ফিলিস্তিনের গাজা উপত্যকায় ইসরায়েলি বাহিনীর নির্মম আগ্রাসন চলছেই। গতকাল শনিবার ইসরায়েলি বাহিনী গাজায় অ্যাম্বুল্যান্সে হামলার দায় স্বীকার করেছে। গত সপ্তাহে দক্ষিণ গাজায় রাফাহর একটি এলাকায় অ্যাম্বুল্যান্সে হামলা চালায় তারা। এদিকে ইসরায়েলের অবরোধের মুখে সীমান্তে আটকে পড়া পণ্যবাহী গাড়িগুলোতে খাবার পচে যাচ্ছে।
ওষুধপত্রের মেয়াদ ফুরিয়ে যাচ্ছে। জরুরি ওষুধগুলো গাজায় সরবরাহ করা সম্ভব হচ্ছে না। নিরাপত্তা পরিষদের কাছে জাতিসংঘের মানবিকবিষয়ক সমন্বয় কার্যালয়ের (ওসিএইচএ) প্রধান টম ফ্লেচার এসব কথা জানান।
গত ২ মার্চ থেকে গাজায় ত্রাণসহ সব ধরনের পণ্য সীমান্ত দিয়ে প্রবেশ করতে দিচ্ছে না ইসরায়েলি বাহিনী।
রমজানের মধ্যে একদিকে ইসরায়েলের নির্বিচার বোমাবর্ষণ, অন্যদিকে ত্রাণের অভাবে গাজায় মানবিক সংকট তীব্র হয়ে উঠেছে। ইসরায়েলি অবরোধের মুখে গাজায় নিত্যপণ্যের মূল্য লাগামছাড়া হয়ে গেছে। রোজাদার ফিলিস্তিনিরা ইফতার ও সাহরিতে খাবার জোগাড় করতে হিমশিম খেয়েছে।
টম ফ্লেচার বলেছেন, গাজার ফিলিস্তিনিরা বলেছে যে বেঁচে থাকার জন্য কৌটায় প্রক্রিয়াজাত করা খাবারের ওপর নির্ভর করছে তারা।
তাজা খাবারগুলো সীমান্তেই আটকা পড়ে পচে যাচ্ছে। ফ্লেচারের আগে গাজার খাদ্য সংকটের পরিস্থিতি জাতিসংঘের বিশ্ব খাদ্য কর্মসূচিও (ডব্লিউএফপি) তুলে ধরেছে। গত শুক্রবার ডব্লিউএফপি বলেছে, গাজায় তাদের কাছে মাত্র পাঁচ হাজার ৭০০ টন খাবার অবশিষ্ট রয়েছে। তা দিয়ে বড়জোর দুই সপ্তাহ ত্রাণ কর্মসূচি চালাতে পারবে তারা।
গাজার স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় গতকাল স্থানীয় সময় দুপুরে জানায়, ইসরায়েলি হামলায় সর্বশেষ গত ২৪ ঘণ্টায় আরো ২৫ জন ফিলিস্তিনি নিহত এবং ৭০ জন আহত হয়েছে।
এ নিয়ে যুদ্ধবিরতি ভেঙে গত ১৮ মার্চ থেকে গাজায় ইসরায়েলের নতুন করে হামলা শুরুর পর এ পর্যন্ত ৯২১ জন নিহত এবং দুই হাজার ৫৪ জন আহত হয়েছে।
স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের তথ্যানুসারে, ২০২৩ সালের অক্টোবরে ইসরায়েলের হামলা শুরুর পর এ পর্যন্ত কমপক্ষে ৫০ হাজার ২৭৭ জন ফিলিস্তিনি নিহত এবং এক লাখ ১৪ হাজার ৯৫ জন আহত হয়েছে। গাজার মিডিয়া অফিসের হালনাগাদ তথ্যে হতাহতের সংখ্যা আরো বেশি বলা হয়েছে। তাদের হিসাবে ২০২৩ সালের ৭ অক্টোবর থেকে শুরু হওয়া সংঘাতে নিহতের সংখ্যা ৬১ হাজার ৭০০ ছাড়িয়েছে। মিডিয়া অফিস বলেছে, হাজারো ফিলিস্তিনি ধ্বংসস্তূপের নিচে আটকা পড়ে নিহত হয়েছে। তাদেরও মৃতের সংখ্যায় অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে।
