বিশেষ করে উত্তর নাইজেরিয়ার কানো, কাদুনা, সোকটো ও বাউচি অঞ্চলে ইসলামিক সংস্কৃতি ব্যাপকভাবে বিস্তৃত। নাইজেরিয়ায় ঈদ ‘সাল্লাহ’ নামে পরিচিত। এটি অত্যন্ত জাঁকজমকপূর্ণভাবে উদযাপিত হয়। ঈদের দিন মুসলমানরা মসজিদে নামাজ আদায় করে, দরিদ্রদের মাঝে ফিতরা বিতরণ করা হয়।
নাইজেরিয়ায় ঈদের দিনে জনপ্রিয় খাবারগুলোর মধ্যে রয়েছে—জোলফ রাইস (মসলাদার টমেটোভিত্তিক বিশেষ ভাত) সুইয়া (সুস্বাদু গ্রিল করা মাংস), ফুফু ও এগুসি স্যুপ (ঐতিহ্যবাহী আফ্রিকান খাবার)।
সেনেগাল
সেনেগালে মুসলমানদের সংখ্যা প্রায় ৯০%। এখানে ঈদুল ফিতরকে ‘কোরিতে’ বলা হয়। মুসলমানরা নতুন পোশাক পরে মসজিদে নামাজ আদায় করে এবং আত্মীয়দের সঙ্গে দেখা করতে যায়। ঈদের দিন সকালে বড় জামাতে নামাজ আদায় করা হয়। পরিবার ও বন্ধুদের সঙ্গে সাক্ষাৎ করা হয় এবং দান-খয়রাত করা হয়। ঈদের খাবারের মধ্যে রয়েছে—চেবু জেন (এটি এক ধরনের মাছ ও ভাতের খাবার), ইয়াসা চিকেন (সুস্বাদু লেবু ও পেঁয়াজ দিয়ে তৈরি মুরগির খাবার)।
মালি
মালিতে ঈদের আগে ঘরবাড়ি পরিষ্কার করা হয় এবং নতুন কাপড় কেনা হয়। ঈদের দিন সকালে মসজিদে নামাজ আদায়ের পর আত্মীয়-স্বজনের সঙ্গে দেখা করা হয় এবং ঐতিহ্যবাহী খাবার যেমন ‘তো’ (মজাদার খাবার) খাওয়া হয়।
ঘানা
ঘানায় ঈদ আনন্দমুখর পরিবেশে উদযাপিত হয়। ঈদের দিন সকালে বিশেষ জামাতে অংশ নেওয়া হয় এবং পরে মিষ্টান্ন ও স্থানীয় খাবার পরিবেশন করা হয়। ‘ওকরা স্যুপ’ এবং ‘জোলফ রাইস’ ঈদের অন্যতম বিশেষ খাবার।
সোমালিয়া
সোমালিয়ায় ঈদ অত্যন্ত ধুমধাম করে উদযাপিত হয়। ঈদের দিনে শিশুদের নতুন পোশাক পরিয়ে বিভিন্ন বিনোদনমূলক কার্যক্রমে অংশগ্রহণ করানো হয়। ঐতিহ্যবাহী খাবারের মধ্যে ‘কেমিস’ (মিষ্টি রুটি), ‘বারিস ইস্কুকারিস’ (মসলাদার ভাত) এবং ‘হিলিব’ (ভেড়ার মাংস) জনপ্রিয়।
ইথিওপিয়া
ইথিওপিয়ার মুসলমানরা ঈদুল ফিতর অত্যন্ত ধর্মীয় ভাবগম্ভীরতার সঙ্গে উদযাপন করে। সকালে ঈদের নামাজ আদায় করা হয় এবং এরপর দরিদ্রদের মধ্যে খাদ্য বিতরণ করা হয়।
কেনিয়া
কেনিয়ায় ঈদের দিনটি পরিবারের সঙ্গে কাটানো হয়। স্থানীয় বাজারগুলোতে ঈদের বিশেষ কেনাকাটা করা হয় এবং ঐতিহ্যবাহী খাবার যেমন ‘পিলাউ’ ও ‘চাপাটি’ পরিবেশন করা হয়।
দক্ষিণ আফ্রিকা
দক্ষিণ আফ্রিকায় মুসলমানদের একটি গুরুত্বপূর্ণ সম্প্রদায় রয়েছে, বিশেষ করে কেপটাউনে, যেখানে কেপ মালয় মুসলমানরা বসবাস করেন। এই সম্প্রদায়ের পূর্বপুরুষরা ১৭ ও ১৮ শতকে দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়া থেকে আগত ছিলেন এবং তারা দক্ষিণ আফ্রিকার মুসলিম সংস্কৃতির ভিত্তি গড়ে তুলেছেন।
ঈদের আগের দিন মুসলমানরা নিজেদের ঘরবাড়ি পরিষ্কার করেন এবং বিশেষ খাবার প্রস্তুত করেন। ঈদের সকালে পরিবারের সবাই নতুন পোশাক পরে এবং ঈদের জামাতে অংশগ্রহণের জন্য স্থানীয় মসজিদ বা ঈদগাহে যান। কেপটাউনের বিখ্যাত ‘নূরুল ইসলাম মসজিদ’ এবং ‘জামিয়া মসজিদ’-এ বিশাল জামাত অনুষ্ঠিত হয়।
দক্ষিণ আফ্রিকায় ঈদে কেপ মালয় খাবার জনপ্রিয়। কিছু বিশেষ খাবারের মধ্যে রয়েছে—বিরিয়ানি, বোবোটি (মাংস, ডিম এবং মসলা দিয়ে তৈরি একটি ঐতিহ্যবাহী খাবার), সামোসা এবং কোয়েকসিস্টার (মিষ্টি ও ঝাল নাশতা)।
