীয়-স্বজন বা বন্ধুদের কাছে ক্ষমা চান।
পাকিস্তান
নতুন চাঁদ দেখার মাধ্যমে পাকিস্তানেও ঈদ উৎসব শুরু হয়। ঈদের দিন মানুষ নতুন পোশাক পরে মসজিদে বা বড় মাঠে ঈদের নামাজ পড়ে। নামাজের পর মানুষ তাদের আত্মীয়-স্বজন বন্ধুদের সঙ্গে দেখা করে এবং উপহার বিনিময় করে। পাকিস্তানি মুসলমানরা ঈদ উপলক্ষে বিরিয়ানি, খির এবং শিয়ার খুরমার মতো ঐতিহ্যবাহী খাবার প্রস্তুত করে।
আইসল্যান্ড
যদিও আইসল্যান্ডে মুসলিমরা এখনো সংখ্যালঘু, তবু তাদের সংখ্যা ক্রমবর্ধমান। যেহেতু আইসল্যান্ডের গ্রীষ্মের দিনগুলো স্বাভাবিকের চেয়ে দীর্ঘ হয়, তাই মুসলমানরা দিনে ২২ ঘন্টা পর্যন্ত রোজা রাখেন। তবে ইসলামী পণ্ডিতরা নিকটতম দেশ থেকে সূর্যোদয় এবং সূর্যাস্তের সময় বা সৌদি আরবের সময় অঞ্চল পর্যবেক্ষণের ওপর ভিত্তি করে রোজা ভাঙার পরামর্শ দিয়েছেন। আইসল্যান্ডের রাজধানী রেইকিয়াভিকের মসজিদে ঈদের নামাজ আদায়ের পর মুসলিমরা একত্র হন ইন্দোনেশিয়ান, মিসরীয় ও ইরিত্রিয়ান খাবারের আন্তর্জাতিক ফিউশন ভোজে। ঈদুল ফিতরের আনন্দময় অনুষ্ঠানে শিশুরা তাদের নতুন পোশাক পরে এবং উপহার বিনিময় করে।
মিসর
মিসরের মানুষ পরিবার ও বন্ধুদের সঙ্গে খাওয়াদাওয়া এবং সময় কাটানোর মাধ্যমে ঈদুল ফিতর উদযাপন করে। এদিন মিসরীয়রা বিশেষ খাবার তৈরি করে যেমন ফাত্তা (ভাত, মাংস এবং রুটির মিশ্রণ) এবং কুনাফা (পনির এবং শরবত দিয়ে তৈরি একটি মিষ্টি)। মিসরীয়রা ঈদে তাদের সন্তানদের জন্য নতুন পোশাক এবং মিষ্টি কিনে দেয়।
রাশিয়া
রাশিয়ার কয়েকটি প্রদেশে মুসলিমের সংখ্যা বেশি। এসব প্রদেশে ঈদের দিনটি ছুটি থাকে। চেচনিয়া ও দাগেস্তান প্রদেশে ঈদের ছুটি তিন দিন। চেচনিয়ায় ঈদের কয়েক দিন আগে থেকেই বাড়িঘর পরিষ্কার করা হয়। চাঁদ রাতে গভীর রাত পর্যন্ত তৈরি হয় মিষ্টান্ন এবং অন্যান্য খাবার। সবাই একসঙ্গে ঘুরতে যায় এবং সময় কাটায়। এ দিনে অনেক জায়গায় ‘মানতি’ নামের এক ধরনের খাবার বানানো হয়। আটার রুটির ভেতর ভেড়া বা গরুর মাংসের কিমার পুর দিয়ে ভাপানো হয়। পরে পরিবেশন করা হয় মাখন এবং মেয়নেস দিয়ে।
চীন
চীনে ঈদ উপলক্ষে সেখানে তিন দিনের সরকারি ছুটি ঘোষণা করা হয়। ঈদের জামাত অনুষ্ঠিত হয় মসজিদে। অন্যান্য প্রদেশেও ঈদের দিনটি সরকারি ছুটি থাকে। এ দিনে মুসলিম সংখ্যাগরিষ্ঠ এলাকায় সরকারিভাবে ভেড়ার মাংস সরবরাহ করা হয়। ঈদের দিনে আটা ও ময়দা দিয়ে প্রস্তুত ‘জিয়াং’ নামের এক ধরনের বিশেষ খাবার খুবই জনপ্রিয়। স্যুপ অথবা ভাত দিয়ে এটি খাওয়া হয়। দেশটিতে মুসলিমের সংখ্যা বেশি জিনজিয়ান ও নিংজিয়া প্রদেশে।
উজবেকিস্তান
মধ্য এশিয়ার দেশ উজবেকিস্তানেও ঈদুল ফিতর স্থানীয়দের কাছে ‘রুজা হায়িত’ নামে পরিচিত। দেশটিতে তিন দিনব্যাপী ছুটি নিয়ে ঈদ উদযাপন করা হয়। ঈদের আগের দিনটিকে তারা বলে আরাফা। এই দিনে প্রায় প্রতিটি উজবেক পরিবারে ঐতিহ্যবাহী প্যাস্ট্রি কুশ টিল, বুগিরসক, চাক-চাক ইত্যাদি খাবার তৈরি করা হয়। রাতে ঘরে ঘরে উজবেক প্লভ রান্না হয়।
তিউনিসিয়া
