ঈদের নামাজ দুই রাকাত এবং তা পড়া ওয়াজিব। এতে আজান ও ইকামত নেই। যাদের ওপর জুমার নামাজ ওয়াজিব তাদের ওপর ঈদের নামাজও ওয়াজিব। জুমার নামাজের মতো উচ্চ আওয়াজে কোরআন তিলাওয়াতের মাধ্যমে ঈদের নামাজ আদায় করতে হয়।
ঈদের নামাজ দুই রাকাত এবং তা পড়া ওয়াজিব। এতে আজান ও ইকামত নেই। যাদের ওপর জুমার নামাজ ওয়াজিব তাদের ওপর ঈদের নামাজও ওয়াজিব। জুমার নামাজের মতো উচ্চ আওয়াজে কোরআন তিলাওয়াতের মাধ্যমে ঈদের নামাজ আদায় করতে হয়।
তবে ঈদের নামাজের পার্থক্য হলো—অতিরিক্ত ছয়টি তাকবির দিতে হবে। প্রথম রাকাতে ‘আল্লাহু আকবার’ বলে হাত বেঁধে অতিরিক্ত তিন তাকবির দিয়ে সুরা ফাতিহা পড়বে। আর দ্বিতীয় রাকাতে সুরা মেলানোর পর অতিরিক্ত তিন তাকবির দিয়ে রুকুতে যাবে।
ঈদের নামাজ মাঠে-ময়দানে পড়া উত্তম।
সূর্য উদিত হয়ে এক বর্শা (অর্ধহাত) পরিমাণ উঁচু হওয়ার পর থেকে শুরু হয়ে দ্বিপ্রহর পর্যন্ত ঈদের নামাজের সময় থাকে। তবে ঈদুল ফিতরের নামাজ একটু দেরিতে পড়া সুন্নত, যেন নামাজের আগেই বেশি বেশি সদকাতুল ফিতর আদায় হয়ে যায়। (ফাতহুল কাদির : ২/৭৩, আল-মুগনি : ২/১১৭)
নামাজের নিয়ত মুখে উচ্চারণ করার প্রয়োজন নেই।
ঈদের নামাজে অতিরিক্ত ছয়টি তাকবির বলা ওয়াজিব। প্রথম রাকাতে তাকবিরে তাহরিমা ও সানার পর তিনটি তাকবির।
দ্বিতীয় রাকাতে কিরাতের পর রুকুতে যাওয়ার আগে তিনটি তাকবির। এই তাকবিরগুলো বলার সময় ইমাম-মুক্তাদি সবাইকে হাত উঠাতে হবে।
তৃতীয় তাকবির ছাড়া প্রতি তাকবিরের পর হাত ছেড়ে দিতে হবে। কেউ যদি এই তাকবিরগুলো না পায়, তাহলে সে রুকুতে থাকা অবস্থায় আদায় করে নেবে। কারো পূর্ণ এক রাকাত ছুটে গেলে সে দ্বিতীয় রাকাতে কিরাতের পর তাকবিরগুলো আদায় করে নেবে।
নামাজের ধারাবাহিকতা এমন :
প্রথম রাকাত
১. তাকবিরে তাহরিমা। ঈদের নামাজে নিয়ত করে তাকবিরে তাহরিমা ‘আল্লাহু আকবার’ বলে হাত বাঁধা।
২. সানা পড়া
৩. অতিরিক্ত তিন তাকবির দেওয়া। এক তাকবির থেকে আরেক তাকবিরের মধ্যে ‘তিন তাসবিহ’ পরিমাণ সময় বিরত থাকা।
প্রথম ও দ্বিতীয় তাকবিরে উভয় হাত উঠিয়ে তা ছেড়ে দেওয়া এবং তৃতীয় তাকবির দিয়ে উভয় হাত বেঁধে নেওয়া।
৪. আউজুবিল্লাহ-বিসমিল্লাহ পড়া
৫. সুরা ফাতিহা পড়া
৬. সুরা মেলানো। অতঃপর নিয়মিত নামাজের মতো রুকু ও সিজদার মাধ্যমে প্রথম রাকাত শেষ করা।
দ্বিতীয় রাকাত