অ্যাম্বুল্যান্সে হামলা : ইসরায়েলি সেনাবাহিনী গতকাল স্বীকার করেছে যে তারা গাজা উপত্যকায় অ্যাম্বুল্যান্সগুলোর ওপর গুলি চালিয়েছে। অ্যাম্বুল্যান্সে গুলিতে একজন নিহত হয়েছে। ফিলিস্তিনি স্বাধীনতাকামী সংগঠন হামাস ইসরায়েলের এ ধরনের হামলাকে ‘যুদ্ধাপরাধ’ বলে নিন্দা জানিয়েছে। গত রবিবার মিসরীয় সীমান্তের কাছে দক্ষিণ গাজার রাফাহ শহরের তাল আল-সুলতান এলাকায় অ্যাম্বুল্যান্সে হামলার ঘটনা ঘটে।
ইসরায়েলি বাহিনী বলেছে, হামাসের যানবাহন সন্দেহ করে তারা হামলা চালিয়েছে। পরে প্রাথমিক তদন্তের পর জানা গেছে, সন্দেহজনক যানবাহনগুলোর মধ্যে কিছু অ্যাম্বুল্যান্স এবং অগ্নিনির্বাপক ট্রাক ছিল। হামাস একটি অ্যাম্বুল্যান্স এবং একটি অগ্নিনির্বাপক যান খুঁজে পাওয়ার খবর জানিয়েছে।
ফিলিস্তিন রেড ক্রিসেন্ট সোসাইটির একটি গাড়িও ধ্বংসস্তূপে পরিণত হয়েছে বলে তারা জানায়। গত সপ্তাহ থেকে রাফাহ তাল আল-সুলতান এলাকায় একটি উদ্ধারকারী দল নিখোঁজ ছিল। ফিলিস্তিনি রেড ক্রিসেন্ট সোসাইটির সদস্যরা এবং আন্তর্জাতিক সংস্থার কর্মীরা জানিয়েছেন, তাঁরা উদ্ধারকারী দলের নেতা আনোয়ার আবদেল হামিদের ছিন্নভিন্ন মরদেহ খুঁজে পেয়েছেন। এ ছাড়া চিকিৎসাকর্মী ও সিভিল ডিফেন্স এজেন্সির আরো ১৩ জন কর্মী এখনো নিখোঁজ।
হামাসের রাজনৈতিক ব্যুরোর সদস্য বাসেম নাইম ইসরায়েলকে রাফাহ শহরে সিভিল ডিফেন্স এবং ফিলিস্তিনি রেড ক্রিসেন্ট টিমের বিরুদ্ধে ইচ্ছাকৃত ও নৃশংস গণহত্যা চালানোর জন্য অভিযুক্ত করেছেন। তিনি আন্তর্জাতিক মানবিক আইনের অধীনে সুরক্ষিত উদ্ধারকর্মীদের স্থাপনায় হত্যা জেনেভা কনভেনশনের সুস্পষ্ট লঙ্ঘন এবং যুদ্ধাপরাধ বলে অভিহিত করেছেন।
এদিকে রাফাহতে অ্যাম্বুল্যান্সকর্মী ও সিভিল ডিফেন্স কর্মী হত্যার ঘটনা তদন্ত করতে জাতিসংঘের প্রতি আহবান জানিয়েছে কাউন্সিল অন আমেরিকান-ইসলামিক রিলেশন (সিএআইআর)। যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক সংগঠনটি আরো বলেছে, গাজার মানুষের ওপর নৃশংস অপরাধ যুক্তরাষ্ট্র ও বিশ্বের অন্য জাতিগুলো চলতে দিতে পারে না। ইসরায়েলকে নৃশংসতা বন্ধ করতে হবে এবং যুদ্ধাপরাধের জন্য জবাবদিহি করতে হবে। সূত্র : আলজাজিরা, এএফপি