মুসলিম অধ্যুষিত উত্তর আফ্রিকার দেশ তিউনিসিয়া। সেখানে রমজান মাসজুড়ে অনেক রাত পর্যন্ত বাজার খোলা থাকে। চাঁদরাতে খাবার স্টল, দোকানপাট খোলা থাকে ফজর পর্যন্ত। সব মানুষ রাতভর ঘুরে বেড়ায়। তিউনিসিয়ান মুসলিমদের পছন্দের খাবার হলো খেজুর আর অলিভ অয়েলে তৈরি মিষ্টি খাবার ‘আসসিদা’। ঈদের নামাজের তারা মিষ্টি খাবার খায়।
যুক্তরাষ্ট্র
যুক্তরাষ্ট্রে ঈদুল ফিতর উদযাপিত হয় বৈচিত্র্য ও সম্প্রীতির মধ্য দিয়ে। মুসলমানরা ঈদের সকালে মসজিদে বা খোলা জায়গায় ঈদের নামাজ আদায় করেন। নিউইয়র্ক, লস অ্যাঞ্জেলেস, শিকাগো, হিউস্টনের মতো বড় শহরগুলোতে কেন্দ্রীয় মাঠ বা কনভেনশন সেন্টারে ঈদের নামাজের বিশাল জামাত অনুষ্ঠিত হয়। নামাজের পর মসজিদ প্রাঙ্গণে বা কমিউনিটি সেন্টারে সম্মিলিত ভোজ আয়োজিত হয়। পরিবার ও বন্ধুদের সঙ্গে উদযাপন করে।
আমেরিকান মুসলমানরাও দরিদ্রদের সাহায্য করার জন্য বিভিন্ন সেবামূলক প্রকল্পে অংশগ্রহণ করে। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে ঈদ উদযাপন হয় বিভিন্ন সাংস্কৃতিক ঐতিহ্যের মিশ্রণে। যেমন ঐতিহ্যবাহী পোশাক পরা, গান শোনা এবং ঐতিহ্যবাহী খাবার উপভোগ করা। খাবারের মধ্যে রয়েছে বিরিয়ানি, ম্যান্ডি, শরমাসহ আমেরিকান ফিউশন ডিশ।
ঈদুল ফিতর এমন একটি উৎসব, যা সারা বিশ্বের মুসলমানরা উদযাপন করে। ঈদ উদযাপনে প্রতিটি দেশর নিজস্ব সংস্কৃতি বা অনন্য রীতিনীতি রয়েছে। ঐতিহ্যবাহী খাবার তৈরি করা, নতুন পোশাক কেনা অথবা আত্মীয়দের সঙ্গে দেখা করা, যা-ই হোক না কেন ঈদ মানে আনন্দ। সারা বিশ্বের মুসলমানরা যখন ঈদ উদযাপনের জন্য একত্রিত হয় তখন শান্তি, ভালোবাসা এবং সম্প্রীতির বার্তা স্পষ্টভাবে প্রতিধ্বনিত হয়। সবাইকে ঈদ মোবারক!
সম্পর্কিত খবর

মায়ানমার জান্তাও সাময়িক যুদ্ধবিরতি ঘোষণা করল
অনলাইন ডেস্ক

মায়ানমারের সামরিক বাহিনী ভূমিকম্প-পরবর্তী ত্রাণ সরবরাহ ও পুনর্গঠনের গতি বাড়াতে সাময়িক যুদ্ধবিরতির ঘোষণা দিয়েছে। এক বিবৃতিতে ক্ষমতাসীন জান্তার রাষ্ট্রীয় প্রশাসনিক পরিষদ জানিয়েছে, এই চুক্তি ২ এপ্রিল থেকে ২২ এপ্রিল পর্যন্ত কার্যকর থাকবে।
এর আগে চলতি সপ্তাহে সামরিক বাহিনীর বিরুদ্ধে লড়াইরত বিদ্রোহী গোষ্ঠীগুলো একতরফাভাবে যুদ্ধবিরতি ঘোষণা করেছিল, যাতে ত্রাণ কার্যক্রম নির্বিঘ্নে পরিচালিত হতে পারে। তবে সামরিক বাহিনী বুধবারের ঘোষণার আগ পর্যন্ত একই পদক্ষেপ নিতে অস্বীকৃতি জানিয়ে আসছিল।
গত শুক্রবার ৭.৭ মাত্রার শক্তিশালী ভূমিকম্প আঘাত হানার পর এখন পর্যন্ত কমপক্ষে দুই হাজার ৮৮৬ জন নিহত হয়েছে বলে জানা গেছে। এখনো শত শত মানুষ নিখোঁজ রয়েছে। ভূমিকম্পের কম্পন কয়েক শ মাইল দূর পর্যন্ত অনুভূত হয়েছে, যার মধ্যে রয়েছে প্রতিবেশী থাইল্যান্ডও। সেখানে মৃত্যুর সংখ্যা বর্তমানে ২১ জনে দাঁড়িয়েছে।
২০২১ সালের অভ্যুত্থানের মাধ্যমে ক্ষমতা দখলের পর থেকে মায়ানমার গৃহযুদ্ধের কারণে ব্যাপক সহিংসতার কবলে রয়েছে। সামরিক জান্তার বিরুদ্ধে বিভিন্ন জাতিগত মিলিশিয়া ও প্রতিরোধ বাহিনীগুলো লড়াই চালিয়ে যাচ্ছে।
