যাত্রীবাহী ওয়াটার ট্যাক্সি চলাচল বন্ধ থাকলেও চালু করা হয় ৮০ টাকার টিকিটে ৩০ মিনিটের জন্য হাতিরঝিলের পানিতে আনন্দ ভ্রমণ প্যাকেজ। দর্শনার্থীরা ওয়াটার ট্যাক্সিতে ঘুরে বেশ আনন্দঘন সময় কাটিয়েছে।
হাতিরঝিলেও শুধু ৮০ টাকা ভাড়ায় আনন্দ নৌভ্রমণ প্যাকেজ চালু ছিল। গতকাল তৃতীয় দিনেও বিনোদনপ্রেমীদের পদচারণে মুখরিত ছিল বিনোদনকেন্দ্রটি।
অন্যদিকে তরুণদের দেখা গেছে রাজধানীর কুড়িল ৩০০ ফিট সড়ক এলাকা ও পূর্বাচল এলাকায় বন্ধুবান্ধবের সঙ্গে আড্ডা-আনন্দ ও সেলফিতে সময় কাটাতে।
শ্যামলীর ‘শিশুমেলা’ শিশু-কিশোরদের অন্যতম বিনোদনকেন্দ্র। গতকাল এই বিনোদনকেন্দ্রটিও মুখর ছিল।
কক্সবাজার সমুদ্রসৈকতে তিল ধারণের ঠাঁই ছিল না
কক্সবাজার সমুদ্রসৈকতে ঈদের তৃতীয় দিন গতকাল বুধবারও পর্যটকের পদচারণে মুখর ছিল। সৈকতের লাবণী পয়েন্ট, সুগন্ধা পয়েন্ট, কলাতলী পয়েন্ট, হিমছড়ি, ইনানী, পাটুয়ারটেক, মেরিনড্রাইভসহ আশপাশের পর্যটন স্পটগুলো বর্তমানে উৎসবমুখর।
কক্সবাজার বেড়াতে আসা পর্যটকদের অন্যতম আকর্ষণ সমুদ্রে স্নান। এই সমুদ্রস্নান নিরাপদ করতে কাজ করছে স্থানীয় সি সেভ নামের একটি লাইফগার্ড সংস্থা। সংস্থাটির কর্মীরা এখন দিনব্যাপী ব্যস্ত সময় পার করছেন। কোথায় সাগরের চোরাবালি আর কখন জোয়ার-ভাটা—এসব তথ্য সার্বক্ষণিক জানিয়ে দিয়ে সতর্ক করছেন পর্যটকদের।
কক্সবাজার সৈকতে বেড়াতে আসা ঢাকার একটি বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ুয়া শিক্ষার্থী সুমাইরা বলেন, ‘সকালে কক্সবাজারে এসে মাত্র বিচে চলে এসেছি। এত বেশি মানুষ একসঙ্গে দেখে খুব ভালো লাগছে। তবে সমুদ্রের পারে কিছু ময়লা দেখে মন খারাপ লাগছে।’
ট্যুরিস্ট পুলিশের কক্সবাজার জোনের অতিরিক্ত ডিআইজি আপেল মাহমুদ জানিয়েছেন, বেড়াতে আসা পর্যটকদের নিরাপত্তা নিশ্চিতে তাঁরা সার্বক্ষণিক কাজ করছেন।
ফাঁকা চট্টগ্রাম নগরীর বিনোদনকেন্দ্রে উপচে পড়ছে মানুষ
ঈদের ছুটিতে অনেকেই পরিবার নিয়ে ঘুরছে চট্টগ্রাম নগরীর বিনোদনকেন্দ্রগুলো। ফলে বিনোদনকেন্দ্রগুলোতে দর্শনার্থীদের উপচে পড়া ভিড় দেখা গেছে। চট্টগ্রামে দর্শনার্থীদের আগ্রহের শীর্ষে ছিল চট্টগ্রাম চিড়িয়াখানা, ফয়স লেক, সি ওয়ার্ল্ড ও পতেঙ্গা সমুদ্রসৈকত। এসব বিনোদনকেন্দ্রে সবচেয়ে বেশি উপস্থিতি ছিল শিশু-কিশোরদের।
