আজ দেশের মুসলিম উম্মাহর জন্য আনন্দের দিন। সকালে নামাজ দিয়ে শুরু হয় ঈদের দিনের 'আনুষ্ঠানিকতা'। দেশের প্রধান ঈদের জামাত অনুষ্ঠিত হয় জাতীয় ঈদগাহে। এই জামাত ঘিরে থাকে বিশেষ নিরাপত্তা।
হাজার মুসল্লির সমাগম ঘটে ঈদগাহে।
মূলত বাংলাদেশের জাতীয় ঈদগাহ মুসলমানদের সবচেয়ে বড় দুইটি অনুষ্ঠান ঈদুল ফিতর ও ঈদুল আযহার নামাজ পড়ার কেন্দ্রীয় ঈদগাহ। এটি ঢাকা জেলার সুপ্রিমকোর্ট প্রাঙ্গনে অবস্থিত। এ ঈদগাহে বাংলাদেশের গুরুত্বপূর্ণ প্রসাশনিক ব্যক্তিবর্গ ঈদের নামাজ আদায় করেন।
জাতীয় ঈদগাহ হচ্ছে বাংলাদেশ সরকার কতৃক নির্ধারিত একটি ঈদের নামাজের স্থান। এখানে বাংলাদেশের রাষ্ট্রপতি, প্রধান বিচারপতি, মন্ত্রিসভার সদস্য, তিন বাহিনীর প্রধান, সংসদ সদস্য, রাজনীতিক, সামরিক-বেসামরিক কর্মকর্তাসহ বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার নানা বয়সী মানুষ নামাজ আদায় করে থাকেন।
এবারও রাজধানীতে ঈদুল ফিতরের প্রধান জামাত সকাল সাড়ে ৮টায় জাতীয় ঈদগাহ ময়দানে অনুষ্ঠিত হবে। প্রধান জামাতে অংশ নেবেন রাষ্ট্রপতি মো. সাহাবুদ্দিন, প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস, সুপ্রিম কোর্টের বিচারপতি, উপদেষ্টা পরিষদের সদস্য, রাজনীতিবিদসহ সব শ্রেণি-পেশার মানুষ।
বায়তুল মোকাররম জাতীয় মসজিদের খতিব মুফতি মোহাম্মদ আবদুল মালেক ইমাম হিসেবে এ জামাতে দায়িত্ব পালন করবেন। ক্বারি হিসেবে থাকবেন বায়তুল মোকাররমের মুয়াজ্জিন মুহাম্মদ হাবিবুর রহমান। সেখানে একসঙ্গে প্রায় ৩৫ হাজার মানুষের নামাজ পড়ার ব্যবস্থা করেছে ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশন।
ইতিহাস
স্বাধীনতার আগে থেকেই হাইকোর্টের পাশের জায়গাটি ছিল ঝোপ-জঙ্গলে পূর্ণ। সেই জায়গার মাঝে ছিল একটি পুকুর।
১৯৮১-৮২ সালের দিকে সেই ঝোপ-জঙ্গল কিছুটা পরিষ্কার করা হয়। তার পাশাপাশি সুপ্রিমকোর্ট প্রাঙ্গণে রয়েছে একটি মাজার। জায়গাটি একটু পরিচিত হয়ে উঠলে সেখানে ছোট পরিসরে শামিয়ানা টানিয়ে ঈদের নামাজ পড়ানো শুরু হয়। এর পরে ১৯৮৫ সালের দিকে সেই পুকুরটি ভরাট করে ফেলে কর্তৃপক্ষ। পরে ১৯৮৭-৮৮ সালের দিকে ওই ঈদগাহকে জাতীয় ঈদগাহ হিসেবে ঘোষণা করে সরকার। বর্তমানে বাংলাদেশ হাইকোর্টের অধীনে ঈদগাহটি পরিচালিত হলেও তার দেখভাল করে গণপূর্ত বিভাগ। ২০০০ সালে দুই ঈদেই ঈদগাহ প্রস্তুতের দায়িত্ব পায় ঢাকা সিটি করপোরেশন।