ত্রাণবাহী চীনা রেড ক্রসের গাড়িবহরে গুলি
এদিকে মায়ানমারের সামরিক বাহিনী স্থানীয় সময় মঙ্গলবার রাতে ত্রাণবাহী চীনা রেড ক্রসের গাড়িবহরের দিকে গুলি ছুড়েছে। সশস্ত্র বিদ্রোহী গোষ্ঠী তা’আং ন্যাশনাল লিবারেশন আর্মি (টিএনএলএ) জানিয়েছে, পূর্ব শান রাজ্যে সামরিক বাহিনীর সদস্যরা ৯টি যানবাহনের ওই বহরের দিকে মেশিনগান দিয়ে গুলি চালায়।
এই বহরটি ভূমিকম্পে সবচেয়ে ক্ষতিগ্রস্ত শহর মান্দালয়ের দিকে যাচ্ছিল। তবে এই ঘটনায় কোনো হতাহতের খবর পাওয়া যায়নি। জান্তা সরকার এই ঘটনার তদন্তের ঘোষণা দিয়েছে। তবে তারা সরাসরি গাড়িগুলোর দিকে গুলি ছোড়ার বিষয়টি অস্বীকার করেছে। তাদের দাবি, বহরটি থামতে সংকেত দেওয়া হলেও না থামায় সেনারা ফাঁকা গুলি ছোড়ে।
অন্যদিকে চীনের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় বুধবার জানায়, তাদের উদ্ধারকারী দল ও ত্রাণসামগ্রী নিরাপদ রয়েছে। তারা আশা করে, ‘মায়ানমারের সব পক্ষ ও গোষ্ঠী ভূমিকম্প-পরবর্তী ত্রাণ কার্যক্রমকে সর্বোচ্চ অগ্রাধিকার দেবে।’
মায়ানমারে মানবিক সংকট আরো তীব্র হয়েছে
গত সপ্তাহের ভূমিকম্পের পর মায়ানমারে মানবিক সংকট মারাত্মকভাবে বেড়েছে। আনুষ্ঠানিকভাবে জান্তার দেওয়া মৃতের সংখ্যা যা বলা হচ্ছে, প্রকৃত সংখ্যা তার চেয়েও অনেক বেশি হতে পারে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে। বহু আন্তর্জাতিক ত্রাণ সংস্থা ও বিভিন্ন বিদেশি সরকার ভূমিকম্প আক্রান্ত অঞ্চলে উদ্ধারকর্মী ও ত্রাণসামগ্রী পাঠিয়েছে।
এক সামরিক মুখপাত্র বুধবার জানান, মঙ্গলবার রাতে সেনারা নাউংচো টাউনশিপ থেকে আসা ওই ত্রাণ বহরটি দেখে। বহরের গাড়িগুলোতে চীনা স্টিকার ও মায়ানমারের নম্বর প্লেট ছিল, তবে সেনারা আগেভাগে এই বহরের গতিবিধি সম্পর্কে কোনো তথ্য পায়নি।
তিনি বলেন, ‘আমরা বহরটি দেখে থামানোর নির্দেশ দিয়েছিলাম, কিন্তু তারা থামেনি। তখন আমরা ২০০ মিটার দূর থেকে গুলি চালাই, তবু তারা থামেনি। যখন তারা প্রায় ১০০ মিটারের মধ্যে চলে আসে, তখন আমরা তিনটি ফাঁকা গুলি ছুড়ি। এরপর গাড়িগুলো ঘুরে নাউংচোর দিকে ফিরে যায়।’
মুখপাত্র আরো জানান, মান্দালয়ে উদ্ধার সহায়তা দিচ্ছে চীনের ব্লু স্কাই রেসকিউ টিম এবং তারা এই রুট দিয়ে যাওয়ার সময় নিরাপত্তা সুরক্ষা পেয়েছে। আন্তর্জাতিক সংস্থাগুলো ত্রাণ সহায়তা দিতে চাইলে তাদের অবশ্যই মায়ানমার সরকারকে আগেভাগে জানাতে হবে বলেও উল্লেখ করেন তিনি।
এদিকে রেড ক্রসের বহরকে পাহারা দেওয়া টিএনএলএ জানিয়েছে, তারা মান্দালয়ে যাওয়ার ব্যাপারে সামরিক পরিষদকে আগেই অবহিত করেছিল। বহরটি নাউংচোতে ফিরে গেলেও তাদের যাত্রা আবার শুরু হবে বলে টিএনএলএ এক বিবৃতিতে জানিয়েছে।
সূত্র : বিবিসি

ইতালি নাগরিকত্বের পথ কঠোর করছে কেন
- আগের আইনে কী ছিল
নতুন নিয়ম কী
পরিবর্তনের প্রভাব কতটা বিস্তৃত
কেন এই পরিবর্তন
অন্য দেশগুলো কী করছে
আলজাজিরা