চট্টগ্রাম চিড়িয়াখানার ডেপুটি কিউরেটর ডা. শাহাদাত হোসেন শুভ কালের কণ্ঠকে বলেন, ‘এই চিড়িয়াখানায় ৬৮ প্রজাতির ৫২০টি পশুপাখি রয়েছে। শিশুদের জন্য চিড়িয়াখানায় পৃথক কিডস জোন আছে। সেখানে দোলনাসহ বিভিন্ন রাইড রয়েছে। এ চিড়িয়াখানায় আছে বিরল সাদা বাঘ। এ সব কিছু দর্শনার্থীদের আকর্ষণ করছে। ঈদের দিন থেকে আজ পর্যন্ত (বুধবার) দর্শনার্থী এসেছে ৫০ হাজার।’
চিড়িয়াখানার পাশেই রয়েছে ফয়স লেক। সেখানে ফয়স লেক কনকর্ড অ্যামিউজমেন্ট, সি ওয়ার্ল্ড ও বেস ক্যাম্প নামের তিনটি অংশ রয়েছে। সি ওয়ার্ল্ডের সুইমিং পুলে শত শত মানুষকে দেখা গেছে জলকেলিতে মেতে উঠতে। পার্কের রাইডগুলোতেও চড়তে দেখা গেছে শিশু-কিশোরদের।
সবচেয়ে বেশি ভিড় দেখা গেছে নগরীর পতেঙ্গা সমুদ্রসৈকতে। লাখের ওপর দর্শনার্থীর উপস্থিতি ছিল গতকাল। অনেকে পতেঙ্গা সমুদ্রসৈকত দেখতে গিয়ে নেভাল ও টানেলও ঘুরে এসেছে।
সিলেটে পর্যটকদের ঢল
ঈদের প্রথম দুই দিনের তুলনায় গতকাল বুধবার সিলেটে পর্যটকদের ঢল বেশি ছিল। পর্যটনকেন্দ্রগুলো ও শহরের বাইরের হোটেল-মোটেলে পর্যটকদের উপস্থিতি বেশি হলেও নগরের হোটেলগুলোতে বুকিং প্রত্যাশার চেয়ে কম ছিল।
সিলেটের অন্যতম আকর্ষণীয় পর্যটনকেন্দ্র সাদাপাথর। মূল স্পটে যেতে নৌকা লাগে। সেখানে পর্যটকদের জন্য ১২০টি নৌকার ব্যবস্থা ছিল এত দিন। এবার চাহিদা বাড়ায় আরো ৪০টি নতুন নৌকা সংযুক্ত করা হয়েছে।
ভারতের মেঘালয়ের সবুজ পাহাড়, পাথর আর ঝরনার সম্মিলন দেখতে দেশের বিভিন্ন স্থান থেকে সিলেটের জাফলংয়ে ছুটে এসেছে লাখো পর্যটক। শুধু জাফলং নয়, গোয়াইনঘাট উপজেলার রাতারগুল, বিছনাকান্দিসহ সব কটি পর্যটনকেন্দ্রে ছিল পর্যটকদের উপচে পড়া ভিড়। সেখানকার বেশির ভাগ হোটেল-মোটেলের ৮০ শতাংশের বেশি রুম আগেই বুকিং হয়ে গেছে।
গতকাল বুধবার সকালে দেখা গেছে, দলবেঁধে পর্যটকরা ঘুরতে বের হয়েছে। মেঘালয়ের পাহাড়, পাথর আর স্বচ্ছ জলের সমাহারে তারা বিমোহিত। পরিবার পরিজন ও বন্ধুবান্ধব নিয়ে ঘুরছে আর ছবি তুলে স্মৃতি সংরক্ষণ করছে। কেউ কেউ নৌকা নিয়ে খাসিয়াপল্লী আর চা-বাগানের উদ্দেশেও যাচ্ছে।