চারদিকে লোহার প্রাচীর দেওয়া বিশাল মাঠটিতে রয়েছে একটি মূল ফটকসহ কয়েকটি ফটক। কিবলার দিকে রয়েছে একটি মেহরাব। মেহরাবটি মূলত পাঁচটি মিনারে তৈরি। জাতীয় ঈদগাহে একটি জামাতে অন্তত এক লাখ মুসল্লি একসঙ্গে নামাজ আদায় করতে পারেন। সেখানে একই জামাতে নারীদের নামাজ আদায়ের জন্য থাকে ভিন্ন ব্যবস্থা। এখানে ২০ হাজার নারী একসঙ্গে নামাজ আদায় করতে পারেন।
মাঠের আকৃতি
ঢাকার জাতীয় ঈদগাহ মাঠের আয়তন ২ লাখ ৭০ হাজার ২৭৭ বর্গফুটের বেশি। জাতীয় ঈদগাহ মূলত একটি প্রশস্ত ফাকা মাঠ। ঈদের পূর্বে এ মাঠকে সাজানো হয় নামাজের উপযোগী করার জন্য। সম্পূর্ণ মাঠ নামাজের উপযোগী করতে কয়েক হাজার শ্রমিক প্রয়োজন হয়। আনুমানিক বলতে গেলে, প্রতিবার ঈদগাহ ময়দানে প্যান্ডেল নির্মাণের জন্য ৪৩ হাজার বাঁশ ও প্রায় ৩শ’ মন রশির প্রয়োজন হয়।
বাংলাদেশের জাতীয় ঈদগাহের ইতিহাস অনেক পুরোনো। ২০২০ ও ২০২১ সালে করোনাভাইরাসের প্রকোপে ঈদের নামাজ জাতীয় ঈদগাহে অনুষ্ঠিত হয়নি।
বায়তুল মোকাররমে এ বছর পাঁচটি ঈদের জামাত অনুষ্ঠিত হবে।
প্রথম জামাত
সকাল ৭টায় প্রথম ঈদ জামাতে ইমামতি করবেন বায়তুল মোকাররমের পেশ ইমাম হাফেজ মুফতি মাওলানা মুহিববুল্লাহিল বাকী। মুকাব্বির থাকবেন বায়তুল মোকাররমের মুয়াজ্জিন হাফেজ মো. আতাউর রহমান।
দ্বিতীয় জামাত
সকাল ৮টায় দ্বিতীয় জামাতে ইমাম থাকবেন সিনিয়র পেশ ইমাম হাফেজ মুফতি মাওলানা মিজানুর রহমান। মুকাব্বির থাকবেন প্রধান খাদেম মো. নাসিরউল্লাহ।
তৃতীয় জামাত
সকাল ৯টায় তৃতীয় জামাতে ইমাম থাকবেন ইসলামিক ফাউন্ডেশনের মুহাদ্দিস ড. মাওলানা মুফতি ওয়ালিউর রহমান খান। মুকাব্বির থাকবেন খাদেম মো. আব্দুল হাদী।
চতুর্থ জামাত
সকাল ১০টায় চতুর্থ জামাতে ইমাম থাকবেন ইসলামিক ফাউন্ডেশনের অনুবাদ ও সংকলন বিভাগের সম্পাদক ড. মুশতাক আহমদ। মুকাব্বির থাকবেন খাদেম মো. আলাউদ্দীন।
পঞ্চম ও সর্বশেষ জামাত
সকাল পৌনে ১১টায় পঞ্চম ও সর্বশেষ জামাতে ইমামতি করবেন ইসলামিক ফাউন্ডেশনের মুফতি মো. আব্দুল্লাহ। মুকাব্বির থাকবেন খাদেম মো. রুহুল আমিন।