ইতালির সরকার দেশের নাগরিকত্ব আইন আরো কঠোর করেছে। সমালোচকরা বলছেন, অনেকেই শুধু বিশ্বজুড়ে ভ্রমণের সুবিধার্থে পারিবারিক বংশধারা অনুসন্ধান করে ইতালীয় পাসপোর্ট পাওয়ার চেষ্টা করছিলেন, যাদের প্রকৃতপক্ষে দেশটির সঙ্গে তেমন কোনো বাস্তব সংযোগ নেই।
এখন থেকে ইতালীয় বংশোদ্ভূত কমসংখ্যক ব্যক্তি নাগরিকত্ব পাবেন। কারণ নতুন নিয়মে শুধু যাদের মা-বাবা বা দাদা-দাদি ইতালিতে জন্মগ্রহণ করেছেন, তারাই নাগরিকত্বের জন্য যোগ্য বিবেচিত হবেন।
সরকার জানিয়েছে, অভিবাসীদের বংশধারা অনুসন্ধান করে বিপুল পরিমাণ নাগরিকত্ব আবেদন জমা পড়ায় এই পরিবর্তন আনা হয়েছে।
ইতালির আগের নাগরিকত্ব আইন কী ছিল?
আগের নিয়ম অনুযায়ী, কেউ যদি প্রমাণ করতে পারতেন, তার কোনো ইতালীয় পূর্বপুরুষ ১৮৬১ সালের ১৭ মার্চের পর জীবিত ছিলেন (যেদিন ইতালির রাজত্ব প্রতিষ্ঠিত হয়), তাহলে তিনি নাগরিকত্বের জন্য আবেদন করতে পারতেন।
তবে ইতালির পররাষ্ট্রমন্ত্রী আন্তোনিও তাজানি বলেছেন, এই নিয়ম পুরনো এবং আইন পরিবর্তনের উদ্দেশ্য হলো ‘অপব্যবহারকারী’দের দমন করা, যারা শুধু ভ্রমণসংক্রান্ত বিধি-নিষেধ এড়াতে ইতালির নাগরিকত্ব গ্রহণ করছিলেন।
হেনলি পাসপোর্ট ইনডেক্স অনুযায়ী, ইতালির পাসপোর্ট বিশ্বের তৃতীয় শক্তিশালী পাসপোর্ট, যা ভিসামুক্ত বা অন-অ্যারাইভাল ভ্রমণের বিশাল সুবিধা দেয়।
রোমে এক সংবাদ সম্মেলনে তাজানি বলেন, ‘ইতালির নাগরিক হওয়া গর্বের বিষয়। এটি কোনো খেলা নয়, যেখানে শুধু পাসপোর্ট পাওয়ার জন্য কেউ ইতালীয় হতে পারে এবং তারপর মায়ামিতে কেনাকাটা করতে যায়।’
নতুন নিয়ম কী?
শুক্রবার ঘোষিত নতুন ডিক্রি তাৎক্ষণিকভাবে কার্যকর হয়েছে।
এ ছাড়া দ্বৈত নাগরিকত্বধারীরা যদি ইতালির প্রতি ‘নিষ্ঠার প্রমাণ’ না দেখান, যেমন কর প্রদান, ভোটদান বা পাসপোর্ট নবায়ন না করেন, তাহলে তাদের ইতালীয় নাগরিকত্ব হারানোর ঝুঁকি থাকবে।
আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ পরিবর্তন হলো, ইতালির বিদেশি কনস্যুলেটগুলো আর নাগরিকত্ব আবেদন প্রক্রিয়া পরিচালনা করবে না।
এই পরিবর্তনের প্রভাব কতটা বিস্তৃত?
ইতালির পররাষ্ট্র ও আন্তর্জাতিক সহযোগিতা মন্ত্রণালয়ের মতে, আগের নিয়ম অনুযায়ী বিশ্বজুড়ে ছয় থেকে আট কোটি মানুষ ইতালির নাগরিকত্বের জন্য যোগ্য ছিলেন, যা ইতালির মোট ৫.৯ কোটি জনসংখ্যার চেয়েও বেশি। বিশেষ করে দক্ষিণ আমেরিকায় ইতালীয় বংশোদ্ভূত ব্যক্তিরা নাগরিকত্ব পাওয়ার জন্য ব্যাপকভাবে আবেদন করছিলেন। কারণ ঊনবিংশ ও বিংশ শতাব্দীতে ইতালির অনেক মানুষ দরিদ্রতা থেকে বাঁচতে এই অঞ্চলে অভিবাসী হয়েছিলেন।
২০১৪ থেকে ২০২৪ সালের মধ্যে ইতালির নাগরিকত্বধারী অভিবাসীদের সংখ্যা ৪০ শতাংশ বেড়েছে, যা ৪৬ লাখ থেকে ৬৪ লাখে পৌঁছেছে। এর একটি বড় অংশ নবনাগরিকত্ব পাওয়া ব্যক্তিদের অন্তর্ভুক্ত করে। শুধু আর্জেন্টিনায় ২০২৩ সালে যেখানে ২০ হাজার জন নাগরিকত্ব পেয়েছিলেন, ২০২৪ সালে সেটি বেড়ে ৩০ হাজার হয়েছে। একই সময়ে ব্রাজিলে ১৪ হাজার থেকে বেড়ে ২০ হাজার জন নাগরিকত্ব পেয়েছেন।
ইতালি কেন এই পরিবর্তন আনল?