১. বিসমিল্লাহ পড়া
২. সুরা ফাতিহা পড়া
৩. সুরা মেলানো।
৪. সুরা মেলানোর পর অতিরিক্ত তিন তাকবির দেওয়া। প্রথম রাকাতের মতো দুই তাকবিরে উভয় হাত কাঁধ বরাবর উঠিয়ে ছেড়ে দেওয়া; অতঃপর তৃতীয় তাকবির দিয়ে হাত বাঁধা।
৫. তারপর রুকুর তাকবির দিয়ে রুকুতে যাওয়া।
৬. সিজদা আদায় করে তাশাহহুদ, দরুদ, দোয়া মাসুরা পড়ে সালাম ফেরানোর মাধ্যমে নামাজ সম্পন্ন করা।
তারপর খুতবা। ঈদের নামাজ পড়ার পর ইমাম দুটি খুতবা দেবেন আর মুসল্লিরা খুতবা মনোযোগের সঙ্গে শুনবেন।
নামাজ শেষে খুতবা প্রদান ইমামের জন্য সুন্নত; তা শ্রবণ করা নামাজির জন্য ওয়াজিব। (ফাতাওয়া শামি : ১/৫৫৯, ৫৬০)
কারো ঈদের নামাজ ছুটে গেলে শহরের অন্য কোনো জামাতে শরিক হওয়ার চেষ্টা করতে হবে। পরিশেষে যদি নামাজ ছুটেই যায়, তাহলে এর কোনো কাজা নেই। তবে চার রাকাত ইশরাকের নফল নামাজ আদায় করে নেবে এবং তাতে ঈদের নামাজের মতো অতিরিক্ত তাকবির বলবে না। (ফাতাওয়া শামি : ১/৫৬১)
সম্পর্কিত খবর
আল্লাহ মুমিন নর-নারীর ওপর পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ ফরজ করেছেন এবং পাঁচ ওয়াক্ত নামাজের জন্য সময় নির্ধারণ করেছেন। মুমিনের দায়িত্ব হলো যথাসময়ে ফরজ নামাজ আদায় করা। পবিত্র কোরআনে ইরশাদ হয়েছে, ‘নির্ধারিত সময়ে নামাজ আদায় করা মুমিনের অবশ্য কর্তব্য।’ (সুরা : নিসা, আয়াত : ১০৩)
আর নির্ধারিত সময়ে যথাযথভাবে নামাজ আদায়ের কথা হাদিসেও এসেছে।
সফরকালে নির্ধারিত সময়ে নামাজ আদায় করা কর্তব্য। এ ক্ষেত্রে কয়েকটি বিষয় জেনে রাখা উচিত। তা হলো-
এক. চলন্ত জাহাজ, ট্রেন ও বিমানে নামাজ পড়া
চলন্ত লঞ্চ, জাহাজ, ট্রেন ও বিমানে ফরজ নামাজ সম্ভব হলে কিবলামুখী হয়ে দাঁড়িয়ে রুকু-সিজদাসহ আদায় করবেন।
দুই. অপারগ হলে ইশারায় পড়া এবং পরবর্তীতে কাজা করা
আর যদি কেবলামুখী হয়ে রুকু-সিজদার সঙ্গে নামাজ আদায় করা সম্ভব না হয়, তাহলে যেভাবে সম্ভব বসে বা ইশারায় নামাজ পড়ে নেবেন। এ ক্ষেত্রে স্বাভাবিক অবস্থা ফিরে এলে সতর্কতামূলক ওই ফরজ নামাজ পরবর্তী সময়ে আবার পড়ে নেবেন।
তিন. পারলে যানবাহন থেকে নেমে নামাজ পড়া
আর বাসে যেহেতু সাধারণত দাঁড়িয়ে স্বাভাবিকভাবে নামাজ পড়া যায় না, তাই কাছাকাছি যাতায়াতের ক্ষেত্রে ওয়াক্ত শেষ হওয়ার আগে গন্তব্যে পৌঁছে নামাজ আদায় করা সম্ভব হবে না বলে মনে হলে এবং নেমে যাওয়া ঝুঁকিপূর্ণ অথবা অসুবিধাজনক না হলে পথিমধ্যে নেমে ফরজ নামাজ পড়ে নেবেন।