সিলেট চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রির পর্যটন সাব কমিটির চেয়ারম্যান হুমায়ুন কবির লিটন বলেন, ‘করোনার পর থেকে সিলেটের পর্যটনে শনির দশা লেগে ছিল। এবার তা থেকে মুক্তির প্রত্যাশা আমাদের। গত ডিসেম্বরের ছুটিতে পর্যটকদের ঢল নেমেছিল। এবারও প্রথম দিন শত কোটি টাকার ব্যবসা হয়েছে। তবে যেহেতু শনিবার পর্যন্ত ছুটি আছে। আশা করছি আগের রেকর্ড ছাড়াবে এবার।’
রংপুরে বিনোদনকেন্দ্রগুলোতে শিশুদের উচ্ছ্বাস
রংপুরে ঈদের ছুটিতে একটু প্রশান্তির খোঁজে ঘর থেকে বেরিয়েছে নানা বয়সী মানুষ। সঙ্গে বাবা-মা আর স্বজনদের হাত ধরে ঘুরছে শিশু-কিশোররাও। নির্মল বাতাসে উচ্ছ্বসিত মানুষ ভিড় করছে নগরী এবং নগরীর বাইরের বিনোদনকেন্দ্রগুলোতে।
তবে ঈদ আনন্দে এবার নতুন মাত্রা যোগ করেছে বাড়তি নিরাপত্তা। প্রতিটি বিনোদনকেন্দ্র ও দর্শনীয় স্থানে সাদা পেশাকে ছিলেন আইন-শৃঙ্খলা রক্ষা বাহিনীর সদস্যরা।
রংপুর নগরীর কালেক্টরেট সুরভী উদ্যান, জেলা পুলিশ শিশু পার্ক, চিখলি ওয়াটার পার্ক, চিড়িয়াখানা, সেনাপ্রয়াস, তাজহাট জমিদারবাড়ি, কারমাইকেল কলেজ, বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়, পায়রাবন্ধ বেগম রোকেয়ার বাড়িতে সব বয়সী মানুষের ভিড় ছিল। ভিড় দেখা গেছে তিস্তা-মহিপুর সড়ক সেতু, কাউনিয়া সড়ক সেতু, ভিন্ন জগৎ, আলী বাবা থিম পার্ক, আনন্দনগরেও। নানা পোশাকে সেজে শিশু-কিশোরসহ বিভিন্ন বয়সী মানুষ ঘুরতে এসেছে।
রংপুর চিড়িয়াখানার ভেতরে এক খাঁচা থেকে আরেক খাঁচার পাশে ছুটে গেছে দর্শনার্থীরা। বিভিন্ন পশু-পাখি দেখে বেশি উল্লসিত শিশু ও কিশোররা। কুমির, ঘড়িয়াল, জলহস্তী, ঘোড়া, হনুমান, গাধা, ভল্লুক, হরিণ, ময়ূর, উটপাখিসহ চিড়িয়াখানার সব খাঁচার সামনে ছিল ভিড়।
রংপুর জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ রবিউল ফয়সাল বলেন, ঈদে বিনোদনকেন্দ্রগুলোতে পর্যাপ্ত নিরাপত্তাব্যবস্থা নিশ্চিত করা হয়েছে। এবার বিনোদনকেন্দ্রগুলোতে ঘুরতে আসা মানুষ নিরাপত্তার অভাব অনুভব করেনি।
(প্রতিবেদনটিতে তথ্য দিয়েছে—নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকা, বিশেষ প্রতিনিধি, কক্সবাজার, নিজস্ব প্রতিবেদক, চট্টগ্রাম, নিজস্ব প্রতিবেদক, সিলেট, ও রংপুর অফিস)

কক্সবাজার সমুদ্রসৈকতে এসেছে বহু পর্যটক। ছবি : কালের কণ্ঠ