বংশপরম্পরায় নাগরিকত্ব পাওয়ার নিয়মের সমালোচকরা বলছেন, এতে এমন লোকজন নাগরিকত্ব পাচ্ছিলেন যাদের ইতালির সঙ্গে বাস্তবিক কোনো সম্পর্ক নেই।
তাজানি বলেছেন, ‘যাদের পূর্বপুরুষ শতাব্দী আগে ইতালি ছেড়েছেন এবং যাদের ইতালির সংস্কৃতি বা ভাষার সঙ্গে কোনো সংযোগ নেই, তাদের স্বয়ংক্রিয়ভাবে নাগরিকত্ব পাওয়া উচিত নয়।’
তিনি আরো জানান, কিছু প্রতিষ্ঠান বিপুল অর্থের বিনিময়ে মানুষের পূর্বপুরুষের ইতালীয় পরিচয় খুঁজে দিচ্ছিল, যাতে তারা নাগরিকত্ব পেতে পারেন। একই সঙ্গে বলেন, ‘আমরা কঠোরভাবে ব্যবস্থা নিচ্ছি, যেন কেউ ইতালীয় নাগরিকত্ব পাওয়ার সুযোগকে অর্থ উপার্জনের মাধ্যম বানাতে না পারে।’
লন্ডন স্কুল অব ইকোনমিকসের অধ্যাপক ভ্যালেন্টিনো লারসিনিস বলেন, পুরনো ব্যবস্থা ইউরোপীয় শ্রমবাজারে প্রবেশ সহজ করত এবং এর অপব্যবহার হতো। তার মতে, পাসপোর্টের ক্ষেত্রে কিছু সীমা নির্ধারণের ধারণাটি যুক্তিসংগত।
এ ছাড়া নাগরিকত্ব আবেদনের সংখ্যা বৃদ্ধির ফলে ইতালির কনস্যুলেট ও পৌরসভাগুলো অতিরিক্ত চাপের মুখে পড়েছিল। এটি সামলাতেই কেবল কেন্দ্রীয় সরকারকে আবেদনপ্রক্রিয়ায় সম্পৃক্ত করা হয়েছে।
আরেকটি বড় সমালোচনা হলো, বংশপরম্পরায় নাগরিকত্ব পাওয়া সহজ হলেও ইতালিতে জন্মগ্রহণকারী অভিবাসী শিশুদের জন্য নাগরিকত্ব পাওয়া কঠিন। বর্তমানে ইতালিতে বসবাসরত আইনসিদ্ধ অভিবাসীদের সন্তানরা ১৮ বছর বয়স হওয়ার পর এবং শৈশব থেকে ইতালিতে থাকার প্রমাণ দিলে নাগরিকত্বের জন্য আবেদন করতে পারেন।
লারসিনিস বলেন, ‘ইতালির অভিবাসী শিশুদের নাগরিকত্ব পাওয়ার জটিলতা বহিরাগতদের পাসপোর্ট পাওয়া নিয়ে বিতর্কের চেয়েও বড় সমস্যা।’
তিনি আরো উল্লেখ করেন, ইতালিতে নাগরিকত্ব সহজ করার জন্য আসন্ন ৮-৯ জুন ভোট হবে। এই প্রস্তাবের আওতায় নাগরিকত্ব পাওয়ার জন্য ইতালিতে বসবাসের আবশ্যক সময়সীমা ১০ বছর থেকে কমিয়ে পাঁচ বছর করার বিষয়টি বিবেচনায় আনা হবে। আর একবার ইতালির নাগরিকত্ব পাওয়া গেলে, তা স্বয়ংক্রিয়ভাবে সন্তানদের জন্যও প্রযোজ্য হবে।
অন্য দেশগুলো কী করছে?