চার. নামা সম্ভব না হলে ইশারায় পড়া ও পরে কাজা করা
আর দূরের যাত্রা হলে অথবা যে ক্ষেত্রে নেমে গেলে ঝুঁকি অথবা সমস্যায় পড়ার আশঙ্কা থাকে সে ক্ষেত্রে বাস না থামলে সিটেই যেভাবে সম্ভব বসে বা ইশারায় নামাজ আদায় করে নেবেন এবং সতর্কতামূলক পরবর্তী সময়ে এর কাজা করে নেবেন।
পাঁচ. নামাজের জন্য যাত্রাবিরতি দেওয়া
উল্লেখ্য, দীর্ঘ যাত্রায় বাসচালকদের উচিত ফরজ নামাজ আদায়ের সুবিধার্থে কোনো মসজিদে যাত্রাবিরতি করা। এ বিষয়ে বাস মালিকদেরও ইতিবাচক নির্দেশনা দিয়ে রাখা উচিত। এ ক্ষেত্রে মালিক সমিতি ও শ্রমিক সমিতিগুলো যথাযথ ভূমিকা পালন করতে পারে। আর যাত্রীদের কর্তব্য হলো, বাসের একজন মুসল্লি নামাজ পড়তে চাইলেও তার জন্য বাস থামাতে চালককে নির্দেশনা দিয়ে রাখা।(তথ্যসূত্র : ইলাউস সুনান : ৭/২১২; মাআরিফুস সুনান : ৩/৩৯৪; আদ্দুররুল মুখতার : ২/১০১)।
আজ বুধবার ২ এপ্রিল ২০২৫, ১৯ চৈত্র ১৪৩১, ০২ শাওয়াল ১৪৪৬
ঢাকা ও এর পার্শ্ববর্তী এলাকার নামাজের সময়সূচি নিম্নরূপ—
জোহরের সময় শুরু ১২টা ৬ মিনিট।
আসরের সময় শুরু - ৪টা ২৯ মিনিট।
মাগরিব- ৬টা ১৯ মিনিট।
এশার সময় শুরু - ৭টা ৩৪ মিনিট।
আগামীকাল ফজর শুরু - ৪টা ৩৫ মিনিট।
আজ ঢাকায় সূর্যাস্ত - ৬টা ১৫ মিনিটে এবং আগামীকাল সূর্যোদয়- ৫টা ৪৯ মিনিটে।
সূত্র : ইসলামিক রিসার্চ সেন্টার, বসুন্ধরা, ঢাকা।
প্রশ্ন : লঞ্চ বা জাহাজ ঘাটে ভিড়ে থাকা অবস্থায় তাতে ফরজ নামাজ আদায় করা যাবে কি? এ অবস্থায় নিচে নেমে নামাজ আদায় করা আবশ্যক কি না?
- খোরশেদ আলম, বরিশাল
উত্তর : লঞ্চের কোনো অংশ জমি স্পর্শ অবস্থায় থাকলে লঞ্চে নামাজ পড়তে আপত্তি নেই; অন্যথায় নিচে নেমে নামাজ আদায় করতে হবে। (হিন্দিয়া : ১/১৫৮, নূরুল ঈজাহ : ৯৯)
সমাধান : ইসলামিক রিসার্চ সেন্টার বাংলাদেশ, বসুন্ধরা, ঢাকা
।প্রশ্ন : কোনো স্বপ্ন দেখে নিজেই অনুমানের ভিত্তিতে তার ব্যাখ্যা করার বিধান কী?
-আতিক, মিরপুর।
উত্তর : স্বপ্নের ব্যাখ্যা নিজে বুঝতে পারলে কাউকে বলার প্রয়োজন নেই। তা না হলে অভিজ্ঞ দ্বিনদার হিতাকাঙ্ক্ষী ব্যক্তির কাছ থেকে ব্যাখ্যা জেনে নেওয়া উত্তম। (ফাতাওয়ায়ে ফকীহুল মিল্লাত : ২/৫২৭)
সমাধান : ইসলামিক রিসার্চ সেন্টার বাংলাদেশ, বসুন্ধরা, ঢাকা
।