এখানকার মুসুলমরা ঈদের নামাজের পর পরিবার ও বন্ধুরা একসঙ্গে খাওয়াদাওয়া করেন। অনেক পরিবার দরিদ্রদের জন্য খাবার বিতরণ করে এবং ইসলামী দানের চর্চা করেন। ঈদের দিনে মুসলমানরা কবরস্থানে গিয়ে মৃত স্বজনদের জন্য দোয়া করেন।
মোজাম্বিক
মোজাম্বিকের মুসলমানরা প্রধানত সুন্নি মতাবলম্বী এবং দেশের বেশির ভাগ মুসলিম জনগোষ্ঠী উপকূলীয় এলাকায় বাস করে। ঈদুল ফিতর ও ঈদুল আজহা এখানে অত্যন্ত আনন্দঘন পরিবেশে উদযাপিত হয়। ঈদের দিন সকালে মুসলিম সম্প্রদায় স্থানীয় মসজিদে বা খোলা মাঠে ঈদের নামাজ পড়েন। রাজধানী মাপুতো ও অন্যান্য বড় শহরে বিশাল ঈদ জামাত অনুষ্ঠিত হয়। ঈদের খাবারের মধ্যে প্রচলিত কিছু পদ— পেরি-পেরি চিকেন (সুস্বাদু মসলাযুক্ত মুরগির রেসিপি), সি ফুড ডিশ (সামুদ্রিক মাছ ও চিংড়ি দিয়ে তৈরি খাবার), ম্যান্ডাজি (এক ধরণের মিষ্টি পিঠা)।
তানজানিয়া
তানজানিয়ায় ঈদের দিন সকালে বিশেষ নামাজের পর পরিবার ও বন্ধুরা একত্রিত হয়। জাঞ্জিবারের মুসলমানরা ঈদকে কেন্দ্র করে বিশেষ সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের আয়োজন করে।
তানজানিয়ার জাঞ্জিবার দ্বীপপুঞ্জে ঈদ অত্যন্ত জাঁকজমকপূর্ণভাবে পালিত হয়। এই দ্বীপপুঞ্জের ঐতিহ্যবাহী আরব-আফ্রিকান সংস্কৃতির সঙ্গে ইসলামী উৎসবের সুন্দর সংমিশ্রণ লক্ষ করা যায়।
ঈদের আগের রাতে রাস্তাগুলো আলো ও রঙিন সাজে সজ্জিত করা হয়। ছোটরা নতুন পোশাক পরে এবং পরিবার ও আত্মীয়-স্বজনদের সঙ্গে সময় কাটায়। জাঞ্জিবারে ঈদের দিন বিভিন্ন ক্রীড়া ও সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান হয়, যেখানে নাচ, গান ও ঐতিহ্যবাহী খেলা অনুষ্ঠিত হয়। তানজানিয়ার ঈদ উদযাপনে জনপ্রিয় খাবারগুলো হলো—পিলাউ (মসলা ও মাংস দিয়ে তৈরি সুগন্ধি ভাত), নিয়ামা চোমা (গ্রিল করা মাংস), ম্যান্ডাজি (স্থানীয় মিষ্টি পিঠা)।
মাদাগাস্কার
মাদাগাস্কারের মুসলিম জনগোষ্ঠী সংখ্যালঘু হলেও ঈদ অত্যন্ত আন্তরিকতার সঙ্গে উদযাপিত হয়। বিশেষ করে দেশটির উত্তরাঞ্চলীয় এলাকায় মুসলমানদের একটি উল্লেখযোগ্য উপস্থিতি রয়েছে।
মুসলমানরা ঈদের দিন সকালে নামাজ পড়তে যান। মাদাগাস্কারের মুসলিমরা একত্রে বড় পরিসরে খাওয়াদাওয়ার আয়োজন করেন। জনপ্রিয় খাবারের মধ্যে রয়েছে সামুদ্রিক মাছের রেসিপি,
ভাত ও মাংসের তৈরি বিশেষ রান্না।
কমোরোস
কমোরোস দ্বীপপুঞ্জে মুসলমানরা সংখ্যাগরিষ্ঠ। এখানে ঈদ অত্যন্ত উৎসবমুখর পরিবেশে উদযাপিত হয়। ঈদের নামাজ আদায়ের পর বাড়িতে বড় পরিসরে ভোজের আয়োজন করা হয়।
তরুণরা নতুন পোশাক পরে এবং মসজিদে গিয়ে বড়দের আশীর্বাদ নেয়। এখানকার ঐতিহ্যবাহী খাবারের মধ্যে রয়েছে মাংস ও নারকেলের দুধের রান্না, ভাত ও মাছের তৈরি সুস্বাদু খাবার।
আফ্রিকার প্রতিটি দেশে ঈদুল ফিতরের উদযাপনের মধ্যে কিছু সাধারণ দিক যেমন নামাজ, দান-সদকা, খাবার এবং সামাজিক মিলনমেলা থাকলেও প্রতিটি দেশের নিজস্ব ঐতিহ্য ও সাংস্কৃতিক প্রভাবের কারণে ঈদ উদযাপনের ধরন ভিন্ন হয়ে থাকে। এটি শুধু একটি ধর্মীয় উৎসব নয়, বরং সামাজিক সংহতি ও ঐক্যের প্রতীক হিসেবে প্রতিটি দেশে পালিত হয়।