ইতালি ও ইউরোপের বেশির ভাগ দেশ বংশপরম্পরায় নাগরিকত্ব প্রদান করে থাকে। তবে প্রতিটি দেশে নাগরিকত্ব পাওয়ার জন্য বিভিন্ন শর্ত থাকে। হাঙ্গেরিতে বংশোদ্ভূতরা নাগরিকত্ব পেতে পারেন, তবে তাদের ভাষাগত দক্ষতা প্রমাণ করতে হয়। পোল্যান্ডে নাগরিকত্ব পাওয়ার জন্য প্রার্থীদের পূর্বপুরুষের ধারাবাহিকতা প্রমাণ করতে হয়। পর্তুগালের ক্ষেত্রে সেফার্দি ইহুদিরা তাদের ঐতিহাসিক পূর্বপুরুষের সংযোগ প্রমাণ করলে পাসপোর্ট পেতে পারেন।
এদিকে অভিবাসনসংক্রান্ত নীতিগুলো পুনর্বিবেচনা করছে বিভিন্ন দেশ। যুক্তরাষ্ট্রে প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প ২০ জানুয়ারি এক নির্বাহী আদেশে জন্মসূত্রে নাগরিকত্ব বন্ধের ঘোষণা দেন। যদিও এটি ১৯ ফেব্রুয়ারি কার্যকর হওয়ার কথা ছিল, তবে এক ফেডারেল বিচারক এটি অসাংবিধানিক বলে আটকে দিয়েছেন।
বিশ্ব জনসংখ্যা পর্যালোচনাবিষয়ক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ২০২৪ সালের হিসাবে অন্তত ৩৩টি দেশে জন্মসূত্রে নাগরিকত্বের নিয়ম রয়েছে, যার বেশির ভাগই মেক্সিকোসহ উত্তর ও লাতিন আমেরিকায়।

২০০০ বছরের পুরনো কঙ্কালের ডিএনএ থেকে মিলল যত চমকপ্রদ তথ্য
বিবিসি

২০১৭ সালের কথা। যুক্তরাজ্যের ক্যামব্রিজ ও হান্টিংডনের মধ্যকার সড়কের উন্নয়ন কাজের জন্য খোঁড়াখুঁড়ির সময় একটি প্রাচীন দেহাবশেষ পাওয়া যায়। শুরুতে প্রত্নতাত্ত্বিকরা ভেবেছিলেন, এটি হয়তো স্থানীয় কোনো সাধারণ মানুষের মরদেহ, যা সময়ের আবর্তনে ফসিলে রূপান্তরিত হয়েছে। ওই দেহাবশেষের বয়স আন্দাজ করা যায়নি তখনো।
কিন্তু গবেষণায় দেখা গেল, ক্যামব্রিজশায়ারে পাওয়া কঙ্কালটি দুই হাজার বছরের পুরনো এবং এটি সারমাশিয়ান নামে এক যাযাবর জাতিগোষ্ঠীর পুরুষের কঙ্কাল। এ তথ্য তখন রীতিমতো দ্বিধায় ফেলে দেয় গবেষকদের। কারণ সারমাশিয়ানরা ছিল পারস্য ভাষাভাষী জনগোষ্ঠী, যাদের বসবাস ছিল রোমান সাম্রাজ্যের আরেক প্রান্ত বর্তমান রাশিয়ার দক্ষিণাঞ্চলে। অশ্বারোহী ও যোদ্ধা হিসেবে খ্যাতি ছিল তাদের।
আজ থেকে দুই হাজার বছর আগে এখনকার রাশিয়ার দক্ষিণাঞ্চলে জন্ম নেওয়া এক যুবক কিভাবে দুই হাজার কিলোমিটারেরও বেশি দূরত্ব পাড়ি দিয়ে এখনকার ইংল্যান্ডে পৌঁছেছিলেন, তা এক বিরাট প্রশ্ন হয়ে দেখা দিয়েছিল গবেষকদের সামনে। আর সে প্রশ্নের উত্তর তারা খুঁজেছেন দক্ষ গোয়েন্দাদের মতো।
সম্প্রতি কারেন্ট বায়োলজি জার্নালে তাদের প্রকাশিত এক গবেষণা প্রতিবেদনে উঠে এসেছে এ নিয়ে চমকপ্রদ সব তথ্য। প্রত্নতাত্ত্বিকরা তাদের আবিষ্কৃত কঙ্কালটির নাম দিয়েছেন অফোর্ড ক্লুনি ২০৩৬৪৫, যা মূলত ক্যামব্রিজশায়ারের ওই গ্রাম আর নমুনা সংখ্যার মিশেল।
কঙ্কালের জাতিগত পরিচয় জানা গেল যেভাবে
ক্যামব্রিজশায়ারে একটা নালার মতো জায়গায় পাওয়া গিয়েছিল দেহাবশেষটি। সঙ্গে এমন কিছু ছিল না, যা দিয়ে তার পরিচয় বা আবাস সম্পর্কে কোনো ধারণা পাওয়া যায়। পুরো কঙ্কালের মধ্যে সবচে সুরক্ষিত অবস্থায় ছিলো তার কানের ভেতরের দিকের হাড়। ওই হাড়েরই একটি ছোট টুকরা থেকে ডিএনএ সংগ্রহ করেছিলেন লন্ডনের ফ্র্যান্সিস ক্রিক ইনস্টিটিউটের অ্যানসিয়েন্ট জেনোমিক ল্যাবরেটরির ড. মারিনা সিলভা।
ড. সিলভার ল্যাব থেকে পাওয়া বিশ্লেষণই প্রথম জানান দেয়, কঙ্কালের মানুষটি আসলে রোমান সাম্রাজ্যের দূরতম এক প্রান্ত থেকে এসেছিলেন।
তিনি আরো বলেন, ‘প্রথমই যেটা চোখে পড়ল, অন্য রোমানো-ব্রিটিশদের চেয়ে জিনগতভাবে অনেক আলাদা এই মানুষটি।’
আগে ঐতিহাসিক ঘটনা সম্পর্কে ধারণা পেতে দালিলিক ও প্রত্নতাত্ত্বিক প্রমাণপত্রের ওপর নির্ভর করতে হতো, আর সেসবে মোটা দাগে আর্থিক ও সামাজিকভাবে প্রভাবশালীদের কথাই থাকে। তবে হাল আমলে গবেষণার পদ্ধতিগত উৎকর্ষের কারণে ডিএনএ বিশ্লেষণের মাধ্যমেই এখন সেসব সম্পর্কে ধারণা পাওয়া যায়। বড় বড় ঐতিহাসিক ঘটনার নেপথ্যে থাকা সাধারণ মানুষের অজানা গল্পও বের করে আনা সম্ভব হয় এখন। যেমন হাড়ের ফসিলে লুকিয়ে থাকা হাজার বছরের পুরনো জেনেটিক কোড বলে দিতে পারে যে কারো নৃতাত্ত্বিক পরিচয়।
অফোর্ড ক্লুনিকে নিয়ে করা গবেষণাটিতে তো রীতিমতো গোয়েন্দা গল্পের আঁচ পাওয়া যায়, যেন এটি একটি ফরেনসিক তদন্তপ্রক্রিয়া। একজন সাধারণ মানুষ, যিনি ১২৬ থেকে ২২৮ সালের মধ্যকার কোনো সময়ে তার ২৫ বছরের জীবন কাটিয়েছেন। রোমানদের অধিকৃত ব্রিটেনের ক্যামব্রিজশায়ারে নালার মত কোনো এক জলাধারে যার কবর হয়েছিল। তার জীবন সম্পর্কে দুই হাজার বছর পরে এসে জানা যাচ্ছে এই গবেষণার বদৌলতে।
পিতৃভূমি থেকে এতটা দূরে যে এসেছিলেন, তা কিভাবে নিশ্চিত হওয়া গেল
এই প্রশ্নের উত্তর খুঁজতে ডারহাম বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রত্নতত্ত্ব বিভাগের শিক্ষার্থীরা আরেকটি গবেষণা কৌশল ব্যবহার করেন। তারা ফসিল হয়ে যাওয়া মানুষটির দাঁত পরীক্ষা করেন, যাতে ওই ব্যক্তির গ্রহণ করা খাদ্যবস্তুর রাসায়নিক ছাপ পাওয়া যায়।
বিশ্লেষণে উঠে আসে, পাঁচ বছর বয়স থেকে পরবর্তী সময়ে তার খাদ্যাভ্যাস কিভাবে পরিবর্তিত হয়েছে। গাছের কাণ্ডের চক্রাকার দাগ থেকে যেমন সেটি কী ধরনের পরিবেশ, আবহাওয়া আর সময়ের মধ্য দিয়ে এসেছে তা জানা যায়। একইভাবে মানুষের দাঁতের প্রতিটি স্তরেও সেটি কী ধরনের উপাদানের সংস্পর্শে এসেছে তার প্রভাব থেকে যায়। তার ফলে জানা যায় ব্যক্তির খাদ্যাভ্যাসের ধরন।
ছয় বছর বয়স পর্যন্ত জোয়ার ও বাজরার মতো শস্যই ছিল অফোর্ডের প্রধান খাদ্য। তখনকার দিনে সারমাশিয়ান অধ্যুষিত অঞ্চলে এই ধরনের শস্য প্রচুর পরিমাণে জন্মাত। গবেষণা দলের অন্যতম সদস্য অধ্যাপক জ্যানেট মন্টগোমারি বলেন, ‘কিন্তু সময়ের সঙ্গে সঙ্গে তার খাদ্য তালিকায় এসবের বদলে গমের আধিক্য দেখা দিয়েছিল, যা মূলত পশ্চিম ইউরোপের ফসল।’
অধ্যাপক জ্যানেট আরো বলেন, ‘এ থেকে আমরা জানতে পারি, তার গোষ্ঠীর মধ্যে হয়তো তিনিই প্রথম ব্রিটেনে এসেছিলেন। পরিণত বয়সে পশ্চিমের অভিবাসী হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে তার খাদ্য তালিকা থেকে আগের শস্যগুলো বাদ পড়ে গিয়েছিল।’
আর ঐতিহাসিক নানা তথ্য-প্রমাণে জানা যায়, ওই সময়ে রোমান সেনাবাহিনীতে কর্মরত সারমাশিয়ানদের একটি দলকে ব্রিটেনে মোতায়েন করা হয়েছিল। এমন ঐতিহাসিক তথ্য থেকে বিশেষজ্ঞরা ধারণা করছেন, অফোর্ড কোনো অশ্বারোহীর ছলে হতে পারেন। কিংবা দাসও হয়ে থাকতে পারেন।
খননকাজে নেতৃত্ব দেয়া মিউজিয়াম অব লন্ডনের আর্কিওলজি বিভাগের ড. অ্যালেক্স স্মিথের মতে, ডিএনএর সূত্রে এমন একটা ঘটনাপ্রবাহের ব্যাপারে স্পষ্ট ইঙ্গিত মেলে। তিনি বিবিসিকে বলেন, ‘এটাই প্রথম বায়োলজিক্যাল এভিডেন্স।’
ড. স্মিথ বলছিলেন, ‘ডিএনএ প্রাপ্তি ও রাসায়নিক বিশ্লেষণের কৌশলের সুবাদে আমরা এখন অন্য বিষয়গুলোর দিকে নজর দিতে পারছি। জানতে পারছি রোমান শাসনামলে সমাজের গঠন, বিন্যাস ও বিবর্তনের ব্যাপারে। বোঝা যাচ্ছে, শুধু শহরগুলোতেই নয়, সে সময়ের গ্রামাঞ্চলেও ব্যাপক যাতায়াত ও স্থানান্তর ঘটত মানুষের।’
ক্রিক ইনস্টিটিউটের অ্যানসিয়েন্ট জেনোমিক ল্যাবরেটরির প্রধান ড. পন্টাস স্কগল্যান্ড বিবিসি নিউজকে বলেন, ‘নতুন প্রযুক্তি ইতিহাস সম্পর্কে আমাদের বোঝাপড়ায় রূপান্তর ঘটিয়ে চলেছে।’
ড. স্কগলান্ডের ভাষ্য, ‘প্রাচীন ডিএনএর হালনাগাদ বিশ্লেষণ প্রস্তর আর ব্রোঞ্জ যুগ সম্পর্কে আমাদের জানাশোনা বাড়িয়েছে। আর এখন, উন্নত কলাকৌশলের কারণে রোমান ও পরবর্তী সময়টাও ক্রমশ স্পষ্টতর হয়ে ধরা দিচ্ছে আমাদের কাছে।’

গাজার বিস্তীর্ণ এলাকা দখলে নিতে চায় ইসরায়েল
অনলাইন ডেস্ক

ইসরায়েলি প্রতিরক্ষামন্ত্রী ইসরায়েল কাটজ গাজায় সামরিক অভিযানের একটি বড় সম্প্রসারণের ঘোষণা দিয়েছেন। তিনি আজ বুধবার উপত্যকায় সামরিক অভিযান জোরদার করার ঘোষণা দিয়ে আরো বলেছেন, ইসরায়েলি সেনাবাহিনী ফিলিস্তিনি ভূখণ্ডের ‘বিস্তীর্ণ এলাকা’ দখল করবে।
এক বিবৃতিতে কাটজ বলেছেন, যুদ্ধরত এলাকাগুলো থেকে ফিলিস্তিনি জনসংখ্যা স্থানান্তরিত করা হবে। যুদ্ধ শেষ করার একমাত্র উপায় হামাসকে নির্মূল।
এদিকে গাজার উদ্ধারকারীরা জানিয়েছেন, দুটি বাড়িতে ইসরায়েলি হামলায় সকাল থেকে ১৫ জন নিহত হয়েছে। গাজার নাগরিক প্রতিরক্ষা সংস্থা জানিয়েছে, আজ বুধবার যুদ্ধবিধ্বস্ত ফিলিস্তিনি ভূখণ্ডের দুটি বাড়িতে ইসরায়েলি বিমান হামলায় শিশুসহ কমপক্ষে ১৫ জন নিহত হয়েছে।
বেসামরিক প্রতিরক্ষা মুখপাত্র মাহমুদ বাসাল এএফপিকে বলেছেন, ‘দক্ষিণ গাজার মধ্য খান ইউনিসে বাস্তুচ্যুতদের আশ্রয়দানকারী একটি বাড়িতে দখলদার বাহিনী (ইসরায়েলি সেনাবাহিনী) বোমা হামলা চালালে ভোরে শিশুসহ ১৩ জন শহীদ হয়। মধ্য গাজার নুসাইরাত ক্যাম্পের একটি বাড়িতে ইসরায়েলি হামলায় আরো দুজন নিহত হয়েছে।’
ইসরায়েল ইতিমধ্যেই গাজার অভ্যন্তরে একটি গুরুত্বপূর্ণ বাফার জোন তৈরি করেছে। যুদ্ধের আগে ছিটমহলের প্রান্তের চারপাশে বিদ্যমান একটি এলাকা সম্প্রসারণ করেছে এবং গাজার মাঝখানে তথাকথিত নেটজারিম করিডরে একটি বৃহৎ নিরাপত্তা এলাকা যুক্ত করেছে।
একই সময়ে ইসরায়েলি নেতারা বলেছেন, তারা ছিটমহল থেকে ফিলিস্তিনিদের স্বেচ্ছায় প্রস্থানের সুযোগ করে দেওয়ার পরিকল্পনা করছেন। মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পও একই প্রস্তাব দিয়েছিলেন। ইসরায়েলি প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু বলেছেন, সামরিক চাপ প্রয়োগই বাকি ৫৯ জিম্মিকে ফিরিয়ে আনার সর্বোত্তম উপায়।
সূত্র : এএফপি